নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায় মধ্যপ্রাচ্য! হায় দুর্ভাগা মুসলমান!

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৫

ইরাকে আইএস বিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কুর্দিদেরকে লক্ষ্য করে বিমান থেকে বান্ডিল বান্ডিল অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলছে। আর নিচ থেকে সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে স্বীয় অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছে আইএস বিরোধী কুর্দি যোদ্ধারা। ইরাক সরকার দেশটির এক বিরাট অঞ্চল দখলকারী ‘আইএস’ জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পেরে না উঠে সাহায্যের আবেদন করেছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে। এ মিনতি এখনও চলছে। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইরত কুর্দি যোদ্ধাদের সাহায্য হিসেবে আকাশ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলছে সুদূর আটলান্টিকের ওপার থেকে উড়ে আসা যুক্তরাষ্ট্র।

ইতিহাসে পাওয়া যায়- মুসা (আ.) যখন তাঁর জাতিকে ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার করে সাগর পাড়ি দিলেন তখন জনমানবহীন সিনাই পর্বতে দাঁড়িয়ে বনী ইসরাইলিরা মুসা (আ.) কে বলেছিল- হে মুসা (আ.)! এই ধু ধু মরুপ্রান্তরে আমরা কী খেয়ে জীবন নির্বাহ করব? তখন মুসা (আ:) আল্লাহর কাছে তাঁর জাতির জন্য প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাদের জন্য আকাশ থেকে মান্না ও সালওয়া নামক খাবার পাঠান। (কোর’আন-বাকারাহ, ৫৭) যুক্তরাষ্ট্রের বিমান থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান অস্ত্র বিনামূল্যে ফেলার (দান করার) এই দৃশ্য দেখে বনি-ইসরাইল জাতির সেই ইতিহাস মনে পড়া আজ অস্বাভাবিক নয়। কারণ মান্না-সালওয়া না হলেও, কুর্দিদের কাছে এই অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখন মান্না সালওয়ার মতোই প্রয়োজনীয় ছিল।

বনী ইসরাইলীদের বেঁচে থাকার জন্য মান্না-সালওয়া যতটা দরকার ছিল, আজকের কুর্দি ও ইরাক সরকারের জন্য ঐ অস্ত্র ও গোলাবারুদ কোনো অংশেও কম প্রয়োজনীয় নয়। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে- আল্লাহর নির্দেশে আকাশ থেকে পড়া মান্না সালওয়া বনী ইসরাইলীদের জীবনে স্বস্তি ও সমৃদ্ধির ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করেছিল, আর আজ যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য সভ্যতার ধ্বজাধারীদের নির্দেশে ইরাকের বুকে যে বান্ডিল বান্ডিল অস্ত্র পড়ছে তা কেবল অস্বস্তি, অবিশ্বাস ও অশান্তির পথই প্রশস্ত করছে। এর মাধ্যমে মুসলিমদের লাভের পাল্লায় কিছু যোগ না হলেও, ক্ষতির পাল্লা ক্রমেই ভারি হয়ে উঠছে। তাদের জীবনযাত্রায় আরো একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। যারা গত কয়েক যুগের নব্য সাম্রাজ্যবাদকে পর্যবেক্ষণ করেছেন এ ব্যাপারে তাদের দ্বিমত পোষণ করার কথা নয়। কারণ তারা নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারছেন যে, আকাশ থেকে পড়া এই বান্ডিল বান্ডিল অস্ত্রের পরিণতি মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কতটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। যে অস্ত্র আজ আইএস- এর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে তা কাল যে ইরাক সরকার বা প্রতিবেশি কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হবে না- এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। সোভিয়েতবিরোধী আফগান যুদ্ধ ও তৎপরবর্তী ইতিহাস তো এখনও জাজ্বল্যমান।

যুক্তরাষ্ট্র যখন কাউকে সামরিক সহায়তা প্রদান করে, বুঝতে হবে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো না কোনো স্বার্থ আছে। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত চলা আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের কমপক্ষে ৩০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে তাদেরকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘isi’ এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল cia। (সূত্র: ব্রি.জে. এম সাখাওয়াত হোসেন অব. রচিত ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের ইতিকথা- আফগানিস্তান হতে আমেরিকা) এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কতটা স্বার্থ জড়িত ছিল তা সর্বজনবিদিত, আলাদা করে বলার কিছুই নেই। বস্তুত যুদ্ধের পুরো সুফলই ভোগ করেছে তারা। মুসলিমরা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে যুদ্ধ করলেও তাদের কোনো উপকার হয় নি, মাঝখান থেকে জন্ম হয়েছে আল কায়েদা-তালেবান ও একই ধ্যান-ধারণার শতাধিক জঙ্গিগোষ্ঠীর, যাদের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে আজ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মুসলিম জনজীবন। মুসলিম জাতি একদিকে জঙ্গি, অন্যদিকে কথিত জঙ্গিবিরোধী পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ- এই উভয়েরই যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

কিছুদিন আগ পর্যন্ত পশ্চিমারা অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে ‘আইএস’কে, যখন তারা সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছিল। ‘আইএস’ এতটা ভয়ানক হতে পেরেছে আর কিছু নয়, শুধুই যুক্তরাষ্ট্রের কৃপায়! যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নীতি-নৈতিকতাহীন স্বার্থের বাজারে ব্যবসা করে কোথাকার কোন পাহাড়ী বন্দুকধারী এই জঙ্গিগোষ্ঠী এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। (ইত্তেফাক, ২৮ অক্টোবর ২০১৪) আবার তাদেরকেই ধ্বংস করার জন্য অতীতের মতো অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে কুর্দি যোদ্ধাদের মধ্যে। ইতিহাসের কী নিখুঁত পুনরাবৃত্তি! এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের আজকের মিত্র কুর্দি যোদ্ধারা যদি আগামীতে আল কায়েদা-তালেবান ও আইএস’র ভাগ্য বরণ করে এবং তাদেরকে অজুহাত করে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আরেক দফা ধ্বংসযজ্ঞের আয়োজন করে তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র বিমান থেকে কুর্দি যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে অস্ত্র ফেলছে। আবার কুর্দিদের অস্ত্র দিতে গিয়ে নাকি কিছু অস্ত্র আইএস- এর হাতেও পড়েছে- এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। (যুগান্তর, ২৩ অক্টোবর ২০১৪) আসলে এই অস্ত্রগুলো কীভাবে দেওয়া হচ্ছে, কে ব্যবহার করছে, কীভাবে ব্যবহার করছে, কার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে এবং পরিণাম কী হতে পারে- তার সহজ উত্তর সহজে পাওয়া প্রকৃতপক্ষেই দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্পষ্টভাবে শুধু এতটুকুই প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে যে, এসব অস্ত্র ব্যবহার করছে মুসলমান, মারছে মুসলমান, মরছে মুসলমান, উদ্বাস্তুও হচ্ছে মুসলমান। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা ও কুর্দিদের গোলার আঘাত থেকে শুরু করে আইএস-এর নৃশংসতা- সব কিছুরই নীরব শিকারে পরিণত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ অসহায় মুসলিম নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। ভাগ্যের কতই না নিষ্ঠুর-নির্মম চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে এই জাতিটি!

না, ভাগ্য নয়। যতই ভাগ্যের দোষ দেওয়া হোক, এ অবস্থা মুসলিম জাতির নিজেদেরই দু’হাতের কামাই। এরা যতদিন প্রকৃত ইসলাম বা দীনুল হক্ব অনুযায়ী নিজেদের পরিচালিত করেছে, তাদের নবীর অর্পিত দায়িত্বকে কাঁধে তুলে নিয়ে পৃথিবীর নির্যাতিত-নিপীড়িত বিপদগ্রস্ত মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে ততদিন তাদের জীবন ছিল শান্তিময় ও গৌরবময়। তাদের প্রতি স্রষ্টার অফুরন্ত নেয়ামত ছিল, সাহায্য-সহযোগিতা ছিল। কিন্তু যখন তারা সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ত্যাগ করল, মানবজাতিকে এক জাতিতে পরিণত করার উত্তরদায়িত্ব কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে দিল, দীনের চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করতে গিয়ে শত শত দল-মত-ফেরকা-মাজহাব সৃষ্টি করল, ঐক্য বিনষ্ট করল, জাতীয় জীবন থেকে স্রষ্টার সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করে স্রষ্টাহীন বস্তুবাদী সভ্যতার তৈরি তন্ত্র-মন্ত্রের পূজা করতে শুরু করল, তখন থেকে শুরু হলো তাদের পতনের কাল, পরাজয়ের কাল, পরাধীনতার কাল, অশান্তির কাল, ধ্বংসের কাল। এ জাতি এখনও ঐ ধ্বংসের পথেই এগোচ্ছে। একের পর এক যুদ্ধ-সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ, অনৈক্য, ফেরকা-মাজহাব তাদেরকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে। এদের সারা দেহে এখন পরাজয়ের ছাপ, অভিশাপের ছাপ। ধ্বংসই তাদের একমাত্র সাথী। আর মুসলিম জাতির এই ধ্বংস নামক যজ্ঞে ঘি ঢেলে যাচ্ছে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৮

মুকতোআকাশ বলেছেন: একেবারে খাঁটি কথা। প্রায় নবীর সময় কাল থেকেই ইসলাম বিরোধীরা প্রচেস্টা রত ইসলামে নানা রকম ফেরকা ও কুসংস্কার প্রবেশ করাতে। এর সহযোগী মুসলমানরাই। আজ এই মেরুদন্ডহীন মুসলমানদের সংখ্যা কমাতে যে যুদ্ধ বিগ্রহ চলছে তারও সহযোগী মুসলমানরাই। ইসলাম থেকে কু সংস্কার দূর করবার জন্য যে আন্দোলন হয়েছিল তাদের কেই আজ বিভিন্ন মুসলিম নাম ধারি জাহেলরা ইসলামের শ্ত্রু বলে গালি দিচ্ছে। তাই যাই বলুন আর লিখুন সবই অরন্য রোদন।

২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৪

খেলাঘর বলেছেন:

ইরাক একটি দেশ: সরকার আছে, মানুষ আছে; সিরিয়াও দেশ; আইএসআইএস কাহারা? কেন তারা ২টি দেশ দখলের জন্য যুদ্ধ করছে? কেন তারা মানুষ মারছে?

তাদের যুদ্ধ কি আল্লাহ থামাবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.