নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বারিদ কান্তার

বারিদ কান্তার

জীবন যখন একটাই মৃত্যুর আগে কিছু করে যেও ভাই।

বারিদ কান্তার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘ খাই মেঘ ধরি মেঘের সমুদ্রে গোসল করি।

১২ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:২৭

বেশ কিছুদিন হলো দূরে কোথাও যাওয়া হয় না আর সময়ও পাওয়া যায় না তেমন। তাই বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম এবার ঈদের ছুটিতে দূরে কোথাও যাবো সেই অনুযায়ী প্লান প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেলো। আমাদের তালিকায় ছিলো রাঙ্গামাটি আর সাজেক ভ্যালী, অনেক আগে থেকেই যেহেতু প্লান প্রোগ্রাম চলছিলো শুরুতেই বিতণ্ডা বেঁধে গেলো আমাদের মধ্যে কোথায় যাওয়া হবে সেটা নিয়ে, হালকা খুনসুটি ছাড়া তেমন কিছুই না। অবশেষে সবাই সাজেক ভ্যালী যাওয়ার জন্যে মনস্থির করলো।
১৪ই সেপ্টেম্বর কুরবানী ঈদের পরের দিন ঠিক করা হল আমাদের যাত্রার তারিখ, সে অনুযায়ী সকল প্রস্থুতি নেয়া শুরু করে দিলাম। প্রস্থুতি হিসাবে প্রথমেই আমরা সেখানকার চাঁদের গাড়ীর বুকিং দিয়ে নিলাম এলাকার ছোট ভাই Safayet এর সহায়তায় কারণ তারা ইতোমধ্যেই সাজেক ঘুরে এসেছে। এছাড়াও তার নির্দেশনা অনুযায়ী নিলাম মোবাইল পাওয়ার ব্যাংক, মশার কয়েল, লাইটার, চার্জ লাইট এবং প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড়। চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার বাদশার সাথে কথা বলে জানলাম সাজেকে সব কিছু আগে বুকিং দিয়ে রাখলে এখানে এসে আর সমস্যায় পড়তে হয় না, সে অনুযায়ী ড্রাইভারকে বললাম আমাদের থাকার জন্যে রুম বুকিং দিতে কিন্তু সে আমাদের হতাশ করে জানালো সাজেকে এখন নাকি কোন রুমই খালি নেই, পড়লাম মহাচিন্তায়, আমাদের অবস্থা দেখে বাদশা আশ্বস্ত করলো যে আপনারা আগে আসুন একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। বাদশার কনফিডেন্স দেখে আশ্বস্ত হলাম। চুক্তি অনুযায়ী বাদশাকে কিছু টাকা অ্যাডভান্স করা হলো। তবে খেয়াল রাখতে হবে কয়জন যাচ্ছি তার উপর কারণ একটা চাঁদের গাড়ীতে সর্বোচ্চ ১০-১২ জন হলে সবচেয়ে ভালো এর চেয়ে বেশী মানুষ হয়ে গেলে রিস্কি হয়ে যায়। এসব প্রস্তুতি শেষ করে সাজেক যাওয়ার জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম।
সাজেক যাওয়ার আগের দিন রাতে মোবাইলে ভোর ৪টায় অ্যালার্ম দিয়ে শুয়েছি ঠিকই কিন্তু ঘুম আসছিলো না সাজেক যাওয়ার উত্তেজনায় এবং আরো একটা কারণ আর সেটা হল ভোর ৬টায় খাগড়াছড়ির বাস ধরতে হবে অক্সিজেন থেকে। ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো অ্যালার্ম বাজার আগেই যদিও ঘুমিয়েছিলাম অনেক দেরিতে। ফ্রেশ হয়ে মায়ের দেয়া হালকা নাস্তা খেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ফজরের আযান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই। আমরা মোট ছয়জন ছিলাম, ভোরে আমি একটু দেরী করায় যা-তা শুনতে হলো বন্ধুদের কাছ থেকে। পাহাড়তলী থেকে সিএনজি ঠিক করলাম অক্সিজেনের উদ্দেশ্যে এবং রাস্তা ফাঁকা থাকায় মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই আমরা অক্সিজেন পৌছে গেলাম। খাগড়াছড়ি ডিলাক্স বাস শান্তি পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখি টিকিট শেষ আগত্য উপায় না দেখে খাগড়াছড়ির লোকাল বাসে চড়ে বসলাম। সকাল সাড়ে ৬টায় রওনা দিয়ে সাড়ে ১০টায় পৌঁছলাম খাগড়াছড়ি বাস স্ট্যান্ডে। যেহেতু আগেই আমাদের চাঁদের গাড়ি ঠিক করা ছিলো তাই বাসস্ট্যান্ডে নেমেই তাকে ফোন দিলে সে জানায় জীপ সমিতির সিরিয়াল ইস্যুর কারনে সে বাসস্ট্যান্ডে আসতে পারবে না তাই কি আর করা আমরা কিছুক্ষন অপেক্ষা করে হালকা নাস্তা করে নিলাম তারপর বাসস্ট্যান্ড থেকে অটো ধরে ড্রাইভার বাদশার নির্দেশনা অনুযায়ী খগরাপুর পুলিশ ফাঁড়ি গিয়ে চাঁদের গাড়ি ধরলাম। বাদশা জানালো আমরা ইতোমধ্যেই সাজেক যাওয়ার সকালের এস্কট মিস করেছি সে আরো জানালো আমাদের সাজেক যেতে হবে বিকালের এস্কটে তাই যেটুকু সময় আছে এখানকার কাছেই অবস্থিত দিঘীনালা বনবিহার আর থাংঝাং ঝর্ণা দেখে যেতে পারেন আমরা ভাবলাম বেশতো রাজী হয়ে গেলাম। প্রথমে গেলাম দিঘীনালা বনবিহারে, বিহারের নিরিবতাই আসলেই অনুভব করার মতো বিষয় আর সেখানকার সোনালী কারুকাজ করা ভাস্কর্যগুলো সত্যি খুবই সুন্দর। সেখান থেকে পাহাড়ি রোঁদের তাপমাত্রা মাপতে মাপতে পায়ে হেঁটেই দিঘীনালা বাজারে গিয়ে দূপুরের খাবার সারলাম। খেয়ে বেশী সময় নষ্ট না করে থাংঝাং ঝর্ণার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, ঝর্ণাটি সাজেক যাওয়ার পথেই পরে। প্রধান সড়ক থেকে নেমে পায়ে হেঁটে কাদামাটি মাড়িয়ে প্রায় ১০-১৫ মিনিট পরে ঝর্ণাঅব্দি পৌঁছলাম। ঝর্ণার সচ্চ-শুভ্র সৌন্দর্য দেখে আমদেরকে আর কেউই আঁটকে রাখতে পারলো না আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়লাম ঝর্ণার ঘোলা পানিতে। ঝর্ণার পানির নিচে যতক্ষণই দাঁড়িয়ে ছিলাম মনে হচ্ছিলো যেন ক্ষনে ক্ষনে ঝর্ণার গতি উঠানামা করছিলো ঝর্ণার এক একটা ফোটা যেন পিঠ সেধিয়ে যাচ্ছিলো। ঝর্ণার গতি এমন ছিল যেন প্রচণ্ড থাবায় দূরে সরিয়ে দিচ্ছিলো। ঝর্ণার পানিতে আধঘন্টার মত দাপিয়ে ফিরে এলাম গাড়িতে। যেহেতু কড়া রোদ ছিল তাই ভেজা কাপড় পরিবর্তনের জন্যে সময় নষ্ট না করে গাড়ির ছাদেই চড়ে বসলাম রোদ আর বাতাসে ভেজা কাপড় শুকিয়ে যাবে তাই।
১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই আমরা সাজেক যাওয়ার সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট এসে পৌঁছলাম সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১০ মিনিটের মধ্যেই আবার চাঁদের গাড়ি সশব্দে ছোটা শুরু করলো এবার গাড়ি এসে দাঁড়ালো বাঘাইছড়ি হাঁটে, মূলত সেনাবাহিনীর এস্কট শুরু হয় এখানথেকেই। এটা ছিলো বিকাল ৩টার এস্কট সামান্য যেটুকু সময় বিরিতি পেলাম এখানকার চা খেতে ভূল করলাম না। চা শেষ করে আবার গাড়ির ছাদে চড়ে বসলাম এবং শুরু হয়ে গেলো আসল অ্যাডভেঞ্চার এবং সেটা ছিলো অবশ্যই সাজেকের পথ আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পুরাই যেন রোলার কোস্টার রাইড। যাদের হার্ট এর প্রব্লেম আছে তাদের গাড়ির ছাদে না উঠাই বেটার। আর অবশ্যই খুব শক্ত করে ধরে বসতে হবে, যদিও সাজেকের রাস্তার জার্নিটা একটু কষ্টকর তারপরও জার্নিটা উপভোগ করতে না পারলে আসল মজাই মিস হয়ে যাবে। মেঘময় নীলাকাশের ছাদ পাশে সবুজ পাহাড়ের দেয়াল আপনার সাথে সাথে চলছে দেখলেই যেকেউ মুগ্ধ হবে ফর সিউর! আর হ্যা সেখানে আপনাকে হাত নেড়ে স্বাগত জানাবে রাস্তার দুপাশ থেকে উপজাতীয় ছোট্ট শিশুরা!
বাঘাইছড়ি থেকে দীর্ঘ ২ঃ৩০ ঘন্টা জার্নি শেষে অবশেষে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছলাম। সাজেক পৌঁছেই বিপাকে পড়লাম থাকার ব্যাবস্থা আগে না করায়। যেহেতু বাদশা আগেই কথা দিয়েছিলো একটা ব্যাবস্থা করবে সে, কয়েক জায়গা ঘুরে "নাগ্রই নক" নামে একটা রিসোর্ট পেয়ে গেলাম ভাগ্যক্রমে যেটা আমাদের সবারই খুব পছন্দ হল কারণ এই রিসোর্টের সব কিছুতেই ছিলো শিল্পের ছোঁয়া। দুপাশে চারটা করে মোট আঁটটি রুম রয়েছে এই রিসোর্টে, ডানপাশের রুমগুলোর নদীর নামে নাম এই যেমন কাচালং, মাচালং আর বা পাশের গুলো ফুলের নামে নাম। আমরা বাপাশের যে রুমটিতে ছিলাম তার নাম ছিলো খুমসারি, এটাচ বাথরুম থাকায় আমাদের আর কষ্ট করতে হল না হালকা ফ্রেশ হয়েই বেড়িয়ে পড়লাম সাজেকের বিকালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। বিকালে বের হয়ে আমরা সেদিনের সূর্যের দেখা বেশীক্ষন না পেলেও সন্ধ্যার পূর্ণচাঁদ ঠিকই পেয়েছিলাম। এটা ছিল সত্যি মনে রাখার মত একটা সন্ধ্যা, খোলা আকাশের নিচে ভরা জোছনা সাজেক জিরো পয়েন্ট হ্যালিপ্যাডটাকে তখন স্বর্গ মনে হচ্ছিলো। চাঁদের এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমি হ্যালিপ্যাডের উপর শুয়ে পড়েছিলাম। কতক্ষন ছিলাম জানি না তবে যতক্ষণ ছিলাম ততক্ষনি মুগ্ধ হচ্ছিলাম এমন বিরল সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে পেরে। ফিরে এলাম রাতের খাবার আর সকালের খাবারের অর্ডার দিতে কারণ এখানে অ্যাডভানস বুকিং না দিলে কিছুই পাওয়া যায় না। রুমে ফিরে ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা(যা আমরা আগেই আমাদের সাথে করে কিনে নিয়ে এসেছিলাম) করে নিলাম এবং আড্ডা দিতে দিতে রাতের খাবারের সময় হয়ে গেল। রাতের খাবার খেলাম এক ত্রিপুরা আধিবাসী আথিতেয়তায়। খাবার সার্ব করতে আসা ১০-১২ বছরের ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম তাদের ভাষায় ধন্যবাদ কে কি বলে?
"ক্যালাম্যাও"...মানে ধন্যবাদ তাই জানিয়ে রাতের খাবার শেষ করে মধ্যরাতে চাঁদের আলোয় সাজেকের সড়ক ধরে হাঁটতে লাগলাম। আসলে এমন অভিজ্ঞতার কথা ভাষায় বলে বুঝানো যাবে না। হ্যালিপ্যাডের কাছে এসে দেখি আরো বেশ কয়েকজন তাবু টাঙিয়ে রাত যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আর কেউ কেউ বার-বিকিউ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রুমে ফিরলাম ক্লান্ত হয়ে। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম প্রচণ্ড ক্লান্তির করণে। তার আগে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম ভোরের সৌন্দর্য দেখবো বলে।
অ্যালার্ম বাজা মাত্রই ঘুম ভেঙ্গে গেলো তখনও বাইরে অন্ধকার কিছুই দেখার উপায় নাই তাই ঠিক করলাম আবার ঘুম দিবো বাট কিসের ঘুম পোলাপাইনের জ্বালায় সেটা ছিল দুঃসাধ্য। আগত্য বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ভোরের সৌন্দর্য মানে সাজেকের আসল রূপ দেখবো বলে। বেরিয়েই হতাশ হতে হল কারণ যেই মেঘকে হাতের মুঠোয় ধরবো বলে বেরিয়েছিলাম তার কোন চিহ্নই চোখে পড়ছেনা এখানে, দেখা যাচ্ছিলো মিজোরাম বর্ডারের পাহাড় ঘেঁষে তাদের খুনসুটি। মেঘের জন্যে আমরা ওয়েট না করে কাংলাক পাহাড়ের উদেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম। সাজেক জিরো পয়েন্টের পরের রাস্তাটি খানিকটা ইটের আর বাদ বাকিটা মাটির তাই গাড়ি নিয়ে আসা রিস্কি ছিলো। পাহাড়ের ঢাল ধরে আমরা হাঁটছিলাম স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করে জানলাম কাংলাক পাহাড় আরো ২০-৩০ মিনিট দূরে খাড়া উপরে, যদিও আমরা অলরেডি ৩০ মিনিটের পথ হেঁটে এসেছি সকালে কিছু না খেয়েই তাই ক্লান্ত হয়েই ব্যাক করার সিদ্ধান্ত নিলাম, আর ফেরার পথেই সাজেকের আসল রূপ ধরা দিলো আমাদের হাতে। ভারী একটা মেঘের দল পাড়ি দিচ্ছিলো পাহাড়টা আর তা থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও পড়ছিল, মেঘের মধ্যে হাঁটছি এ ছিলো এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা মনে হচ্ছিলো যেন মেঘের সমুদ্রে সাতার কাটছি। আমি আমার টিশার্ট খুলে ফেললাম মেঘ আর বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে। মেঘের মধ্যে সাতার কাটতে কাটতে কখন যে সাজেক জিরো পয়েন্ট এ ফিরে আসলাম তা খেয়াল করিনি পুরো সাজেক যেন তখন মেঘেদের দখলে পাঁচ কদম দূরেও কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। আর কিছুক্ষন পরে কাছেই সেনাবাহিনী পরিচালিত রেস্টুরেন্ট এ সকালের নাস্তা মানে ডিম খিচুড়ি খেয়ে সকালের এস্কটে সাজেক থেকে বের হবার প্রস্তুতি নিয়ে চাঁদের গাড়িতে চড়ে বসালাম এবং এবারের মত সাজেক কে জানালাম
ক্যালাম্যাওওওও...............।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১২

কানিজ৮৪১ বলেছেন: সুন্দর হয়েছে

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৪৪

বারিদ কান্তার বলেছেন: ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.