নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লাহপাক বলেন \"ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে ভাল কথা কার হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে এবং নেক আমল করে এবং বলে যে নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের মধ্যে একজন।\"(আল-কোরআন)

ইলিয়াস বিডি

আমি এক মুসাফির

ইলিয়াস বিডি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বের আকাশে তাবলীগী তারকা/ জন্ম,শিক্ষা ও কর্মজীবন

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৪১



মাওলানা আলী আকবর (রহঃ)
-----------------------------------------
মাওলানা আলী আকবর (রহঃ) কে চেনেন না কিংবা তাঁর নাম জানেন না এমন লোক একেবারে নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে দাওয়াত ও তাবলীগ এর সুপরিচিত একজন মুরুব্বি ছিলেন মাওলানা আলী আকবর (রহঃ)। ১৯০৮ সালে বি. বাড়িয়া জেলার শ্যামবাড়ি নামক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন মাওলানা আলী আকবর (রহঃ)। পিতার নাম গাজী মুন্সি সেকান্দার আলী চৌধুরী। পেশা একজন কৃষক হলেও তাঁর পিতা দ্বীনদ্বার একজন মানুষ ছিলেন। গ্রামের মসজিদের ইমাম ছিলেন তিনি। ছেলে একদিন বড় আলেম হবে, সারা বাংলার মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে এমনটাই স্বপ্ন ছিল তাঁর। বাবার এ স্বপ্ন অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করেছিলেন মাওলানা আলী আকবর ছাহেব (রহঃ)। দ্বীন প্রচারের ও মানুষের খেদমত করার এমন একটি মাধ্যম তিনি বেছে নিয়েছিলে, দ্বীন ইসলামের প্রচার-প্রসারসহ মানবসভ্যতার খেদমত করার মতো প্রায় সব দিকগুলোর সন্নিবেশ ঘটেছিল যেখানে। মাওলানা আলী আকবর (রহঃ) তখন ভারতের দেওবন্দ মাদরাসার ছাত্র। এক সফরে মাওলানা ইউসূফ কান্দলভি (রহঃ) সেখানে সফরে এলে মাওলানা আলী আকবর (রহঃ) কে তাঁর সফর সঙ্গী বানানো হলে। মাওলানা ইউসূফ কান্দলভির (রহঃ) সংস্পর্শে মাওলানা আলী আকবরের (রহঃ) অন্তরে ঠিক তখনই তাবলিগ জামাতের প্রকৃত গুরুত্বের উন্মেশ ঘটে। মাওলানা আলী আকবর (রহঃ) একথা বুঝতে সক্ষম হন, ছোটবেলা থেকে মানুষকে দ্বীনের পথে আহবান জানানো জন্য তিনি যে পথ খুঁজছিলেন এটাই বস্তুত সে পথ। কাঙ্ক্ষিত ‘মাকসাদ’ অর্জনের খুশিতে আরো বেশি বীনিত সময় কাটান মাওলানা ইউসূফ কান্দলভির (রহঃ) সংস্পর্শে এবং মনে মনে একথায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন ‘চিরদিনের জন্য আমাকে এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে।
তাবলিগের কাজই ছিল মাওলানা আলী আকবরের (রহঃ) জীবনের একমাত্র কাজ। এই একটি মাত্র কাজকে তিনি তাঁর জীবন ও মরণের উত্তম ‘জরিয়া’ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ফখরে বাঙাল মাওলানা তাজুল ইসলাম (রহঃ) সাহেবের মাদসারার শিক্ষক ছিলেন তিনি। সেখানে শিক্ষক থাকাকালীন একদিন ফখরে বাঙালের কাছে গিয়ে তিনি বললেন, ‘হুজুর মাদরাসায় শিক্ষকতা করার মতো অনেক লোক রয়েছে কিন্তু তাবলিগের কাজ করার মতো লোকের সংখ্যা এখনও অনেক কম। আমাকে যদি আপনি অনুমতি প্রদান করেন, তাহলে আমি মাদরাসায় শিক্ষকতা ছেড়ে একান্তভাবে তাবলিগের কাজে মনোনিবেশ করতে পারি। মাওলানা তাজুল ইসলাম (রহঃ) তাঁর এ প্রস্তাব সানন্দে গ্রহণ করলেন এবং দ্বীনের পথের একনিষ্ঠ একজন দায়ী হওয়ার আহবান জানিয়ে দোয়া করলেন। দ্বীন ইসলামের দাওয়াতি কাজের প্রতি মাওলানা আলী আকবরের (রহঃ) এই ভালোবাসা একদিন কিংবা নির্দিষ্ট একটি ক্ষণের অর্জন নয়, এ ভালোবাসা তাঁর অন্তরে দানা বেধেছিল ছোটবেলায়ই। তখনও তিনি মাদসারার ছাত্র। মাদরাসা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ দূরের একটি বাড়িতে জাগির থাকতেন তিনি। জাগির বাড়ির সদস্যদের জমা করে সপ্তাহে একদিন দ্বীনি বিষয় আলোচনা করতেন এবং আগত সবাইকে দ্বীন বোঝা ও মানার জন্য বীনিত আবেদন জানাতেন। ঠিক এভাবেই, পুরোপুরি না হলেও দ্বীনি পরিবেশের সিংহভাগ ‘মোখালিফ’ একটি এলাকাকে ইসলাম প্রিয় একটি মহল্লায় পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন মাওলানা আলী আকবর (রহঃ)

যেদিন থেকে তিনি এ কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন ঠিক সেদিন থেকেই এ কাজের জন্য সবর্স্ব উৎসর্গ করেদিয়েছেন। নিজের বাড়ি-ঘর ত্যাগ করে কাকরাইল মসজিদকেই আপন আবাসস্থ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন দ্বীন ইসলামের প্রচার কাজে নিয়োজিত মহান এই কর্মী। ফখরে বাঙাল আল্লামা তাজুল ইসলামের (রহঃ) কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পর বি. বাড়িয়া থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত তাঁর দাওয়াত ও তাবলীগ এর সফর ছিল। সে সফরে থাকাকালীন নিদারুণ কষ্ট করেছেন তিনি। একাধারে তিন/চারদিন পর্যন্ত না খেয়ে কাটিয়েছেন কিন্তু একমাত্র আল্লাহ মহান ছাড়া অন্য কারো কাছে ব্যক্ত করেনি কখনো। দ্বীনের জন্য এমন আরো অনেক কষ্ট-মোজাহাদা-কোরবানি জ্বলন্ত একটি উদাহরণ মাওলানা আলী আকবর (রহঃ) ছোট্ট কলেবরের এই প্রবন্ধে যা আলোচনা করা সম্ভব নয। তাবলিগ জামাতের বিভিন্ন মুরুব্বিদের কাছ থেকে মাওলানা আলী আকবরের (রহঃ) ব্যাপারে এমন মন্তব্যও পাওয়া যায় যে, মাওলানা আলী আকবর (রহঃ) ছিলেন বাংলাদেশে দাওয়াত ও তাবলীগ এর শক্ত একটি খুঁটি। খুঁটি ছাড়া যেমন একটি ঘরের অস্তিত্ব কল্পনা করা সম্ভব নয়, মাওলানা আলী আকবরের (রহঃ) নাম ও তাঁর অবদানের স্বীকৃতি ছাড়া বাংলাদেশে দাওয়াত ও তাবলীগ এর পরিচয় তুলে ধরা সম্ভব না।
কেবল দাওয়াত ও তাবলীগ এর আমলের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না মাওলানা আলী আকবেরর (রহঃ) জীবনচক্র। দাওয়াতি মেহনতের পাশাপাশি নানাবীধ আমলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) সহ দেশবরেণ্য অনেক আলেমের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় আধ্যাত্মিক দীক্ষাও লাভ করেছেন তিনি। এক কথায়, দ্বীনের পথের একজন কামিল দায়ির সবগুলো গুণের সফল সম্মিলন ঘঠেছিল মাওলানা আলী আকবরের (রহঃ)মাঝে। এটা বস্তুত কোনো মানুষের ঐচ্ছিক কোনো শক্তি নয়। আল্লামা শেখ সাদিও রহ. ভাষায় বললে এভাবে বলতে হয়, ‘এ সৌভাগ্য, এ অমিত অর্জন কারো ব্যক্তিগত কোনো কৃতিত্ব নয়; ভালোবেসে, কবুল করে যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন আল্লাহ মহান। দ্বীনের দাওয়াতি ফিকির নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকাতের মাওলানা আলী আকবর (রহঃ)। জীবনের শেস সময়টিতেও এই একটি ফিকির প্রকাশ পেয়েছে তাঁ থেকে। খুব বেশি অসুস্থ ছিলেন তিনি। অসুস্থতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন বারবার। হুশ ফিরে এলেই কাছে বসে থাকা লোকদের জিজ্ঞাসা করতেন, ‘বিদেশি মেহমানদের জামাতটা কি এসেছে? তাঁদের নুসরত করবে কে? ঠিক এভাবে, আল্লাহ রাস্তায় বেরিয়ে আসা আল্লাহর মেহমানদের খোঁজখবর নিতে নিতে প্রিয়তম মাহবুবের ডাকা লাব্বাইক বলে চলে গেলেন। চিরঞ্জীব প্রভুর দিদারে চলে গেল তাঁর জীবনআত্মা। স্বহাস্য বদনে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন মাওলানা আলী আকবর (রহঃ)

তথ্যসূত্রঃ
বিশ্বের আকাশে তাবলীগী তারকা
পৃষ্ঠাঃ-২৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.