নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন বক্ষে তাহার বেদনা অপার

ক্যাপ্টেইন পিকু

লেখালিখির অভ্যাস টা পুরাতন। অনেক দিন পরে নতুন করে শুরু করলাম। দক্ষিণের জানালা অবশেষে খুলেই দিলাম। :)

ক্যাপ্টেইন পিকু › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: প্রত্যাবর্তন

০৯ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ২:০৬

‘কাল তাহলে আমরা বের হচ্ছি কখন?’ ‘আমরা মানে?! যাচ্ছ তো তুমি!’ পানির জগ টা টেবিলে নামিয়ে রেখে মীরা অবাক চোখে তাকায়। হেসে ফেলে হাসিব। ‘না আমি জানতাম যে তুমি যাবে। হয়েছে। এখন খেতে তো বস।’ ডালের বাটি টা টেনে নেয় ও। কেমন যেন অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে ভাত মাখাতে শুরু করে মীরা।

হাসিব কীভাবে জানল? ও নিজের মনেই ঠিক করতে পারেনি গত এক মাসে। আর উনি জেনে বসে আছে? কীভাবে সম্ভব? শাড়ি কি বিছানায় দেখেছে? নাহ! ওটা তো সন্ধ্যাতেই গুছিয়ে রেখেছে। চুড়িগুলো তো গত সপ্তাহের পরে আর বের করাও হয়নি। তবে?! ও কি বুঝে ফেলেছে? ‘ম্যাডাম আপনি কি শুরু করবেন? আমার কিন্ত শেষ!’ হাসিবের কথায় এবার রীতিমত লজ্জা পেয়ে যায় মীরা। হয়ত আন্দাজে বলেছে। আর কী সব ভাবছে! ‘তুমি পিসি অন কর। আমি সব গুছিয়ে আসছি।’ কিছু হলেই মেয়েটার গাল লাল হয়ে যায়। এটা আমি যে কত যে পছন্দ করি তা কি জানে?! আপন মনেই ভাবে হাসিব। কিছু না বলে হাত ধুয়ে সামান্য মাথা ঝাঁকিয়ে রুমে চলে যায়।

আজ বৃহস্পতিবার। কাল দুজনের ই অফিস ছুটি। প্রতি সপ্তাহে এদিন রাতে তারা মুভি দেখে। সকালে দেরি করে উঠলেও ক্ষতি নেই। তারপর শুক্রবার দুপুরের পরে একটু ঘুরতে বের হওয়া। কোন কোন সপ্তাহে রাতে বাইরেই খেয়ে আসা। আপাত দৃষ্টিতে বাইরে থেকে সুখী দম্পতি হাসিব আর মীরা। দুজনে ইয়ারমেট কিন্ত দেখে বোঝার উপায় নেই। হাসিব অনেক বেশি বোঝে সব কিছু , অনেক ম্যাচিওর। আর মীরাও খুব সুন্দর করে সামলে নিতে পারে সব।

তবে বিয়েটা নিজেদের পছন্দে না। স্কুল কলেজের বন্ধু তারপর আলাদা ভার্সিটি। হাসিব কিছুটা পছন্দ করে মা জানতেন। তাই দুজনে পাশ করে বের হবার পর তিনি ই কথা টা তোলেন। মীরার বাসা থেকেও আপত্তি হয় নি। হাসিব ছেলে ভাল। বাসাতেও বন্ধু হবার সুবাদে কিছু টা যাতায়াত ছিল। আর প্রতিষ্ঠিত কারো সাথে মেয়ের বিয়ের কথা যখন আসে তখন হাসিব যথেষ্ট ই যোগ্যতা সম্পন্ন। বের হবার পর পর ই স্কলারশিপ হয়ে যায়। স্পাউস নিয়ে যেতেও সমস্যা ছিল না। আর ভাগ্য ক্রমে মীরার ও একই ভার্সিটি থেকে ডাক আসে। সব মিলিয়ে ঝামেলা কিছুই হয়নি।

তবে সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা ছিল মীরার বিয়েতে রাজি হওয়া। কারণ সব সময় সবাই জানে মীরার বন্ধুরা ওর শুধু বন্ধু ই। যাই হোক না কেন। কিন্ত হাসিবের মা যেদিন কথা বলে এলেন সেদিন রাতে ওর বড় আপা এসেছিলেন রুমে কথা বলতে। মা নেই। আপা ই মায়ের মত।

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল ও। ‘মা সেই ছোট থেকে তোর মতামত ছাড়া আমরা কোন দিন কিছু করিনি। এবার ও ব্যতিক্রম হবেনা। তুই কি সত্যি হাসিবের সাথে বিয়েতে রাজি? আমরা কি না করে দেব ?’ কিছু বলে নি সেদিন মীরা। কাঁদছিল নিঃশব্দে। শুধু ভেজা চোখে আপার দিকে তাকিয়ে হেসেছিল।

‘আজ না হয় থাক হাসিব। কাল সকাল সকাল তুমি বের হব। ঘুমিয়ে পড় আমি ডেকে দেব। ’ আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ঘরে ঢোকে মীরা। হাসিব ঘরে নেই। পিসি অন করা। তবে গান চলছে। বাথরুমে পানির শব্দ হচ্ছে। কিছু ওর চোখ আটকে যায় বিছানার উপরে। নতুন শাড়ির প্যাকেট একটা। সাদা খসখসে কাগজ টা সরাতেই বেড়িয়ে পড়ে একটা নীল শাড়ি। ময়ূরকন্ঠী নীল।

‘শ্যামলের পছন্দের রঙ না? কাল পড়িস। ’ মাঝে মাঝে দুজনেই তুই করে বলে। মজা ই লাগে। কিন্ত আজ কথা টা খুব কানে লাগে। এত বছর পরে অনেক পর মনে হয় হাসিব কে। ঝট করে পেছনে তাকায় মীরা। কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করে।‘কি বলতে চাইছ তুমি?’

‘আমি শুধু বললাম শ্যামলের পছন্দের রঙ রে পাগলী। কাল আমার সাথে আপনিও যাবেন। তাই কিনে আনলাম। কোন রঙ ভাল লাগছিল না। এটা দেখে ভাল লাগল। কিনলাম। সিম্পল! ’ কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মীরার গালে একটা টোকা দিয়ে অন্য পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কাঠের পুতুলের মত বসে থাকে মীরা।

ঘড়িতে প্রায় দু’টা। আজ বোধ হয় পূর্ণিমা। সামনের রাস্তার কালো পিচ গুলো ও সাদা আলোতে চক চক করছে। রাত বোধ হয় আসলেই রহস্যময়। নাহলে এই ঢাকা শহরে বুনো ফুলের গন্ধ কেন পাওয়া যাবে। চারপাশ এর বেশির বিল্ডিং এই লাইট অফ। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মীরা। খুব অসহায় লাগছে। এত দিন ধরে যা লুকিয়ে রাখতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে গিয়েছে আজ সেটাই যেন দাঁত বের করে হাসছে। কর্তব্যের কোন ত্রুটি কোনদিন রাখেনি। ছাড় দেয়া মানিয়ে নেয়া দায়িত্ব পালন করা সব ই তো নিখুঁত ছিল। তাহলে? কীভাবে বোঝা সম্ভব? এত যত্ন করে আলতো করে বুকের মাঝে তুলে রাখা সত্যিটা সামনে এসেই গেলো!

‘আমি জানতাম।’ ঘাড়ে হাত রাখে হাসিব। ‘চলো ঘুমোবে।‘ আচমকাই যেন বরফ গলে যায়। অনেক অনেক দিন পরে কারো বুকে মাথা রেখে কাঁদে মীরা। ‘তুই এত বোকা কেন রে! আমি বুঝতে পারব না? আমি জানতাম। বুঝতেও পেরেছিলাম। কিন্ত তোকে যে অনেক ভালবাসি রে পাগলী হারাতে চাইনি! ’

মেয়েরা নিজেকে লুকিয়ে রাখতে বোধ হয় খুব বেশি পছন্দ করে। দূর থেকে দেখে প্রেমে পড়েও তাই শ্যামল কে জানানো হয়নি। তবে বন্ধুত্ব হয় একসময়। সেটাই স্বপ্নের মত ছিল মীরার কাছে। কিছুদিন পরে শ্যামল ও বোধহয় কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্ত আচমকাই দৃশ্যপটে আসে সুস্মিতা। অন্য শহর অন্য ক্যাম্পাস আর সুস্মিতাকে নিয়ে হারিয়ে যায় শ্যামল।

মীরা ভেবেছিল কোনদিন বিয়েই করবেনা। কিন্ত যেদিন হাসিবের মা এলেন রাজি হয়ে গেলো হুট করেই। তবে হুট করে বলাটা ভুল। হাসিব আর শ্যামলের ক্যাম্পাস এক ই। কোন না কোন দিন আবার দেখা হবে শ্যামলের সাথে যদি হাসিব সঙ্গে থাকে!

মীরা জানে এটা ভুল। হয়ত প্রতারণাও বলা যায়। কিন্ত কি করার ছিল। এখন ও প্রত্যেকটা কাজ যাকে ভেবে করা যার জন্য করা তাঁর সাথে দেখা হবার সুযোগটা কীভাবে ছেড়ে দিত পারত!

কিন্ত হাসিবের দোষ কি! তাইতো বিয়ের দিন থেকে সব কিছু একটু বেশি ই করে গিয়েছে হাসিব যেন ফাক টা ধরতে না পারে। নিজেকে যেন অসুখী না ভাবে। আর আজ নিজে গিয়ে কিনে নিয়ে এসেছে শ্যামলের পছন্দের রঙ এর শাড়ি!

‘স্যরি!’ একটা কথাই বলতে পারে মীরা। হাসিব দু হাত দিয়ে মীরার মুখটা তুলে ধরে চোখ মুছিয়ে দেয়। ‘তোমাকে কাঁদাব বলে তো তোমার হাত ধরিনি মীরা। আমি শ্যামলের জায়গা নিতে চাইনি। নেব ও না। তুমি শুধু ভাল থেকো। আমার সাথে।’

চুপ করে তাকিয়ে থাকে মীরা। হাসিব হাসছে। ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে হাসি। কিন্ত ঘোলাটে লাগছে চোখ দুটো। কপালে এসে পড়েছে এলোমেলো চুল। এভাবে দেখা হয়নি কোনদিন। হঠাত করে খুব ফাঁকা লাগে সব মীরার। কাল রি ইউনিয়নে যেতে দেবেনা হাসিব কে।প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর শাড়িটা পড়া হয়নি এখহন ও। কাল ওটা পড়বে। হাসিবের হাতটা শক্ত করে ধরে মীরা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.