নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লাহপাক বলেন \"ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে ভাল কথা কার হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে এবং নেক আমল করে এবং বলে যে নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের মধ্যে একজন।\"(আল-কোরআন)

ইলিয়াস বিডি

আমি এক মুসাফির

ইলিয়াস বিডি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বের আকাশে তাবলীগী তারকা ।।।মাওলানা ইব্রাহিম দেউলা সাহেবের দাঃবাঃ চিঠি (The letter of Maulana Ibrahim Saheb DB.)

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:২৫



মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস (রহ.) এর মূল্যবান বানী-২
আপনাদের সবার এই হরকত-মেহনত, সমস্ত চেষ্টা-সাধনা নিস্ফল হয়ে যাবে যদি এর সঙ্গে ইলমে দ্বীন ও আল্লাহর যিকিরের প্রতি আপনারা পূর্ণ গুরুত্ব ও মনোযোগ নিবদ্ধ না করেন। যদি এ দুটি বিষয়ের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করা হয় তাহলে একটি ভয়াবহ ও মারাত্মক বিপদের তীব্র শঙ্কা বোধ করছি। আল্লাহ না করুন, তখন এই হরকত ও সধনা শেষ পর্যন্ত ফিতনা ও গুমরাহির একটি নতুন দরোজার রূপ নিতে পারে।

মাওলানা ইবরাহিম দেউলা সাহেবের চিঠি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
১২.৮-২০১৬ তারিখ সন্ধ্যায় অধমের বাংলোওয়ালি মসজিদ মারাকাযে। নিযামুদ্দিন থেকে গুজরাট প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে এ সময় নানা ধরনের গুজব বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। যা পরিপূর্ণ মিথ্যা ও অবাস্তব। এজন্যে মনে হলো, আমি নিজেই যদি মূল বাস্তবতা তুলে ধরি, সেটাই সমীচীন হবে।
১.
এ বছর ২০১৬ এর মাহে রমযান থেকে অদ্যাবিধ বাংলোওয়ালি মসজিদ মারকাযে নিযামুদিনে যেসব ঘটনা ঘটেছে এবং কয়েক দিন পূর্বে খোদ আমার উপস্থিতিতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, এমন অসমীচীন ঘটনাগুলোর কারণে এই মুবারক মেহনতের হুলিয়া বিকৃত হয়ে গেছে। বছরের পর বছর দুনিয়ার মোহনতের সাথী, আল্লাহওয়ালা উলামায়ে কেরাম ও শ্ৰদ্ধেয় বুযুর্গানে দ্বীন খাবুই মর্মাহত ও দুশ্চিন্ত্রগ্রন্থ। বর্তমান চালচিত্রের কারণে একদিকে মোহনতের ঐক্যে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। অন্যদিকে বাংলোওয়ালি মসজিদের মাঝে এমন একটি গোষ্ঠী জেঁকে বসেছে, যারা বরাবরই ভুল কথাগুলোকে সঠিক প্রমাণিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সংশোধনের সহায়ক কোনো পদক্ষেপ কেউ নিলে ওরাই তার সামনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাবলীগের মোহনতের জনো এটি খুবই বিপদজনক ও ভয়াবহ চালচিত্র । এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে দূরদর্শিতার সঙ্গে ।যে সব লোক মনে করে, এ মুহূর্তে মারকাযে কোনো সমস্যা নেই। কাজ তার নিজস্ব গতিতে চলছে, তারা নির্জলা মিথ্যা ও অবাস্তব কথা বলছে
২.এ বছর ঈদুল ফিতরের পর আমি মনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাংলোওয়ালি মসজিদে যাওয়ার নিয়ত করি। যাওয়ার পূর্বে আমার মনে হয়েছিলো, ইনশাআল্লাহ, খুব দ্রুত আমরা পারস্পরিক বোঝাবুঝির মাধ্যমে যাবতীয় সমস্যাবলির সমাধানে উপনীত হতে পারবো। সেই ভাবনা থেকেই আমি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মৌলভি সাদ সাহেবের সঙ্গে সরাসরি কথা বলি। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, কোনো ফলপ্রসূ পরিণতি বের করতে পারিনি। বরং আমার নিযামুদিনে অবস্থান ও প্রতিদিনের মাশওয়ারায় উপস্থিত হওয়ার সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে এ কথা ছড়িয়ে দেওয়া হচিছলো যে, আমি কাজের বর্তমান তরতিব ও পদ্ধতির সমর্থক। এটাই যখন বর্তমানের চিত্র, তখন আমি যদি এ বিষয়ে আমার অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি সবার সামনে তুলে না ধরি তাহলে তা দ্বীনের ক্ষেত্রে অন্যের লেজুড়বৃত্তির নামান্তর হবে। এ কারণে আমি নিম্নে সারা দুনিয়ার সাথীদের সামনে আমার নিজের অবস্থা পরিষ্কার শব্দে তুলে ধরছি—
বর্তমান সময়ে দাওয়াতের এই মুবারক মেহনীতের পরিধি সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ এ কাজের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে নিয়েছে। বিভিন্ন মানসিকতা ও বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ এই মেহনতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। কাজেই এ কথা সূর্যের মতো পরিষ্কার যে, এতো সুবিস্তৃত ও ব্যাপক কাজের দায়িত্ব বহন করার জন্যে প্রয়োজন এমন একটি নির্ভরযোগ্য জামাত- যার সদস্যগণ পূর্ববর্তী বুযুৰ্গদের সংশ্রবে জীবনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছেন, যাদের তাকওয়া, বিশ্বস্ততা, কাজের জন্যে নিজেকে একনিষ্ঠভাবে নিবেদন ও আত্মসমৰ্পণ, লিল্লাহিয়্যাত, মেহনত ও মুজাহিদার গুণাবলির ওপর সবাই একমত। এমন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী জামাত পারস্পরিক পরামর্শ ও একতার সঙ্গে কাজটিকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন। এগুলো ব্যতিরেকে এই মুবারক মোহনতটিকে সঠিক গন্তব্যের ওপর রাখা মুশকিল হয়ে যাবে এবং সমগ্র দুনিয়ার মোহনতের সার্থীদের মাঝে ঐক্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
এজন্যেই হযরত মাওলানা যুবাইরুল হাসান সাহেব রহ. এর জীবদ্দশাতেই বেশ কিছু অতীব গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা সামনে চলে আসায় কয়েকবার হজরতজি মাওলানা ইনআমুল হাসান সাহেব রহ. কর্তৃক গঠিত শুরার মাঝে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কয়েকজন সদস্যকে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা পেশ করা হয়েছিলো। তখন এ দরখাস্তু পেশ করা হয়েছিলা যে, আগামীর ঘটিতব্য বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এর মাঝেই নিহিত। জীবন সায়াহ্নে হযরত মরহুম এর জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুতও হয়েছিলেন । কিন্তু অকস্মাৎ তাঁর আখেরাতের ডাক এসে পড়ে। মহান আল্লাহ তাঁকে মাগাফিরাত দান করুন। তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন।
হজরতজি রহ. এর ইনতিকালের পর আমরা পুরনো সাখীদের মাশওয়ারায় একটি বিশদ বিবরণ সম্বলিত চিঠি মৌলভি সাদ সাহেব বরাবর প্রেরণ করেছিলাম। ওই চিঠির মাঝে মোহনতের বর্তমান তরতিব ও পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের মনোকষ্ট ও দুঃশ্চিন্তার কথা তুলে ধরেছিলাম। উদ্ভূত সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্যে শুরা কায়েম করার কথাও বলেছিলাম। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, আমাদের সেই উদ্যোগের কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি । মোহনতের ক্রমশ বিপর্যয় ঘটতে থাকে।
এর কিছু দিন পর গত বছর অর্থাৎ ২০১৫ এর নভেম্বর মাসে দুনিয়ার পুরনো সাখীদের উপস্থিতিতে শুরার শূন্যপদগুলো পূরণ করা হয়। তখন আমি পুনরায় মৌলভি সাদ সাহেবের সঙ্গে কথা বলি যে, আপনি এই শুরা মেনে নিন। ইনশাআল্লাহ, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি তা মানতে অসম্মতি জানান। যার ফলে গোটা দুনিয়াতে তাবলীগের মেহনতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে। এখনো আমার মতে যাবতীয় সমস্যার একটাই সমাধান যে, সেই শুরা মেনে নেওয়া হোক এবং মোহন তের যাবতীয় চাহিদা শুরার সম্মিলিত কার্যক্রমের মাধ্যমে পূরণ করা হোক।
কাজের তরতিব ও পদ্ধতির ব্যাপারে আমার অভিমত হলো, বিগত তিন হযরতের যুগে যেই বিষয়গুলো সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত, সেগুলোকে নিজ আসল সুরতের ওপর বহাল রাখা হোক। যদি সেগুলোর মাঝে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা সংযোজনের প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তা শুরার সন্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই নেয়া হোক। বর্তমান সময়ে ঐক্যের দেয়ালে ফাটল ধরার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, শুরা ও পুরনো সাখীদের মাশওয়ারা ও আস্থা ছাড়াই নতুন কিছু তরতিব ও বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।
দ্বীন ও শরিয়াহর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এই তাবলীগি জামাত জমহুর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের শতভাগ অনুসারী। কুরআন কারিমের যেকোনো আয়াতের তাফসীরের ক্ষেত্রে আমরা জমহুর মুফাসসিরিন, যেকোনো হাদিসের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে জামহুর মুহাদিসিন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত ও সাহাবায়ে কেরামের জীবনাদর্শ থেকে ইসতিমবাত ও ইসতিখরাজ তথা শিক্ষা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও আমরা জামহুর ফুকাহায়ে কেরামের অভিমতের শতভাগ অনুসারী। অতীতের তিন যুগে আমাদের বড়গণ এমনই ছিলেন। কারণ, এর বাইরে গেলে দ্বীনের ক্ষেত্রে তাহরিফ তথা বিকৃতির দুয়ার খুলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
দাওয়াতের এই মেহনতে শুরু থেকেই বয়ানের ক্ষেত্রে সতর্ক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। অনির্ভরযোগ্য কথা, ইজতিহাদ ও ভুল দলিল থেকে পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা করা হয়েছে। এজন্যেই নির্দেশ দেওয়া হতো যে, প্ৰত্যেকেই নিজ নিজ বিয়ান ছয় সিফাতের সীমারেখার ভেতর রাখবে। কোনো আয়াত বা হাদীসের ব্যাখ্যা করতে হলে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য উলামে কেরামের সূত্র বলতে হবে। বড়গণ সবসময় প্রতিবাদ, ছিদ্রান্বেষণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আকাইদ, মাসাইল ও বর্তমান পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতেন । এই মোহনতের অন্যতম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উসুল হলো, কোনো দ্বীনি জামাত বা সদস্যের সমালোচনা ও নিরীক্ষণ করা যাবে না । কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেক সার্থী, এমনকি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যিম্মাদারকে দেখা যাচ্ছে, তারা নিজ বয়ানের মাঝে এতোদিনের সীমারেখা ছাড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষত সাহাবায়ে কেরামের জীবনাদর্শ থেকে ভুল দলিল দেওয়া হচ্ছে। প্রায়সময় দ্বীনের বিভিন্ন সংগঠন ও ঘারানার সমালোচনা ও ছিদ্রান্বেষণ হচ্ছে।
তাদের এহেন কর্মকাণ্ডের ওপর আমি অধম শুরু থেকেই সন্তুষ্ট ছিলাম না। অসংখ্যাবার বিষয়টির ওপর তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টাও করেছি। আমার নিজের বয়ানের মাঝেও ইতিবাচকভাবে সতর্ক করার চেষ্টা নিয়মিত করে এসেছি।
কিন্তু যখন দেখলাম, তাদের সেই আচরণ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলোওয়ালি মসজিদে আমার অবস্থানকে জড়িয়ে কিছু লোক ভুল মতলব ছড়াচ্ছে যে, কাজের বর্তমান তরতিব ও গতি-প্রকৃতির ওপর আমি সন্তষ্ট; উপরন্তু বাংলোওয়ালি মসজিদের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমার দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়ে পড়ে, তখন কয়েক দিন ইসতেখারা করে আমি এ সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি যে, মেহনতের সাথীদের সামনে আমার নিজস্ব অবস্থান পরিস্কার করা দরকার। যখন পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে তখন এ বান্দা পুনরায় উপস্থিত হতে বিন্দু পরিমাণ দেরি করব না। আমি কারো প্রতিপক্ষ হয়ে গুজরাটে ফিরে যাইনি; বরং কাজের হিফাযতের স্বার্থে এবং চাটুকারিতা থেকে বাঁচতেই ফিরে এসেছি। আল্লাহর কাছে আমাকেও জবাবদিহি করতে হবে । আল্লাহ তা’আলা এই মেহনত ও এর সার্থীদেরকে নিরাপদ রাখুন। আমীন।



বান্দা ইবরাহিম দেউলা
বর্তমান অবস্থান ; দেউলা,
জেলা : ভারুঞ্চ,
প্রদেশ : গুজরাট
১৫ আগস্ট ২০১৬ – রোববার



তথ্যসূত্রঃ নিজামুদ্দিন মারকায ও নেপথ্যের কিছু সত্য/ পৃষ্ঠাঃ ৪৫-৪৯
কপিপেষ্টঃ Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.