নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফারদীন নিশ্চিন্ত

ফারদীন নিশ্চিন্ত

আমি কে? যেদিন এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে সেদিন পৃথিবীতে আর একটাও রহস্য অবশিষ্ট থাকবে না।

ফারদীন নিশ্চিন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'দূরবীন\' একটি পাঠক নন্দিত উপন্যাস

১০ ই জুন, ২০২০ ভোর ৪:০৪


আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, 'জীবনে পড়া শ্রেষ্ঠ উপন্যাস কোনটি?'
উত্তরটা দিতে বেশ কষ্ট হবে। এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা অসম্ভব কঠিন একটি ব্যাপার।
প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমার মনে অনেকগুলো উপন্যাসের নাম চলে আসবে। সেই নামের তালিকাটাও মোটামোটি দীর্ঘ। সেই দীর্ঘ তালিকার প্রথমদিকে একটি নাম থাকবে। সেই নামটি হলো 'দূরবীন'।
'দূরবীন' পড়া শুরু করার আগে ভারী মলাটের বইটা নিয়ে বেশ কয়েকবার নাড়াচাড়া করেছিলাম। এতো বড় একটি বই পড়ব কিনা সেটা নিয়ে খুব দ্বিধায় ছিলাম। সেটা অনেক আগের কথা। তখন চাইলেই এতো সহজে অনলাইন থেকে রিভিউ পাওয়া যেতো না।
দ্বিধা নিয়েই বইটা পড়া শুরু করলাম। তারপর আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বইটা পড়ে শেষ করার পর আমার মধ্যে অন্যরকম ভালো লাগার এক অভিব্যাক্তি সৃষ্টি হয়েছিল। মনের একটা অংশ আমাকে প্রশ্ন করছিল, 'বইটা আগে কেন পড়লাম না?' মনের আরেকটা অংশ বলছিল 'এতো সুন্দর একটা উপন্যাস পড়ে শেষ করে ফেললাম! এখন কি পড়ব? উপন্যাসটা তো শেষ হয়ে গেলো।'

একজন পাঠককে পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত করার মতো বই খুব কম আছে। এই বইটা পড়ে আমি পরিপূর্ণ তৃপ্তি পেয়েছিলাম। বইটা পড়ার আগে 'দুরবীন' শব্দটি আমাকে প্রভাবিত করত না। আর পড়ার পর 'দূরবীন' শব্দটি আমার ভিতরে অদ্ভূদ এক অনুভূতি সৃষ্টি করে।
শীর্ষেন্দু মুখপাধ্যায়ের অদ্ভূতুড়ে সিরিজের বইগুলো আগেই পড়েছিলাম। তার লেখার ভক্ত ছিলাম আগে থেকেই। তবে 'দূরবীন' পড়ার মাধ্যমে লেখককে অন্যরকমভাবে চিনেছি। তার স্থানটা আরো অনেক উপরে চলে গিয়েছে। 'দূরবীন' শীর্ষেন্দু মুখপাধ্যায়কে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।
সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় দু-বছরেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিল ‘দূরবীন' উপন্যাসটি। এটি টানা দুই বছর দেশ পত্রিকায় পাঠক চাহিদার শীর্ষে ছিল।

'দূরবীন' একসূত্রে গাঁধা তিন প্রজন্মের গল্প। গল্পগুলোকে প্রথমে বিচ্ছিন্ন মনে হলেও শেষ পর্যন্ত গল্পগুলো একটি বিন্দুতে গিয়েই মিলিত হয়েছে। অনেক বেশি সবালীল বর্ণনা ও গল্পের গতি পাঠককে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আচ্ছন্ন করে রাখবে। ভালোবাসার মনস্তাত্মিক দিকগুলো অতি সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
দুরবীন উপন্যাসের তিন প্রজন্মের তিন পুরুষ হেমকান্ত, কৃষ্ণকান্ত ও ধ্রুব। যেহেতু এটা তিন প্রজন্মের গল্প, তাই এটি তিনটি সময়েরও গল্প। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অনেক বিষয়য়াবলি স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে গল্পের বিভিন্ন অংশে।
রাগ, প্রেম, বৈরাগ্য মিলিয়ে ধ্রুব-রেমির অদ্ভূদ সম্পর্ক পাঠককে চুম্বকের মতো আকর্ষন করবে। এই ব্যাপারটাকে লিখে প্রকাশ করে বুঝানো প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। ভালোবাসার অন্যরকম কিছু দিক রয়েছে এখানে। ভালোবসা এতো সুন্দর হয় সেটা খুব জটিলভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধ্রুব-রেমির গল্প উপন্যাসের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয়।

শুরুর মতো উপন্যাসের শেষটাও অসাধারন। পাঠক পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত হবে সমাপ্তিতে এসে। তারপর গল্পটা শেষ হবার পরেও মাথাটা গল্পের ভিতর থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে না। পাঠকের মনকে প্রভাবিত করার অদ্ভূদ এক ক্ষমতা রয়েছে এই উপন্যাসটির।
কেউ কেউ দ্বিতীয়বার পড়বে, তৃতীয়বার পড়বে, চতুর্থবার পড়বে। কিছুদিন পর পর নির্মল অবসরে আবার পড়তে ইচ্ছে হবে। 'দূরবীন' পড়ার পর এটি পাঠকের একান্ত প্রিয় একটি উপন্যাসে পরিনত হবে।

শুধু তিন প্রজন্মের তিন পুরুষের ব্যক্তিগত কাহিনীর জন্যই নয়, এ-উপন্যাসের বিশাল প্রেক্ষাপট আর ঘটনার বিচিত্র ও আকর্ষনীয় শাখা এবং এর প্রেক্ষাপটে স্বদেশী আন্দোলন, দেশভাগ ও স্বাধীনতা পরবর্তী উত্তাল সময়ের এক তাৎপর্যময় উপস্থাপনার জন্যও ‘দূরবীন’ চিহ্নিত হবে অবিস্মরণীয় সৃষ্টিরূপে।
'দূরবীন' সম্পর্কে যতো বেশিই বলা হোক না কেন, তাও খুব কম হয়ে যাবে। 'দুরবীন' উপন্যাসটিকে উপস্থাপন করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পুরো 'দূরবীন' উপন্যাসটি উপস্থাপন করা। অন্য কোনো পদ্ধতিতে এই উপন্যাসটিকে কখনোই পরিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব না।

শীর্ষেন্দু মুখপাধ্যায়ের অনবদ্য এক সৃষ্টি, বাংলা সাহিত্যের অমূল্য এক সম্পদ, পাঠক নন্দিন 'দূরবীন' উপন্যাসটি প্রতিটি পাঠকের পড়া উচিত।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুন, ২০২০ ভোর ৪:১৬

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: একটা অসাধারন সৃষ্টি। একজন লেখক যে কতবড় স্রস্টা সেটা এই বইটি পড়লে বোঝা যায়

১০ ই জুন, ২০২০ ভোর ৪:২৩

ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: মুগ্ধ হয়েছি এটি পড়ে

২| ১০ ই জুন, ২০২০ ভোর ৫:২৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এতো মোটা বই ধরিয়ে দিলেন।দেখি করোনা থাকতে থাকতে শেষ করতে পারি কিনা।এই লেখকের এটাই হবে আমার প্রথম বই।

১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:০৯

ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: অবশ্যই পড়া উচিত। পড়ার পর হয়তো নিজেই আমাকে ধন্যবাদ দিবেন। মোটা বই হলেও পড়তো খুব কষ্ট হবে না।

৩| ১০ ই জুন, ২০২০ ভোর ৫:৩৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন:   বেশ । ভালোবাসা ও শুভ কামনা।

১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:১০

ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: প্রিয় ব্লগার, ভালোবাসা আপনার জন্যও

৪| ১০ ই জুন, ২০২০ ভোর ৫:৩৬

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: এক সময়ে শীর্ষেন্দু ও বিভূতি বন্ধোপাধ্যায়ে ডুবে ছিলাম - এক ধরণের ঘোরের মধ্যে থাকতাম তাদের লেখার জগতে |

১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:১১

ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: প্রিয় ব্লগার, আপনি কি দূরবীন বইটি পড়েছেন?

৫| ১০ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:৩৯

ফাহাদ হামযা বলেছেন: আপনার লেখা দেখে পড়ার আগ্রহ জাগলো..!
এই উপন্যাসটির দাম কত হবে?

১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৪

ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: মূদ্রিত মূল্য প্রায় ৫০০ টাকা। তবে ৪২৫-৪৫০ টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন।

৬| ১০ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:০৪

বিবেকহীন জ্ঞানি বলেছেন: অনেক গুলো বই কিনব কিনব করে লকডাউনের জন্য হচ্ছেনা আপনার লেখায় মুগ্ধ হয়ে এটাও যোগ করলাম।

১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৫

ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: জ্বি, প্রিয় ব্লগার। বইটি অবশ্যই পড়া উচিত। ধন্যবাদ আপনাকে।

৭| ১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১১

পদ্মপুকুর বলেছেন: মানবজমীন, যাও পাখি, পার্থিব, দুরবীন, এগুলো পড়েছি। সবগুলোই সুন্দর। শীর্ষেন্দু, সমরেশ, সুনীল বা বুদ্ধদেব গুহ, এঁদের বই পড়তে গেলে একটা বিষয় খুব অবাক লাগে সেটা হলো, ঘটনার ডিটেইলিং আর কাহিনীর বিস্তার। এর সাথে থাকে তাঁদের বিস্তর পড়াশোনার পরিচয়। এ কারণে তাঁদের বইগুলো হয় বিশাল আকারের। বুদ্ধদেবের মাধুকরী পড়তে গিয়ে প্রথম ৫০-৬০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত কোনও মজা পাচ্ছিলাম না, তারপরও দাতমুখ খিঁচিয়ে পড়তে থাকলাম। এরপর দেখি আর পড়া ছেড়ে উঠতে পারি না! অথচ অনেক উনপ্যাস শেষই হয়ে যায় ৬০-৭০ পৃষ্ঠাতে।

সমরেশতো একই কাহিনীর ধারাবাহিকতায় তিনটা ঢাউশ সাইজের বই লিখেছেন- উত্তরধিকার, কালপুরুষ এবং কালবেলা।

অনেকদিন এ সব পড়া থেকে দুরে আছি। আপনার লেখায় মনে পড়লো।

১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:২১

ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: জ্বি,,পচরিয় ব্লগার। আপনি সঠিক বলেছেন। ডিটেইলিং এবং ঘটনা বর্ণনার অসাধারন ক্ষমতা আমাকেও মুগ্ধ করে। আপনিরযেসব বইয়ের নাম উল্লেখ করেছেন, সবগুলোই পড়া হয়েছো।
সুন্দর কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

৮| ১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: তিনবার পড়েছি।
অতি চমৎকার উপন্যাস।

১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:২২

ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: আমিও অসাংখ্যবার পড়েছি। সব সময়ই ভালো লাগে। এা পড়ার।পর সবারই ভালো লাগে

৯| ১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:২২

শায়মা বলেছেন: আমার এখনও জানতে ইচ্ছা করে...... ধ্রুব কেমন আছে? রেমি কেমন আছে?

মনে মনে গল্পের পরের জীবনটাকেও দেখতে পাই তারা যেন ভালো আছে ...... সুখে আছে... ধ্রুবো আর কষ্ট দেয় না রেমিকে .....
রেমির জীবন এখন আনন্দময় .......

১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:২৪

ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: আসাধারন বলেছেন। আমারও জানতে ইচ্ছা হয়।

১০| ১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:৩২

শায়মা বলেছেন: যেহেতু জানা যাচ্ছে না কারণ দূরবীন ২ লেখা হয়নি চলো আমরাই দূরবীন ২ লিখে ফেলি ভাইয়া।


তবে সেটা এক লাইন পড়ে পাঠক যদি খুঁজে বের করে আমাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলে আমার কোনো দোষ নেই..... :P

১১| ১০ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: শীর্শেন্দু দূর্দান্ত লেখক।
তার মতো লেখক আমাদের কি আছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.