নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাতের শেষে ভোর আসিবে সেই আশাতেই রই, দিনের শেষে খুঁজে ফিরি শান্তি গেল কৈ?

মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন

অসামাজিক মানব

মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন সংগ্রাম

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৩৮

চৈত্রের খর রৌদ্র মাথার উপর নিয়ে
হেঁটে চলছে ধ্রুব। ঘর্মাক্ত শরীর।
মাথার চুল অগোছালো। তবে পাশের আর
সব ব্যস্ত মানুষ জনের মত ধ্রুবর
মাঝে নেই কোনো ব্যস্ততা। সে
আনমনে হেটে চলছে। উদ্দেশ্যহীন এই
পথচলা। তবে একেবারে উদ্দেশ্যহীন যে
তা বলা যাবে না। জীবনের রূঢ়
বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে এই চলা।
ধ্রুব জানে বাস্তবতা অনেক কঠিন
আর নির্মম। এখানে টিকে থাকতে
প্রতিনিয়ত সংগ্রাম অব্যাহ্যাত
রাখতে হয়। সেই সংগ্রামে যারাই কিছুটা
ঝিমিয়ে পড়বে, তারাই হারিয়ে যাবে
কালের অতল গহ্বরে।
তবে ধ্রুব সেই সংগ্রামী মানুষদের
অন্তর্ভুক্ত নয়। ও নিজেকে ভিন্ন
ভাবে উপলব্ধি করতে চায়। চলার পথে
ধ্রুবর চোখে পড়ে অনেক বাস্তবতা।
হাজার মানুষের ব্যস্ততার মাঝে কিছু
মানুষ পথিকের উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে
রেখেছে কিছু পাওয়ার আশায়। কেউ
হয়ত কিছু দিচ্ছে, কেউবা দেখেও না
দেখার ভান করে চলে যাচ্ছে। কেউবা
অবান্ঞ্চিত ভাষায় গালিও দিচ্ছে।
তবুও ঐ মানুষরা হাত নামায় না। ওরা
হাত পেতে অপেক্ষায় থাকে একজন
হৃদয়বান মানুষের অপেক্ষায়। এটাই
তাদের জীবন সংগ্রাম।
এসব দেখতে দেখতে ধ্রুব পথ চলতে
থাকে। চলতে চলতে তার চোখে পড়ে
কিছু কিশোর-কিশোরী। লোকে যাদের
টুকাই নামে চিনে। পথের এই টুকাই রা
বড্ড নোংরা। হয়ত সপ্তাহেও
একবারও গোসল করে না। কাপড় বলতে
হয়ত পরনে বড়জোর একটা
হাফপ্যান্ট। তাও মাত্রাতিরিক্ত
ময়লাযুক্ত। কিন্তু তবুও কেন যেন এই
টুকাই নামের কিশোর-কিশোরীদের উপর
খুব মায়া হয়। কিছু কাগজ, ফেলে দেয়া
প্লাস্টিক এসব তুলে নেয়ার জন্য ওরা
দিনকে দিন ঘুরে বেড়ায় অলি-গলি,
রাস্তা আর পার্কে। রৌদ্রের তাপে
ওদের চেহারাটা কালো থেকে কালো হতে
থাকে। খালি গায়ের চামড়া গুলি ঝলসে
যায়। তবুও ওরা পিছপা হয়না। এটাই যে
উদের জীবন সংগ্রাম।
এসব দেখেও থামতে পারেনা ধ্রুব।
কারণ সে জানে জীবনটা এমনি। অদ্ভুত
সব মানুষের সমষ্ঠিতে গঠিত জীবন।
সে আরও এগিয়ে চলে। তার চোখে পড়ে
জীবনের আরও সব অদ্ভুত মানুষদের।
মধ্য বয়েসি এক বৃদ্ধর ঠেলা নিয়ে
যাওয়ার দৃশ্য, ধ্রুবর মনকে ভেঙ্গে
চুরে দেয়। ওর ইচ্ছে করে ঐ লোকটাকে
একটু সাহায্য করতে। কিন্তু বাস্তবতা
ওকে বাঁধা দেয়। বৃদ্ধলোকটির শরীরে
অপর্যাপ্ত মাংস। চামরার ভিতর থেকে
হাড়-গোড় গুলি ভেসে উঠেছে।
শক্তিহীন পেশি গুলির সর্বোচ্চ শক্তি
খরচ করে এগিয়ে চলছে বৃদ্ধ। এই বৃদ্ধ
সম্পর্কে ধ্রুবর খুব আগ্রহ। ও
জানতে চায় তাকে। ওনার পরিবারে কি
এমন দূরবস্থা যে, এই বয়েসে তাকে
এত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ধ্রুব
বৃদ্ধকে উদ্দেশ্য করে উনার কাছে
গিয়ে পিছন থেকে ঠেলা ঠেলতে সাহায্য
করতে থাকে। নিজের কাজে কিছুটা
হালকা অনুভব করে বৃদ্ধ পিছনে
তাকিয়ে অবাক না হয়ে পারে না। ধ্রুব
ছোট করে একটা হাসি দিয়ে বলে- চাচা,
পিছনে তাকাতে হবেনা। আমি ধাক্কা
দিচ্ছি, আপনি সামনে দেখে চলেন, পরে
কথা বলা যাবে।
ধ্রুবর কথা শুনে বৃদ্ধ আর কথা বলে
না। চুপ চাপ এগিয়ে চলে। চোখে তার
কয়েক ফোঁটা জল চিক চিক করছে।
.
ধ্রুব আর বৃদ্ধলোকটি সামনা-সামনি
বসা। তাদের সামনে এক প্লেট মুড়ি
আর খানিকটা গুড়। তা থেকেই খাচ্ছে
দু'জন। ধ্রুব বিস্মিত নয়নে বৃদ্ধর
কুঠুরি দেখছে। কিছুক্ষন পূর্বে বছর
পনেরর মত একটা মেয়ে এসে তাদের
মুড়ি গুড় দিয়ে যায়। ঐ মেয়ে আর
বৃদ্ধলোকটি ছাড়া এ ঘরে আর কেউ
থাকে বলে মনে হয় না। এক মুঠো মুড়ি
আর সামান্য গুড় মুখে দিয়ে বলে ধ্রুব-
চাচা আপনার পরিবারে আর কেউ নেই?
ধ্রুবর কথাটা শুনে বৃদ্ধর মুখ খানি
একদম শুকিয়ে যায়। চোখে জমে উঠে
কয়েক ফোঁটা জল। মনে হয় দুঃখের
স্মৃতি গুলি কুড়ে খাচ্ছে তাকে।
কিছুক্ষনের জন্য একদম নির্বাক হয়ে
যান তিনি। তারপর শূন্য দৃষ্টি নিয়ে
বলতে থাকেন- আমারও সুন্দর একটা
সংসার ছিল। দুই টা পোলা আর একটা
মাইয়া আমার। অনেক কষ্ট কইরা পুলা
গুলারে লেখা পড়া করাই বড় অফিস্যার
বানাই। কিন্তু হেরপর ওরা বিয়া কইরা
যার যার মত চইলা যায়। আর বছর
খানেক হল নয়নার মাও আমাগো
ফালাইয়া গেছে গা। অখন আমি আর এই
আমার মাইয়াটা। আমার খুব চিন্তা হয়
আমার মাইয়াটারে লইয়া। আমার যদি
কিছু হয়ে যায়, আমার মাইয়াটা একদম
অসহায় হইয়া যাইব।
কথা গুলি বলতে বলতে কেঁদে ফেলে
বৃদ্ধ। ধ্রুবর চোখেও জমে উঠেছে
ফোঁটা ফোঁটা জল। ধ্রুব বুঝতে পারেনা
মানুষ কেন এতটা সার্থপর হয়! নিজের
জীবনটাকে উপভোগ করাটাই কি
জীবন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে
পায় না ধ্রুব। অদ্ভুত এই মানুষদের
মনটা বুঝা অনেক কঠিন। এ ভাবনার
অন্তরায় খুঁজে পায় না সে।
.
প্লেটের মুড়ি গুলি প্রায় শেষ। নয়না
নামের বৃদ্ধার মেয়েটি পানি দিয়ে প্লেট
টি নিয়ে যায়। পানি খেয়ে উঠে দাঁড়ায়
ধ্রুব। বৃদ্ধও উঠে আসে। ধ্রুব বৃদ্ধর
ঘর থেকে বের হয়ে ঘরের দরজায় এসে
ঘরমুখো হয়ে দাঁড়ায়। বৃদ্ধলোকটিও
দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। ধ্রুব কিছুটা
এগিয়ে গিয়ে বৃদ্ধর হাত টা ধরে কয়েক
ফোঁটা জল বিসর্জন দিয়ে বলে- চাচা
আজ থেকে আমাকে আপনার ছেলে
ভাবতে পারেন। আমি জানি আমি
আপনাদের জন্য কিছু করতে পারব না।
তবে অন্তত এটা ভাবতে পারবেন
আপনার একটা ছেলে রয়েছে, যে
আপনাদের বিপদে পাশে থাকবে। আর
নয়নাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। ওর
ভাই ওর কোনো ক্ষতি হতে দিবে না।
আমি আবার আসব।
খুব কাঁদছে বৃদ্ধা। আড়ালে থাকা
নয়নার চোখেও জমে উঠেছে ফোঁটা
ফোঁটা জল। ধ্রুব আর অপেক্ষা করে
না। চোখের জল গুলি মুছতে মুছতে
নিজের পথ ধরে সে।
ধ্রুব জানে, ও এই পরিবার টির জন্য
তেমন কিছুই করতে পারবে না। তবুও
সান্তনা এই যে, এই বৃদ্ধ আর মেয়েটি
তাকে একটা অবলম্বন হিসেবে ভরসা
করতে পারবে। তবে ধ্রুব এ ভেবে
অবাক হয় যে, কত সরল এই বাঙ্গালি
দরিদ্র মানুষজন। চেনেনা, জানেনা
এমন একটা ছেলেকে মহুর্তেই কেমন
আপন ভেবে বিশ্বাস করে নিল। দরিদ্র
মানুষ জনের এই বিশ্বাস আর সরলতাই
তাদের পায়ে কুঠার আঘাত হানে। ওরা
রাজনীতিবিদ দের বিশ্বাস করে ঠকে।
ওর বড়লোক মনিবকে বিশ্বাস করে
ঠকে। নিজের শিক্ষিত সন্তানও তাঁদের
ঠকায়। এই রাষ্টের কাছ থেকেও তাঁরা
ঠকে। সবাই তাদের ঠকিয়েই যায়। তবুও
তাঁরা কিছু বলে না। বলার মত,
প্রতিবাদ করার মত শক্তি এদের নেই।
আছে অত্যাচার সইবার শক্তি। হয়ত
এটাই তাদের জীবন সংগ্রাম!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.