নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বচ্ছ বিনোদনের প্রতিশ্রুতি!

হীরক পাখি

মেহেদী হাসান আকিব

হীরক পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কি সত্যিই সাহেব?

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:১৯

ওই রহমান... ওই স্যার আইছে। বইতে দেস স্যাররে চেয়ার দে একটা লগে আবার বাবাও আইছে। বাবারে বওয়ার জন্যে চেয়ার দে। দোকান থেইক্কা তাড়াতাড়ি কইরা বিস্কুট লইয়া আয়। জুস আইন্না দে...

১ম বাড়িটা নির্মাণ কালীন সময়ে যিনি দেখাশোনা করতেন তিনি উন্মাদ হয়ে যেতেন, যখন আমি বাবা’র সঙ্গে যেতাম সাইটে। ছোট ছিলাম তখন কাজেই আদরটা সবাই একটু বেশি বেশিই করতো। তবে আমাকে সবাই এমনিতেই ভালবাসতো। দেখতাম কে কিভাবে কাজ করছে। কি কি কাজ করছে, এইসব। পাশে গিয়ে দাঁড়ালেই তার কাজ বাদ দিয়েই আমার সঙ্গে আগে কথা বলতো। বিভিন্ন আদরের নাম ধরে ডাকতো। এটা ওটা কিনে দিত। বেশ মজাই হত।

পড়াশোনা করছি। আর্কিটেক্ট হয়েছি। বাবা নতুন একটা বাড়ি করছে যার প্ল্যান আমার করা। মাঝেমধ্যে সেখানে যেতে হয়। সাইটে গেলে, যিনি সাইট দেখা শোনার দায়িত্বে আছেন তিনি বা মিস্ত্রীরা বলেন।
- ওই সাহেব আসছে। চা আইন্না দে।
তারপর সে নিজেই একটা চেয়ার এনে দিয়ে বলে “সাহেব বসেন” মুরব্বি একজন আছেন যিনি আমার সাইটে ইট, বালি, সিমেন্ট দিচ্ছেন। তিনিও বলেন “বাবা ভাল আছেন আপনি”

সত্যি কথা বলতে ওই সাহেব ডাকের থেকেও এই বাবা ডাকটাই অনেক সুন্দর। সাহেব ডাকের মাঝে কেমন যেন জমিদারী একটা ভাব চলে আসে। নিজেকে তখন অত্যাচারী একজন ব্যক্তি মনে হয়।

সেদিন সাইটে গেলাম। একটা অল্প বয়সী ছেলে RCC ঢালাই-এর জন্যে মাল ভোরে নিয়ে যাচ্ছে দুইটা লোহার বালতিতে করে। জ্যাকেটটা খুলে একটা যায়গায় রেখে আমি নিজেও কাজে নেমে পড়লাম।
- আরে স্যার কি করেন? কি করেন??? রাখেন রাখেন আমি নিচ্ছি তো। রাখেন...
- আরেহ... বেশি কথা না বলে বালতি এখানে রেখে একটু দাঁড়াও আমি ভোরে দিই। একটা করে নিয়ে যাও।
- হে হে না স্যার। লাগবো না। আমি একাই পারবো।
- তুমি একাই এত কষ্ট করে কেন নিবা? কোন দরকার নাই। তুমি বালতি এনে দাও আমি ভোরে দিচ্ছি।
- নাহ স্যার। কাকু দেখলে রাগারাগি করবে। আপনি রাখেন। আমি নিচ্ছি...
বেশ কথা বার্তা শুনে হেড মিস্ত্রী এসে পড়ে এবং সেও একই কথা বলতে শুরু করে। দুইজনের চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে বসে যেতে হয়। কিন্তু এদের কাজ করতে দেখে নিজের কাছেই কেমন যেন খারাপ লাগে। সবাই দেখে আবার লাগে না। ছোট ছেলে বা মরুব্বি কেউ যখন কাজ করে। তখনই খারাপ লাগা কাজ করে।

সাহেব ডাকটার মাঝে কোন ভালবাসা আছে বলে আমার মনে হয় না। বরং, বাবা ডাকের মাঝেই অনেক অনেক ভালবাসা নিহিত। শুনতে বেশ মধুর লাগে। আমার নিজের দেখা অনেক ইঞ্জিনিয়ার আছেন। সাইটে গিয়ে বিড়ি ধরিয়ে চেয়ারে এক পায়ের উপর অন্য পা তুলে বসে আর একদিকে গালাগালি করতে থাকে। কে ছোট বা কে বড়। কে মুরব্বী বা কাকে কি বলা যায় সেসব কিছু না দেখে মুখে যা আসে তাই বলে যায়।

পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে বলেই নিজেকে খুব বড় ভাবতে শুরু করে। আর সাইটে গেলে সবাই সাহেব নইলে স্যার বলে সম্বোধন করে। ভাবে, আমিই সব। আর সে দিনমজুর বিধায় তার কোন দাম নেই। একটা ভেবে দেখা উচিত, সে দিনমজুর হয়েছে বলেই আমি সাহেব ডাক শুনতে পারি। সে দিন মজুর হয়েছে বলেই আজ আমি ইঞ্জিনিয়ার হয়েছি। সে দিন মজুর বলেই আমি অন্যকে গিয়ে বলতে পারি, ওহহ... ওমুক ভবন? আরে ওটা তো আমার করা। আজ সে দিন মজুর বলেই আপনি সমাজে সম্মানিত আর সে ঘৃণিত। আপনাকে সবাই বড় নজরে দেখে আর তাকে ছোট!

ছবি নেট থেকে সংগ্রহীত

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৫৩

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ;) বাংলাদেশে অনেক ইঞ্জিনিয়ার আছে যাদের সামাজিক আচরণ পদ্মার জেলেদের থেকেও নিচে। আবার তাদের পারিবারিক ইতিহাস তোগাতে (চেক করতে) গেলে দেখা যাবে তাদের বাপ-দাদাদের চুলাতে বিড়াই (বিড়াল) ঘুমাত।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১৩

হীরক পাখি বলেছেন: হে হে হে... আসলেই ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.