নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asrafulalam

ব্যোমকেশ বাবু

ব্যোমকেশ বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যাংক কন্সপিরেসি থিওরি ও বাংলাদেশ

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:০৮


আমার স্ত্রী আর আমার কর্ম জীবন কাল প্রায় একই সময় । আমার স্ত্রীর কর্মস্থল ছিল একটি ব্যাংক আর আমি ছিলাম টেলিকমের সেলসম্যান । অসাধারণ এক কর্ম প্রাপ্তি ছিল আমার । মাইনে বেশ মোটা । কিন্তু দেখতে দেখতে আমার স্ত্রীর মাইনে আমাকে ছাড়িয়ে যেতে বছর খানেকও লাগলো না । ব্যাপারটা এতো সহজ কিছু না । অন্তত সামাজিক ভাবে । ভাগ্য ভালো বিধায় এই যাত্রা মান রক্ষা হলো । না হলে এতদিনে আমি হয়তো আমার স্ত্রীর ব্যাংকে সেলসম্যানের কাজ করতাম । দেশে ব্যাংকের সংখ্যা প্রায় কয়েক ডজন । অথচ লন্ডন বা নিউ ইয়র্কে হাতে গোনা চার পাঁচটি ব্যাংক । ঠিক কিভাবে আমাদের দেশে এতো ব্যাংক আমার জানা নেই । তবে আর যাই হোক অনেকের কর্মপ্রাপ্তি বেশ ভালো বিধায় কেও হয়তো এই পর্যন্ত ব্যাংকের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন করেননি ।

ব্যাংক গুলু নিয়ে তুলকালাম চলছে দেশে । একের পর এক ব্যাংক সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছে । যে দেশের ব্যাংক গুলুর সাথে বাইরের কোন দেশের ব্যাংকের সরাসরি লেনদেন নেই তারা কিভাবে সমস্যায় পরে তা একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক বলতে পারবে । এমনিতেই বিশ্বের প্রায় সব দেশের ব্যাংকিং অবস্থা প্রায় একই রকম । আমেরিকাতে প্রায় প্রতি দশ বছরে অন্তত একবার রিসেশন হবে । বন্ধ হবে ব্যাংক বীমা । অতঃপর সরকার হস্তক্ষেপ করে সব সমস্যা সমাধান করে দিবে । সোজা কথা যে টাকা ব্যাংক ক্ষতি করে তা সরকার প্রিন্ট করে আবার ব্যাংকে দিয়ে দেয় । মোটামুটি এটাই বিশ্ব ব্যাপী ব্যাংকের কন্সপিরেসি ইকোনোমিক্স ।

আমাদের দেশেও হয়তো তাই হবে । সরকার একসময় অনেক টাকা প্রিন্ট করে ব্যাংকগুলোর ভল্টে ঢুকিয়ে দিবে । টাকা প্রিন্ট করতে তো আর সমস্যা নেই । যারা মোটামুটি জ্ঞানী তারা এতক্ষনে বলে বসতে পারেন "রাবিশ" । আদতে নিজের চোখে দেখা তো আর অবিশ্বাস করা যায় না ? ২০১০ এর দিকে ব্রিটেনে ঠিক একই সমস্যা হয় । ব্যাংক গুলু সব লিকুইডিটি সমস্যায় জর্জরিত । হটাৎ একদিন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রউওন রাতের বেলা পাউন্ড প্রিন্ট করে ভরে দিলেন ব্যাংক গুলুর এ টি এম এ । এরপর উনি অবশ্য বলেছিলেন ওই রাতে যদি ব্যাংক গুলুকে টাকা দেয়া না হতো পরের দিন লন্ডনের কোনো এ টি এম এ টাকা থাকতো না । সমস্যা সমাধান ।

এক্ষেত্রে কোনো মুদ্রানীতি কাজ করে না । কারণ স্বর্ণের রিজার্ভের উপর টাকা পয়সার দিন এখন আর নেই । যে কোনো দেশের সরকার যখন খুশি তখন যত খুশি টাকা প্রিন্ট করতে পারে । এটাই ছিল ডিপ রিসেশন থেকে বের হবার একমাত্র উপায় । যদি তাই হয় তাহলে আমাদের সরকার চাইলেই বেশ কিছু টাকা প্রিন্ট দিয়ে ব্যাংক গুলুকে দিয়ে দিলেই হয় । কিন্তু সারা দিন বসে যদি টাকা কোথায় গেলো তা নিয়ে টক শো করা হয় তাতে কি টাকা ফেরত আসবে ? কোনো দেশেই আসে না । আমাদেরও আসবে না । অতঃপর সরকার
রক্ষা করবে ব্যাংক গুলোকে ।

গেলো সপ্তাহে ডলারের দাম বেড়ে প্রায় ৮৩ টাকা । আমার অনেক কলিগ নিউ ইয়র্ক থেকে সমানে দেশে টাকা পাঠাতে থাকলো । এই রকম রেট সব সময় পাওয়া যায় না । তবে আমরা জানতাম ঠিক কি কারণে ডলারের দাম বাড়তি ছিল । কারণ সরকার দেশি টাকা প্রিন্ট করতে পারলেও ডলার প্রিন্ট করতে পারে না । যদিও জিম্বাবুয়ে একসময় এই কাজটিও করেছিল । সমানে ডলার প্রিন্ট করলো দেশটি । সুতরাং সরকারকে যখন ডলার এ পেমেন্ট করতে হয় পদ্যা সেতুর বিদেশী কারিগরদের তখন ডলারের দাম একটু বাড়িয়ে আমাদের ডলার গুলু রিসার্ভ করে । খুবই সরল সমীকরণ ।

তাহলে কথা দাঁড়ালো যত খুশি অনাদায়ী ঋণ থাকুক না কেন ব্যাংক গুলো একসময় ঠিকই টাকা ফেরত পাবে । সরকার তো আছেই । তাহলে কিছু লোক ব্যাংক এর টাকা মেরে দিয়ে ভুঁইফোড় হয়ে গেলো ? হলই বা । তাতে আমাদের সমস্যা কি ? আমাদের আমানত এর খেয়ানত তো হয় নাই ।

ব্যাংক এর এই সব নিয়ে এতো কানাঘুষা হতো না যদি দেশে একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক মনিটর করতো। এখন অর্থ মন্ত্রণলায় আর বাংলাদেশ ব্যাংক এই দুই প্রতিষ্ঠান একসাথে একটি ব্যাংককে মনিটর করছে । সমস্যা এই জায়গায় । কারণ এখানে একজন জানে ব্যাংক এর এই কন্সপিরেসি ব্যাংকিং থিওরি আর একজন জানলেও মানতে চায় না । অতঃপর সমাধান টিভি চ্যানেল এর টক্ শোতে । আর আমাদের মতন যারা সামান্য গাড়ির ইনস্টলমেন্ট টানতে হিমশিম খাচ্ছি তারা কোন ভাবেই মানতে চাচ্ছি না এই রকম হরিলুট । হরি থাকলে লুট হবেই । সবার ভাগ্যে ঋণ খেলাপি পদবি জুটে না ।

আমাদের সমস্যা আমরা ভুল করে কটলার পড়ে ফেলেছি । কিন্তু সরকার বা মন্ত্রনালয় অথবা ব্যাংকের মালিকরা কটলার চিনেন না । তাই তারা খুব সহজে টাকা প্রিন্ট করার কথা ভাবতে পারে । আর বাংলাদেশ ব্যাংক এর কর্মকর্তরা যেহেতু কটলার মানেন তাই ভাবতে একটু কষ্ট হয় । যে কোন অর্থনীতিবিদের সাথে এই নিয়ে কথা বলবেন দেখবেন ঘন্টা খানেক সমষ্টিক অর্থনীতি কপচিয়ে শেষমেশ ব্যাংকের এই কন্সপিরেসি ইকোনোমিক্স মেনে নিবেন । আর আমরা যাদের স্ত্রী ব্যাংক এ কর্মরত তাদের ব্যাংক নিয়ে একটু বেশি চিন্তা করতে হয় । কারণ টাকা পয়সা গেলে ফেরত পাবার সুযোগ থাকে । কিন্তু মান সন্মান গেলে সমস্যা । সরকার তো আর মান সন্মান প্রিন্ট দিতে পারবে না ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: খুব মন দিয়ে লেখাটা পড়লাম। ভালো লিখেছেন।

২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৩

প্রামানিক বলেছেন: মানসন্মান প্রিন্ট করা যায় না, শেষের কথাগুলো ভালোলাগল।

৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:০৯

গরল বলেছেন: টাকা না হয় প্রিন্ট করল কিন্তু পেয়াজ প্রিন্ট করবে কিভাবে? টাকা প্রিন্ট করতে করতে তো পেয়াজের দাম স্বর্ণের সমান হয়ে যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.