নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাকিস্তানকে আরও কাঁদতে হবে

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৫

গত ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক নির্মম নৃশংস ঘটনা। নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৩২ শিশুসহ মোট ১৪১ জনকে। আহত হয়েছে আরও শতাধিক, যাদের অনেকেই এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়। ভয়াবহ এই আত্মঘাতী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়েছে পাকিস্তানে। পাকিস্তানি তালেবান গোষ্ঠীর ওই বর্বরতায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে সারা বিশ্ব। যদিও পাকিস্তানে তালেবান হামলা এটাই প্রথম নয়, কিন্তু সরকারি বাহিনীর অভিযানের জবাব দিতে গিয়ে নিষ্ঠুরভাবে একসাথে এতগুলো শিশুর প্রাণ কেড়ে নেওয়ার মতো বর্বরতা এটাই প্রথম। এ ঘটনাটি সারা বিশ্বের বিবেকসম্পন্ন মানুষের হৃদয়ে আঘাত করেছে। অবচেতন মনের গহীন থেকে ধিক্কার আসছে ওইসব মানুষের ওপর যারা মানবতার জন্য আসা ধর্মকে অজুহাত করে প্রতিনিয়ত মানবতার কবর রচনা করে আসছে। এসব নরপশুদের প্রতি ধিক্কার আসা স্বাভাবিক। অতীতেও তারা বহু কাজের জন্য ধিক্কৃত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের প্রতিটি মানবতাবিরোধী কাজের সমালোচনা করেছে সারা বিশ্ব। কিন্তু আমরা সকলেই জানি, শুধু সমালোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। কোটি কোটি মানুষের ধিক্কার তাদেরকে অন্যায় থেকে নিবৃত করতে পারছে না, ভবিষ্যতেও পারবে না। আমাদেরকে আগে জানতে হবে, এদের উৎপত্তি হলো কীভাবে। এরা কি স্বতন্ত্রভাবেই সৃষ্টি হয়েছে নাকি তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি সৃষ্টি করা হয়েই থাকে তাহলে তা কোন স্বার্থে, কার স্বার্থে। এসব প্রশ্নের উত্তর বের করতে খুব বেশি দূর যেতে হবে না, নিকট ইতিহাসের পাতাতেই হয়তো আমরা অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবো। আর তখন সমাধানও পাওয়া যাবে সহজেই।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা দেখি এ বিপর্যয় পাকিস্তান নিজ হাতে সৃষ্টি করেছিল। যে বিষবৃক্ষের বীজ পাকিস্তান সরকার ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে বপন করেছিল, আজ তা বটবৃক্ষে রূপ পেয়েছে। তালেবানদের উত্থানের পেছনে মার্কিন স্বার্থ ও পাকিস্তানি স্বার্থ উভয়ই কাজ করেছে। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, আজকের তালেবান নামে পরিচিত গোষ্ঠী, তা পাকিস্তান তালেবান হোক অথবা আফগান তালেবান হোক, এদের উত্থানের প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে সোভিয়েত পরবর্তী আফগানিস্তানকে ঘিরে। আফগান দখল পরবর্তী দশ বছরের যুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনী পরাজিত ও আফগান হতে বিতাড়িত হলে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা মোজাহেদিনদের মধ্যে শুরু হয় ভয়াবহ অন্তর্কোন্দল। ১৯৯২-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত চলা এ লড়াই ছিল মূলত আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকার শাসনক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে। এ গৃহযুদ্ধ এতটাই ভয়ানক রূপ ধারণ করেছিল যে তা বিগত সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধের ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে যেতে থাকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সাধারণ মানুষের জন্য এ ছিল ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ এর মতো। ক্রমেই এসব যুদ্ধবাজ গোত্রের উপর সাধারণ মানুষ ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে পড়ে। তারা নতুন কোনো শক্তির আশায় উদগ্রীব হয়ে পড়ে, যারা আর যাই হোক ভ্রাতৃঘাতী লড়াই বন্ধ করবে। আর এ শুন্যতাই পূরণ করে অখ্যাত, অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত, পৃথিবী সম্পর্কে অনবহিত মাদ্রাসার কিছু ছাত্র- তালেবান।
তালেবানদের প্রাথমিক উৎপত্তি আফগানিস্তানের অন্যান্য এলাকার মতোই কান্দাহার এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সূত্র ধরে। ১৯৯২-১৯৯৪ সালে গৃহযুদ্ধকালীন অবস্থায় কান্দাহারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই নিুস্তরে পৌঁছেছিল যে, রাস্তা-ঘাটে, যেখানে-সেখানে মানুষের মৃতদেহ পড়ে থাকতো। তাদেরকে সৎকার করার আগ্রহও কেউ দেখাতো না। ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, লুণ্ঠন হয়ে দাঁড়িয়েছিল অতি স্বাভাবিক ঘটনায়। মূলত এই নাজুক পরিস্থিতিতেই মাদ্রাসার কিছু ছাত্র এলাকার হাল ধরার জন্য সংগঠিত হলে তারা পরিচিত হয় তালেবান নামে। তালেব শব্দের অর্থ ছাত্র। তালেব থেকে তালেবান। তালেবানদের না কোনো প্রয়োজনীয় অস্ত্র ছিল, না দেশ শাসন করার মতো বড় কোনো উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যহীন, শক্তিহীন তালেবানই বৈদেশিক স্বার্থের ডাইসে পড়ে এক সময় আফগানিস্তানের নব্বই শতাংশ এলাকার শাসকে পরিণত হয়েছিল। তাদেরকে কে অস্ত্র যুগিয়েছিল, কে সমর্থন যুগিয়েছিল, কে দিক নির্দেশনা প্রদান করেছিল- সে দায় আজকে যদিও কেউ স্বীকার করতে ইচ্ছুক নয় কিন্তু ইতিহাসের পাতাতে আজও লিপিবদ্ধ আছে।
পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন- পাকিস্তানের তালেবান আক্রমণ নিয়ে লিখতে বসে আফগান তালেবানের আলোচনা কেন? এ আলোচনা এ কারণে আসছে যে, পাকিস্তান তালেবান ও আফগান তালেবান ভিন্ন ভূখণ্ডে তৎপর হলেও আদর্শগত দিক দিয়ে তারা অভিন্ন, এবং পাকিস্তান তালেবানের উত্থান ঘটেছে আফগান তালেবানের দুর্দশা থেকেই। আনুষঙ্গিক কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও প্রধান প্রধান বিষয়ে এ দুই সংগঠনের পারস্পরিক সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা সকলেরই জানা। আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থান না ঘটলে পাকিস্তানে আজ ‘তেহরিক ই তালেবান পাকিস্তান’ (ঞঞচ) নামে কারও অস্তিত্বই থাকতো না। কাজেই তালেবান বলতে আমি আফগান তালেবান ও তার আদর্শে অনুপ্রাণিত ও তার সহযোগী অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীকেও বোঝাচ্ছি।
ইতিহাস বলছে, তালেবানদের উত্থানে পাকিস্তানের ছিল ব্যাপক সহযোগিতা আর যুক্তরাষ্ট্রের মৌন সমর্থন। কারণ, এ দু’টি দেশ তালেবান উত্থানের পেছনে নিজ নিজ স্বার্থ খুঁজে পেয়েছিল। আফগান যুদ্ধে হেরে যাবার পর এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ায় মধ্য এশিয়াতে জন্মলাভ করে পাঁচটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্রের। তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান ও আজারবাইজান। এই দেশগুলো ছিল অতি সম্ভাবনাময় দেশ। এমতাবস্থায় পাকিস্তান এ দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তার করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের সাথে মধ্য এশিয়ার ওইসব দেশের যোগাযোগ তৈরি করা রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল অর্থনৈতিক কারণে। কিন্তু তখন পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র আফগানিস্তানে চলছে চরম অস্থিতিশীলতা। এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে কোনোভাবেই আফগানিস্তান হয়ে মধ্য এশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই পাকিস্তানের দরকার হয়ে পড়েছিল আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি যা পাকিস্তানকে মধ্য এশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তান আফগানিস্তানে তেমন কোনো শক্তির সন্ধান পাচ্ছিল না যাদের ক্ষমতায় বসিয়ে সমগ্র আফগানিস্তানকে স্থিতিশীল করা যায়।
পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল আফগানিস্তানের চমন, কান্দাহার, হেরাত, মাজার-ই শরিফ ও আসগাবাদের রাস্তার নিরাপত্তা। কিন্তু তার কোনো সম্ভাবনা না দেখায় অনেকটা অনিরাপত্তার মধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তানি পণ্য নিয়ে বিশাল ট্রাকবহর মধ্য এশিয়ার পথে রওয়ানা হয়ে আফগান সীমান্ত শহর বোলদাকের নিকট স্থানীয় যুদ্ধবাজ নেতাতের হাতে আটকা পড়ে। আর ঠিক এই সময়টিতেই আফগানিস্তানে কার্যরত পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ওঝও) কান্দাহারের তালেবান নামক শক্তির সন্ধান পায়। পাকিস্তানের আটক ট্রাকবহর উদ্ধার করতে ওঝও তালেবানকে কাজে লাগায়। শুরু হয় তালেবানের উত্থানের যুগ। এর পরবর্তী ইতিহাস পাকিস্তানের নেপথ্য সহযোগিতায় তালেবানের জয়ের ইতিহাস। ‘৫ নভেম্বর ১৯৯৪ সালে তালেবানরা কান্দাহার দখল করে। এর জন্য প্রায় কয়েক হাজার পশতুন ভাষাভাষী পাকিস্তানি আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করা হয় বলেও শোনা যায়। তালেবানদের এই উত্থান সীমান্ত পারের পশতুন যুবকদের আকর্ষিত করলে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত ছাত্র যোগ দিলে তালেবানরা উত্তর পশ্চিমে এদের কর্তৃত্বকে আরও প্রসারিত করে।’ (ব্রি.জে. এম সাখাওয়াত হোসেন রচিত- তেল গ্যাস: নব্য উপনিবেশবাদ-কাবুল হতে বাগদাদ)। ‘পাকিস্তান সরকারের নিকট মোল্লা ওমরের দল অর্থাৎ তালেবানদের সংবাদ ওঝও এর মাধ্যমে পৌঁছলে পাকিস্তানের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাক্তন জেনারেল নাসিরুল্লাহ বাবর এ নতুন দলকে আফগানিস্তানে রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে পরিণত করবার সংকল্পে সর্বপ্রকার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে।’ (আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের ইতিকথা: আফগানিস্তান হতে আমেরিকা)। এ সহযোগিতার মধ্যে অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ প্রদানও অন্তর্ভূক্ত করা হয়। (প্রাগুক্ত) এক কথায় পাকিস্তানের পূর্ণ সমর্থন ও সক্রিয় সহযোগিতার মধ্য দিয়েই আফগানিস্তানের ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে সর্বশেষ ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করে তালেবানরা। আজ আমরা পাকিস্তানের সাবেক সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশারফকে বলতে শুনি- তালেবান আমেরিকার সৃষ্টি, (ডন, ০৫.১২.১৪) কিন্তু বাস্তবে আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পাকিস্তানের ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। আর পাকিস্তান সৃষ্ট ওই আফগান তালেবান আদর্শে উজ্জীবিত হয়েই আজকের ‘তেহরিক ই তালেবান পাকিস্তান’ মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতর অপরাধে মত্ত রয়েছে। এর দায় পাকিস্তান সরকার অস্বীকার করলে তা সত্যের অপলাপ হবে। বস্তুত পাকিস্তান সরকার সবচেয়ে বড় যে ঐতিহাসিক ভুলটি করেছিল তা হলো আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে জড়ানো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়নকে পরিণত হওয়া। যুক্তরাষ্ট্র তখন পাকিস্তানের সাথে দহরম-মহরম বজায় রেখেছিল শুধুই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে, পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মাটিতে মোসলেমদের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে। আর তাই যখনই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেল, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। শুধু তাই নয়- ৯/১১ এর হামলার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চল নিয়ে কোনো কর্মপদ্ধতি ঠিক করেনি, জঙ্গি উত্থানকে রুখে দেওয়ার প্রয়াস চালায় নি। আফগানরা নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ে কার্যত যুক্তরাষ্ট্রকে জয় এনে দিল, অথচ তাদের সবচেয়ে দুর্যোগময় মুহূর্তেও যুক্তরাষ্ট্রকে খুঁজে পাওয়া গেল না। সব দায়িত্ব এসে পড়ল পাকিস্তানের ওপর। ওদিকে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধ ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে পাকিস্তানের তখন লেজেগোবরে অবস্থা। পাকিস্তানের গ্রামে গঞ্জে, হাটে-বাজারে, বিমান বন্দরে সবখানে তখন আফগান যুদ্ধের অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। সোভিয়েত সেনা পিছু হটার পর থেকে আফগানিস্তানে যে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয় তার প্রভাব প্রায় এক দশকব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রহীন পাকিস্তান অনুভব করেছিল। তখন পাকিস্তানের নিজের স্বার্থেই আফগানিস্তানে একটি সরকারের অধীনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তান বেছে নিয়েছিল তালেবানদের। তখন হয়তো এটা কল্পনাও করা হয় নি যে, আজকের আফগানিস্তান সম্পর্কে অনীহায় ভোগা যুক্তরাষ্ট্র কাল তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তান নিয়ে সবচেয়ে বেশি মাথা ঘামাতে শুরু করবে এবং এক সময় আফগানিস্তানে সামরিক হামলা চালিয়ে পাকিস্তানকেও দ্বিতীয়বারের মতো বিপর্যয়ে নিক্ষেপ করবে।
সবকিছু একত্র করলে আমরা যে সমীকরণ পাই তাতে দেখা যাচ্ছে- আজ পাকিস্তানে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তার বীজ বপন করা হয়েছিল আজ থেকে কয়েক দশক আগে এবং তা হয়েছিল পাকিস্তানের সমর্থনেই। আজ পাকিস্তানে রক্তের বন্যা বইছে। প্রায়ই ঘটছে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা। জীবন দিতে হচ্ছে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সাধারণ নিরাপরাধ মানুষকে। ভয়াবহ নৃশংসতার খবর ছাপাতে গিয়ে পত্রিকায় লেখা হচ্ছে- ‘কাঁদছে পাকিস্তান’। হ্যাঁ, বিবেকবর্জিত ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর উন্মত্ত রোষের শিকার হয়ে পাকিস্তান কাঁদছে। কিন্তু এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, এই পরিস্থিতি পাকিস্তান নিজ হাতে সৃষ্টি করেছে। এটা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতের খেলনায় পরিণত হবার খেসারত। পাকিস্তান ভালোভাবেই জানে- এ বিপর্যয় সহজে কাটিয়ে উঠবার নয়। পাকিস্তানকে আরও কাঁদতে হবে। হারাতে হতে পারে আরও অনেক কিছুই।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৪

খেলাঘর বলেছেন:



মোটামুটি আবো তাবোল।

পাকিস্তানী আর্মি ক্ষমতা ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে; যারা কিছু পাচ্ছে না, তারা নিজের আইন চালু করছে।

আপনি কিন্ত তালেবানদের বাংলাদেশী আত্মীয়।

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৪

এরশাদ বাদশা বলেছেন: সময়ের কারনে পোস্টটি পড়তে পারছিনা। পড়ার অভিপ্রায় রইলো।

৩| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩২

ইসপাত কঠিন বলেছেন: পেশাগত কারনে ভারত, পাকিস্তান সহ পৃথিবীর ২০ টির অধিক দেশের মানুষকে মোটামুটি কাছ থেকে এবং একনাগাড়ে অনেকদিন ধরে দেখেছি। এর মধ্যে পাকিস্তানীদেরকে যথেষ্ট মাথামোটা মনে হয়েছে।

যে কোন কৌশলগত পরিকল্পনার অনেকগুলো দিক রয়েছে।কৌশলগত কারনে নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোন রাষ্ট্র যদি কোন সংঘাতে জড়াতে চায়, তবে সেই রাষ্ট্রকে প্রথমে অবজেক্টিভ নির্ণয় করে ওয়ার ইনিসিয়েশন প্লান, ওয়ার টাইম স্ট্রাটেজী এবং ওয়ার টার্মিনেশন প্লান ঠিক করতে হবে। একটা সংঘাতে সবসময় জড়িয়ে থেকে নিজ স্বার্থসিদ্ধি হবে না। আপনাকে সেই সংঘাত থেকে একটা পর্যায়ে ডিজএংগেজ হতেই হবে। আপনি যদি আপনার টার্মিনেশন প্লান অনুযায়ী সংঘাত থেকে সরে আসতে পারেন, তাহলে তার অর্থ হবে আপনার লক্ষ্যবস্তু অর্জিত হয়েছে। আর যদি আপনার পরিকল্পনার বাহিরের কোন কারনে আপনাকে সংঘাত থেকে সরে আসতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনি লেজেগোবরে পাকিয়ে ফেলেছেন। মাথামোটা পাকিস্তান রাষ্ট্রটি আফগানিস্তানকে স্ট্রাটেজিক ডেপ্‌থ হিসেবে ব্যাবহার করতে চেয়েছিলো। কিন্তু এই সংঘাতের কোন কৌশল এবং সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার কোন কৌশল কখনো প্রনয়ণ করেছিলো কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

পাকিস্তানকে নিশ্চিতভাবেই আরো কাঁদতে হবে। তারা তালেবানদের উপর হামলা চালিয়ে তাদের নিঃশেষ করতে চাইছে। কিন্তু এ কথাও তাদের মনে রাখতে হবে যে, এর ফলে তালেবানরা হয়ে উঠবে ক্রাশ্‌ড এ্যান্ড বার্ন্ট এ্যান্ড ডেটোনেটেড। প্রতিঘাত আসবেই।

আপনার লেখাটায় সুন্দর কৌশলগত বিশ্লেষন হয়েছে। প্রথম মন্তব্যকারীর মন্তব্য ধর্তব্যে নিবেন না। সবার লেখাই উনার কাছে আবোল তাবোল লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.