নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asrafulalam

ব্যোমকেশ বাবু

ব্যোমকেশ বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বানিয়ে বলা সত্য : হামিদ মস্কিটো কিলার

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১৪


(অনু গল্প)

হামিদের মুখ থেকে গোঙানির মতো শব্দ হচ্ছে । ঘুমের মধ্যেই কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। এটা নতুন কিছু নয়। হামিদ এখন তার দাদিকে দেখছে স্বপ্নে। হামিদদের বাড়ির গোয়াল ঘরের কোনায় দাদি বসে বসে কি যেন করছে। হামিদ আস্তে আস্তে দাদির পেছনে এলো

" ও দাদি কি করো " হেসে উঠলো দাদি

" বাপধন কিছু না , ওষুধ বানাই "

হামিদ বুজতে পারলো না দাদি আসলে কি করছে। কিন্তু তীব্র একটা ঝাঁঝালো গন্ধ হামিদের দম বন্ধ করে দিচ্ছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। হামিদের গোঙানি বেড়ে গেলো। অনেকটা গরু ছাগল জবাই করলে যে রকম শব্ধ হয় সেই রকম। শক্ত একটা ঝাকুনি দিয়ে হামিদ বিছানায় উঠে বসলো। দুঃস্বপ্ন ছিল এটা। ঘুম ভাঙ্গায় হামিদ যেন প্রাণ ফিরে পেলো। কিন্তু তীব্র ঝাঁজালো গন্ধটা এখনো পাচ্ছে হামিদ। আর সাথে নিঃশ্বাসের কষ্টটাও বুজতে পারছে।পাশের টেবিলে হারিকেনের মতো একটা মশা মারার যন্ত্র। হামিদ মস্কিটো কিলার। হামিদের আবিষ্কার। যেনতেন আবিষ্কার নয়। রীতিমতো পেটেন্ট করা এই মশা মারার যন্ত্র। নিঃস্বাশের কষ্টটা বাড়ছে হামিদের ।

সকাল ৮.২০ মিনিট

হামিদ বিছানা থেকে উঠে মশা মারার যন্ত্রটা বন্ধ করে দিলো । আর ফেলফেল করে তাকিয়ে রইলো যন্ত্রটার দিকে। মোবাইল ফোনটা হাতে নিলো। প্রতিদিনের অভ্যাস। ঘুম থেকে উঠে মিরাকে একটা মিস কল দেয়া। মিরা হামিদের বৈধ স্ত্রী। পেশায় ডাক্তার। হামিদ ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়লেও তার স্ত্রী একজন এমবিবিএস ডাক্তার এটা হামিদও অনেক সময় মানতে চায় না। তাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মাত্র দিন পাঁচেকের। সে অনেক লম্বা কথা।

হামিদ কল বাটনটা চাপ দিলো। রিং বাজতে থাকলো। ওপাশ থেকে কেউ ধরে না। না ধারারই কথা। মিরা এখনো এই নম্বরটা ব্যবহার করে কিনা কে জানে ?

আজকে হামিদের অনেক বড় একটা মিটিং আছে। সরকারের বক্ষ ব্যাধি হাসপাতাল প্রায় হাজার খানেক মশা মারার যন্ত্রটা নেবে। অনেক বড় একটা চুক্তি হবে। অনেক নামি দামি লোকজন থাকবে। চ্যানেল গুলুর ক্যামেরা থাকবে। মিরা থাকলে ভালো হতো।

সকাল ১০.০৫ মিনিট

ঢাকা শহরের বাস গুলুর অবস্থা বেশ খারাপ। ধাক্কা ধাক্কি। হামিদের মতো একজন এতো বড় মাপের আবিস্কারক এই রকম যেন তেন বাসে চড়বে এটা মেনে নেয়া কষ্টের। একদিন ঠিকই হামিদের নিজের গাড়ি হবে। ড্রাইভার থাকবে। আর বাইরে প্রচন্ড গরমে হামিদ এসি ছেড়ে গাড়িতে ঝিমুবে।

দুপুর ১২.১৫ মিনিট

বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শফিক সাহেব। বক্ষ ব্যাধি হাসপাতালের ডিজি। অদ্ভুত ভাবে হামিদের দিকে তাকিয়ে আছে। টেবিলে হামিদের মশা মারার যন্ত্র। শফিক সাহেবের মাথায় কিছুতেই আসছে না কি আছে এই যন্ত্রে ? তিনি মোটামুটি শতভাগ নিশ্চিত হামিদ একটা বড় মাপের বাটপার। সবাইকে ধোকা দিলেও শফিক সাহেবকে বোকা বানাতে পারবে না। কিন্তু উনার হাত পা বাধা। উপর মহলের চাপে পরে উনাকে প্রায় হাজার খানেক এই অদ্ভুত যন্ত্রটা কিনতে হচ্ছে।

তো হামিদ সাহেব কি খাবেন ? শফিক সাহেবের বেশ করা আওয়াজ।

হামিদ মিনমিন করে বললো "না স্যার আমি নাস্তা করে এসেছি "

হামিদ জানে শফিক সাহেব তার পুরোনো ইতিহাস প্রায় সবই জানে। মিরাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ের পর হামিদ প্রায় ৫ মাসের মতো জেল হাজতে ছিল। নারী নির্যাতন মামলায়। যদিও হামিদের কোনো দোষ ছিল না। মিরা প্রাপ্ত বয়স্ক ছিল আর নিজের ইচ্ছেতেই হামিদের হাত ধরে পালিয়েছে। কিন্তু মীরার মা দিলো কেস ঠুকে হামিদের নামে। ফলাফল হাজত বাস। হাজতের যন্ত্রনা যে কি তা হামিদ জানে। নিজেকে রক্ষার জন্য হামিদ হাজতে নামাজ পর্যন্ত পড়াতো। এরপরও রক্ষা হতো না।

বিকাল ৪.০০ মিনিট

বিকেলের মধ্যে শফিক সাহেব প্রায় ১২০০ এর মতো মশা মারার যন্ত্রের ওয়ার্ক অর্ডার দিলেন হামিদকে। ঢাকা শহরে অনেক মশা। এর মধ্যে আবার বক্ষ ব্যাধি হাসপাতাল বলে কথা। কোনো ভাবেই রোগীদের কষ্ট দেয়া যাবে না। হামিদের যন্ত্রনটার এই একটা গুন্। কোন রকম গন্ধ ছাড়াই মশা মারতে পারে এটা। যন্ত্রটার ভেতরে কি আছে হামিদ কাউকে বলে না। এটা পেটেন্ট করা একটা আবিষ্কার। একমাত্র হামিদ জানে ওই মশা মারার যন্ত্রের ভেতর কি ওষুধ আছে। আরেকজন অবশ্য জানতো। যাই হোক। এতো সব জেনে কাজ নেই। হামিদ ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েই খুশী ।

রাত ১১.৩০ মিনিট

হামিদের মন বেজায় খুশি। রাতে হাজি বিরিয়ানি খেয়ে মেসের খাটে শুয়ে দাদির কথা ভাবছে। আজকে রাতে দাদি আবার স্বপ্নে আসবে। হামিদের গলা শুখিয়ে আসে। যতবারই হামিদ মশা মারার যন্ত্রটা বিক্রি করে দাদি স্বপ্নে একবার করে আসে। কি যেন বলতে চায়। হামিদ জানে দাদি কি বলতে চায়। কিন্তু হামিদ শুনতে চায় না। হামিদের আবিষ্কার হামিদ জানে। আর জানে দাদি। হামিদ এটাও জানে দাদি কিভাবে মারা যায়। কিন্তু ভুলে থাকতে চায়। যন্ত্রটার ভেতরে পেটেন্ট করা জিনিসটার কথা কাউকে বলা যাবে না।

তীব্র ভয়ে হামিদ চোখ বন্ধ করে। জানে আজকে দাদি আসবে আর আবারও কিছু বলার চেষ্টা করবে।

(হামিদ চরিত্রটি বাস্তব । পাঠকরা হামিদ সম্পর্কে জানতে চাইলে হামিদের ফেসবুক পেইজে গেলে হামিদকে পাবেন https://www.facebook.com/ma.hamid.771 হামিদ এখন একজন সফল ব্যাবসায়ী। দেশের প্রায় সব কটি চ্যানেল হামিদকে নিয়ে খবর প্রচার করে। হামিদ মালেশিয়াতে মশা মারার যন্ত্রটির কারখানা দিবে এই বছর। )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.