নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নীল সূর্য

হ্যাপী

আমি পথিক , আমি শান্ত । ধরণীর বুকে হেটে আমি হব না কভু ক্লান্ত ।

হ্যাপী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের তদন্তকাল হবে অনন্তকাল

০৯ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:০০

বিশেষ দিবসগুলো দিনকে দিন নারীর জন্য ঝুকিপুর্ন হয়ে উঠছে । আজ এই দিবস কাল ওই দিবস উদযাপন যেন সুযোগ হয়ে গেছে বিকৃতমণা পুরুষগুলোর। ভিড়ের মাঝে একজন মেয়ে/নারী যেন তাদের খুবই কাঙ্ক্ষিত বস্তু, যা দেখা মাত্রই ছুয়ে দেওয়া যায়। নারী তো সামাজিক সম্পদ, এদের দেখা মাত্রই ছুয়ে দেবার এই অধিকার অলিখিতভাবে বোধহয় পুরুষকে অর্পণ করা হয়েছে । যদি তা নাহয় তবে কেন এই আচরণ? এই প্রশ্ন করাটা আসলে খুবই অবান্তর কারন এই প্রশ্নের উত্তর দেবার ইচ্ছা বা ক্ষমতা আসলে এই মুহুর্তে কারোরই নেই। এই উত্তর দেবার ক্ষমতা যাদের আছে তাদের এইসব বিষয় দেখার সময় নেই। এই ছোট-খাটো বিষয়গুল সবসময় তারা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করেন এবং বড় জিনিসের সফলতার পেছনে দু-চারটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা না ঘটলে আসলে কোন কিছুই যেন পুর্ণতা পায় না।

আচ্ছা একটা মিছিলে কত লোক থাকে? অথবা ওইদিনের মিছিলে কত লোক ছিল? ধরলাম ১০০। এই ১০০ লোকের মাঝে যদি ৮০টা জানোয়ার থাকে তবে কি ২০টা মানুষ ছিলো না? তবে ওই ২০ জন মানুষ কি করছিলেন? এই ২০টা মানুষের যদি একটা বিশ্লেষণ করি তাহলে সেটা কেমন হতে পারে? ধরেন প্রথম শ্রেণী হল ক্যাপচার গ্রুপ, এরা সব ক্যামেরা বন্দি করতে পচ্ছন্দ করেন। ধরেন ঘটনা যখন ঘটছিল হয়ত তার একটু এগিয়ে আসলেই পারত মেয়েটিকে রক্ষা করতে, কিন্তু তিনি/তারা সেটা করেন না। কারন তাহলে তারা বঞ্চিত হতেন ব্যাপক সেই বিনোদন থেকে। এই ক্যামেরা বন্দি ছবি/ভিডিও তারা বাড়ি গিয়ে দেখবেন, আপলোড করবেন, নানান ব্যাঙ্গের ছাতা গ্রুপে শেয়ার করবে। কেউ হয়ত অর্থও আয় করবেন এটা থেকে। এবার আসি দ্বিতীয় শ্রেনিতে, এরা সুশীল গ্রুপ। এরা সমাজের এমন এক শ্রেণি যারা সমতা, সাম্য, মুক্তি, জাগরণ, আলোড়ন সব নিয়ে কথা বলে ধরেন মুখে ফেনা তুলে ফেলে। এরা আবার যখন ধরেন বাড়িতে যায় আয়েশ করে ওই ভিডিও দেখবে, মজা নিবে, পরেরদিন বিশাল পোষ্ট দিবে। এইভাবে চলতে পারে না, আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। সমা্জ পরিরবর্তনের কান্ডারি হাতে নিতে হবে বলে ধরেন একেবারে ফেইসবুক কাপায় ফেলবে। বিকালে মশাল নিয়ে আরেটা মিছিল বের করবে। সেই মিছিলে কয়জন মলেষ্ট হবে, একেবারে চক্রবৃদ্ধিহারে এই ঘটবে এবং ঘটেই যাবে। তৃতীয় শ্রেণিতে আছেন আপন-প্রাণ বাঁচা গ্রুপ, এরা গান্ধির সেই তিন বানর যারা কিছু বলে না, দেখে না, শুনে না। এরা যেহেতু মাছ ধরেনা তাই গা ভিজানোর ঝামেলায় যেতে নারাজ।
এবার আসি আমাদের মহামান্য কতৃপক্ষের দিকে। ওনারা সেই পিতার মত আচরন করেন যার আসলে বাবা হওয়ার ক্ষমতা নেই, অথচ স্ত্রী হয়ে গেছে ছেলের মা। তাই তিনি এক বুলি আউরান এই ছেলে কার? এই ছেলে কার? বেচারা এতই বুদ্ধিমান যে জনগণকে কি জানিয়ে দিচ্ছেন তা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এখন কতৃপক্ষ ছেলের দায়ভার নিবেন নাকি ছেলেকে ত্যাজ্য করবেন সেটা হয়ত আপনারা জেনেই গেছেন। আচ্ছা চলুন একটা গল্প পড়ি (রুপক)।
দবির সাহেব আমজনতা লীগের নির্বাহি সম্পাদক এবং মাননীয় মন্ত্রী । ছুটির সকাল নাস্তা সেরে বারান্দায় হাল্কা রোদে বসেছেন ১৪টি নিউজপেপার নিয়ে। তিনটার শিরোনাম পড়েই দবির সাহেবের হাই চলে আসলো । একই খবর ছেপে ছেপে এরা ক্লান্ত হয়না নাকি? আমজনতা লীগের সোনার ছেলেরা নাকি এই কি-সব রেইপ টেইপ করে বেরাচ্ছে, বলি কালও যে সেতুর নতুন স্প্যান বসিয়ে আসলাম ওই খবর কি লোকজন খাচ্ছেনা নাকি? আর ছেলেপুলেগুলোর নাহয় একটু খাসলত খারাপ তবে খুবই ডেডিকেটেড, পজিটিভ বা নেগেটিভ যেকরেই হোক দল কিন্তু লাইম-লাইটে আছে এটা কিন্তু খুবই জরুরি। জনগণের সাথে থাকতে হবে সেটা যেমন করেই হউক, এখন যদি জনগণ হাল্কা-পাতলা শোষিতও হয় সেটা তাদের ভালোর জন্যই।
দবির সাহেব বসে আছেন তার অফিস রুমে, মা্রিয়া রুমে ডুকলো পাংশু মুখে। গুড মর্নিং স্যার। গুড মর্নিং মারিয়া। দবির সাহেব একবার ভালো করে মারিয়াকে দেখে নিলেন। বেগুনী রঙের শাড়ি পরেছে মারিয়া, ভাল লাগছে দেখতে। দবির সাহেব একগাল হেঁসে বললেন, মারিয়া আজকে তোমার জন্মদিন নাকি? মারিয়া স্মিত হেঁসে বলল না স্যার আজ বিশ্ব নারী দিবস। দবির সাহেব হাই তুলে বললেন ওহ! মারিয়া হাতের নিউজপেপারগুলো দবির সাহেবের সামনে রাখলো। দবির সাহেব চোখ সরু করে বললেন মারিয়া আমাদের বিশেষ প্রেস-রিলিজ/বার্তা কি গিয়েছে? মারিয়া মাথা ঝাকিয়ে বলল জী স্যার গিয়েছে। দবির সাহেব আবার একগাল হেঁসে বললেন এই জন্য তোমাকে খুব ভালো লাগে, তোমার মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। বুচ্ছনা বিষয়টা? মারিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। দবির সাহেব মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল মারিয়া তোমার মাথায় ওইটা কি ফুল? মারিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল স্যার আজকের পত্রিকা পড়েছেন? দবির সাহেব গদগদ মুখে বললেন না পড়ি নাই, কেন কি আছে পত্রিকায়? স্যার গতকালকের মিছিলে দলের ছেলেরা একটা স্কুলের মেয়েকে মলেষ্ট করেছে। কি করেছে বললা? মলেষ্ট স্যার । তা ওই মেয়েও কি আমাদের মিছিলে আসছিল নাকি? না স্যার মেয়েটি স্কুল থেকে বাড়ী ফিরছিলো। ওহ! স্যার আজকে নারী দিবস উপলক্ষে আপনার একটা প্রেস ব্রিফিং আছে ৩টায়। ওহ । স্যার এই বিষয় নিয়ে ব্রিফিং এ আপনি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারেন। কি বিদ্ধ বললা? স্যার প্রশ্নবিদ্ধ। ওহ । দবির সাহেব নিজের চশমাটা হাতে নিয়ে বললেন, মারিয়া তুমি কি এই বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তিত? মারিয়া জবাব দিল না। মারিয়া শোন, রাজনীতি বড়ই কঠিন জিনিস, নরম মন নিয়ে এই ময়দানে নামতে নাই। প্রশ্ন করলে তার উত্তরও আছে। এই নিয়ে তিনদিন লিখা আসবে, ভিডিও আসবে, ফেইসবুক গরম থাকবে। চারদিনের দিন সব ভুলে যে যার কাজে ব্যস্ত হবে। আমাদের জনগণ যতদিন ফেইসবুকে হান্দায় আছে আমরা ততদিন ঘটনা ঘটায় যাব।আমাদের জনগণের অনুভুতি তাপমাত্রার মতই উঠানামা করে বুঝচ্ছ? এরা সিরিয়ার গ্ণ-হত্যা নিয়ে হায় হায় করে যেমন অনুভুতির তলানিতে চলে আসে, তেমনি সানি লিওনির ভিডিও দেখে এদের অনুভুতি আতকা লাফ দিয়া উপরে আইসা পরে। বুঝলা? মারিয়া ব্যথিত চোখে বলল, স্যার সংবাদ সম্মেলনে কি বললবেন ? দবির সাহেব অট্টহাসি দিয়ে বললেন যা বলি তাই বলব। ঘটনা ঘটছে এখন ঘটনার তদন্ত হবে। আমাদের তদন্তকাল হবে অনন্তকাল। মারিয়া আহত চোখে তাকিয়ে থাকে। স্যার এইভাবে আর কতদিন? এবার দবির সাহেব বিরক্তি নিয়ে বলেন সেটা দেখার দায়িত্ব আমার, তোমার ভাবতে হবে না, তুমি এখন যাও,আমার কিছু জরুরী কল করতে হবে। মারিয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলে দবির সাহেব বিরবির করে বলেন, এই বেশি শিক্ষিত মেয়েছেলের এই কমন প্রবলেম, এরা খালি প্রশ্ন করবে আর বলবে এটা ঠিক না ওইটা ঠিক না । এই জন্য মেয়েছেলেকে বেশি শিক্ষিত করতে হয়না।
ব্রিঃদ্রঃ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় উক্ত সংবাদ সম্মেলেনে নারী স্বাধীনতা নিয়ে দারুন বক্তব্য দিলেন। নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকার কি কি করবেন আর কি কি করেছেন তা পুংক্ষানুভাবে তুলে ধরলেন। প্রশ্ন-উত্তর পর্বে যথারীতি বললেন এই ঘৃনিত কাজ যারা করেছেন তারা দলের কেউ না, ভিডিও ফুটেজ তারা সংগ্রহ করেছেন এবং তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশ দিয়েছেন। খুব দ্রুতই কালপ্রিটদের ধরে আইনের আয়ত্তায় আনা হবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৮

গোলাম রাব্বি রকি বলেছেন: সমাজের এখন যে অবস্থা তাতে প্রতিবাদ করাটা খুব কঠিন কাজ । আমার নিজের চোখে দেখা একটা ঘটনার কথা বলি । বগুড়া শহরে আমার পাশেই মেসে থাকতো এক ছেলে । ছেলেটা প্রতিদিন সকালে ফুটবল খেলার জন্য শহরের একটা মাঠে যেত । একদিন সকালে যাওয়ার সময় সে একটা ছিনতাই এর ঘটনা দেখল এবং ছিনতাইকারীর কবল থেকে আক্রান্ত কে রক্ষা করল । বিনিময়ে দুইদিন পর সে ছিনকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় । বিচার হয়নি কোন ! কে করবে বিচার ! আর আপনি মানবেন কিনা জানি না , বর্তমান ছাত্ররাজনীতিতে মানুষ নাই সব অমানুষ ..

২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:২১

হ্যাপী বলেছেন: ধন্যবাদ রকি আপনার মন্তব্যের জন্য। যদি একবার মেয়েটির অবস্থানে নিজেকে রাখেন তাহলে বুঝবেন ব্যাপারটা একটা মেয়ের জন্য কতটা স্পর্সকাতর । ১২-১৫ জন লোক আপনার শরীরে হাত দিচ্ছে বিষয়টা কেউ হয়ত কল্পনাই করতে পারবে না। এই ক্ষতের দাগ যতনা শারীরিক তারচে মানসিক বহুগুনে। কোন ছেলে এগিয়ে এলে তিনি হয়ত কিছুটা শারীরিক আঘাত পেতেন, মেয়েটা হয়ত বেঁচে যেত , হয়ত আরো ২জন লোক এগিয়ে আসতো একজনের দেখাদেখি। অনেক কিছু হতে পারত। আমাদের এই গা-বাচানোর অভ্যাস আমরা যতদিন লালন করব এই জানোয়ারগুলো ততদিনে বহুদূর চলে যাবে।

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০৫

গোলাম রাব্বি রকি বলেছেন: আপনার কথার সাথে আমি সামান্য ভিন্নমত পোষণ করবো । অবশ্যই সমাজের মানুষের জেগে ওঠার দরকার আছে । তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের জীবন যুদ্ধ নিয়েই ব্যস্ত । আপনি হয়তো খেয়াল করবেন অধিকাংশ সমাজের মানুষকেই জাগিয়েছে একজন করে মহামানব । আমাদের দেশেও প্রয়োজন এখন এমন কাউকে । আর সেই মাহামানবটা রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা কেউ হলে বিষয়টা আরও সহজ হয় । আর আপনি জানোয়ার গুলোর ভবিষ্যতে বহুদুর চলে যাওয়ার যে কথা বললেন তা অলরেডি হয়ে গেছে । আপনার জন্য শুভকামনা রইল ।

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৩২

হ্যাপী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ মুল্যবান মন্তব্যের জন্য। দেখা যাক আমরা মহামানব পাই কিনা। তবে কেউ মহামানব হয়ে উঠুক সেই আশায় রইলাম। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.