নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুখ ফেরানো মুখ

দীপঙ্কর বেরা

আমি ভাষা বাংলা ভালোবাসি

দীপঙ্কর বেরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাম্যের কবি নজরুল

২৩ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪০

আমি মায়ের মুখে প্রথম শুনি 'ভোর হোল দোর খোলো খুকুমণি ওঠ রে'। ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসতে হত।
তারপর স্কুলে 'বাবুদের তালপুকুরে হাবুদের ডাল কুকুরে' এবং 'কাঠবিড়ালী কাঠবিড়ালী পিয়ারা তুমি খাও' শুনে মনটা একেবারে ফ্রেস হয়ে যেত।
এরপর উঁচু ক্লাসে একদিন স্যার বললেন - তোমাকে 'কুলিমজুর' কবিতাটি কাল সকালে প্রার্থনা শেষে আবৃত্তি করে শোনাতে হবে। গ্রীষ্মকালে সকালের স্কুলে হত। সেখানে প্রার্থনা শেষে ছাত্রছাত্রীদের যে কোন একজনকে গান কবিতা প্রবন্ধ ইত্যাদি শোনাতে হত।
সবার সামনে আমার সেই প্রথম নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করা আর কবি নজরুলকে বুঝতে শেখা। স্কুলের বইয়ে ছিল ' একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান'। কবিতাটির সরলার্থ বোঝাতে কেঁদে ফেলেছিলেন বাংলার শিক্ষক গগনবাবু।
একটা কবিতা জাতপাতের ঊর্ধ্বে কিভাবে মানুষকে একত্র করতে পারে তা এ কবিতা আত্মস্থ করতে না পারেল বোঝা যাবে না। অনেকেই বুঝতে চায় নি নজরুলের সেই হৃদয়ের বাণী। তাই গগনবাবু নজরুলের ভাষায় আমাদের ক্লাসে বলেছিলেন 'হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোনজন? কাণ্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা'র!'
সেদিন যতটা না আত্মস্থ করতে পেরেছি বর্তমান পরিস্থিতিতে তা আরও বেশি করে অনুভব করি। নজরুলের মত, আমাদের বাংলার স্যার গগনবাবুর মত, হয়তো বা আমার ক্ষুদ্র অনুভবের মত অনেকেই কাঁদছে।
আমার সেই নজরুল ভাবনায় নিজে যখন নিজের কাছে পরাজিত হয়ে যাই, জীবন পথের রাস্তা খুঁজে না পাই তখন একবার মনে মনে কিংবা একা ঘরে কিংবা খোলা ফাঁকা মাঠে উদ্দাত্ত কণ্ঠে বলি
বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর -
কিংবা
চল চল চল
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে
নিম্নে উতলা ধরণীতল
চল চল চল।
এর চেয়ে প্রাণোচ্ছল ভাষা আর কি হতে পারে? নিজেকে নিজে জাগিয়ে তোলার মন্ত্র আমি বুকের মাঝে বারবার ঝংকার দিয়ে জেগে উঠি। নিজেকে বাঁচার 'বিদ্রোহ', অন্যকে বাঁচিয়ে তোলার 'বিদ্রোহ' সুন্দরের প্রতিষ্ঠার 'বিদ্রোহ' এই ভাষা।
দুঃখু মিঞার দুঃখ জীবনী পার করে 'বিদ্রোহী কবি' নজরুল হয়ে ওঠা অধ্যায়ে নানান দিক উন্মোচিত। এই জীবনীতে মানুষকে জাগিয়ে তোলার সাহিত্য এবং বাংলা ভাষা সবার চেতনায় অমোঘ স্থান করে নিয়েছে।
এখন অনুভব করি এ শুধু লেখার জন্য লেখা হয় নি। হৃদয় মথিত এসব বাঙালি জীবনের সম্পদ।
'শুকনো পাতার নুপূর পায়ে' আমি তো গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠি। 'রাঙামাটির পথে লো মাদল বাজে, বাজে বাঁশের বাঁশি' যেন মাটির কথা বলে যায়। আর ধর্মকে এত কাছ থেকে বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম দেখেছেন যে তাকে বুকে ধারণ করে হৃদয় উৎসারিত বাণী কবিতা গানে উজাড় করে দিয়েছেন।
কবি নজরুল তাঁর লেখনী মানুষ হিসেবে, মানুষের কর্তব্য হিসেবে বার বার প্রতিভাত করেছেন। তাই 'সাম্যের গান' গেয়ে গেছেন হৃদয় নিকড়ে।
তিনি কোন জাতি ধর্ম দেশকে আলাদা দেখেন নি। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছেন। বাঙালীর সত্ত্বাকে হৃদয়ঙ্গম করেছেন।
তাই কবি অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন ‘
ভুল হয়ে গেছে বিলকুল
সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে
ভাগ হয়নিকো নজরুল।
এই ভুলটুকু বেঁচে থাক
বাঙালি বলতে একজন আছে
দুর্গতি তাঁর ঘুচে যাক।
দুই বাংলায় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে বিদ্রোহী কবি নজরুল তাই আজও রবীন্দ্রনাথের সাথে সমান মর্যাদায় উচ্চারিত।
যে কোন ভাষার প্রাণ ভ্রমরা ও ধারক সেই ভাষার সাহিত্য। সেই সাহিত্যের অন্যতম হল কবিতা। বাংলা ভাষায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এত প্রাচুর্য দিয়ে গেছেন যা বাংলা ভাষার অনন্য দিক চিহ্ন। প্রাণ থেকে উৎসারিত হয়ে পড়ে। বাংলা ভাষা খুঁজে পায় আপন মহিমান্বিত মর্যাদা। যা অসীম কাল অক্ষয় হয়ে থাকবে।
তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। মানুষের হয়ে কথা বলা। তাই তো তিনি সহজেই বলতে পারেন
"আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ জ্বালা, চির লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের।"
নেতৃত্বকে তিনি হুঁশিয়ারী দিয়েছেন 'কাণ্ডারী হুশিয়ার"। যা বর্তমান সময় প্রেক্ষিতে খুব প্রয়োজন। দিশেহারা দেশ কাল জাতির প্রয়োজনে তাই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে শুধু স্মরণ জন্মজয়ন্তী পালনে কিছু হবে না।
নজরুলকে বুঝতে হবে, হৃদয়ঙ্গম করতে হবে, সাম্যের গান মানুষের মধ্যে একাত্ম করে দিতে হবে তবেই বিদ্রোহী কবির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি পরিপূর্ণ হবে।

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫

কাইকর বলেছেন: সুন্দর হয়েছে লেখাটা

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:০৬

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন।

২| ২৩ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৬

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: অবশ্যই কবি নজরুল না থাকলে বাংলা সাহিত্য অপূর্ণ থেকে যেত। তার চিন্তা, চেতনা এতই আধুনিক ছিল যে তা আজকের সমাজের অনেকেও ধারণ করতে পারেন না! নজরুল শুধু বইয়ের পাতায় নয়, মানব হৃদয়ে বেঁচে থাকুক।

পোষ্টে ভালো লাগা।

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:০৬

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন

৩| ২৩ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৮

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: বাঙালি চেতনার কবি কাজী নজরুল ইসলাম। শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি তাঁরে।

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:০৭

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: বারে বারে স্মরণ করি।
ভাল থাকবেন

৪| ২৩ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি উনার সাম্যের দিকটা তো তুলে ধরেননি!

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:০৮

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: যতটা পেরেছি তুলে ধরেছি। সত্যিই আরো প্রয়োজন ছিল।
ভাল থাকবেন।

৫| ২৩ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি উনার সাম্যের দিকটা তো তুলে ধরেননি!

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:০৯

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: নিশ্চয়। আবার চেষ্টা করব। ভাল থাকবেন।

৬| ২৩ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫২

শামচুল হক বলেছেন: ভালো লাগল লেখা। ধন্যবাদ

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:০৯

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন

৭| ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:১২

খায়রুল আহসান বলেছেন: আলোচনাটি খুবই ভাল লেগেছে। + +। আন্তরিক ধন্যবাদ!
সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মূল্যবান একটি কথা বলে গেলেনঃ "যেকোন ভাষার প্রাণ ভ্রমরা ও ধারক সেই ভাষার সাহিত্য। সেই সাহিত্যের অন্যতম হলো কবিতা।"

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:১০

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকেও। ভরসা পেলাম।
ভাল থাকবেন

৮| ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:১৮

অনুতপ্ত হৃদয় বলেছেন: সুন্দর আলোচনা , ভালো লাগলো।
নজরুলেই বাংলা সাহিত্যকে পূর্ণতা দিয়েছে

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:১১

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন

৯| ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ৯:৩৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় লেখা।
আশা করি আমার মতো সকল পাঠকেরাই লাভবান হবেন।
শুভ কামনা।

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:১১

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: জেনে ভাল লাগল
ধন্যবাদ

১০| ২৪ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর করে লিখেছেন।

১১| ২৪ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:২১

রাজীব নুর বলেছেন: নজরুলের কবিতা আমাকে শক্তি দেয়। সাহস দেয়।

২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:১২

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: আমাকেও। আন্তরিক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.