নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

My scrapbook!

বৃতি

অলস সময়ে শব্দ নিয়ে কিছু কাটাকুটি খেলা চলে। সাহিত্য, গভীর চিন্তাশীলতা, দর্শন- ইত্যাদি ইত্যাদি এখানে না খোঁজাই ভালো।

বৃতি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী ও নারীদিবস।

১০ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:২৭





নারীদিবস সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা কিছুটা অস্পষ্ট। আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ৮ই মার্চ, এ অনলাইনে অনেক পুরুষকে দেখলাম, নারীদিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন নারীদেরকে। কয়েকজনকে দেখলাম, ভালোবাসা জানালেন নারীদেরকে। অনেকে হাসাহাসি করলেন। অনেকে বললেন, আমাদের পুরুষদিবস কই? অনেকে বললেন, নারীদেরকে তারা শ্রদ্ধা করেন পরিপূর্ণভাবে, বছরের প্রতিটা দিন, আলাদা দিবসের দরকার নাই।

নারীদিবসের যেদিন দরকার পড়বে না, সেদিন সবচেয়ে খুশি হবে কে জানেন? নারীরা। নারীদিবস নারীকে মনে করিয়ে দেয়, পুরুষের সমান অধিকার তোমার নেই। তুমি অর্ধাঙ্গিনী। পুরুষের প্রয়োজনে তার পাঁজরের হাড় থেকে তুমি উদ্ভূত। তুমি মিসেস রায়হান। পৈতৃক সম্পত্তিতে তোমার অধিকার অর্ধেক। তোমার শারীরিক শক্তি কম, তুমি পুরুষের থেকে কম মজুরি পাবে। শারীরিক শক্তি কম বলে তোমাকে রাস্তাঘাটে যন্ত্রণা আর অপমান করা যাবে। দূর্বল বলে প্রত্যুত্তর দেয়ার সাহস হবে না তোমার। মানুষ হিসেবে প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে তোমাকে এখনও অনেক পথ পেরুতে হবে।

উপরের কথাগুলো কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত নারীর জন্য এপ্লিকেবল না হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীর জন্য প্রযোজ্য। যারা নারীকে শ্রদ্ধা করেন, নারীর অবদানকে স্বীকার করেন, তাদের চোখে পৃথিবীটা কেমন দেখায়, তা বোঝার চেষ্টা করেন-- তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইল। আমি পুরুষবিদ্বেষী নই। পৃথিবীতে নারী এবং পুরুষকে একে অন্যের পরিপূরক বলে ভাবি। সমান গুরুত্বপূর্ণ ভাবি। তবে বুঝতে পারি, একজন মেয়েকে আমরা স্বাভাবিক পৃথিবী উপহার দিতে পারিনি এখনো।

প্রতিটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থান ভিন্ন। আমি স্বীকার করি, বাংলাদেশের মানুষ মা’কে নিয়ে বেশ আবেগী। নিজ ঘরের অন্যান্য নারীদেরকেও নিজের চিন্তা আর ভাবনা অনুযায়ী যার যার মত করে নিরাপত্তা দিতে চান পুরুষরা। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে নারীর অবস্থান কেমন? বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে দেখা যাক। নারী রাস্তাঘাটে একজন পুরুষের মত সহজে চলাফেরা করতে পারে না। বারোহাতি শাড়ী, বা বিশাল ওড়নায় নিজেকে ঢেকেও শরীর নিয়ে তাকে কখনো কখনো অপমানসূচক কথা শুনতে হয়। কাজের জায়গায় সঠিক পোশাক পরার প্রয়োজনীয়তা নারীর চেয়ে ভালভাবে কে বুঝবে? কর্মজীবী একজন নারী নাইট শিফটে কাজ করতে পারেন, স্বাভাবিক কর্মযজ্ঞ সেরে অনেক রাতে তার ঘরে ফেরার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তনুর কথাই ভাবুন, টিউশন সেরে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরতে চেয়েছিল, ফিরতে পারেনি। মেয়েরা ভীত থাকে, অস্বস্তিতে থাকে তার নারীত্বের কারণে। মাতৃত্ব নারীর অহংকার। অবিসংবাদিতভাবে ঘরের কাজ, সন্তানের কাজের সাথে শুধুমাত্র নারীকে সম্পর্কযুক্ত দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। কর্মক্ষেত্রে কখনো যোগ্যতর হয়েও প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে মেধাবী নারী।



সারা পৃথিবীজুড়ে কমবেশি একই ধরনের চিত্র। মৌখিকভাবে নারীকে সমঅধিকারের স্বীকৃতি জানালেও কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। বাস্তবতায় নারীর সেরকম অবস্থান চাই। একটি মেয়ে জন্মের পর থেকে স্বস্তিতে বেড়ে উঠবে, পড়াশুনা করবে, চাকুরী করবে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবে, তার মাতৃত্বকে উপভোগ করবে। নারীত্বকে সে বোঝা মনে করবে না, নারীত্ব তার আইডেন্টিটি, নারীত্ব তার গর্ব। পৃথিবীতে নারীর এই অবস্থান যতদিন না আসবে, আমি চাই বা না চাই, নারীদিবসের প্রয়োজনীয়তা ততদিন থাকবে।

বিশ্বায়ন (গ্লোবালাইজেশন) আর তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে কার্যক্ষেত্র পরিবর্তন হচ্ছে খুব দ্রুত। যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম, তাদের জন্য নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ২০১৭ এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, “Women in the Changing World of Work: Planet 50-50 by 2030”. সোজা বাংলায়, পরিবর্তনশীল কর্মক্ষেত্রে নারীর ভুমিকাঃ ২০৩০ সাল নাগাদ, প্ল্যানেট ৫০-৫০। দেখা যাচ্ছে কাজ করতে সক্ষম, এমন নারীদের ভেতর মাত্র ৫০ শতাংশ কাজে আছেন। কাজ করতে সক্ষম পুরুষদের ভেতর ৭৬% কাজ করছেন। শ্রম বাজার বলুন, আয়ের ক্ষেত্রেও বলুন, ঘরোয়া কাজে বলুন—সব জায়গাতে নারী আর পুরুষের ভেতর বৈষম্য প্রকট।

International Women’s Day 2017

UN Women expert Shahra Razavi (তাঁর সব কথার সাথে আমি একমত নই। তবু শেয়ার করলাম, নারীদিবস নিয়ে তাঁর ভাবনাগুলো অন্যরাও জানুক। )

Anne Hathaway on International Women's Day

নারীদিবসকে নিয়ে আপনার ভাবনা কি? বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের কর্মক্ষেত্রে সহজ স্বচ্ছন্দ অংশগ্রহণ কিভাবে সম্ভব? আপনার ছোট মেধাবী মেয়েটির মেধা আর মননশীলতার পূর্ণ বিকাশ ঘটুক, তার কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারুক, এ নিয়ে আপনার কোন ভাবনা আছে কী? নারীর সামাজিক আচরণগত কোন বিষয়গুলো একজন পুরুষের কাছে অসুবিধাজনক বলে মনে হয়? পুরুষের কোন আচরণগুলোর কারণে একজন নারীর সামাজিক অংশগ্রহণ বাধাপ্রাপ্ত হয়? নারী-পুরুষ-বান্ধব একটি ফাঙ্কশনাল কর্মক্ষেত্র ও পরিবেশ কীভাবে তৈরি করতে পারি? সবার মতামতকে স্বাগতম। সবার অংশগ্রহণ কাম্য।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কথাগুলো সঠিক। আমি একমত।

১২ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৪৫

বৃতি বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাইয়া :)

২| ১১ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৭

ক্লে ডল বলেছেন: নারী যেহেতু এখনো তার যোগ্যতার স্বীকৃতি পায়নি, আমি চাই তার যোগ্যতাগুলো দৃষ্টিগোচর হোক। তার সক্ষমতা, যোগ্যতা, প্রাপ্য অবস্থান নিয়ে আলোচনা হোক। সেক্ষেত্রে, আমি বিশ্বাস করি, নারী দিবসের গুরুত্ব রয়েছে।

নারী তার নারীত্ব নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগে। যতার্থ বলেছেন।

আর এ দৃষ্টিভঙ্গীর আমূল পরিবর্তন দরকার। এবং দৃষ্টিভঙ্গী বদলের জন্য শিক্ষিত সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে।

১২ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৫৭

বৃতি বলেছেন: নারীর সক্ষমতা, যোগ্যতা, প্রাপ্য অবস্থান নিয়ে আলোচনা হোক। আপনার সাথে আমি একমত। তবে "শিক্ষিত সমাজ" কথাটা নিয়ে কিছুটা দ্বিমত আছে :) শিক্ষিত আর অশিক্ষিতের মধ্যে ব্যবধান করার থেকে আমি বরং "স্বশিক্ষিত" টার্মটা ব্যবহার করবো এখানে। যিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে পারেননি, তাদের মাঝেও অনেক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি আছেন।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, ক্লে ডল।

৩| ১৩ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:২৬

অগ্নি সারথি বলেছেন: বাসী কথাগুলো আরেকবার বলতে হল বলে দুঃখিত।

নারী দিবসটা শুরু হওয়া মাত্র ফেসবুকে আমার বন্ধু তালিকায় থাকা 'স্রাবনের মেঘ' নামক জনৈক সদ্য ছ্যাকা খাওয়া (বোধ করি) এক ব্যাক্তির একটা পোস্টে আমার দৃষ্টি আটকে যায়। তিনি অন্তরঙ্গ মুহুর্তের একটা ভিডিও শেয়ার করে জনৈক বালিকার নাম-ঠিকানা, পরিচয় উল্লেখ পূর্বক তরুন সমাজের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলছেন যে মেয়েটি একটা প্রতারক এবং বাজে মেয়ে। সে ছেলেদের সাথে প্রেম করবার পর তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে ছেলেদের জীবন নষ্ট করে। তরুন সমাজ যেন মেয়েটির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সে জন্য তিনি আকুল আহ্বান জানিয়েছেন।

শুকর ছানাটা যে ভিডিওটা লিক করেছে নিঃসন্দেহে সে এটা করেছে সামাজিক এবং পারিবারিক ভাবে মেয়েটিকে স্বর্বশান্ত করবার উদ্দেশ্য নিয়ে কারন সে খুব ভাল করেই জানে, আমাদের এই তথাকথিত চরম রক্ষনশীল সমাজ ব্যবস্থাটা, ভিডিওটির পুরুষ চরিত্রে তার উপস্থিতি এবং তার ভিডিও প্রকাশে নীরব থাকবে এবং মেয়েটির এহেন ঔদ্ধতকে দমন করবে কঠোর হস্তে। তাকে হতে হবে চরম লাঞ্চিত, অপমানিত এবং স্বর্বশান্ত। এমনটাই হয়ে এসেছে আজ অবধি কোন প্রতিকার ছাড়াই। স্রাবনের মেঘ নামক শুওর গুলো একটার পর একটা ভিডিও লিক করে, আর আমরা সমাজ প্রথমে সেই ভিডিও দেখে গায়ের উত্তাপ বাড়াই তারপর বীর্যপাত ঘটিয়ে এসে ভিক্টিম নারীটিকে পতিতা অপবাদ দিয়ে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাই।

নারীর সমধিকার প্রতিষ্ঠার প্র্যাকটিসটা একটা দিবস কেন্দ্রিক নয় বরং প্রতিটা মুহুর্তে দরকার। তথাকথিত নারীবাদীগন সমধিকার টার্মটা নিয়ে সদা চিৎকার করতে থাকেন সেটা আমি এভাবেই বুঝি। তার জন্য আমার নির্দিষ্ট কোন পন্যবাদী দিবস লাগে না। প্রতিটা মুহুর্ত আমার নিকট নারীদের জন্য, মানবতার জন্য। আমার সাফ কথা, আমি পুরুষ! মানুষ হিসেবে আমি যে অধিকার গুলো যেভাবে ভোগ করি আরেকজন নারীও সেটা সেভাবে ভোগ করবে। হোক সেটা মৌলিক অধিকার কিংবা আমার গোপন যৌন জীবনটা। সমাজের পক্ষপাতি আচরনটা সেখানে দমন করা হবে কঠোর হস্তে।

১৪ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৩২

বৃতি বলেছেন: অগ্নি, ধন্যবাদ। আমিও বলি, প্রতিটা দিন মানুষদিবস হোক। পুরুষ আর নারী শুধু কাগজে কলমে বা মৌখিকভাবে নয়, প্রকৃতঅর্থেই সমান অধিকার উপভোগ করুক। মেয়েরাও মেধা, শিক্ষা, আর তাদের স্বকীয়তা নিয়ে নিজের মানসিক-সামাজিক-আর্থিক ভিত্তি শক্ত করবেন, এমনটাই আশা করি। নারীদিবসের তাহলে কোন প্রয়োজন থাকবে না।

ভালো থাকবেন।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: "নারী এবং পুরুষ একে অপরের পরিপূরক" - আপনার এ ভাবনার সাথে একমত। তবে এ নিয়ে আলাদা করে "নারী দিবস" উদযাপনের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। সমাজে নারীদের লাঞ্ছনার এবং অবমাননার পেছনে পুরুষদের চেয়ে নারীদের অবদান কিছু কম বলে মনে করিনা। অত্যাচারী শশুড়ের চেয়ে শাশুড়ীর সংখ্যা বেশী, দেবরের চেয়ে ননদের সংখ্যা বেশী। মায়েরাই তাদের মেয়ে সন্তানকে বঞ্চিত করে ছেলে সন্তানের পাতে মাছের বড় টুকরোটি তুলে দেয়। অনেক কর্মক্ষেত্রে নারী বস এর চেয়ে পুরুষ বস এর কাছেই নারীরা সুবিচার পেয়ে থাকে।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০০

বৃতি বলেছেন: ভাইয়া, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেড়ে ওঠা একজন সুস্থ, সবল, কর্মদক্ষ, প্রফেশনাল নারীও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিকটাই পরিস্থিতি এরকম। এই নিরাপত্তাহীনতা বোধের কারণেই একজন শাশুড়ি তার ছেলের বউকে অবমাননা করেন। একজন ছেলের বউ অবমাননা করেন শাশুড়িকে। আমি আপনার কথাটাকে অস্বীকার করছি না। বাংলাদেশের মেয়েদের অবচেতনে এই বোধ মিশে আছে। তাদেরকে নিজ পরিবার থেকে, অত্যন্ত ছোট থেকে এই বোধটুকু ঢুকিয়ে দেয়া হয়।

তবে পরিবর্তন কী কিছু হচ্ছে না? হচ্ছে। প্যারেন্টিং ম্যাটারস। বাবা মা (স্ব)শিক্ষিত হলে ছেলেমেয়ের ভিউ কিছুটা হলেও বদলাবে। হয়ত কিছুটা সময় লাগবে এই পরিবর্তনটা দেখার মতন হতে।

দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.