নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আজিম পরদেশী

কষ্ট মানুষকে নীরবে কাঁদায়.....

আজিম পরদেশী › বিস্তারিত পোস্টঃ

X(X(মৃ্ত্যুর পর ফুল না দিয়ে জীবীত থাকা কালীন পেটে ভাত দেওয়ার ব্যাবস্থা করুন X(X(

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:১০

যে কয়টি কারনে বাংলাদেশীরা বিশ্বদরবারে এত পরিচিত তার প্রধান কারন তাদের নিজেস্ব ভাষা,সংস্কৃতি।সংস্কৃতির সব চাইতে সফল ও পরিচিত জিনিস হলো বাংলার লোকগান।লোক কবিরা রচনা করেছেন মনের মাদুরী মিশিয়ে হাজার হাজার গান।স্বয়ং রবী ঠাকুর মুগ্ধ হয়েছিলেন হাছন রাজা এবং লালন ফকিরের গান শুনে।হাছন রাজার দেহতত্বের অনেক গান স্থান করে নিয়েছিলো রবী ঠাকুরের মনে যার প্রতিফলন রবী ঠাকুরের নিজের লিখা অনেক গানেই প্রতিয়মান হয়।এই লোকগান মানুষের মুখেমুখে সেই প্রাচীনকাল থেকেই।তৎকালীন সময় বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিলো গান বাজনা।তখন এখনকার মত এত সিরিয়াল ছিলো না।

যাদের গান আমাদের রক্তের প্রতিটা কনিকায় বিদ্যমান তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাছন রাজা ,রাধা রমন ,ফকির লালন ,জালাল খাঁ ,বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ,দুরবিন শাহ ,খালেক দেওয়ান,আব্বাস্উদ্দিন ,আব্দুল আলীম ,উকিল মুন্সী ,সৈয়দ শাহনুর ,রশীদ উদ্দিন, ফকির শীতালং ,আরকুম শাহ ,গিয়াস উদ্দিন ,ক্বারী আমীর উদ্দিন ,আব্দুর রহমান বয়াতি,কুদ্দুস বয়াতিসহ অগনীত সাধক পুরুষ।

তাদের গান গেয়ে সমাজে প্রতিষ্টিত হয়েছেন নাম, দাম ,বাড়ী ,গাড়ী করেছেন এমন শিল্পীর অভাব নাই।অনেক শিল্পী আছেন যারা টাকার বিছানায় ঘুমান অথচ যাদের গান গেয়ে তাদের এই খ্যাতি সেই গীতিকার ,গীতিকারের পরিবার,এবং তাদের অপূর্ণ স্বপ্ন নিয়ে চিন্তার কোন সময় নাই সেই সকল টাকার কাঙ্গাল শিল্পীদের।

সারা জীবন যারা এই লোকগানের জন্য সময় ব্যায় করেছেন মৃত্যুর সময় তাদের পাশে দাঁড়ানোর মত মানুষ পাওয়া যায় নাই।সরকার এবং সুশীল সমাজ কথায় কথায় ইতিহাস,ঐতিহ্য,সংস্কৃতি নিয়ে কথা বললেও বাস্তবে মৃত্যুর পর ফুল দেওয়া এবং নীতিকথা ছাড়া তারা আর কিছুই দিতে পারে নি। এমনকি মৃত্যুর সময় চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত এই গুনী শিল্পীরা।



তাদের জন্ম যদি ইউরোপ,আমেরিকা অথবা কোন সভ্যদেশে যেখানে গুনীদের প্রকৃত সম্মান দেওয়া হয় সেখানে হত তাহলে তারা মাথায় তুলে রাখতো এই গুনীদের কিন্তু আমরা বাঙ্গালীরা বরই অবাগা আমরা আমাদের পায়েও ঠাই দেই নাই এই গুনীদের।

শাহ আব্দুল করীমের জীবনী দেখলে এখনো চোখে পানি এসে যায়।বাউল সম্রাট হওয়া স্বত্বেও কি রকম দুঃখ কষ্ট অভাব অনটনে দিন কেটেছে।টাকার অভাবে নিজ স্ত্রীর চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারেন নাই।অনেক সময় অনেক কিছু খেতে মন চাইলেও পারেন নাই অর্থের অভাবে।তার জীবনে নানা স্বপ্নছিলো যা বাস্তবায়ীত হয় নি ।নিজের বলতে তাদের রচিত গান ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এমন হাজারও গায়ক আছেন যারা বাউল,ফকির,বয়াতিদের রচিত গান গেয়ে বর্তমানে জশ খ্যাতি লাভ করেছেন ।তারা তাদের বিয়েতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেন কিন্তু একটিবার খুজ নেয়ার প্রয়োজনবোধ করেন নি বাউলদের।বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম একটা কথা বলেছিলেন মৃত্যুর পূর্বে তা হলো *জীবীত করিমের গান নিয়ে অনেকেই ব্যাবসা করছে আর এই আব্দুল করিম মারা গেলে তার হাড্ডি নিয়াও ব্যাবসা হবে*।

কিছুদিন আগে আমাদের থেকে বিদায় নিলেন বাউল কফিল উদ্দিন সরকার।তিনি দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগেন অথচ থাকে টাকা দিয়ে নয় শুধু চোখের দেখা দেখার জন্য কেউ যায় নি।

সদ্য প্রয়াত আব্দুর রহমান বয়াতিকে সাহায্যের জন্য পত্রিকায় বিগ্গাপন দেওয়া হয় কিন্তু কোন সারা পাওয়া যায় নি।ওনারমত খ্যাতিমান বয়াতির কয়েক মাসের ঘরভাড়া আটকা পরে যায়।অনেক কষ্টে দুবেলা খানা জুটতো এই মরমী বয়াতির।আব্দুর রহমান বয়াতির স্মৃতিচারন করতে গিয়ে কান্নাজরিত কন্ঠে কুদ্দুস বয়াতী বলেন আব্দুর রহমান বয়াতীর মৃত্যুতে আমি আসলে কী বলব ভেবে পাচ্ছি না। যে নিদারুণ অভাব অনটনের মধ্যে আজ তার জীবনাবসান হল, সেটি যেন আর কারো না হয়। দেশের লোকসঙ্গীতে তার অবদানের মূল্যায়ন হয়নি। দেশে কয়জন মানুষ জন্ম নিয়েছে রহমান বয়াতীর মত? আগামীতে কখনো তার মতো মানুষ কী খুঁজে পাওয়া যাবে? জীবনের পুরোটা সময় নানান ধরণের গান গেয়ে যিনি এ দেশের সঙ্গীতকে এত সমৃদ্ধ করেছেন, তার পাওনা পরিশোধ করার মত না। কিন্তু বেঁচে থাকার নূন্যতম প্রাপ্য সুবিধাও পায়নি আব্দুর রহমান বয়াতী। সরকার সহ বড় মানুষদের কাছে আমার আহবান আব্দুর রহমান বয়াতীর মত শিল্পীদের আমরা যেন এভাবে আর যেতে না দিই। তাদের জন্য কিছু করা উচিত।



এ দেশে একজন সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, কাঙালিনী সুফিয়া, শাহ আবদুল করিম ও আবদুর রহমান বয়াতির মতো শিল্পীরা কোনোদিন জন্মগ্রহণ করবেন না। এঁদের মতো বড় মাপের শিল্পীদের দিয়ে ব্যবসায়ীরা টাকার পাহাড় গড়ছেন অথচ শিল্পীরা অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না এবং না খেয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। একজন সাবিনা ইয়াসমীনের চিকিত্সার জন্য চ্যারিটি কনসার্টের আয়োজন করতে হয়! যা জাতির জন্য লজ্জার, নিন্দার, ঘৃণার এবং অপমানের।

আসলে আমরা জাতি হিসাবে অনেক নির্লজ্জ।প্রতিটা সরকার চিৎকার দিয়ে বলে উন্নয়নের বন্যায় দেশ ভাসতেছে অথচ মরমী সাধক,আউল ,বাউল,বয়াতিদের কেবল থালা হাতে নেওয়াটাই বাকী ছিলো

সারা জীবন এত কষ্ট করে যারা নিরলস কাজ করেছেন তাদের রাষ্ট্রীয় সম্মানটুকু দিতে ব্যার্থ এই রাষ্ট্র ।আব্দুর রহমান বয়াতির মত লোক পান নাই একুশে পদক অথবা বাংলা একাডেমী পদক।অথচ চুর বাটপারদের টিকই অনেক পদক জুটে এই দেশে। গান ছাড়া এই সাধক পুরুষরা আর কিছুই রেখে যাননি।কালের বিবর্তনে সেই গানগুলোকে বিকৃত করে গাওয়া হচ্ছে।তাদের শেষ সম্পদ অনেকেই চুরি করে নিজের নাম ডুকিয়ে দিতেছে অথবা সবটুকু গান গায় কিন্তু কবির নামের অংশ আসলেই লজ্জাবোধ করে তখন ওই লাইন অনেক মূর্খরাই ছেরে দেয়।আমাদের নতুন প্রজন্মের উচিত এই খ্যাতনামা বাউলদের সঠিক মূল্যায়ন করা।আর যেন কোন আব্দুল করিমের আর্থিক অভাব অনটনের জন্য সোনার স্বপ্ন নষ্ট না হয়।আর যেন কোন রহমান বয়াতিকে সাহায্যের জন্য পত্রিকায় বিগ্গাপন দিতে না হয়।শেষ বয়সে কোন লোককবিকে যেন আক্ষেপ নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে না হয়।সুশীল সমাজের কাছে আকুল আবেদন আপনারা মৃ্ত্যুর পর ফুল না দিয়ে জীবীত থাকা কালীন পেটে ভাত দেওয়ার ব্যাবস্থা করুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.