নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে ‘পিকে’র অবস্থান প্রশংসনীয়

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪০

রাজকুমার হিরানী পরিচালিত ও আমির খান অভিনীত ‘পিকে’ সিনেমাটি ভারতের চলচ্চিত্র ইতিহাসে একমাত্র সিনেমা যেটার আয় দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ৫০০ কোটি রূপিতে পৌঁছেছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে এখনও ছবিটির হাউজফুল প্রদর্শনী অব্যাহত রয়েছে। মুক্তির আগে থেকেই আলোচিত এই ছবিটি আলোচনা-সমালোচনাতেও যেন রেকর্ড করতে চাইছে। ছবিটির বিষয়বস্তুই সকল আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আবার ওই বিষয়বস্তুর কারণেই ছবিটির এত প্রচার-প্রচারণা ও ব্যবসায়িক সফলতা আসছে। অভিযোগ উঠেছে যে, ছবিটিতে হিন্দু ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। এ অভিযোগে একের পর এক মামলা খেয়ে যাচ্ছেন ছবির পরিচালক রাজকুমার হিরানী ও আমির খান। ভারতের দিল্লি, আগ্রা, হায়দ্রাবাদ, আহমেদাবাদ, ভোপাল ইত্যাদি এলাকায় ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ করার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতাও চালিয়েছে বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী দল। কেউ ছবিটিতে হিন্দু ধর্মের অবমাননা দেখছেন, কেউ কথিত লাভ জেহাদের গন্ধ পাচ্ছেন, আবার কেউ হিন্দুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের আভাষ পাচ্ছেন। ছবির প্রধান চরিত্র ‘আমির খান’ মুসলিম ধর্মাবলম্বী হওয়ায় এবং একটি দৃশ্যে পাকিস্তানিদের সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করাকেও নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে অনেক হিন্দুত্ববাদী দলের নেতা-কর্মীরা। 
যাই হোক, মূল আলোচনায় আসা যাক। পিকে সিনেমার মূল বিষয় হচ্ছে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা। ছবিটির মুক্তির আগেই পরিচালক হিরানী বলেছিলেন, তার ছবিটি ধর্মব্যবসায়ীদের খোঁচাবে। একই বিষয়বস্তুর ‘ও মাই গড’ নামের একটি সিনেমা এর আগেও ভারতে মুক্তি পেয়েছিল, যে ছবিটিতে ধর্মব্যবসায়ীদের স্বরূপ উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হয়েছিল এবং সাধারণ মানুষ যাতে তাদের ধর্মবিশ্বাসের কারণে ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতারণার শিকারে পরিণত না হয় সে ব্যাপারে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া হয়েছিল। পিকের কাহিনী কিছুটা ভিন্ন হলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ‘ও মাই গড’ সিনেমার ব্যবহার্য বেশ কিছু যুক্তি-তর্ক পিকেতেও ভিন্ন আঙ্গিকে স্থান পেয়েছে।
পিকে ছবিটির বিষয়বস্তু মোটামুটি এরকম যে, “একজন ভিন গ্রহের এলিয়েন (আমীর খান) পৃথিবীতে এসেছে। পৃথিবীতে এসে প্রথম সে যে ধাক্কাটি খায় তা হচ্ছে- তার লকেটসদৃশ রিমোট কন্ট্রোলার চুরি হয়ে যাওয়া। ওই রিমোট ছাড়া সে তার গ্রহে ফিরে যেতে পারবে না। শুরু হয় খোজা-খুজির পালা। এদিকে তার চলাফেরা, কথা-বার্তা অর্থাৎ হাবভাব দেখে লোকে তাকে (আমির খান) পিকে বলে ডাকতে শুরু করে। পিকে অর্থ মাতাল। ভিন গ্রহ থেকে আসায় পৃথিবীর মানুষের জীবনাচারের সাথে সে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছিল না। তার কাজকর্ম সাধারণ মানুষের চোখে অনেকটা মাতালের মতই দেখাচ্ছিল। যাই হোক, পিকে চোরের খোঁজে রাজস্থান থেকে দিল্লিতে পাড়ি জমায়। সেখানে এক পুলিশ স্টেশনে গেলে পুলিশ তাকে সাফ জানিয়ে দেয়- ওই চোর খুঁজে বের করা অসম্ভব। কারণ- পুলিশও মানুষ, ভগবান নয়। পিকে অবাক হয়। কিছুটা হতাশও। এরপর সে যেখানেই যায়, যাকেই জিজ্ঞাসা করে, সবাই এক কথাই বলে- ভগবানই কেবল তোমার সমস্যার সমাধান করতে পারবে, কাজেই ভগবানকে ডাকো, ভগবানের উপর ভরসা রাখো। পিকে এলিয়েন। সে জানে না ভগবান কে। তাই এবার সে ভগবানের সন্ধান করার চেষ্টা করল। কে জানে হয়তো ভগবানই তার হারানো রিমোট কন্ট্রোলার বের করে দিতে পারবে। সে নিশ্চিন্তে ফিরে যেতে পারবে নিজ গ্রহে। 
অল্প দিনেই পিকে বুঝে গেল ভগবানের অনেক ঘর আছে যেগুলো মন্দির নামে পরিচিত। সে একটি মন্দিরে গিয়ে দেখল- হাজার হাজার মানুষ মন্দিরে যাচ্ছে নিজ নিজ সমস্যার সমাধান করে নিতে। মানুষগুলো মন্দিরে হুড়োহুড়ি করে ঢুকে টাকা রাখার বাক্সে টাকা রাখছে, আর ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছে। পিকে ভাবল- ভগবানের তো বিরাট কারবার। হাজার হাজার মানুষ তাঁর কাছে আসছে-যাচ্ছে, নির্দিষ্ট জায়গায় টাকা-পয়সা দান করছে, আর ভগবান সকলের সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন। যদিও পিকে কারও সমস্যার সমাধান হতে দেখেনি তবুও সে মনে করল- সমস্যার সমাধান না হলে এমনি এমনি তো আর এত মানুষ এখানে আসতো না। এই যুক্তিতে পিকেও চেষ্টা করল। কিন্তু তার সমস্যার সমাধান হলো না, মন্দিরে টাকা দান করে ও প্রসাদ অর্পন করেও রিমোট কন্ট্রোলার পাওয়া গেল না। ভগবানের প্রতি তার অভিমান হলো, কেননা ভগবান রিমোট কন্ট্রোলার দেয় নি, অথচ টাকা অগ্রিম নিয়ে নিয়েছে। সে হতাশ হলো। থানায় গেল ভগবানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করতে। কিন্তু থানায় মামলা নেওয়া হলো না। বরং তাকে গীর্জায় গিয়ে প্রার্থনা করতে অনুরোধ করা হলো। সে সরল মনে গীর্জায় গেল। কিন্তু নিয়ম-কানুন জানা না থাকায় সে মন্দিরে যা করেছিল তা গীর্জায় করায় তাকে বের করে দেওয়া হলো। একইভাবে সে যখন মসজিদে যেতে চাইল তখনও আনুষ্ঠানিকতায় ভুল করায় তার বিরুদ্ধে মুসলমানরা উত্তেজিত হয়ে গেল। সে জীবন বাঁচিয়ে পালালো। পিকের যেন হতাশা কাটছেই না। এ কোন পৃথিবীতে এসেছে সে? এখানকার মানুষগুলো এমন কেন? কেউ বলছে ঈশ্বর মন্দিরে থাকেন, কেউ বলছে গীর্জায় থাকেন, কেউ বলছে মসজিদে। এক এক সম্প্রদায়ের কাছে ঈশ্বর এক এক রকম। ঈশ্বরকে ডাকার রীতিও ভিন্ন ভিন্ন। যে রীতিতে মন্দিরে প্রার্থনা করা হচ্ছে সে রীতি গীর্জায় অচল, যে রীতি গীর্জায় কঠোরভাবে মেনে চলা হয় সে রীতি মসজিদে কল্পনাও করা যায় না। পিকে বারবার বিভ্রান্ত হতে থাকে। সব থেকে অবাক করা বিষয় হচ্ছে- মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী প্রতারণা করে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। এসব দেখে পিকে খুব অস্বস্তিতে পড়ে যায়। 
পিকে আকুল হৃদয়ে প্রার্থনা করে- ‘হে ভগবান, আমি তো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। আমি হয়তো কোথাও কোনো ভুল করছি, যে কারণে আমার কথা তোমার কাছে পৌঁছুচ্ছে না। আমাকে পথ দেখাও ভগবান, প্লীজ। আমি ঘণ্টা বাজিয়ে তোমাকে জাগিয়ে প্রার্থনা করি, গীতার স্লোক পড়ি, কোর’আনের আয়াত পড়ি, বাইবেলের ভার্স পড়ি। কিন্তু তোমার আলাদা আলাদা ম্যানেজার ভিন্ন ভিন্ন পথ দেখায়। কেউ বলে সোমবারে উপবাস কর, কেউ বলে মঙ্গলবার। কেউ বলে সূর্য ডোবার আগেই খাবার খাও, আবার কেউ বলছে সূর্য ডোবার পর রোজা ভাঙ্গো। কেউ বলে গরুর পূজা করতে, কেউ বলে গরু বলি দিতে। কেউ বলে খালি পায়ে মন্দিরে যেও না, কেউ বলে বুট পায়ে চার্চে যাও। এর মধ্যে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল তা বুঝতে পারছি না। আমি তো হতাশ হয়ে গেলাম, আমাকে আমার গ্রহে ফিরে যেতে হবে। তুমি যা বলবে আমি তা-ই করব, শুধু আমার রিমোট কন্ট্রোলারটি ফিরিয়ে দাও।’ 
এরপর একদিন পিকে দেখল তার হারিয়ে যাওয়া রিমোট কন্ট্রোলার এক ধর্মগুরুর কাছে আছে। ওই ধর্মগুরু বলছে- ওটা সে তপস্যা করে পেয়েছে এবং ভগবান ওটাকে কোনো এক মন্দিরে স্থাপন করতে বলেছেন। ভগবান নাকি আরও বলেছেন যে, যে ভক্ত ওই বস্তুটি দেখবে তার দুঃখ দুর্দশা দূর হয়ে যাবে। পিকে ওই ধর্মগুরুর কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করল ওই বস্তুটি তাকে দিয়ে দিতে। কিন্তু তাকে দেওয়া হলো না। দেওয়া তো হলোই না, উল্টো পিকে’কে বেদম প্রহার সহ্য করতে হলো। এদিকে পিকে’র জ¹ু (আনুশকা শর্মা) নামের একজন বন্ধু জোগাড় হয়ে গেল যে একটি টিভি চ্যানেলে কাজ করে। জ¹ু এগিয়ে এল পিকেকে সাহায্য করতে। মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ব্যবহার করে কীভাবে প্রতারণার জাল বিস্তার করা হচ্ছে তা টেলিভিশন চ্যানেলে তুলে ধরার চেষ্টা করল পিকে ও তার বন্ধু জ¹ু। 
পিকে দাবি করল- মানুষ আজ ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ঈশ্বরের সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য যে কাজগুলো করছে সেগুলো ‘রং নাম্বারে’ ফোন দেওয়ার মতোই অর্থহীন। ‘রং নাম্বারে’ ফোন দিলে যেমন কেউ কাক্সিক্ষত লোকের সাক্ষাৎ পায় না, তেমনি এসব করে কেউ ঈশ্বরের কাছে যেতে পারবে না। ঈশ্বর কোনোদিন বলবেন না যে, তোমার সমস্যা হয়েছে, এসো- আমার ঘরে এসে গড়াগড়ি দাও, সমস্যার সমাধান করে দেবো। ঈশ্বর এ কথা বলতে পারেন না যে, আমার গায়ে দুধ ঢালো তাহলে তোমার মনের বাসনা পূর্ণ হবে। এ সবই রং নাম্বারের ফসল। সঠিক নাম্বারে যোগাযোগ হলে ঈশ্বর অবশ্যই এ কথা বলতেন যে, আমার মাথায় দুধ না ঢেলে তোমার আশে পাশে যে বুভুক্ষু শিশুটি না খেয়ে পড়ে আছে তাকে ওই দুধ খাওয়াও, তোমার মঙ্গল হবে। 
পিকে বুঝল মানুষ ধর্মব্যবসায়ীদের কথা শুনছে এবং অর্থ-সম্পদ দিয়ে ধর্মব্যবসায়ীদের উদরপূর্তি করছে শুধুই ভয় থেকে। ধর্মব্যবসায়ীরা স্বর্গ ও নরকের ভয় দেখিয়ে এই মানুষগুলোকে তাদের কাছে আসতে বাধ্য করছে। জ¹ুর বাবার সামনে চাক্ষুস প্রমাণ দেওয়ার জন্য একদিন পিকে ও জ¹ু জ¹ুর বাবাকে একটি কলেজে নিয়ে গেল। সেদিন ছিল ওই কলেজের পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নিয়ে খুব ভয়ে-আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছিল। পিকে কি করল, সে কলেজের গেটে পরিত্যাক্ত একটি পাথরখণ্ড ও তার মাথায় পানের পিক লাগিয়ে পাথরটিকে খাড়া করে বসিয়ে মন্দির খুলে বসল। সামনে রাখা হলো টাকা রাখার পাত্র। দেখা গেল শিক্ষার্থীরা ওই সদ্য বানানো কৃত্রিম মন্দিরে গিয়েই যে যতটা পারল টাকা-পয়সা দান করতে লাগল এবং প্রার্থনা করতে লাগলো। এক সময় সেখানে ভীড় জমল। টাকার পরিমাণও বাড়তে থাকলো ক্রমেই। পিকে এ দ্বারা প্রমাণ করল যে, মানুষ বিভিন্ন ধর্মব্যবসায়ীদের কথা শুনছে তার কারণ হলো ওই ধর্মব্যবসায়ীরা মানুষকে জাহান্নাম বা নরকের ভয় দেখিয়ে রেখেছে। তারা বলেছে- আমাদের কাছে না আসলে, আমাদের কথা না শুনলে নরকে যেতে হবে, আগুনে দগ্ধ হতে হবে ইত্যাদি। ফলে ওই ভয় থেকে মানুষ অর্থ-সম্পদ দান করে আর তা আত্মসাৎ করে এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী। যার ভয় বেশি সে দান করে বেশি, ফলে ধর্মব্যবসায়ী তার দ্বারা লাভবানও হয় বেশি। 
এসব যুক্তি-প্রমাণ টিভিতে তুলে ধরার কারণে সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেল। মানুষ সচেতন হতে শুরু করল। ধর্মব্যবসায়ীদের অর্থপ্রদান করা বন্ধ করে দিল। দেখা গেল যে টাকার বাক্সে আগে মানুষ কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালতো সেখানে টাকা তো পড়েই নি, বরং শত শত প্রশ্ন জমা পড়েছে, মানুষের ভুল ভাঙছে। ফেসবুক-ব্লগে ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এসব দেখে ধর্মব্যবসায়ী ওই গুরু বেশ ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। সে পিকেকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। 
টেলিভিশনে উভয়ের বিতর্কের আয়োজন হয়। বিতর্কে ওই ভণ্ড ধর্মগুরু অভিযোগ করে যে, পিকে চায় না ঈশ্বর থাকুন। সে আজ ঈশ্বরের সন্ধানে পোস্টার বিলি করছে, কাল এও বলতে পারে যে, ঈশ্বর মরে গেছেন। ঈশ্বর বলছেন- এই বস্তু (রিমোট কন্ট্রোলার) ঈশ্বরের দান, আর এ বলছে তার নিজস্ব সম্পত্তি, ঈশ্বর বলছেন- মন্দির বানাও আর এ বলছে মন্দির হঠাও। কাজেই এর মতো একজন মানুষের কথা শুনে আমি আমার ঈশ্বরের আদেশের লঙ্ঘন করতে পারি না। এক সময় ওই ধর্মগুরু পিকেকে উদ্দেশ্য করে বলে- তুমি কি জানো মানুষের কত দুঃখ, কত চাওয়া, কত মানুষের খাবার নেই, মাথার উপর চাল নেই, বন্ধু নেই। এই মানুষগুলোর একমাত্র বন্ধু হলো ঈশ্বর। তারা ঈশ্বরকে ভরসা করে বেঁচে থাকে, ঈশ্বরের ভালোবাসায় তাদের অন্তর সিক্ত হয়। আর তুমি কিনা তাদের ঈশ্বরকে কেড়ে নিতে চাইছো? তুমি তো সারাক্ষণ ‘রং নাম্বার রং নাম্বার’ কর। আচ্ছা এবার বল তো সঠিক নাম্বার কোনটা? 
পিকে এবার মুখ খোলে। সেও যে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে এবং ঈশ্বরকে তার বন্ধু বলে মনে করে তা ব্যক্ত করে পিকে প্রশ্ন করে- কিন্তু কোন ঈশ্বরকে বিশ্বাস করব? যে ঈশ্বর আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন তার ব্যাপারে আমার কোনো কথা নেই, কিন্তু যে ঈশ্বরকে আপনারা সৃষ্টি করেছেন সে ঈশ্বর আপনাদের মতোই মিথ্যুক, ঘুষখোর, পক্ষপাতী। (কাজেই ওই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠে না)। আর সঠিক নাম্বারের কথা বলছেন? সঠিক নাম্বার খুব সোজা। সেটা হলো- যে ঈশ্বর আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সেই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা, আর যে ঈশ্বরকে আপনারা (ধর্মব্যবসায়ীরা) সৃষ্টি করেছেন তাকে সরিয়ে ফেলা। 
চ্যালেঞ্জে ‘পিকে’ জয়ী হয়। তার হারানো রিমোট কন্ট্রোলার ফিরে পায়। এরপর পিকে তার বন্ধু জ¹ুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার নিজ গ্রহে ফিরে যায়। কিন্তু সে প্রমাণ করে যায় যে, আজ ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রতি পদে পদে প্রতারিত হচ্ছে। মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছে।”ভারতের চলচ্চিত্র জগতে ‘পিকে’ এক প্রকার আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তা বলাই যায়। এ আলোড়ন হচ্ছে কয়েক দিক দিয়ে। প্রথমত, ইতিহাসের সর্বাধিক ব্যবসায়িক সফলতা, দ্বিতীয়ত আলোচনা-সমালোচনা। ছবিটিকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি শহরে ভাঙচুরও হয়েছে। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও অধিকাংশ মানুষই মনে করছেন যে, ছবিটিতে কোনো বিশেষ ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মতো কোনো দৃশ্যের অবতারণা ঘটে নি। ছবিতে সকল ধর্মেরই ধর্মব্যবসায়ী ভণ্ড প্রতারক শ্রেণির বিরোধিতা করা হয়েছে। কাজেই ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মবিশ্বাসের জন্য এ ছবি কোনো হুমকি নয়। ইতোমধ্যেই দিল্লি হাইকোর্টও জানিয়ে দিয়েছে যে, পিকে তে আপত্তিকর কিছু নেই। 
ভারতীয় উপমহাদেশের জনগোষ্ঠী ঐতিহাসিকভাবেই ধর্মপ্রাণ হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে ভারতে যে দল ক্ষমতায় আসীন রয়েছে সেই বিজেপি’ও ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলের মানুষ সর্বদাই ধর্ম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। কিন্তু এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী মানুষের এই ধর্মবিশ্বাসকে ভুল পথে পরিচালিত করে নিজেদের স্বার্থ আদায় করে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। আর এ কাজে মিডিয়াকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ‘ও মাই গড’ কিংবা ‘পিকে’ ছবিগুলো সেই দায়িত্ব যদিও কিছুটা হলেও পালন করছে, তবে এই গোলক ধাঁধা থেকে মুক্তির বাস্তবসম্মত পথ কিন্তু এই ছবিগুলোতে উঠে আসে নি। কারণ এমন পথনির্দেশ করা মোটেও সোজা কথা নয়। তবে সঠিক পথ যা-ই হোক, তা বাস্তবায়নের জন্য সমাজের সকল স্তরের সচেতন মানুষের যৌথ প্রয়াস আবশ্যক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.