নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন বক্ষে তাহার বেদনা অপার

ক্যাপ্টেইন পিকু

লেখালিখির অভ্যাস টা পুরাতন। অনেক দিন পরে নতুন করে শুরু করলাম। দক্ষিণের জানালা অবশেষে খুলেই দিলাম। :)

ক্যাপ্টেইন পিকু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি লজ্জিত এই সমাজ নিয়ে

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩

অনলাইন নিউজ পোর্টালে খবর টা পড়ে কিছুক্ষণ বিশ্বাস করতে পারিনি। এটাও সম্ভব??? দেড় ঘণ্টা ধরে কিছু জানোয়ার তাদের তাণ্ডব চালিয়ে গিয়েছে আর আশের পাশের কিছু জন্মপরিচয়হীন মানুষ চুপচাপ উপভোগ করেছে। কীভাবে???

গত কাল থেকে আরো বেশি অবাক হচ্ছি মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে। তথাকথিত নারীবাদীরা ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে ধুয়ে ফেলছেন ছেলেদের , কিছু উটপাখি দোষ দিচ্ছেন মেয়েদের পোশাকের আর কোন ছাগল গোষ্ঠী এর মধ্যেও রাজাকারদের হীন ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছেন!!! কি এপিক আমাদের চিন্তা ভাবনা! উপরে ভেসে সমাধান করার চেষ্টা আর কতদিন???

একহাতে তালি বাজেনা এই কথা টা না কোন নারীনেত্রী বলবেন না বলবেন কোন ধর্ম ভীরু ব্যক্তি। একদলের কাছে কোরআনের এই আয়াত আছে .................. তো কারো কাছে ঢাল হল এটা।

অথচ আল্লাহ তায়ালা এক ই সূরাতে এক ই আয়াতে নারী পুরুষ উভয়ের জন্য সীমারেখা বেঁধে দিয়েছেন। আমরা অন্যের ভুল ধরতেই বেশি পছন্দ করি আসলে।

সমস্যা টা কোথায়? কারো কাছে এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা কারো কাছে তালেবান রাষ্ট্র হবার অশনি সংকেত হতে পারে আমার কাছে তা নয়। বহুদিন ধরে সিস্টেমে যে ইনপুট দেয়া হচ্ছে তার আউটপুট শুরু হয়েছে মাত্র। কীভাবে??

আমরা আসলে কী শিখছি চারপাশ থেকে? একজন শিশু ছোটবেলা থেকে কী দেখে বড় হচ্ছে?? কিশোর বয়সে আমরা কী তুলে দিচ্ছি আমাদের ভাইবোনদের কাছে?? তরুণ তরুণীরা কি সত্যি জানে বিপরীত লিঙ্গকে কীভাবে সম্মান দিতে হয়?? কীভাবে বাঁচতে হয় ?? আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী??

ছেলে সন্তানের হাতে তুলে দেই খেলনা গাড়ির স্টিয়ারিং আর মেয়েদের কাছে বারবি পুতুল। আপত্তি নেই। কিন্ত সে গাড়ি চালাতে চালাতে আর অফিস থেকে আসার পরে বাবাকে টিভির ঘরে মাকে রান্না ঘরে দেখে একটা ছেলে কি ভাবতে শেখে? তার মায়ের জন্য কোন শ্রদ্ধা আসে কি?? বাবা ক্লান্ত। তাকে চায়ের কাপ হাতে তুলে দিতে হয়। আর মা?? পর দিন কী খাব সেই হিসাবে ব্যস্ত। তার বিশ্রামের সুযোগ কোথায়?

তুমি ছেলে মেয়েদের মত কাঁদবে না। তুমি ছেলে তোমার জেদ বেশি হতেই পারে। তুমি ছেলে তুমি বড় বোনের গায়ে হাত তুলতেই পারো। তুমি ছেলে তুমি আদর টা বেশি ই পাবে। তুমি ছেলে তোমার ব্রেন ভাল। ইঞ্জিনিয়ার হবে কেন একজন এভাবে নিজেকে মেয়েদের থেকে সেরা ভাবতে শুরু করে ভেবে দেখেছি কি?

অন্যদিকে স্কুলে প্লে তে পড়া মেয়েকে আমরা কি শিখাই?? ওই ছেলে তোমার স্কেল নিয়ে নিয়েছে? কিচ্ছু বলতে হবেনা। ঝামেলা করোনা। নতুন কিনে দেব। তুমি পাশের বাসার পিচ্চির সাথে মারামারি করোনা ও ছেলে তুমি মেয়ে। কেন??

বড় হবার সাথে সাথে মেয়েদের চুপ করিয়ে দেয়া হয়। ছেলেদের বলা হয় নিজদের পুরুষত্ব প্রমাণ করতে। কেন?

এত অবক্ষয় আমরা কিভাবে মেনে নিয়েছি কেউ কি বলতে পারবে?? ক্লাস ওয়ানের বাচ্চা যখন চিকনি চামেলি আর শিলা না দেখে ভাত খায় না তখন আমরা কি আশা করতে পারি? মেয়েটা হতে চাইবে শুটকি মাছ আর ছেলেটা চাইবে তাকে বিছানায়। এটাই সত্যি।

মা রা যখন হিন্দি সিরিয়াল দেখেন একবার ও ভেবে দেখেছেন কি মেয়ে টা কি জানছে??? বাবাও হয়ত পরকিয়া করে এ ধারণা করে বসে থাকলে কি করবেন?? বাবা শ্রদ্ধা পাবেন?? ছেলেদের কিভাবে ঘোরাতে হয় এটা হাতে কলমে শিখতে চাইলে দোষ টা কার??

ক্যাটরিনা কাইফের খোলা বুক পিঠ দেখে বড় হওয়া ছেলে টা যখন মেয়েদের মাংস পিন্ড ভাবে কোন বাবা কি তার দায়ভার এড়াতে পারেন?

নিজের বোন মেয়েকে মঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে বিলাই এর মত হাঁটিয়ে যখন ভোট ভিক্ষা করি কোথায় আমাদের নীতিবোধ? বিশাল বিলবোর্ডে যখন শরীর দেখিয়ে আধুনিক হই কোথায় থাকে আমাদের শ্লীলতা???

ফাইভ না পেরোতেই হাতে আসে নোংড়া বই গুলো। নাইন টেনে না আসতেই ছেলে টা স্বপ্ন দেখে সানি লিওন নিয়ে। উন্মুক্ত যুগে ছেড়ে দিয়ে তার মানসিক যত্নের কথা কি মনে থাকে? এই ছেলেই বাসে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আগের দিনের ভিডিও এর কথা চিন্তা করে তার দোষ কোথায়??

পুঁজিবাদী যুগে মানুষ পণ্য। টাকা কামানোর মেশিন হওয়া ছাড়া কি শিখাই আমরা?? আমাদের বাজার বলে আজ পহেলা বৈশাখে ইলিশ না খেলে তুমি বাঙালি না , তুমি সানি লিওন না চিনলে আধুনিক না , মশারি গায়ে না নিলে মেয়ে তুমি আধুনিক না আর আমরা তাই মেনে নেই। নিজেকে এতটাই সস্তা করে ফেলেছি আমরা।

আমাদের পড়াশুনা কি কিছু জানতে? শিখতে? কিছু দিতে? আমরা চাই টাকা। লাখ লাখ কোটি কোটি। যে টাকায় মেয়ে টা নিজেকে সম্মান না করে রঙ মাখবে এই আশায় তাকে দেখতে সুন্দর লাগবে। একদিন ঢোলা আর একদিন চামড়া চিপকানো পাজামা পড়বে বিজ্ঞানের সমীকরণ না বুঝে। ছেলে টা জানে সে একদিন দুটা উইকেট পেলেই তার বউ হতে চাইবে হাজার হাজার মেয়ে। চরিত্র দিয়ে হয় কি! কোন দিন পাশে বসে বাবা ভাই কি বুঝিয়ে দিয়েছেন মা কত কষ্ট করেন?? কোন দিন বলেছেন নীল আলোর জন্য না মেয়েরা না থাকলে তার জন্ম ই হত না? বোন টা কত কষ্ট করে তার জন্য টিফিনের টাকা বাচিয়ে ভিডিও গেমস কিনে দেয়?? কোন দিন ছেলেটা দেখেছে মেয়েদের কেউ মেয়ে মানুষ না ভেবে মানুষ বলেছে? কেউ কি শিখিয়েছে তুমি কারো বিষয়ে নাক গলাবে না??

কেউ ছেলেটার গালে চড় দিয়েছে কেন সে মেয়েদের গায়ের ভাজ কিংবা মেকাপের স্তর নিয়ে গবেষনা করেছে? কেন চোখ নামিয়ে চরিত্র ব্যবচ্ছেদ বাদ দেয় নি?? কেউ কোন দিন হাত থেকে রিমোট কেড়ে নিয়ে বলেছে মেয়েরা টিভি স্ক্রিন আর বিছানা ছাড়া আরো অনেক খানে অনেক ভাবে থাকে?? মেয়ে মানে এঞ্জেলিনা জোলির হট ঠোঁট না , দীপিকার পিঠ না কিংবা সানি লিওনের নষ্টামি না। তোমার মা , বোন সন্তান সবাই মেয়ে। কেউ বলেছে??

কেউ কোন দিন মেয়েটাকে আয়নার সামনে থেকে নিয়ে গিয়ে মাইক্রোস্কোপ এর জগত দেখিয়েছে?? কেউ বলেছে তুমি লেডি গাগা না হলেও চলবে কারণ তুমি কাল সারা রাত ভাই টার মাথায় জলপট্টি দিয়েছ?? কেউ কি বলেছে তোমাকে আজ এক কেজি ময়দা না মাখলেও চলবে কারণ তুমি ম্যাথে ১০০ পেয়েছ?? কেউ কি বলবে তুমি আজ আনুশকার মত ড্রেস না বানালেও চলবে কারণ তুমি গুগলে জব করবে??

বলবেনা। বলেনা। আমি জানি। আমি তাই আজ মেয়ে হিসেবে ছেলেদের ঘেন্না করব না। ছেলে হলে লজ্জিত ও হতাম না। আমি মানুষ হিসেবে লজ্জিত। আমি সেই ব্যক্তি হিসেবে লজ্জিত যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে জেনেছে ছেলে মেয়ে দুটো আলাদা প্রজাতি। এখান থেকে শুধু ইঞ্জিনিয়ার না হট সেক্সি মেয়ে হতে চাইবার আর আপু সমাজ নিয়ে গবেষক এর মত অসুস্থ মানুষ বের হয়।

আমি ক্ষমা চাই আমার ভাই টার কাছে যে আমায় এক দলা মাংস ভাবে কারণ আমি তাকে আমার মানুষ পরিচয় দিতে পারিনি। আমার বোন টার কাছে যাকে বোঝাতে পারিনি আধুনিকতার আর এক নাম নিজেকে বাজারে বিক্রি করা না।

টি এস সি তে যারা এসব করেছে হাতের কাছে পেলে হয়ত রাগের মাথায় খুন ই করে ফেলতাম। কিন্ত তাদের মা বাবা আর সমাজ কে করতাম সবার আগে।

যে সমাজ মেয়েদের শেখায় নগ্নতা মানে আধুনিকতা আর ছেলেদের শেখায় মেয়ে ভোগের বস্ত সেই সমাজের মুখে লাথি মারি। আমি লজ্জিত এই সমাজের একজন হিসেবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:০৩

তপ্ত সীসা বলেছেন: এইডা কোন কথা হইলো?

সমাজের সব মানুষ খারাপ না, কিছু খারাপ। ওই খারাপগুলারে মারেন, বাপ মায়ের কি দোষ, সমাজের পাপ ট কই? খারাপ কাজ গুলা স্মাজের বিচ্ছিন্ন ঘটনা, হটার কথাই না। কিন্তু যখন এইটার মাত্রা বাইড়া যায়, তখন বলি সামাজিক অবস্থার অবনতি ঘটতেছে, সমাজ ওর মতই থাকে, অবনতি হয় মাইনষের। ১০০ জনে ১ জন খারাপ থাকুক, অসুবিধা নাইকা, কিন্তু ১০০ জনে ১০ জন খারাপ হইলে তারা একটা দল হয়, হয় একটা শক্তি, ওইটাই ভয়ের ব্যাপার।

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৪০

ক্যাপ্টেইন পিকু বলেছেন: এটাই ভুল বুঝলেন তপ্ত সীসা!
একটা ছেলে জন্ম থেকে মেয়েদের সাথে অন্যদের অসম্মান দেখে বড় হয়। আমরা তার কাছ থেকে কি আশা করব???
আর মেয়েদের বলব কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের পণ্য হিসেবে ভাবতে ভাবতেই বড় হয় অজান্তেই।
আর কিছু জানোয়ার তো আছেই। কিন্ত সেই পশুকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার দায় সমাজের।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.