নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫২

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১

ভীমের নাগলোক দর্শনঃ





বিষের প্রভাবে অচেতন ভীম ভাসতে ভাসতে নাগলোকে উপস্থিত হল। অচেতন ভীমের বিপুল শরীর নাগেরা জড়িয়ে ধরল এবং ক্রোধে চতুরদিক থেকে সবাই তাকে দংশন করতে লাগলো। তাদের বিষের তেজে কালকূট বিষ ক্ষয় হল। ভীমেরও জ্ঞান ফিরল। চারদিক দেখে ভীম বিস্মিত হল। ভাইদের ছেড়ে কিভাবে এখানে উপস্থিত হল বুঝতে পারল না। হাত-পা বাঁধা দেখে অবাক হল, অবহেলায় বন্ধন মুক্ত হয়ে মুষ্টাঘাতে নাগদের মারতে শুরু করল। ভীমের মুষ্টাঘাত বজ্রের সমান। নাগরা ভয়ে পালাতে লাগলো। কিছু নাগ একত্র হয়ে বিস্ময় প্রকাশ করল। তাদের বিষে কেউ বাঁচে না, অথচ এই বালক কেবল বাঁচলই না, তার আঘাতে নাগদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এর হাত থেকে রাজা বাসুকিই কেবল বাঁচাতে পারেন, ভেবে তারা রাজার কাছে উপস্থিত হল।



বাসুকির কাছে গিয়ে নিবেদন করল, এক মনুষ্য নাগকুল ধ্বংস করতে এসেছে। দেখে তাকে মানুষ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সে হয়তো ইন্দ্রের নর অবতার। কারণ তার মধ্যে মনুষ্যের আচরণ নেই। বাঁধা অবস্থায় সে নাগলোকে এসেছিল। ক্রোধে সব নাগরা তাকে দংশন করল। পূর্বে সে অচেতন ছিল, দংশনে সে চেতনা পেল। তার গর্জনে সকল নাগরা পালাল।

এই সব বিবরণ শুনে বাসুকি চিন্তিত হয়ে দ্রুত যেখানে ভীম আছে সেখানে চললেন। পিছনে সকল নাগরা তাকে অনুসরণ করল।

দিব্যচক্ষু দিয়ে বাসুকি জানতে পারলেন পবন ঔরসে কুন্তীর এই পুত্রের জন্ম। মধুর বচনে ভীমকে সম্ভাষণ করে বাসুকি জানালেন ভীম তার দৌহিত্রের দৌহিত্র অর্থাৎ নাতির নাতি। তিনি ভীমকে তার ইচ্ছে মত ধনরত্ন গ্রহণ করতে বললেন। নাগেরা তাদের সম্পর্কের কথা শুনে বললো, এই কুমারকে ভক্ষ্য ভোজ্য দিয়ে তুষ্ট করতে হবে। ধনরত্নে এর আগ্রহ নেই। ভোজনেই এ পরম প্রীত হবে।

ভীমকে নিয়ে বাসুকি নিজ গৃহে যান। রাজা বাসুকি পরম আদরে ভীমকে রাজগৃহে এনে পালঙ্কে বসালেন।







নাগের আলয়ে সুধাকুন্ড আছে। ভীমকে তিনি বললেন মনের আনন্দে সে এই সুধাকুন্ড পান করতে পারে। সহস্র হস্তীর বল এক কুন্ড পানে। যত ইচ্ছে সে পান করতে পারে।

একে বৃকোদর তার উপর পরিশ্রান্ত ক্ষুদায়। সেই লোভী অপূর্ব সুধার কুন্ড পেল। একে একে ভীম আটটি কুন্ড পান করল। আর চলতে পারে না – এত শক্তি তার উদরে পূর্ণ হল। রত্নময় পালঙ্কে শেষে শয়ন করল।



এদিকে নিদ্রা অবসানে সকল কুরুপুত্ররা গৃহে ফিরছে। যে যার রথে, অশ্বে, গজে উঠে বসল। ভাইদের যুধিষ্ঠির ডাকলেন। সবাই এলো, কিন্তু ভীমকে পাওয়া গেল না। সবাই ভাবল সে ফল খেতে বাগানে গেছে বা গঙ্গায় বিহার করছে। সবাই ভীমকে চারদিকে খুঁজতে লাগলো। ‘ভীম, ভীম’ বলে সবাই ডাকে কিন্তু তাকে পাওয়া যায় না। সবাই ভাবলো ভীম হয়তো আগেই গৃহে ফিরে গেছে। ভীমকে না দেখে যুধিষ্ঠির বিরস বদন হলেন। তিনি দ্রুত গৃহের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। গৃহে দেখেন জননী কুন্তী একাই আছেন। তিনি ভাবলেন কুন্তী হয়তো ভীমকে কোথাও পাঠিয়েছেন।



মাকে যুধিষ্ঠির প্রশ্ন করেন ভীম কোথায়, তাকে না দেখতে পেয়ে যুধিষ্ঠিরের মন চঞ্চল হয়ে উঠেছে।



কুন্তী সব শুনে বিসন্ন হলেন। কারণ ভীম গৃহে ফিরে আসেনি। এদিকে জলে, স্থলে, কাননে কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।



কুন্তী শীঘ্র বিদুরকে ডেকে পাঠালেন। বিদুর এলে কুন্তী জানালেন ভীম অন্য ভাইদের সাথে খেলতে গেছিল, সবাই ফিরেছে কেবল সে ফেরেনি। তার অনুমান এর পিছনে ক্রূরমতি দুর্যোধনের হাত আছে। সে ভীমকে সহ্য করতে পারে না। দুর্যোধন হয়তো ভীমকে হত্যা করেছে। একথা ভেবে তিনি কষ্ট পাচ্ছেন।



বিদুর কুন্তীকে এই সন্দেহের কথা আর কাউকে জানান নিষেধ করেন। কারণ বাকি চারপুত্রকে বাঁচাতে হবে। দুষ্টমতি দুর্যোধন তার কথা শুনলে আরো অবিচার করবে।





মা কুন্তী



এত কথা শুনে কুন্তী কাঁদতে লাগলেন। বাকি চারভাইও কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল। ভীমের শোকে সবাই বিলাপ শুরু করল।

কিছুক্ষণ চিন্তা করে বিদুর বললেন সকলে শোক দুর কর। ব্যাসের বচন কখনও মিথ্যা হওয়ার নয়। কারণ ব্যাস বলেছিলেন- পৃথিবীতে অবধ্য পান্ডব পঞ্চজন। হয়তো এখনই ভীম এসে উপস্থিত হবে। এত বলে প্রবোধ দিয়ে বিদুর নিজের ঘরে গেলেন।



এদিকে নাগলোকে বৃকোদর নিদ্রা গেলেন। অষ্টমদিন পর তার নিদ্রা ভঙ্গ হল। ভীমকে সচেতন হতে দেখে নাগরা তাকে নিজ ঘরে গমনের অনুরোধ করল। আটদিন হল কোন খবর নেই, গৃহে মাতা কুন্তী এবং চারভাই নিশ্চয়ই কান্নাকাটি করছেন। এত বলে নাগরা নানা রত্ন দিয়ে কাঁধে করে ভীমকে প্রমাণকোটিতে রেখে এলো।

বীর ভীম সেখান থেকে মত্ত গজের গতিতে আপন বাসায় এলেন। মা ও যুধিষ্ঠিরকে প্রণাম করলেন ও তিন ভাইকে আলিঙ্গন করে শিরচুম্বন করলেন।

যুধিষ্ঠির ভীমকে দেখে আনন্দাশ্রু বিসর্জন করলেন। এতদিন কোথায় ছিলেন জানতে চাইলেন।

ভীম বলেন সন্দেশ বলে দুষ্ট দুর্যোধন তাকে বিষ খাওয়ায়। অচেতন হয়ে পরলে তাকে গঙ্গায় ফেলে দেয়। নাগরা তাকে দংশন করলে তিনি জ্ঞান পান। রাজা বাসুকিনাগ তাকে বহু ধন দান করেন। এত বলে মায়ের চরণের কাছে সব রত্ন রাখেন।



সকল কথা জেনে যুধিষ্ঠির চমকে ওঠেন। তিনি বলেন দুর্যোধন এ কর্ম করেছে কেউ বিশ্বাস করবে না। তাই কাউকে এ ঘটনার কথা জানাতে হবে না। তবে কেউ কখনও আর একা দুর্যোধনের কাছে যাবে না। এভাবে পাঁচজন বিচার করে তখন থেকে বাল্যক্রীড়া বর্জন করলেন।

দুর্যোধন বিফল মনোরথ হয়ে মনস্তাপ ভোগ করতে লাগল।

....................................

উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে

......................................

আগের পর্ব:



কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫১

Click This Link

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫২

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন:







সুন্দর হয়েছে!!





ধন্যবাদ।

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:২৩

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, দেশ প্রেমিক বাঙালী! :)

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:২১

আছিফুর রহমান বলেছেন: ভীম একটা কাপুরুষ, বদরাগি, বুদ্ধি হীন একটা ইতর
ভীমের তুলনায় করন, দুরজধন অনেক আকর্ষনীয়

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:১০

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: informative post +

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫৫

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, সাইবার অভিযত্রী!

৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৩২

ঢাকাবাসী বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ঢাকাবাসী!

৫| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৪

bakta বলেছেন: Abar Valo Laga...Byakto Karlam. Charaibeti...Charaibeti... Thanks Dipanwita. Keep up it.

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫৩

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, bakta!

৬| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

এই সিরিজটার সাথে বরাবরই আছি। দারুণ একটা সিরিজ।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫২

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, কান্ডারি অথর্ব!

৭| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ রাত ১:০৭

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: চমৎকার , অনেক চমৎকার , পঞ্চ পাণ্ডবদের কথা পড়তে ভাল লাগছে ।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫১

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ......অনেক ধন্যবাদ, অদ্বিতীয়া আমি! :)

৮| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:০৫

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
এই সিরিজে চোখ থাকছে।
টিভিতে সিরিজ চলায় অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে।
কিন্তু এতো স্লোলি চললে হবে? :)

শুভকামনা, দিদি।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৪৯

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আশরাফুল ইসলাম দূর্জয়!...সেই! আমি আসলে খুব কুঁড়ে তো তাই এতো স্লো চলছে :( ...তবে এখন একটু একটু লেখা চলছে, তারপর টাইপ হবে...তারপর ব্লগে চলে আসবে :D

৯| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:১৪

ইখতামিন বলেছেন: অনেক ভালো লেগেছে :)

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৪৫

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ইখতামিন! :)

১০| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:২৩

রাতুল_শাহ বলেছেন: এইগুলা জানতাম না।
তবে যাইহোক আপু, ১মাস পর পর মহাভারতের পর্ব পোষ্ট পাবো, এটা মানতে পারছিনা। মাসে অন্তত ৪টা পোষ্ট দেন।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৪৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, রাতুল_শাহ! ......খুব ভাল লাগলো আপনার মন্তব্য...ঠিক আছে মাসে দুটো পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো :)

১১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ২:৫৯

রাসেলহাসান বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৪০

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, রাসেলহাসান! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.