নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহস করেই স্বপ্ন দেখি

আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্ন দেখেছি যে তুমি তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছো...

শাদা-অন্ধকার

এক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে -গ্রাম ছেড়ে শহরে, শহর ছেড়ে আপাতত পৃথিবীর রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু ওয়াশিংটন ডি.সি তে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি তে অনার্স,মাস্টার্স করে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন বুকে নিয়ে প্রবাস যাপন।\nখুব কষ্ট হয় যখন দেখি \'৭১ নিয়ে এ প্রজন্মের অজ্ঞতা, যখন দেখি লালনের গান রিমিক্স হয়ে পরিচিত হয় আরেকজনের গান হিসেবে। খুব কষ্ট হয় রাজাকারদের হাতে কিংবা গাড়িতে লাল সবুজ পতাকা দেখে।\nভালোবাসি ভালোবাসতে। সুপরিচিত বদমেজাজী হিসেবে।

শাদা-অন্ধকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওয়াশিংটন ডিসি'র আকাশে শাদা কালো রোদ-৩

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২


১…
সন্ধ্যে বেলায় ল্যাব থেকে বাসায় ফিরেই দেখি দরজার উপর নোটিস টাঙ্গানো। ক্লান্ত শরীরে টাঙ্গানো অবস্থায় পড়া শুরু করলাম। পড়তে নিয়েই চক্ষু চড়কগাছ! “এই বাসার অধমবাসি, বাসার সামনের পেভমেন্টে সলিড ওয়াস্ট ডাস্টবিন সময়মতো রাখা হয়নি কিংবা খালি বিন টেক ব্যাক করা হয়নি তাই আপনাকে ৭৫ ডলার জরিমানা দিতে হবে। এই নোটিস প্রাপ্তির ১৪ দিনের মধ্যে না দিলে সমপরিমাণ জরিমানা সহ ব্লা ব্লা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে”। ইনভেস্টিগেটর অনুগ্রহ করে ডাস্টবিনের ছবিও সাথে এটাচ করে দিয়েছে আমাদের জ্ঞ্যাতার্থে। আহা! সময় মতো বিন তুলতে ভুলে যাওয়ায় মাশুল টা একটু কমই হয়ে গেছে...

২...
আমার ল্যাবমেট দেখি একদিন একটা এক্সপেরিমেন্ট করার মাঝখানে হটাৎ ভোঁ দৌড়- থার্ডফ্লোর থেকে রাস্তায়। ফিরে এলে জিজ্ঞেস করলাম তুমি এমনভাবে মাঝখানে দৌড় দিলে কেন? হাঁপাতে হাঁপাতে বললো- গাড়ির পার্ক রিনিউ করাতে গেছি। কিন্তু লাভ হলোনা। গিয়ে দেখি ২৫ ডলার ফাইনের টিকেট ধরিয়ে দিয়েছে। মাত্র একমিনিট লেট করেই ২৫ ডলার! জিজ্ঞেস করলাম-অন্যান্য দিন কিভাবে রিনিউ করো? ও বলে আমার ফোনে একটা এ্যাপ আছে যা দিয়ে আমি অটো রিনিও করাতে পারি। আমি আজ ফোন ফেলে এসেছি তাই এখন ২৫ ডলার গুনতে হবে! বললাম , যাক বাবা! গাড়ি নাই তো টেনশন ও নাই। ও হেসে বলে- পরশু আমি ২০০ ডলারের টিকেট পেয়েছি, বাসায় ছবি সহ পাঠিয়ে দিয়েছে। ফ্লোরিডা এভেন্যিউ তে সেইবেলা স্পীড লিমিট ছিলো ৩৫ মাইল পার আওয়ার আর আমার গাড়ির স্পীড ছিলো ৪০ মাইল পার আওয়ার; তাতেই এক্সকিউজ করলোনা! ড্রাইভিং ইন ডিসি রিয়েলি সাক্স...আমি বললাম – হোয়্যাই ডোন্ট ইউ ওপেন এ ফিক্সড একাউন্ট ফর ইয়োর কার সো দ্যাট ইউ ক্যান পে ইয়োর ফাইনস্ অটোমেটিক্যালি ? ও হেসে বলে—আমিও তাই ভাবছি হাহ হা হা…

৩…
আমার ক্লাসমেট ক্লাসে বসে রাগে গরগর করছে। জিজ্ঞেস করলাম –ইভান তোমাকে আজ এমন দেখাচ্ছে কেন? আর ইউ ওকে? ও বলে- আর বলোনা! আজ ভোর পাঁচটায় বের হয়েছি বাসা থেকে।ভেবেছি রাস্তা খালি থাকবে তাই আরলি পৌছে যাবো ডিপার্টমেন্টে। তুমিতো জানোই ম্যারিল্যান্ড থেকে ডিসিতে আসতে সকাল বেলা কেমন ট্র্যাফিক হয় রাস্তায়। তো রাস্তা খালি ছিলো দেখে দু’কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে শুনতে আসছি, হটাৎ দেখি পেছনে পুলিশ আমাকে গাড়ি থামানোর ইশারা দিচ্ছে। গাড়ি থামিয়ে বললাম –আমি তো স্পীড লিমিটের অনেক নিচে ড্রাইভ করছি—তুমি আমাকে থামতে বললে কেন? পুলিশ সাহেবে বলল- আপা, আপনি দু’কানে হেডফোন দিতে পারবেননা। অনলি এক কানে হেডফোন এলাউড। আপাতত ৫০ ডলার জরিমানার টিকেট দিলাম! হ্যাভ এ গুড ডে! ইভান ঘানার মেয়ে, তবে এই দেশে আন্ডার গ্র্যাড করাতে নিয়ম কানুন ভালোই জানে। সে চিৎকার করে বলে , আমি কাল কোর্টে যাবো... শালারে আমি এক টাকাও দিবোনা...

৪.
আপাতত শেষের ঘটনাটা আমার নিজের। গত ডিসেম্বরে ক্রিসমাসের ছুটিতে জ্বর বাধিয়ে বসলাম। তিনদিন অপেক্ষার পর যখন দেখি জ্বর কমার লক্ষণ নেই, ভাবলাম ডাক্তার দেখাই। এইদিকে ইউনিভার্সিটির হেলথ সেন্টারও বন্ধ । কিন্তু ওয়েব সাইটে নোটিস দেয়া—এই সময়ে যদি কারও অসুখ বিসুখ হয় তবে সে যেন ইউনিভার্সিটির হসপিটালে এমার্জেন্সিতে দেখায়। তবে তার আগে যেন একজন নার্সের সাথে কথা বলে নেয়—এই নাম্বারে... ।দিলাম ফোন। এক মহিলা খুব বিরক্তি সহকারে ফোন রিসিভ করে বললো তুমি হসপিটালে যাও। এমার্জেন্সিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-দ্যাখো আমি এই ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট। ইউনিভার্সিটির হেলথ সেন্টার বন্ধ থাকাতে আমাকে এইখানে আসতে বলা হয়েছে। তো আমি এইখানে ডক্টর দেখালে আমার ইন্সুরেন্স কাভার করবে কীনা? রিসিপসনিষ্ট মহিলা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো তোমার আইডি কার্ড আছে সাথে? দিলাম। ও কিচ্ছুক্ষন কি চেক করে বললো- হ্যা, কাভার করবে। তুমি নিশ্চিন্তে ডক্টর দেখাও। ডক্টর কী সব হাবিজাবি টেষ্ট শেষে বললো তোমার আপার রেস্পিরেটরি ট্র্যাক এ কিছু ইনফেকশন দেখা যাচ্ছে তো আমি এন্টিবায়োটিক দিচ্ছি, তিন দিনেই সুস্থ্য হয়ে যাবে। ঠিক ঠিক তিন দিন পর সুস্থ্য হয়ে মনে মনে ভাবছিলাম, আহা! যাক এমন এক দেশে আসলাম- যেইখানে পৃথিবীর সেরা চিকিৎসার সুযোগ নিতে পারবো। কী চমৎকার! সেই ভাবনার রেশ কাটতে সময় লাগেনি। সপ্তাহ খানেক পেরুতেই একদিন বাসায় চিঠি এলো আমার ইন্সুরেন্স থেকে। তাতে লিখা—তোমার ফাইল ঘেটে আমাদের মনে হয়েছে তোমার অসুখটা লাইফ থ্রেটেনিং না যা এমারজেন্সি তে যাওয়ার মতো তাই আমরা তোমার ৬৭১ ডলারে বিল টা অত্যন্ত দুঃখের সাথে ডিনাই করছি। তুমি এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আপীল করতে পারো ১৮০ দিনের মধ্যে।
হোয়াট দ্যা হেল!! ৫ মিনিট দেখলো তাতেই ৬৭১ ডলার? মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। শালার হেলথ সিস্টেম অব এমেরিকা! এর চেয়ে আমার দেশেই ভালো। যে মহিলার সাইন ছিলো চিঠিতে তাকে কড়া ভাষায় লিখলাম একখানা ই-মেইল। বললাম, ফাইজলামি পাইসো? আমি কি স্ব-ইচ্ছায় এমার্জেন্সি তে গেছি? স্টুডেন্ট হেলথ সেন্টার বন্ধ ছিলো দেখে ওদের ওয়েবসাইটের কথা মত হসপিটালের এমার্জেন্সিতে গেছি। শখ করে কেও এমার্জেন্সিতে যায় নাকি? ওয়েব পেইজের স্ক্রিণশটও পাঠিয়ে দিলাম। সেই সাথে বললাম- তোমরা যদি এইটা পে না করো দ্যান আমি অন্য কোম্পানিতে সুইচ করার কথা ভাববো। দেখি ৩-৪ সপ্তাহ কোন রিপ্লাই নাই। অবশেষে গত পরশু সকালে মেইল পেলাম—মি. আহাম্মক ...।, গ্রেট নিউজ! আমরা তোমার বিলটা প্রথম বারের মত কনসিডার করছি। এনজয় আওয়ার সার্ভিসেস... ব্লা ব্লা ব্লা... ভাবলাম, এই জন্যই প্রেসিডেন্ট ওবামা তার হেলথ রিফর্ম নিয়ে এতো জটিলতায় পরে গেছেন। এই সব প্রাইভেট ইন্সিওরেন্সগুলো কোন ভাবেই চায়না হেলথ সেক্টরটা সরকারী খাতে চলে যাক। লাভের হিসাবের খাতাটা যে না হলে চুকে যাবে…

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮

বিদ্রোহ_বাবু বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া । ছবিটা কি আপনার তোলা ?

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১৪

শাদা-অন্ধকার বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। না, ছবিটা আমার তোলা না। তবে আমার বেশ প্রিয় একটা ছবি।

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৫

থার্ড পার্সন প্লুরাল বলেছেন: এত বাধ্যবাধকতা ভাল লাগে না ।নিজের মত করে চলতে না পারা যে কি কষ্ট ।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১৫

শাদা-অন্ধকার বলেছেন: "এত বাধ্যবাধকতা ভাল লাগে না "-- সহমত। তবে বাধ্যবাধকতা না থাকলে জীবন পানসে হয়ে যেত, তাইনা?

৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হাহা এই ড্রাইভ এর ল এর কথা কি বলব আপনাদের ওখানে তো তবু জরিমানা তে কাজ হয়, শারজাহ তে মিনিমান ৮০ থেকে শুরু করে চাবুক মারার ল.
আপনার ল্যাবমেটের মত, আমার এখানে এক ভাই আছেন, বেতনের হাফ মনে হয় জরিমানা দেয়।
আর হেলথ সারভিস ইন্সুরেন্স কভার করলেও হাপাতাল গুলি ভাল না, এর চাইতে আমাদের ঢাকা তে ভাল ব্যবস্থা।

আপনি বেশ মজা করে লিখেছেন।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:১৮

শাদা-অন্ধকার বলেছেন: শারজাহ তে হেলথ ইন্সুরেন্স?! ডেভিলস এভরিহোয়্যার...
ফাইন আছে বলেই হয়তো সবাই ল' মেনে চলার চেষ্টা করে। ইউসএ তে রাস্তায় স্পীড লিমিট আর জরিমানা না থাকলে পৃথিবীর সবচেয়ে অনিরাপদ যোগাযোগ ব্যাবস্থা হিসেবে পরিচিত হতো সন্দেহ নেই।।

শুভ কামনা।

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৪৭

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন: :P

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪

শাদা-অন্ধকার বলেছেন: :P:P

৫| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৫

এহসান সাবির বলেছেন: চমৎকার। শেয়ারে ধন্যবাদ।


শুভ কামনা রইল।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০০

শাদা-অন্ধকার বলেছেন: শুভ কামনা এহসান সাবির

৬| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১১

তাশমিন নূর বলেছেন: আমরা তাহলে ভালোই আছি। চোখ নাই, চোখের পানিও নাই। :P

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৬

শাদা-অন্ধকার বলেছেন: স্বদেশ স্বর্গসম... সন্দেহ নেই। "চোখ নাই, চোখের পানিও নাই।" :P ভালো বলেছেন... হা হা হা

৭| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৪

চেয়ারম্যান০০৭ বলেছেন: ভারজিনিয়াতে ট্রাফিকের জ্বালা কম ভাই, শান্তিতে আছি কিছুটা। কিন্তু বাড়ি ভাড়া অনেকঃ(

৮| ৩১ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৪৫

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:

I will be doing research in D.C. during summer. Kothay bolbo na :P

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৩২

শাদা-অন্ধকার বলেছেন: really? Great! let me guess..... NIH? but its not in DC though.. GWUor Georgetown?

৯| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:১৪

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
NIH এ হয়েছে। আমাকে অ্যাপ্লিকেশানে সেন্টার সিলেক্ট করতে বলেছিল। যেটা করেছিলাম, ওইটা ওয়াশিংটন ডিসিতে। আমি সারপ্রাইসড। আপনি বলেছিলেন, আশা করি NIH এ হয়ে যাবে। আই কুডন্ট বিলিভ ইট!

মাউন্ট সাইনাইতে আর ইয়েলে হয়েছে। কিন্তু এটাই করব। আর বাকি কয়েকটার রেজাল্ট এখনও দেয়নি।

থ্যাংক্স।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.