নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাজার সনেটের কবি।

ফরিদ আহমদ চৌধুরী

বিষয় যতই জটিল হোক,ভাবতে ভালো লাগে

ফরিদ আহমদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা স্বীকৃতি বিষয়ক পোষ্টে ডঃ এম এ আলীর মন্তব্য

১৯ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গণভবন ও হাটহাজারী মাদ্রাসা।

কওমী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার স্বীকৃতি নিয়ে দেশে আলোচনা চলছে ব্যপকভাবে, বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ আছে বলে মনে করি । প্রথমমেই বলে রাখি , আমরা দেখতে পাই মাদ্রাসা শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকেই বরেণ্য ব্যক্তিত্বে পরিনত হয়েছেন আমাদের দেশে ও উপ-মহাদেশে , তাদের জ্ঞানের ভান্ডার ব্যাপক। তাই মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি যথাযোগ্য সন্মান দিয়েই লিখাটি শুরু করছি । ইংরেজি সিলেবাস যেমন আন্তর্জাতিক, তেমনি মাদ্রাসার সিলেবাসও আন্তর্জাতিক, এর জন্য কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীগনতো অবশ্যই যথাযথ স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকারী । কওমী মাদ্রাসায় যা পড়ানো হয় সে সকলই ভারতসহ সউদী আরবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পড়ানো হয়। বলা হয়ে থাকে Many Islamic schools throughout modern India, Bangladesh ,Pakistan - and more recently in Afghanistan, the United Kingdom, South Africa - as well as in hundreds of other places throughout the world are affiliated, or theologically linked, to Darul Uloom Deoband.
এখানে বাংলাদেশেও কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা পাঠ্যক্রমে মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমকেও অনুসরণ করা হয়ে থাকে (সূত্র : ইসলামী বিশ্বকোষ, ত্রয়োদশ খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৫৩) ।

মদিনা ইসলামিক বিশ্ব বিদ্যালয়, সৌদি আরব


আসল কথা হচ্ছে এটা একটা ধর্মীয় শিক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যদি ধর্মতত্বের উপরে ( Theology) আরবিতে কোর্স করানো যায় সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষায় কেন পারা যাবেনা ? আমাদের দেশে অনেক ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলই তো চলছে। আমাদের দেশে দু’রকম শিক্ষা ব্যবস্থা কি হচ্ছে না ? । কিন্তু এ বিষয়টা নিয়েতো তেমন কোন প্রশ্ন উঠছেনা । বুঝলাম ইংরেজীর প্রয়োজন আছে বিশ্ব জ্ঞান ভান্ডার থেকে জ্ঞানের আলো আহরনের জন্য , প্রয়োজন আছে আন্তর্জাতিক ভাষায় বিশ্বের সাথে যোগাযোগ ও উঠাবসা করার জন্য । অনুরূপ ভাবে সহস্র বছর ধরে বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডারে এমন অনেক মুল্যবান অবদান আছে যা লিখিত হয়েছে আরবী ও ফার্সীতে , এছাড়াও অর্ধ কোটির বেশী বাংলাদেশী জীবন জিবীকার তাগিতে এখন আছেন আরব মুল্লুকে , ধারণা করি এ সংখ্যা ক্রমে আরো বাড়তেই থাকবে আগত দিনগুলিতে , তাদের সাথে চাকরীর বিষয়াদিসহ ব্যবসা বানিজ্য বাড়বে বহুবিধ প্রকারে । দেশের রেমিটেন্সের একটি সিংহভাগইতো আসে আরবীয় দেশগুলি থেকে, তাছাড়া আরবীতে নাযিল হওয়া কোরান ও বিভিন্ন মুল হাদিছ গ্রন্থতো আছেই । আরব দেশে কাজের পরিবেশ , বেতন ভাতাদি, সুযোগ সুবিধা সে বিষয়গুলি আলোচনায় উঠে আসতেই পারে , তবে এগুলির উন্নতি করতে হলেও সে সমস্ত দেশে কাজ করতে যাওয়া মানুষগুলির জন্য কিংবা ব্যাবসা বানিজ্যসহ বিভিন্ন কাজে সংস্লিষ্টদের আরবী ভাষার উপরে কিছুটা দখল থাকলে তা ভাল উপকারে দিবে বলেই আশা করা যায় ।

এ প্রসঙ্গে কওমী মাদ্রাসা স্থাপনের গোড়ার কথাটা একটু বলে নেয়া যায় । ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের বছর দশেক পর ভারতের মৌলভীরা আলীগড় থেকে একটু দূরে উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে একটা (কওমী মাদ্রাসা) স্থাপন করেছিলেন বলে জানা যায় । যতদুর জানা যায় কওমী মাদরাসায় প্রচলিত সিলেবাস বা পাঠ্যক্রমের গোড়াপত্তনকারী ছিলেন মোল্লা নেযামুদ্দীন সাহালবী (রহ.) (১৬৭৭/৭৮ – ১৬৯১) । মোল্লা নেযামুদ্দীন সাহালবী (রহ.) কর্তৃক প্রবর্তিত ‘দরসে নেযামী’ সিলেবাস পূর্ণতা পায় শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) (১৭০৩ – ১৭৬৫ ) এর তত্ত্বাবধানে। কালের বিবর্তনে ১৮৬৬ সনে হযরত মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.) ( ১৮৩২ -১৮৮০ ) প্রতিষ্ঠা করেন দারুল উলুম দেওবন্দ। দারুল উলুম দেওবন্দে তখন যে সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম গ্রহণ করা হয় তা ছিল মুলত ওই মোল্লা নেযামুদ্দীন সাহালবী (রহ.)-এর পাঠ্যক্রম যা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) কর্তৃক পূর্ণতা পেয়েছিল বলে দেখা যায় । যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে দারুল উলুম দেওবন্দে প্রবর্তিত পাঠ্যক্রমই বর্তমানে অনেক দেশের মত বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাসমূহে সিলেবাস হিসেবে বিদ্যমান (সূত্র : ইসলামী বিশ্বকোষ, ত্রয়োদশ খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৫৩) ।

দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা , উত্তর প্রদেশ ভারত


বর্তমানে কওমী মাদরাসাগুলোতে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলির মধ্যে (১)আল-কুরআন (২) তাজবীদ-কুরআন পঠননীতি (৩) ইলমুল ক্বিরাআত-কুরআনের উচ্চারণনীতি (৪)তাফসীর-কুরআনের ব্যাখ্যা (৫) উসূলে তাফসীর-কুরআন ব্যাখ্যার নীতিমালা (৬) উলূমুল কুরআন- কুরআনের শাস্ত্রীয় জ্ঞান (৭) আল-হাদীস (৮) উসূলে হাদীস-হাদীস ব্যাখ্যার নীতিমালা (৯) উলূমুল হাদীস-হাদীসের শাস্ত্রীয় জ্ঞান (১০) ফিক্বহ-ইসলামী আইন (১১) উসূলে ফিক্বহ-ইসলামী আইনের নীতিমালা (১২) উলূমুল ফিক্বহ-ইসলামী আইনের শাস্ত্রীয় জ্ঞান(১৩)ফিক্বহে মুক্বারান-তুলনামূলক ইসলামী আইন (১৪) ইলমুল ফারায়েয-উত্তারাধিকার সম্পদ বণ্টন আইন (১৫) ইলমুল আক্বাইদ – ঈমানবিষয়ক জ্ঞান (১৬) মানতিক- যুক্তিবিদ্যা (১৭) ফালসাফা- দর্শনশাস্ত্র (১৮) আরবী ভাষা ও সাহিত্য (১৯) উর্দু (২০) বালাগাত- শব্দালংকার (২১) ফাসাহাত- বাক্যালংকার (২২) ইলমে মা’আনী-শব্দ তত্ত্ব (২৩) ইলমে বয়ান- বাক্য তত্ত্ব (২৪) ইলমে বাদী- বাচনিক তত্ত্ব (২৫) ইলমে নাহু-বাক্য প্রকরণ (২৬) ইলমে সরফ- শব্দ প্রকরণ (২৭) ইলমে লুগাহ- শব্দ কোষ (২৮) ইলমে তারিখ-ইতিহাস (৩০) সীরাত- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জীবনী। এ ছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বাংলা, অংক, ইংরেজি, সমাজ, বিজ্ঞান ও ফার্সি শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন মাদরাসায় কারিগরি প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে।

উপরুক্ত বিষয়সমুহ অন্তর্ভুক্ত করে কওমী মাদরাসা শিক্ষা কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রধানত ৪টি মৌলিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত বলেও পর্যালোচনায় দেখা যায় । প্রথমটি হল তাওহীদে খালিস (বিশুদ্ধ একত্ববাদ ) দ্বিতীয়টি ইত্তিবায়ে সুন্নাত (সুন্নাতের অনুসরন ) তৃতীয়টি তায়াল্লুক মা’আল্লাহ (আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক)। তাই কওমী মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় একজন শিক্ষার্থী জ্ঞান অর্জন করার পর কেবল মাত্র তখনই পূর্ণ যোগ্যতাসম্পন্ন আলেম হতে পারবে, যখন ওই শিক্ষার্থী ইলম অর্জনের পর কোনো আল্লাহ ওয়ালার সোহবতে (সান্নিধ্যে) থেকে ইলমে তাসাউফের গভীর সাগরে ডুব দিয়ে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হবেন। চতুর্থ মৌলিক ভিত্তিটি ই’লায়ে কালিমাতুল্লাহ (আল্লাহর বিধান সুউচ্চকরণ)। তাই, কওমী শিক্ষা কার্যক্রমের মুল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় একজন শিক্ষার্থী তার ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে নিজেকে নিয়োজিত করে দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্যও প্রয়োজনীয় প্রাত্যহিক ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন ।

কওমী শিক্ষার অর্থ জাতীয় শিক্ষা। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার একটু আগে এ ধারার একটা বিশ্ববিদ্যালয় জওহরলাল নেহুরুর অনুমতি ও মহাত্মা গান্ধীর আশীর্বাদ নিয়ে, মওলানা আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে দিল্লিতে স্থাপিত হয়েছে , নাম জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এটাও একটা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়।

জামিয়া মিলিয়া ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়, দিল্লী ভারত

কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রমকে নিয়ে এতদিন ধরে একটি নেতিবাচক ধ্যান ধারনা সমাজের কিছু মানুষের কাছে প্রচলিত ছিল , কিন্তু কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রমকে সরকারী পর্যায়ে স্বীকৃতি দানের পরে গত কয়েকদিনের কর্মকান্ডে মানুষের মনে একটি পজিটিভ চিন্তা ভাবনার উন্মেষ ঘটছে বলে দেখা যাচ্ছে । হাটহাজারী মাদরাসার বড় নামকরা একজন আলেম শাহ আহমদ শফী প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে মোনাজাত পরিচালনা করেন। এটাকে কেন্দ্র করেই মুলত আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠে দেশ জুড়ে ।

তবে কিছুদিন আগে ২০১৩ সনে দেশের কতিপয় রাজনৈতিক দল মনে করেছিল সরকার উৎখাতে হেফাজত ইসলামকে ব্যবহার করবে । তাদের থেকে হেফাজতকে আলাদা করার জন্য আওয়ামী লীগ একটু ভিন্ন কৌশল মনে হয় অবলম্বন করেছে। হেফাজতকে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলা যায় কিনা এটা তারই একটা চেষ্টার অংশ হতে পারে। এটা নি:সন্দেহে সামাজিক ক্ষেত্রে একটি গুরুতইপুর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে । দেশের সকলকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে সন্মূখপানে জাতীয় অগ্রগতির লক্ষ্যে । এখন প্রয়োজন দেশের সকল শিক্ষানুরাগী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কওমী পাঠ্যক্রমকে কিভাবে আরো বেশী করে দ্বীনি ও সমাজের প্রতিটি পেশাগত ডিসিপ্লিনের সাথে সমন্বয় সাধন করা যায় সে বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা ।

ইংরেজি শিক্ষাকে বলে থাকি আধুনিক শিক্ষা। বাংলায় আধুনিক শিক্ষা হচ্ছে অনুবাদের মাধ্যমে। মাদরাসা শিক্ষায় কোরআন এবং হাদিস শিক্ষা দেয়া হয়, তবে ছাত্রদেকে ব্যাখা বিশ্লেষন করে বোঝানো হয় পরিস্কার বাংলাতে । তবে এটা সত্য যে কওমী মাদরাসাগুলোতে চিকিৎসা শাস্ত্র , ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি বিয়য়ে শিক্ষা দেয়া হয়না, শিক্ষার্থীগন সেটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা কওমী মাদরাসা শিক্ষার একটা দুর্বলতা, এটা অস্বীকার করার উপায় নাই । তবে এটাও সত্যযে আমরা নিজেরাই তো এখনো উপনিবেশের শিক্ষাতে ডুবে আছি, জাতীয় শিক্ষা গড়ে তুলতে পারিনি।

কওমী মাদরাসাসমূহের হিতাকাঙ্খী ও এর প্রতি সহমর্মী অনেকেই এখন এই শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে কারিগরি শিক্ষাকে সমন্বিত করার বিষয়ে মতামত রাখছেন বলে দেখা যায় । ধারণা করা হয় উলামায়ে কেরামগন অর্থনৈতিক দিক থেকে সমাজের বোঝা না হয়ে নিজ যোগ্যতায় জীবনোপকরণের ব্যবস্থা করে দ্বীনের খিদমত আঞ্জাম করার পাশাপাশি দেশের জাতীয় সমৃদ্ধির জন্য জাগতিক বিষয়েও মুল্যবান অবদান রাখতে সক্ষম হবেন যদি শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিগরী কিছু বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা যায় যথোপযুক্ত ভাবে । কওমী শিক্ষা স্তরের উপরের পর্যায়ে বিষয় ভিত্তিক বিভাজন করে ছাত্র ছাত্রীদের উপরেই সিন্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া যেতে পারে, তাঁরা কোন বিষয়ে উচ্চতর পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ হবেন । যদিও এ কথা সত্য যে কুরআন ও হাদীসের ন্যায় এমন একটি ব্যাপক বিষয়ের ওপর পারদর্শিতা অর্জনে নিয়োজিত থাকার সময় কারিগরি বিষয়ে সময় ব্যয় করা বাস্তবতার নিরিখে একজন কওমী মাদ্রাসার ছাত্রের জন্য বেশ কষ্টকর হবে । কারণ দিনের বেশীর ভাগ সময় ব্যয় করে যেখানে কুরআন-হাদীস ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্যতা অর্জন করা কঠিন, সেখানে কারিগরি শিক্ষার পেছনে সময় ব্যয় করার সময় কোথায়? কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্থা সম্পর্কে আলেম ওলামাগনও বলে থাকেন সমাজের অন্যান্য পেশাজীবী মানুষের সেবা সমাজের সব মানুষ সব সময় গ্রহণ করে না। কিন্তু উলামায়ে কেরামের দ্বীনি সেবা সমাজের সব মানুষের জন্য সব সময় প্রয়োজন। তাই সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ওপর উলামায়ে কেরামের প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব অনেক অনেক বেশি। (সূত্র : কওমী মাদরাসার নেসাব ও নেযাম- দরসে নেযামীর কিতাবসমূহের পাঠদান পদ্ধতি। মূল : আল্লামা তাকী উসমানী, অনুবাদ : মাওলানা মুহাম্মাদ ওমর ফারুক, পৃষ্ঠা-১৭) ।

তবে জাতীয় ঐক্যের জন্য আমাদের একটা অভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার। মাদরাসার ক্ষেত্রে অনেক সময় বলা হয় সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে , তাহলে প্রশ্ন জাগে আমরা যে ‘এ’ লেভেল এবং ‘ও’ লেভেলকে স্বীকৃতি দিচ্ছি সেখানে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে না কেন, এ ক্ষেত্রে হয়ত বলা হবে সেটা আন্তর্জাতিক সিলেবাস। তবে মনে রাখতে হবে মাদরাসার সিলেবাসটাও আন্তর্জাতিক। এটা ভারতীয়, সউদী আরবীয় এবং অন্যান্য দেশেও। তারা মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করে এবং দেওবন্দকেও অনুসরণ করে। আসল কথা হচ্ছে তারা সেখান থেকে মুলত ধর্মীয় শিক্ষাটি অনুসরণ করে । তবে এটা সত্য সউদী আরবের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এখানে কওমীররা সেটা করছে না। এজন্যই হয়তবা কওমীরা বলছে তারা একটা ফ্যাকাল্টি বা বিভাগ মাত্র । এটা ফ্যাকাল্টি অব থিওলজি বা ধর্ম তত্ব বিভাগ , ফ্যাকাল্টি অব রিলিজিয়াস স্টাডিজ ইত্যাদি । ইংরেজী তথা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যদি আরবি ও ধর্মতত্তে মাস্টার্স ডিগ্রি দেয়া যায় তাহলে সেখানে কওমী মাদ্রাসার ফেকাল্টি বা বিভাগ হতে কেন তা দেয়া যাবেনা, সমালোচনা করার সময় সকলেই বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন ।

এখানে আরো একটি কথা উল্লেখযোগ্য , মাদরাসা শিক্ষা যে বিশেষ কিছু দিক দিয়ে আমাদের অন্যান্য শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ভালো এ কথা অনেক পন্ডিতই বলেছেন বেশ জোড় দিয়ে । কওমী সিলেবাসে লজিক বলে একটা শাস্ত্র আছে দেখা যায় । আমরা ইংরেজীতে যে লজিক পড়ি সেটা অপশনাল , পড়লে পড় না পড়লে না পড় । তাতে আরোহ- অবরোহ আছে। আরবিতে এটাকে বলে মানতেক। মানতেক মানে লজিক অর্থাৎ যুক্তি দিয়ে কথা বলাটাকেই বলে লজিক । আরবিতে আছে আল ইনসানু হাই ওয়ানুন নাতেকুন অর্থাৎ মানুষ যুক্তিশীল প্রাণী, এটা এরিস্টটলের বক্তব্য। কওমী মাদ্রাসাসহ আমাদের মাদরাসায় এখনো প্লেটো পড়ানো হয় যা আফলাতুন নামে পরিচিত । সেখানে আরস্তু নামে এরিস্টটলও পড়ানো হয়। সেখানে নিউপ্লাটোনিকদেরকেও পড়ানো হয়। তবে কওমী মাদ্রাসায় মার্কস ও এঞ্জেলদেরকে পড়ানো হয়না , এর প্রয়োজনীয়তাও এখন আর তেমন নেই । ইউরোপীয়দের দর্শনকে তথাকথিত ইসলামী দর্শন বলে যেটা পড়ানো হয় সেটা মুলত গ্রিক দর্শন ছাড়া আর কিছুই নয়। ইসলাম প্রচারের দুইশ বছর পরে নবম শতাব্দীতে কিছু জগত সেরা আরবীয় দার্শনিকবৃন্দ যথা আল কিন্দি, ইবনে সিনা এবং ইবনে রুশদ প্রমুখ যে দর্শন প্রচার ও প্রসার করে গেছেন সেটাই ইউরোপে গেছে। সেটাই আমরা এখন পাশ্চাত্ত দর্শন হিসাবে ধুমছে পড়ছি। আরো একটি কথা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ সমুহে দর্শন পড়া কি আমাদের জন্য কখনো কি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ? বর্তমানে জ্ঞান গরিমায় সেরা ইউরোপিয়ান একটি দেশ ফ্রান্সের শিক্ষা ব্যবস্থায় দেখা যায় নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত দর্শন বাধ্যতামূলক। আমরাতো সেটা অনুসরণ করছি না শুধু কওমী মাদরাসার উপরই আমাদের যত সমালোচনা ঝেড়ে দিচ্ছি । একমুখী তীব্র সমালোচনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে আমাদের সকলকে । মাদ্রাসাকে সংস্কার করতে হবে, তবে তার চেয়ে বেশি দরকার হয়ে পড়ছে আমাদের আত্মসংস্কারের।

সমাজের কোনো একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন রেখে ভালো সমাজ বিনির্মাণ করা যাবে না , এটা সবাইকে মেনে নিতে হবে । প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ একটা বাস্তবতা উপলব্ধি করার জন্য। তবে এটা অনস্বীকার্য যে দেশের বিপুল সংখক ( প্রায় ১৪ লাখ ) শিক্ষার্থী যে বিদ্যা গ্রহণ করছে তার প্রায়োগিক দিক সমাজে খুবই কম। নিয়োগ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এগুলোর প্রয়োগ সীমাবদ্দ । তাঁরা মূল সমাজ থেকে বলতে গেলে বিচ্ছিন্ন । যদিও তারা কোরআন-হাদীস ইত্যাদি বিষয়ে ভালো শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন । তাদেরকে সমাজের মধ্যে একীভূত করার প্রয়াস প্রশংসনীয়। তাদের এতদিন কোনো নিয়ন্ত্রনই ছিল না। এখন তাদের সাথে যোগসূত্রের যে সূচনা হলো, তাকে ভাল করে কাজে লাগানোর কৌশল হয়তো অচীরেই প্রণীত হবে। স্বতন্ত্রতা ও ঐতিহ্য নষ্ট হবে বলে আতীতে কওমীরা কোন অনুদান-দান গ্রহণ করতেন না, নিজেদের অর্থে পরিচালিত হতেন । সে ধারা তাদের ভাঙ্গতে হবে । কওমী শিক্ষা ধারায় মুলত চারটা স্তর আছে বলে দেখা যায় । এগুলো হলো হিদায়া ( যা এসএসসি পর্যায়ভুক্ত ), সরে বেকিয়া (এইচএসসিপর্যায়ভুক্ত ), মিসকাত ( স্নাতক অনার্স পর্যায়ভুক্ত ), দাওরা হলো কামিল ( স্নাতকোত্তর পর্যায়ভুক্ত ) । গত ১১ই এপ্রিল ২০১৭ তারিখে আপাতত দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি সাহিত্য) সমমান ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন প্রশ্ন জাগে প্রতিটি স্তরের পাঠ্যক্রমের সময়কাল নিয়ে , এগুলি যদি দেশে প্রচলিত অন্যান্য শিক্ষা স্তরের সময়ের সাথে মিলিয়ে নির্ধারণ করা না হয় তাহলে দন্ধ ও সংঘাত অনিবার্য । তাই বিষয়গুলি নিয়ে এখনই ভাবতে হবে দেশের সকল শিক্ষানুরাগী বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে, তা না হলে হয়তো প্রশ্নের মুখেই পড়বে এই কওমী স্বীকৃতি । তবে কওমীদেরে বৃহত্তর সমাজের সাথে একাত্ব করার যে মহৎ কাজটা শুরু হয়ে গেছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োচিত । আশা করছি আগামীতে কওমী মাদারাসা শিক্ষা ব্যাবস্থায় জড়িতরা নিজেরাই আধুনিক শিক্ষার বিষয়গুলো গ্রহণ করবেন নিজেদের প্রয়োজনেই। তবে এটাই সুখের কথা আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষায় সংস্কারের পর্বগুলো এখন জোড়েসুরেই শুরু হয়েছে বলা যায় । আলীয়া মাদ্রাসা ধারায় পাঠ্য বইয়ে স্কুল-কলেজের পাঠ্য বিষয়গুলি শুরু হয়েছে বেশ আগেই এখন কওমীদের ক্ষেত্রেও এটা শুরু হলে মূল সমাজের মধ্যে তারা একীভূত হয়ে যাবে, জাতীয় এক্য হবে সুসংহত ।

অনেক ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান পোষ্টটি দিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত একটি আলোচনার সুযোগ করে দেয়ার জন্য । এ বিষয়গুলি নিয়ে আমি আপনার মত এত বিষদ জানিনা , তবে গত কয়েকদিন ধরে এ বিষয়টির উপর আলোচনা প্রেক্ষিতে কিছু প্রাসঙ্গীক কথাই শুধু বলা হল উপরে । ভুল ভ্রান্তি কিছু হলে ধরিয়ে দিলে নীজকে শুধরে নিব সেভাবে ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল । আল্লাহ সকলের সহায় হোন – আমীন।

বিঃদ্রঃ মন্তব্যটি স্বতন্ত্র পেষ্টের মত হওয়ায় মন্তব্যটি আলাদা পোষ্ট হিসেবে উপস্থাপন করলাম।

মন্তব্য ৪৮ টি রেটিং +১৫/-০

মন্তব্য (৪৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৪৮

মো সজীব হাসান খাঁন বলেছেন: অনেক অজানা কথা জানা গেল।

১৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:০১

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:১১

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: অনেক লম্বা ও তথ্যবহুল পোষ্ট। ভালো লাগলো পড়তে পেরে। কৃতজ্ঞতা রেখে গেলাম পোষ্টে।

শ্রদ্ধেয় ড. এম এ আলী ভাইয়ের মতো আমিও
"এখন প্রয়োজন দেশের সকল শিক্ষানুরাগী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কওমী পাঠ্যক্রমকে কিভাবে আরো বেশী করে দ্বীনি ও সমাজের প্রতিটি পেশাগত ডিসিপ্লিনের সাথে সমন্বয় সাধন করা যায় সে বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা ।"-- এমনটির আশা করে গেলাম।

শুভ হোক দেশ ও জনগণের।
শুভকামনা জানবেন।

১৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:০৩

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: জাতির বিভাজন যত দূর করা যায় ততই মঙ্গল।

৩| ১৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৪৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ ডঃ এম এ আলী ভাইকে তাঁর চমৎকার উপস্থাপনার জন্য। ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো শিক্ষার প্রতিই কোনো নেগেটিভ ইম্প্রেশন নেই এবং ছিলও না; তবে যাঁদের রয়েছে তাঁদের জন্য নিঃসন্দেহে এটা একটা সুন্দর জবাব।

ফরিদ ভাইকেও ধন্যবাদ এটি শেয়ার করার জন্য।

শুভেচ্ছা।

১৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:০৬

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: জাতিকে ঐক্যব্দ্ধ রাখতে হলে সবার প্রতি সবার খেয়াল থাকা দরকার।আপনার মন্তব্যে অনেক খুশী হলাম।

৪| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:২৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আমার সাধারণ মন্তব্যটিকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য । অনেকের কাছ হতে আরো মুল্যবান অনেক মতামত পাওয়া যাবে বলে আশা করি ।

শুভেচ্ছা রইল ।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:০৮

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: আপনার মতো করে মন্তব্য করার মতো লোক ব্লগে খুব কম। দেখি কে কি বলে!

৫| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ২:৪৯

ফকির জসীম উদ্দীন বলেছেন: মুল্যবান লেখা, জানলাম অনেক কিছু।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:১০

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক শুভেচ্ছা।

৬| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৫৯

রাকিব মুন্না বলেছেন: ডঃ এম এ আলী মহোদয় বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। বিভ্রান্তি দূরিকরনে বিষয়টি যথাযথ উপস্থাপিত হয়েছে।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:১১

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: তিনি সব কিছু মনদিয়ে করেন। আল্লাহ তাঁর ও তাাঁর পরিবার বর্গের মঙ্গল করুন।

৭| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:০৮

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ডঃ এম এ আলী মহোদয় বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর ও যুক্তিমূলকভাবে উপস্থাপন করেছেন। বিভ্রান্তি দূরিকরনে বিষয়টি যথাযথ উপস্থাপিত হয়েছে বলে মনে হয়। ধন্যবাদ আপনাদেরকে।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৫৫

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: তাঁর মন্তব্য অনেক সময় খুব সুন্দর হয়্ এটিও তার মধ্য হতে একটি।

৮| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

জাহিদুল ইসলাম সুমন বলেছেন: তথ্যবহুল পোষ্ট পড়ে ভাল লাগল

২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৫৫

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: তথ্যবহুল যে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

৯| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৮

সাহিদা সুলতানা শাহী বলেছেন: ডঃ এম এ আলী মহোদয়ের বর্ণনা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। আল্লাহ তাঁর ও তাঁর পরিবারের মঙ্গল করুন।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৫৬

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: মুগ্ধ হওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

১০| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:২৬

মোঃ মিজানুর রহমা৯৭ বলেছেন: আলোচনা অনেক ভাল লেগেছে।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৫৭

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ।

১১| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৩৬

এস এম রিয়াদ হোসেন বলেছেন: পোষ্ট পড়ে জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ হলো।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৫৭

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: আমিও এ থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।

১২| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৪

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: একটি মানুষ সারা জীবন লেখাপড়া করল অথচ তার সরকারী সনদ থাকল না- এটা বৈশম্য। মান যা হউক না কেন সনদ প্রদান করার জন্য সরকার কে ধন্যবাদ।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৬

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: মান না থাকলে সরকার তার ব্যবস্থাও করতে পারে।

১৩| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৭

টারজান০০০০৭ বলেছেন: উনার পোস্টের লিংকটা দিলে ভালো হইতো! যাহা হউক , আপনার পোস্ট কাম মন্তব্য হইতে মনে হইলো কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা আছে ! হয়তো আপনি ছাত্রও ছিলেন !

"এজন্যই হয়তবা কওমীরা বলছে তারা একটা ফ্যাকাল্টি বা বিভাগ মাত্র । এটা ফ্যাকাল্টি অব থিওলজি বা ধর্ম তত্ব বিভাগ , ফ্যাকাল্টি অব রিলিজিয়াস স্টাডিজ ইত্যাদি । ইংরেজী তথা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যদি আরবি ও ধর্মতত্তে মাস্টার্স ডিগ্রি দেয়া যায় তাহলে সেখানে কওমী মাদ্রাসার ফেকাল্টি বা বিভাগ হতে কেন তা দেয়া যাবেনা, সমালোচনা করার সময় সকলেই বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন ।"

উচ্চতর শিক্ষায় গবেষণাপত্রে আমি যখন তাহাদের সিলেবাসের উন্নয়নের সুপারিশ করিয়াছিলাম , আমার সুপারভাইজর অসন্তুষ্ট হইয়াছিলেন ! তিনি জেনারেল শিক্ষায় নামকরা শিক্ষক হইয়াও আমার চোখ খুলিয়া দিয়াছিলেন ! তিনি বলিয়াছিলেন, 'সবাইকেই ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার হইতে হইবে এমনতো কোনো কথা নেই ! তাহারা রিলিজিয়াস টিচার/লিডার/প্রিচার হিসাবে থাকুক না !'
আমি আমার সুপারিশ পরিবর্তন করিয়াছিলাম !

তাহাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার সংস্কারের দরকার আছে বৈকি , তাহারা দেওবন্দের অনুসরণে করিতেছেনও বটে ! তবে সংস্কারের ক্ষেত্রে আমাদের সরকারি/বেসরকারি শিক্ষাবিদ বুদ্ধুজীবীদের যদি সম্পৃক্ত করা হয় , তাহা হইলে বানরের হাতে খন্তা বা বানরের রুটি ভাগ করার মতন হইবার আশংকা আছে ! আলিয়া মাদ্রাসা ইহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ! তাই তাহাদের সংস্কার, সরকার বা আমাদের পাশ্চাত্যর চশমা লাগানো বুদ্ধুজীবীদের হাতে না দিয়া তাহাদের আকাবেরিনদের(আধ্যাত্বিক পথপ্রদর্শক) জিম্মায় ছাড়িয়া দেওয়াই উত্তম হইবে ! আরেকটি কথা না বলিলেই না ! তাহাদের নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই তাহাদের হাতেই হইতে হইবে ! সরকারের দ্বারা অবশ্যই নয় ! দেওবন্দের মূলনীতিও তাহাই। ইন্ডিয়া , পাকিস্তানেও একই মূলনীতি অনুসৃত হইতেছে।

কওমি নেতৃবৃন্দ শুধুমাত্র দাওরার (মাস্টার্স ) স্বীকৃতি চাহিয়াছেন ! যেন ড্রপ আউট হইয়া হাতুড়ে ডাক্তারের মতন হাতুড়ে মাওলানা তৈরী না হয়।যাহার পড়িতে ইচ্ছা হইবে না , তিনি অন্য কিছু করুক। আলেম না হইয়া ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হইতে চাহিলে স্কুল /কলেজে যাক। কিন্তু আলিয়া মাদ্রাসার গ্রাজুয়েটদের মতন 'না ঘরকা না ঘাটকা' না বনুক। (আলিয়া থেকে একসময় খুব ভালো আলেম তৈরী হইয়াছে ! এখনকার আলিয়ার উপর আমার একদম আস্থা নাই ! দুঃখিত !)

তাহাদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করার খুব কি প্রয়োজন আছে ? তাহারা কি রিলিজিয়াস টিচার/লিডার/প্রিচার হিসাবে কাজ করিতেছেন না ? জাতির ধর্মীয় কার্যাবলীর সম্পাদনের জন্য তাহারা কি বিরাট দায়িত্ব পালন করিতেছেন না ? এগুলো কি কাজ নয় ?

আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা তাহাদের যথাযথ মূল্যায়ন করিতেছি না , তাহাদের যথাযথ সম্মান ও সম্মানী দিতেছি না ! বরং এখন আওয়াজ তুলিতেছি যে তাহাদেরকে যেন ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ হইতে Jack of all trades , master of none অর্থাৎ গোলআলু বানাইতে হইবে !

২০ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৫

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: আমি ঢাকার মিরহাজিরবাগে অবস্থিত তা’মিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম তবে কামিল করেছি লক্ষ্মীপুর আলীয়া থেকে। কারণ অবসরের পর আব্বা মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ী চলে গিয়েছিলেন। আর জেনারেল এডুকেশনও রওয়েছে। তবে আমার অনেক কওমী শিক্ষক ছিলেন যাঁদের পড়ানোর মান ভাল ছিল। সুতরাং বিষয়ভিত্তিক হিসেবে তাদের স্নাতোকোত্তর মান অবশ্যই রয়েছে। বাংলা শিক্ষকের বাংলা পাঠদান ইংরেজী শিক্ষকের ইংরেজী পাঠদানের চেয়ে কওমী হাদীস শিক্ষকের হাদীস এবং আরবী শিক্ষকের আরবী পাঠদান উত্তম ছিল। তথাপি তখন তাদের প্রাপ্য মান দেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকার তাদের প্রাপ্য প্রদানে উদ্দৌগী হয়েছে এটা ইতি বাচক। আমার এ সংক্রান্ত পোষ্ট রয়েছে তাতে এ পোষ্ট মন্তব্য আকারে ছিল। তাতে আরো অনেক ভাল সন্তব্য রয়েছে।
আপনার মন্তব্যটিও খুব সুন্দর হয়েছে। সম্ভবত আপনি আগে অন্য নিকে ছিলেন। আমার অনুমান ঠিক হলে আপনার তখনকার মন্তব্যও উডভোগ করতাম। মন্তব্যের জন্য অনেক শুভেচ্ছ।

১৪| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬

তারেক ফাহিম বলেছেন: তথ্যবহুল পোষ্টে অনেক তথ্য পেলাম যা ইতি পূর্বে অজানা ছিলো। পাশাপাশি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি ডাক্তার সাহেবকে পোষ্টটি শেয়ার করার জন্য, আরও আনন্দিত হলাম ১৩ নং মন্তব্যের প্রতি উত্তরে জানতে পারি সুন্দর লেখনী সাবেক নোয়াখালীর বাসিন্দা ছিল, যদিও এখন লক্ষিপুর। মন্তব্যকারী লক্ষ্মীপুুরিয়া না নোয়াখাইল্লা।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৭

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: বাস্তবে তিনি ডক্টর। পোষ্টের লেখার সম্পূর্ণটাই ডঃ এম এ আলী মহোদয়ের। আমার বাড়ী লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলায় ৭নং বসিকপুরের নন্দীগ্রামে। বাড়ীর নাম, রাজবাড়ী। আপনি কি সেই এলাকার? জানালে খুশী হতে পারতাম।

১৫| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:১৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ড. এম, এ আলীর প্রতি হ্যাটস অফ অভিবাদন।

আপনাকেও ধন্যবাদ মন্তব্যটিকে পৃথক পোষ্ট হিসেবে দেয়ায়! মূল পোষ্ট ফস্কে গেলেও এখন জেনে নিতে পারলাম :)

+++++

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:১৪

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবি।

১৬| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:০৯

তারেক ফাহিম বলেছেন: আমার বাড়ী নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জথানাধীন, ০৭ নং একলাশপুর ইউনিয়নের ০৯ নং ওয়ারর্ড জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:১১

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: জেনে খুব খুশী হলাম। যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করব- ইনশাআল্লাহ।

১৭| ২১ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৩১

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: আপনার আগের পোস্ট ও মন্তব্য দুইটা আমি পড়্বছি। আপনার উপস্থাপন আর ডা: আলীর ফিনিশিং দুইটা চমৎকার।

২১ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:০২

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

১৮| ২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:০০

নাবিক সিনবাদ বলেছেন: অনেক অজানা বিষয়েই জানা গেলো, এমন চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।।

৩১ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৩

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যে আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

১৯| ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৩১

হাফিজ হুসাইন বলেছেন: লেখক কে অনেক অনেক অভিবাদন। বর্তমান সময়ে কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে এমন পোষ্ট নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আল্লাহ আপনাকে এমন আরও পোষ্ট লেখার তাওফিক দিন ও আপনাকে দীর্ঘজীবি করুন। আমিন

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:১৩

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল ও মঞ্জুর করুন-আমিন।

২০| ২৫ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:২৯

স্বতু সাঁই বলেছেন: আমাদের দেশে অনেক ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলই তো চলছে। আমাদের দেশে দু’রকম শিক্ষা ব্যবস্থা কি হচ্ছে না ? । কিন্তু এ বিষয়টা নিয়েতো তেমন কোন প্রশ্ন উঠছেনা

হাস্যকর্ উক্তি। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে ইংরেজীতে ধর্ম শিক্ষা দেওয়া হয় না। সেখানে বিশ্বমানের আধুনিক শিক্ষা দান করা হয়। তুলনা সমানে সমানে হয়। গাধার সাথে ঘোড়ার তুলনা চলে না।

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:১৫

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: সাঁইদের কথার সাথে অন্যকারো কথার তুলনা চলেনা। কারণ এরা ভিন্ন জগতের মানুষ। সাধারণের সাথে এদের মিলেনা।

২১| ২৫ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৫

স্বতু সাঁই বলেছেন: দেশের রেমিটেন্সের একটি সিংহভাগইতো আসে আরবীয় দেশগুলি থেকে, তাছাড়া আরবীতে নাযিল হওয়া কোরান ও বিভিন্ন মুল হাদিছ গ্রন্থতো আছেই । আরব দেশে কাজের পরিবেশ , বেতন ভাতাদি, সুযোগ সুবিধা সে বিষয়গুলি আলোচনায় উঠে আসতেই পারে , তবে এগুলির উন্নতি করতে হলেও সে সমস্ত দেশে কাজ করতে যাওয়া মানুষগুলির জন্য কিংবা ব্যাবসা বানিজ্যসহ বিভিন্ন কাজে সংস্লিষ্টদের আরবী ভাষার উপরে কিছুটা দখল থাকলে তা ভাল উপকারে দিবে বলেই আশা করা যায় ।

তার মানে আরবদের ক্রীতদাস বানানোর জন্যই বাঙালীকে আরবী ভাষা শিখতে হবে!! হা হা হা... সত্যিই হাস্যকর!!!!

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:১৬

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: ক্বোরআন ও হাদীসের মর্ম বুঝার জন্যও আরবী জানা আবশ্যক।

২২| ২৭ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:১২

আমি চির-দুরন্ত বলেছেন: আপনি কি জেনারেল??? এক বার জেনারেল হলে সেফ হওয়া সম্ভব?? কতদিন পড়ে সম্ভব??

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:১৭

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: এটা নির্ভর করবে মডুর মর্জির উপর।

২৩| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:২৭

স্বতু সাঁই বলেছেন: সাঁইরা সত্যটাকে সহজ সরলভাবে বলার চেষ্টা করে। সাঁইরা প্যাঁচগুজ বোঝে না তাই সহজ সরল বোধকে প্যাঁচাইয়া পুঁচাইয়া কঠিনভাবে উপস্থাপন করতে জানে না।

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৩৯

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: যে যা জানে সেতু সেটাই উপস্থাপন করবে। আর যা জানে না তা’তো আর উপস্থাপন করার কথা নয়।

২৪| ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৪৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: আল ইনসানু হাই ওয়ানুন নাতেকুন অর্থাৎ মানুষ যুক্তিশীল প্রাণী -- বেশী যুক্তি খুঁজতে গেলে তো আবার মাথায় গোল পেকে যায়!
আপনার পোস্টে মন্তব্য করতে এসে এমন চমৎকার একটি আলোচনা রেখে যাওয়ার জন্য ডঃ এম এ আলীকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাচ্ছি।
টারজান০০০০৭ এর মত আমিও বলতে চাই, পোস্টের লিংকটা দিলে ভালো হইতো! ওনার মন্তব্যটাও ভাল লেগেছে। বিশেষ করে এ অংশটুকুঃ
তাই তাহাদের সংস্কার, সরকার বা আমাদের পাশ্চাত্যর চশমা লাগানো বুদ্ধুজীবীদের হাতে না দিয়া তাহাদের আকাবেরিনদের (আধ্যাত্বিক পথপ্রদর্শক) জিম্মায় ছাড়িয়া দেওয়াই উত্তম হইবে ! আরেকটি কথা না বলিলেই না ! তাহাদের নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই তাহাদের হাতেই হইতে হইবে ! সরকারের দ্বারা অবশ্যই নয় ! দেওবন্দের মূলনীতিও তাহাই। ইন্ডিয়া , পাকিস্তানেও একই মূলনীতি অনুসৃত হইতেছে।

৩১ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৫

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: মহোদয় আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.