নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন বক্ষে তাহার বেদনা অপার

ক্যাপ্টেইন পিকু

লেখালিখির অভ্যাস টা পুরাতন। অনেক দিন পরে নতুন করে শুরু করলাম। দক্ষিণের জানালা অবশেষে খুলেই দিলাম। :)

ক্যাপ্টেইন পিকু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিনি সায়েন্স ফিকশন : পুনরাবৃত্তি

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০৫

‘এক্সকিউজ মি ! আপনি কি কাউকে খুঁজছেন ? ’ ঘাড়ে হাত দেয় শিশির ।

“জী ?! না !” প্রায় ছিটকে যায় লোকটা । এতটা আশা করেনি । বেশ কিছুক্ষণ ধরেই ওপর থেকে রুমের জানালা দিয়ে দেখছিল শিশির। কিছু খুঁজছে না কাউকে বোঝা যাচ্ছিল না । তবে কোন ঝামেলায় যে পড়েছে এটা নিশ্চিত । চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ।

‘আপনি আমাকে বলতে পারেন । কোন সাহায্য করতে পারি কি ? ’

‘না ঠিক আছে । থ্যাঙ্কু । আমি বোধ হয় ভুল জায়গায় এসেছি । sorry for the disturbence . hope u wonnt mind ! ’

ফরমাল কোঁচকানো নীল শার্ট আর দুমড়ানো কালো প্যান্ট । হাতে ভাঙ্গা রোলেক্স । জুতাজোড়াও জাউগায় জায়গায় চকচক করছে । চুল এলোমেলো আর চোখে উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি তো আছেই । যে কেউ শুনলেই হয়ত বোকামি বলবে । অচেনা কাউকে এইভাবে এত সকালে বাড়ির নিচে দেখে ভেতরে নিয়ে যাওয়া । তবু শিশির রিস্কটা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিল । সত্যি ই বোধহয় কোন বিপদে পড়েছে । হাত বাড়িয়ে দেয় সে । “আমি শিশির । আমার মনে হচ্ছে আপনি কোন প্রব্লেম এ পড়েছেন । ভেতরে আসুন , দেখি কী করা যায় ??

এবার একটু সহজ হয় সে । শুকনো হাসি দেয় । “আমি ইফতি । ইফতেখারুল ইসলাম । ”

শিশির দের বাসার ঠিকানায় যদিও বা একটা শহরের নাম ই আছে কিন্তু এটা একেবারেই শেষের দিকে । চারপাশটা বেশ নিরিবিলি । ওদের বাড়ির পেছনে মানে এই দিকে যে একটা ঝিল আছে তাই কেউ জানে না । তাই ওর নিজের স্টাডিরুমটা ওর খুব পছন্দের । সকালের রোদ এসে পড়ে । দেখতে ভালো ই লাগে । এখন দুই জন ওখানেই বসে । কফির মগে কফি ঠান্ডা হচ্ছে সেদিকে কারোরি খেয়াল নেই । “এর পরের কথা সত্যি ই আপনার আর কিছু মনে নেই ? ” শিশির শুধু ই অবাক হচ্ছে ।

“নাহ । বললাম ই তো । আমার এক বন্ধুর পরিচিত একজনের বাসায় যাবার কথা ছিল । ব্যাঙ্কে চাকরি করি । অডিটের কাজ চলছে । বের হতে রাত হয়ে যায় । যেতেও দেরি হয়েছে বের হতেও । কাল তাই সেখান থেকে হেটে ফিরছিলাম । হঠাত করেই সব অন্ধকার । আর আজ সকালে এখানে । ঝিলটার পাশে ঘুম ভেঙ্গে গেল মনে হয় । কিছু ই চিনি না । আমি শিওর কোন দিন আসিও নি । তবু সব চেনা চেনা লাগছে । বাসায় যে ফিরে যাব তার ও উপায় নেই । কোথায় আছি তাই তো বুঝতে পারছিনা । আপনার বাসা টাও খুব চেনা লাগছিল । তাই ভাবছিলাম কারো সাথে যদি দেখা হয়ে যায় ! ”

অনেক দিন হল পুলিশের চাকরির । তাই সত্যি মিথ্যে কিছুটা হলেও বুঝতে পারে শিশির । ইফতি আসলেই বিপদে পড়েছে বুঝতে পারছে। কাল রাতে অনেক কিছু ই হতে পারে । কোন মলম পার্টি হতে পারে । অথবা ওর অন্য কেউ যে ওর ক্ষতি চাইতে পারে । কিন্তু হিসেব মিলছে না । পকেটে ওয়ালেট টা আছে । সো ছিনতাইকারী না । মোবাইল নেই কারণ কাল রাতে সেটা সে ওই বাড়িতেই ফেলে এসেছিল । আর ক্ষতি করতে চাইলে সারা রাতে গায়ে একটা আঁচড় ও না দিয়ে এভাবে ফেলে যাবার কথা না ! শিশিরের কপালে ভাঁজ পড়ে ।

“শিশির আপনি কি কিছু ভাবছেন ? ” ইফতির কথায় ঘোর কাটে শিশিরের । “নাহ তেমন কিছু না । আপনি আমার সাথে পুলিশ স্টেশনে চলেন । একটা নরমাল ডায়েরি করে বাসায় চলে যান । আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি । না না ভয় পাবেন না ! আমি আছি তো ! ”

দুইদিন পরে লাঞ্চে চেয়ারে গা এলিয়ে ভাবছে ইফতি । সেদিন আসলে হয়েছিল কি ! এত দূরে একরাতে যাওয়া কীভাবে সম্ভব ! এমনকি কেউ কোন আঘাত ও করেনি । তবে সেদিনের পর থেকে খুব অস্বস্তি হচ্ছে ওর । কি করবে কাকে বলবে ভেবে পাচ্ছে না । অনুভুতিটা অদ্ভুত । শুধু মনে হচ্ছে যা হচ্ছে যা হবে সব টুকু আগে থেকেই জানে । এমন যদি মনের ভুল তাহলেও হত । কিন্তু কত বার । কাল রাতে মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল মনে হচ্ছিল পাশের বাসায় কেউ অসুস্থ । জানালা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি ও দিয়েছে কয়েকবার । কিছু টের ই পায় নি । আজ সকালে উঠেই শোনে হাসান সাহেব কে কাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । আই সি ইউ তে আছেন । আজ সকালে পাশের ডেস্কের লতিফকে জিজ্ঞেস করেছে মেয়ে কেমন আছে অথচ সে সহ অফিসের কেউ ই জানতনা গত সপ্তাহে ওর মেয়ে হয়েছে । এত শুধু দুটো । বারবার হচ্ছে । সব কিছুতেই হচ্ছে !

“ইফতি আপনি কি ব্যস্ত ? পরে আসব ? ” “তেমন কিছু ই না । আসো । ” শারমীন এসে ইফতির পাশের চেয়ারে বসে । “বেশ কিছু দিন ধরেই আপনি খুব অন্যমনস্ক । কি হয়েছে বলা যায় ? ” আর কারো সাথেই কিছু সেভাবে শেয়ার করা হয় না । তবে শারমীন সব কিছুর খুব সুন্দর ব্যাখ্যা দেয় । এর আগেও অনেক কিছু বলছে । বন্ধু না তবে হালকা হওয়া যায় ।

“আপনার কোন দিন এমন হয়েছে যাই দেখছেন মনে হয় সব আগে হয়েছে ? ” মানে ?

“মানে তেমন কিছু না । আমি যা ই ভাবছি দেখি সত্যি হয়ে যাচ্ছে ! ”

এটা কম বেশী সবার ই হয় । খুব সাধারণ বিষয় । যখন কোন কিছু নিয়ে আপনি গভীর ভাবে ভাববেন তখন আপনার মন অনেক গুলো রেজাল্ট তৈরি করে রাখে । যে কোন একটার সাথে তো মিলে যেতেই পারে তাই না ?

“কিন্তু আমি তো ভাবছি না ! হয়ে যাচ্ছে !”

এটা আপনার ধারণা । আমার মনে হয় আপনি কোন বিষয়ে স্ট্রেসড । তাই এসব চিন্তা মাথায় আসছে । সেদিনের পর তো রেস্ট ও নেন নি । কয়েকদিন ছুটি কাটান ঠিক হয়ে যাবে । আমি তাহলে উঠি ।

শারমীন খুব ছোট্ট একটা হাসি দেয় । হাসিটা ইফতির খুব পছন্দের । কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি কোনদিন । কিন্তু খব অদ্ভুত ভাবে হাসিটা মুছে গিয়ে ইফতি একটা কষ্ট দেখল । আজ শারমীনের কিছু হবে ? আতঙ্ক এসে ভর করল । “শারমীন আজ বাসায় সাবধানে যাবেন । রাস্তাঘাট ভাল না ! ”

কেন আপনার এখন মনে হচ্ছে আমার কিছু হবে ? আচ্ছা সাবধানে থাকব ।

ইফতিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় ও । নিঃশ্বাসটা গোপন করে সাইক্রেটিস্টের ভিজিটিং কার্ড আর মোবাইল হাতে নেয় ইফতি ।

ব্ল্যাক কফিও বিস্বাদ লাগছে । সাইক্রেটিস্টের কাছে গিয়েও কোন লাভ হয় নি । এক ই কথা উনিও আর একটু গুছিয়ে সুন্দর করে বলছেন এই যা । কিন্তু ধাক্কা টা খেয়েছে তখন যখন ফোন এসেছে শারমীন এক্সিডেন্ট করেছে । ক্লিনিকে আসতে হবে । খুব সিরিয়াস কিছু যদিও না আজ রাতে থাকতে হবে । মেয়েটা এখানে একাই থাকে । অফিসের কাউকে থাকতে হত । দায়িত্বটা নিজেই নিল ইফতি । লবিতে বসে আসলেই কি করা উচিত বুঝতে পারছে না । একটু আগে শেষ চেষ্টা হিসেবে শিশির কে মেসেজ করেছে । যদি উনি কিছু বলতে পারেন ।

কিছুটা লজ্জিত ভাবেই শিশিরের ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে আছে ইফতি । দুজনে যাচ্ছে একজন প্যারাসাইকোলজিস্টের কাছে । শিশিরের এক রকম আত্মীয় হন । যাবার কথা ছিল সন্ধ্যায় । ইফতি ই আসতে দেরি করে ফেলছে ।

“মামা অনেকদিন ধরেই এই বিষয়টা নিয়ে কাজ করছেন । একটু পাগলাটে স্বভাবের । তাই আমাদের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই । আপনি যেদিন টেক্সট করলেন পর দিন মনে হল । আর তখন ই তো ফোন দিলাম । আপনার ওনার কাছে সমস্যা নেই তো ? ”

আরে না প্লিজ ! আমি ই তো আপনাকে বললাম । আসলে কি এত বেশী হচ্ছে খুব পেইন পাচ্ছি । কিছু করলে যদি কিছু হয় !

ড রাকিবের ড্রইং রুমে বসে শিশির আর ইফতি । এতদিন পরে ভাগ্নে এসেছে তার থেকে বড় খবর ইফতি । গত তিন ঘন্টা ধরে গল্পগুলো শুনছেন আর লিখে যাচ্ছেন । “আসলে কি জানো ইফতি আমি এত দিন পরেও আমাদের এসবের ব্যাখ্যা খুঁজে বের করতে পারছি না । হিসেব মেলে না । ক্রোমোসোমে বংশগতির তথ্য থাকে কিন্তু স্মৃতি প্রবাহিত হয় না । কিন্তু এটা তো হতেই পারে। কেন কেউ জন্ম থেকেই দেশ কে ভালবাসে? অনুভূতি আসে। আমার কাছে এমন কেস ও এসেছে এত ছোটবেলার কাহিনি সে বলত পারে যখন মেমরি সেল সেভাবে তৈরি ই না ! আবার তোমার কথাই ধর । অনেক এসেছে । এমন সব কিছু বলছে আমি ই তাজ্জব ! কারো কারো ক্ষেত্রে এমন হয়েছে যে কোন বিষয় একাধিকবার হবার কথাও মনে হয়েছে। “তাহলে তুমি কি বলতে চাইছ এসবের ব্যাখ্যা নেই ??? ” গলা পরিষ্কার করে শিশির । “না সেটাও না ! আমি একটা ব্যাখ্যা বল আর সিধান্ত বল নিয়েছি । সেটা হল রিপিটেশন সত্যি হয় । কেউ করায় । আমরা যে সিস্টেমে আছি সেই সিস্টেম যিনি চালান তার ইচ্ছে মতন হতেই পারে ! তিনি সব ই পারেন তাই নয় কি ? ”

আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ । রাস্তায় হাঁটছে শিশির আর ইফতি । একজন বিড়বিড় করছে পাগলের কাছে অকাজে যাবার জন্য , অন্য একজন আকাশের দিকে তাকিয়ে পুনরাবৃত্তির হিসেব মেলাতে চাইছে । কিছু ই হচ্ছে না। সত্যি টা কি। সত্যি রিপিট আসে? না মনের ভুল। না মনের অনেক রহস্যের ভিড়ে একটি। পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হতে ব্রেন ভ্রম সৃষ্টি করে। বাধ্য করে ভাবতে সব আমার চেনা। নাকি স্মৃতি ও প্রবাহিত হয় বংশ পরম্পরায় ! শুধু আবিষ্কার হয়নি।

“শিশির !! আপনি কোনদিন রাতে রংধনু দেখেছেন ?? ” চিৎকার দিয়ে ওঠে ইফতি । “মানে কি কি বলেন এইসব ! ”

সত্যি সত্যি ! দেখেন আপনি !!! দুজনেই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে । চাঁদের একপাশে সাতটি রঙ ই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ! কীভাবে সম্ভব ! পকেটে হাত দেয় ইফতি মোবাইলের জন্য ছবি তুলবে । পায় না । ওহ হো বোধ হয় ফেলে এসেছে রাকিবের বাসায় । পাশে দেখবার আগেই সব অন্ধকার হয়ে যায় ।



--ধুম করে চেয়ার থেকে উঠে যায় কাজী ! আবার এরর । গত দুই বছর ধরে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়ে কাজ করছে । সব ই ঠিকঠাক । ওখানকার প্রোগ্রামগুলো বুঝতেই পারছে না তারা বাস্তব না । স্বাধীন ভাবেই করতে পারে সবকিছু । কিন্তু কিছুদিন আগে আরো কিছু ফিচার যোগ করার পর থেকেই সমস্যা শুরু । কোথাও ইনফিনিট লুপ হয়ে গিয়েছে । কিন্তু কোথায় খুঁজেই পাচ্ছে না । মেজাজ বেশী ই খারাপ হয়েছে আর মনে হচ্ছে মাথাটাও গরম । বিছানায় ঘুমাতে যায় । কাল সকালে আরেকবার দেখতে হবে ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বাহ বেশ চমৎকার তো!

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫২

ক্যাপ্টেইন পিকু বলেছেন: চেষ্টা করছি :)
ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.