নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন ভ্রমণ পাগল

অপ্রকাশিত রহস্যগুলোকে প্রকাশ করতে চাই

একজন ভ্রমণ পাগল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাইক্ষংকুম, আমিয়াকুম ও নাফাকুমের পথে... [পর্ব-২]

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:২৫

১ম পর্বটি এখানে ক্লিক করে পরে নিবেন।



সাকাহাফং এর পথে অনেক বড় বড় পাহাড় রয়েছে যা পেরিয়ে আসতে আমাদের খুব কষ্ট হয়েছিল। আমরা এবার যাব নাইক্ষংকুম, সাতভাইকুম ও নাফাকুমের দিকে। গাইড এর কাছ থেকে জানতে পারলাম এ রাস্তায় তেমন কোন পাহাড় নেই, সমতল ভূমি বেশী। সেই কথা শুনে সবাই খুব খুশী হলাম : । মনে হচ্ছিল অনেক দিন পর সমতল ভূমি দিয়ে হাঁটব।



১০ তারিখ সকালে আমরা সাকাহাফং থেকে নেমে নেফিউপাড়াতে এসে বসি। সেখান থেকে আমাদের ব্যাগ গুলো নিয়ে আবার সেই গা হিম করা পথ দিয়ে নামতে শুরু করি, উদ্দেশ্য বুলুংপাড়া। কিছুক্ষণ নামার পর রেমাক্রি খাল পেয়ে যাই।



এই খালটি আমি যতবার দেখি ততবারই ভাল লাগে। একটি খাল এত সুন্দর হতে পারে সেটা না দেখলে হয়ত বিশ্বাস করতাম না। আমাদের এবারের পথ এই খালের পাশ ধরেই এগিয়ে গেছে। অনেকদিন পর সমতল ভূমিতে হাটতে পেরে সবারই অনেক ভাল লেগেছে। তার মধ্যে রাস্তাটি যদি একটি সুন্দরী খালের পাশ দিয়ে হয়, তাহলে তো কোন কথাই নেই শুধু হাটা আর দেখা :D



প্রায় আধ ঘন্টা হাটার পর আমাদের আবার একটি পাহাড়ে উঠতে হল। ভাগ্য বোধহয় আমাদের অনুকূলে ছিল না তাই এবারও বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। কি আর করা, সবাই যার যার ব্যাকপ্যাক পলিথিনে ভরে বৃষ্টির মধ্যে হাটতে শুরু করলাম। জানেনি তো, জোক মশাইরা বৃষ্টিকে খুব ভালবাসে তাই বৃষ্টি নামলেই আর ঘরে থাকতে পারে না।



যাক এবারের পাহাড়টা বেশী বড় ছিল না কিন্তু খাঁড়া ছিল। অবশেষে আমরা পাহাড় থেকে নেমে ঝিড়ি পথ ধরে হাটছিলাম। ঝিড়ি পথ গুলো অনেক সুন্দর হয়ে থাকে, ছোট ছোট পাথরের ফাঁক দিয়ে পানি নেমে যাচ্ছে। পানি গুলোও খুব পরিষ্কার এবং ঠান্ডা। কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ঝিড়ি পথে পা ভিজিয়ে হাটলাম। তারপর আবার একটা পাহাড়ে উঠতে হবে। এই পাহাড়ের উপরেই বুলুংপাড়া। পাড়াতে উঠার আগে একটি শুকনো যায়গায় বসে আমরা সবাই জোক চেক করলাম। কয়েকটা কে পাওয়া গেল কিন্তু বেশী সুবিধা করতে পারেনি, বেটারা বোধহয় একটু আগেই উঠেছে।

আমরা পাড়ার উদ্দেশ্যে উঠতে শুরু করলাম। ২০ মিনিটের মধ্যে পাড়াতে পৌছে গেলাম।



তখন বৃষ্টি কমে গিয়েছিল। পাড়া থেকে যখন অন্য পাহাড় গুলি দেখছিলাম অসাধারণ লাগছিল। এখান থেকে সাকাহাফংকে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ওপাশের পাহাড় গুলোতে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। একপাশে এখনও মেঘের কিছু অংশ উঁকি দিচ্ছে।

প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে, তার উপর বৃষ্টি হওয়াতে রাস্তা অনেক পিচ্ছিল হয়ে গেছে। আমরা বুলুং পাড়ার কারবারীর ঘরে উঠে পড়লাম। সবাই তাদের ব্যাগ রেখে ড্রেস পরিবর্তন করতে শুরু করল। আমি, সেতু ভাই ও আশারাফুল ভাই বাইরে এসে বসলাম। এ পাড়ার বসার স্থানটা খুব সুন্দর। আমরা প্রায় ২ ঘন্টা এখানে বসে রাতের পাহাড় দেখলাম।

১১ তারিখ খুব ভোরে বের হয়ে গেলাম নাইক্ষংকুম এর উদ্দেশ্যে। এবারের পথ গুলো খুব ভাল। অনেকটা সমতল ভূমি পেলাম। হাটতে ভালই লাগছে। আধ ঘন্টা ট্রেক করে আমরা রেমাক্রি খালের কাছাকাছি এসে পড়লাম।





রেমাক্রি খালের সৌন্দর্য আর নতুন করে কি বলব। আমাদের তিনবার এই খালটি পার হতে হয়েছে। খালের মাঝে আসলে বোঝা যায় স্রোতের কতটা শক্তি...!!!! তারপর আবার জঙ্গলে ভরা পাহাড়ে উঠতে হয়েছে। স্থানীয় একজন আমাদের খুব তাড়াতাড়ি হাটতে বলল। ঠিক বুঝতে পাড়লাম না কেন এমনটা বলল! কিছুক্ষণ পর আবার একই কথা বললেন। তখন কৌতুহল বসত আমি জিজ্ঞাস করলাম এখানে কি কোন সমস্যা আছে? উত্তরে যা শুনলাম তাতে গা শিরশির করতে লাগল। এটা নাকি সাপেদের রাজ্য। যে পরিমাণ জঙ্গলে ভরা দিনের আলোও ঠিক ভাবে পৌঁছাতে পারে না। তার উপর সাপগুলোর রঙ সবুজ। এরকম পরিবেশে সাপকে আলাদা করে খেয়াল করা অসম্ভব ব্যাপার। ভয়ে ভয়ে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব রাস্তা হেটে যাচ্ছিলাম। এভাবে ১ ঘন্টা হেটে অবশেষে জঙ্গল থেকে বের হয়ে ১টা জুমঘর পেলাম। সেখানে সবাই বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম সাথে আনা শুকনো খাবার খেয়ে নিলাম। এখান থেকে নাইক্ষংকুম এর কিছু অংশ দেখা যায় এবং স্পষ্ট জলপ্রপাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমাদের টূরের ১ম জলপ্রপাত ছিল এইটা, তাই সবাই খুব এক্সাইটেড। জুম ঘর থেকে আমরা নিচে নামতে শুরু করলাম। নিচে নামলেই নাইক্ষংকুম পাওয়া যাবে। ২০ মিনিটের মধ্যেই আমরা নিচে নেমে গেলাম। পথে চালতা গাছ ছিল, কিছু চালতা পেরে নিলাম। ঠিক ২ মিনিট পরেই পেয়ে গেলাম আমাদের স্বপ্নের নাইক্ষংকুম।









আমাদের বাংলাদেশ এত সুন্দর সেটা আমি লিখে অথবা ছবি দিয়ে আপনাদের বোঝাতে পারবনা। কটকটা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে সবাই জলপ্রপাত দেখলাম। এখান থেকে বের হতে হলে আমাদের ভেলা নিয়ে যেতে হবে, তাই সাথে নিয়ে আসা স্থানীয় লোকটাকে পাঠিয়ে দিলাম বাঁশ কাটতে। তারপর আমরা চালতা খেতে বসলাম। কিন্তু লবণ ছাড়া তো চালতা মজা লাগবে না। হাসান ভাইয়ের ব্যাগে হানা দিলাম, কারণ একমাত্র উনিই লবণ নিয়ে আসছিলেন। হাসান ভাই আমরা দুঃখিত আপনার কষ্ট করে বয়ে আনা লবণ এক থাবাতেই শেষ করে দেওয়ার জন্য। চালতা খাবার মূহুর্তটা অসাধারণ ছিল। বিশেষ করে সেতু ভাই, লক্ষণ ভাই আর আমি অনেক মজা করেছিলাম।



নাইক্ষংকুম এ এসে আমাদের ভেলা বানাতে অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়। প্রায় ৫ঘন্টার মত আমরা কটকটা রোদের মধ্যেই বসে ছিলাম তবুও কারো কোন অভিমান ছিলনা।



এত সুন্দর জলপ্রপাতের কাছে এটুকু কষ্ট কিছুইনা। অনেক্ষণ বসে থাকার কারণে আরও দুইটা গ্রুপ এসে পড়ল। ভেলাতে নামতে হলে প্রচন্ড রিস্কি ১টা পথ দিয়ে অনেকটা ক্লাইম্ব করে যেতে হয়। আর ওই স্থানের পানির ফ্লো সাগরের বড় বড় ঢেউয়ের মত। তারপর প্রায় ১০ ফুটের মত দড়ি বেয়ে ভেলায় নামতে হবে। আমি সাতার জানতাম তাই তেমন ভয় করেনি। ১টা ভেলাতে আমাদের সবার ব্যাগগুলো রাখা হল। আমি, তাহলিল ভাই ও আশরাফুল ভাই ভেলাটা চালিয়ে নিয়ে গেলাম। ১ম দিকে ভেলাটা প্রচন্ড স্পিডে চলতে শুরু করল কিছুক্ষণ পর বেগ অনেকটা কমে যায়। আমাদের এই ভেলা ভ্রমণ টাও খুব মজার ছিল। পারে উঠে ড্রেস পরিবর্তন করতে করতে অন্যরাও এসে পড়ল। তারপর হাটা শুরু করলাম। আর তখনি আবার বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বৃষ্টির মধ্যেই হাটা শুরু করলাম। আর কিচ্ছুক্ষণ পরেই সন্ধ্যা নামতে শুরু করবে আর তখন তো হাটতে আরো সমস্যা হবে।

১৫/২০ মিনিট পিচ্ছিল পাথর পেরিয়ে আমরা আমিয়াকুম এর কাছে এসে পরি। এটা নাইক্ষংকুমের চেয়েও সুন্দর। পরিষ্কার পানির জলপ্রপাত সামনে না গেলে অনুভব করা যাবে না।



আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাতের মধ্যে অন্যতম।





এখানে কিছু ছবি তোলা হল। তবে বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না, সামনে এগোতে হবে। গাইড আমাদের বলল এখন দুইটা রাস্তা আছেঃ ১টা তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে কিন্তু রাস্তা কঠিন অন্যটাতে একটু দেরি হবে কিন্তু রাস্তা সহজ। এতদিন অনেক ধকল যাবার ফলে কেউ কঠিন রাস্তা দিয়ে যেতে চাইল না। আমরা সহজ রাস্তা দিয়েই হাটতে শুরু করলাম, উদ্দেশ্য জিন্নাপাড়া।



বাকী অংশ পরের পর্বে লেখা হবে।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চমৎকার আরও একটি পর্ব ভ্রাতা ++++++++++

শুভেচ্ছা নিরন্তর :)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫

একজন ভ্রমণ পাগল বলেছেন: আপমাকেও ধন্যবাদ। খুব শীঘ্রই পরের পর্ব নিয়ে হাজির হয়ে যাব। ;)

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৭

বাংলাদেশ এক্সপ্লোরার বলেছেন: এরকম ইভেন্ট কবে হবে আবার ?

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৩৯

একজন ভ্রমণ পাগল বলেছেন: লেখক বলেছেন: পরে এরকম ইভেন্ট কবে হবে সেটা বলতে পারছি না। আপনি এই দুই টা গ্রুপ এ জয়েন করে নিয়েন। এখান থেকে এ ধরনের অনেক ইভেন্ট পাবেন।

1. Travelers of Bangladesh
2. Extreme Trekker of Bangladesh

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:০৩

সাজিদ ঢাকা বলেছেন: পোস্টে ++++++++

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:১৪

একজন ভ্রমণ পাগল বলেছেন: ধন্যবাদ ভ্রাতা :)

৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবেনাকো তুমি...

সকল দেশের রাণী সেযে, আমার জন্মভূমি..

সো যে আমার জন্মভূমি...........................

আহা.. কি সৌন্দর্য্য.............প্রাণ জুড়িয়ে যায়.............

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯

একজন ভ্রমণ পাগল বলেছেন: ভাল বলেছেন। আসলেই আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর :)

৫| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৩

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অতীব চমৎকার, হিংসে...হিংসে...আর হিংসে...

পোস্টে প্লাস এবং লেখকের তরে একরাশ শুভকামনা। :)

০১ লা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫২

একজন ভ্রমণ পাগল বলেছেন: ধন্যবা্দ


হিংসে করে কি করবেন। একদিন চলে যান না অজানার উদ্দেশ্যে। :)

৬| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৪২

তুষার কাব্য বলেছেন: দারুন দারুন....! খুব সম্ভবত এই দলে আমারও থাকার কথা ছিল...বাট এই সময় আমি ছিলাম শিমলা,মানালি...ই টি বি থেকে সেতু ভাইয়ের সাথে গেছেন আপনারা? শুভকামনা...

২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৪

একজন ভ্রমণ পাগল বলেছেন: ধন্যবা্দ ....। :) আমরা সেতু ভাইদের সাথেই গিয়েছিলাম। আপনার নামটা জানতে পারলে হয়ত চিনতে পারতাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.