নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জন্য ভালোবাসা।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের ডাক্তার কি সাংবাদিকেরও অধম ?? পছন্দ করবেন নাকি অপছন্দ ... সেটা আপনার ব্যাপার !!!

১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৫০


আমি ব্যাক্তিগতভাবে ডাক্তারদের অপছন্দ করি। ভয়ংকর অপছন্দ!

অপছন্দের নানান কারণ আছে, এদের ব্যবহার খারাপ, এরা পাংকচুয়াল না, এরা বিনয়ী না, এরা দক্ষ না। সবচেয়ে বড় কথা এরা আমার চেয়ে বেশি বোঝে। শুধু আমার চেয়ে না, এরা জাতীর বিবেক, সৎ ও নিষ্ঠাবান পেশার পরাকাষ্ঠা সাংবাদিকদের চেয়েও বেশি বোঝে। কী ধৃষ্টতা! কী ধৃষ্টতা!!

ডাক্তাররা বুঝবে জগতে সবচেয়ে কম, এদের রাগ থাকবে না, এদের ক্ষোভ থাকবে না, কষ্ট থাকবে না। এদের জন্ম, বেড়ে ওঠা অপরের তরে। মানুষের জন্য। এরা তাই এদের আহার, নিদ্রা, আনন্দ, বেদনা সকলই মানুষের তরে উৎসর্গ করবে, তবেই না এরা ডাক্তার! এরা এসএসসি, এইচএসসি শেষ করে, অবর্ণনীয় শ্রমে, মেধায় ডাক্তারিতে চান্স পাবে। পেয়ে ৫ বছরের এমবিবিএস শেষ করে ইন্টার্নি করবে, সেই ইন্টার্নিতে চোখ মুখ নাক বুঝে গাধার মত খাটবে, খাটুনি শেষে মাসে দশ হাজার টাকা পাবে, দশ হাজার!
দশ হাজা- দশ হাজার! কত্ত টাকা!
এক হাজার টাকার দশখানা নোট!
পাঁচশ টাকার কুড়িখানা নোট, আর একটাকার? একটাকার দশ হাজারখানা নোট?

আহা, গুনতে গেলেতো পরে অর্ধেক বেলা চলে যায়!

এরপর? পাঁচ বছরের অনার্স মাস্টার্স শেষে ‘মানুষেরা’ চাকরি করেন, আমরা মাস শেষে বেতন পাই, বেতনের প্রথম টাকায় বাবা-মা’র জন্য দামী শাড়ী, দামী জুতো, ডিজাইন করা পানের বাটা, সুন্দর ফ্রেমের চশমা, বাহারী জায়নামাজ, তজবী কিনে এনে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ি। মা-বাবা এমন সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে শোকর আদায় করেন, আহা, বাপধন, আহা, মা জননী!

আর এমবিবিএস শেষ করে ওই এক বছর অবধি ইন্টার্নিতে মাসে দশ হাজার টাকা পাওয়া ডাক্তাররা ইন্টার্নি শেষে হাতের আঙ্গুলে কড় গুনে হিসেব করতে করতে আবিস্কার করবে ওই ‘মানুষদের’ মতন তারও পাঁচ বছরের পড়াশোনা শেষ!
না, না, শুধু ৫ বছর না। ইন্টার্নসহ ৬ বছরের পড়াশোনা শেষ। কিন্তু এমবিবিএস শেষ করার পরও, গ্র্যাজ্যুয়েশন শেষ করার পরও, বয়স ২৫-২৬-২৭ হয়ে যাওয়ার পরও তার জন্য কোন চাকরি নাই। টাকা নাই। মা বাবার জন্য শাড়ী-লুঙ্গি, জামা-জুতো, পানের বাটা তজবি জায়নামাজ কেনার পয়সা নেই! পয়সা কোথায় থাকবে, কিভাবে থাকবে?

৬ বছরের হাড়ভাঙ্গা খাটুনীর পর সে একখানা এমবিবিএস ডিগ্রী নিয়ে আবিস্কার করল সে আসলে বেকার!

এমবিবিএস- মা বাপের বেকার সন্তান!!

তাহলে উপায়? উপায় আর কি?
আপনার আমার মতো তুমুল মেধাবী 'মানুষে'রা যখন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ থেকে ৫ বছরের অনার্স মাস্টারস শেষে এতদিন ধরে বাবা মায়ের করা কষ্টলাঘবে ব্রতী হই, তখন এই কলুর বলদ ডাক্তাররা তাদের কলুর বলদ বাবা মায়ের সামনে বিব্রত, ভীত, ন্যুজ ভঙ্গীতে দাঁড়ান। দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা মিনমিনে গলায় বলেন, ‘কোচিং এ ভর্তি হব, টাকা লাগবে!’

জ্বি, এমবিবিএস করার পর এদের আবার কোচিং এ ভর্তি হতে টাকা লাগবে! এদের পাঁচবছর শেষে পড়াশোনা শুরু। ভয়াবহ কঠিন সব পরীক্ষা, এই পরীক্ষা, সেই পরীক্ষা দিয়ে, তাতে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা করে এদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের অধীনে কাজ করার জন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। বিভিন্ন হাসপাতালে হাসপাতালে ‘চাকর-বাকরের’ মত কাজ করতে হবে, পান থেকে চুন খসলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুনতে হবে।

এবং হ্যাঁ, এ সকলি করতে হবে বিনা পারিশ্রমিকে, কারণ ইনারা ডাক্তার, কারণ ইনারা অনারারী ডাক্তার, আসলে অনারারী না, ইনারা অনাহারী ডাক্তার! তখন ইনাদের অবস্থা অবশ্যই অনাহারীদের চেয়ে বেটার কিছু না। এনাদের মা-বাবারা ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুজ, ক্লান্ত, টাকা পয়সা দিতে দিতে নিঃস্ব, ইনাদের এখনও মাসে মাসে হাত খরচের পয়সা দিতে হয়, বই খাতা, কাপড়, চুলের তেল, পায়ের জুতো, দুপুরে বাইরে একবেলা ভাত খাবার পরিবর্তে দুটা সিঙ্গারা আর এক কাপ চা খাবার পয়সা দিতে হয়। এবং হ্যাঁ ইনারাই কিন্তু এমবিবিএস পাশ করা ডাক্তার!

জ্ব্বি জনাব! কথা সত্য!

বাংলায় প্রবাদ আছে, ‘আশায় থাকো কাউয়া, পাকলে খেও ডেউয়া’। ভালো প্রবাদ। অতি ভালো। ডাক্তারাও আশায় থাকেন, কবে উনারা ডাক্তার হবেন! হ্যা, ডাক্তারদের ডাক্তার হয়ে উঠতে হবে! ভালো, ডাক্তার, নামকরা ডাক্তার, বড় ডিগ্রীধারী ডাক্তার, স্পেশালিষ্ট ডাক্তার! না হলে আপনি আমি তাদের পুঁছব না। নাক-ভ্রু-গাল কুঁচকে বলবো, 'অ, এই ডাক্তর?'

উনাদের মধ্যে সকলে সেই ডাক্তার হয়ে উঠতে পারেন না, কেউ কেউ পারেন।

মেয়েদের জন্য অবস্থা আরও ভয়াবহ। এই দেশে কুড়ি, পঁচিশের পর মেয়েদের বিয়ে হওয়া ঝক্কির ব্যাপার, মেয়ের বয়স হয়ে গেছে, আইবুড়ো মেয়ে, মেয়ের নিশ্চয়ই কোন ব্যাপার আছে, সমস্যা কি?

তাহলে? তাহলে আর কি? মেডিকেলে পড়া ডাক্তার মেয়ের বাজার ভালো! বয়সেও কচি, কুড়ি বাইশ বছর বয়স। তাছাড়া পাত্র, পাত্রের মা-বাবা বড় গলা করে বলতে পারবেন, ‘আমার বউমা ডাক্তার! আহা, গালভরা আনন্দ, গর্ব, তৃপ্তি!’ সেই তৃপ্তি আরও বাড়াতে বিয়ের সাথে সাথে ডাক্তার বউকে দিয়ে হেঁশেল না ঠেলাতে পারলে আনন্দটা যেন ঠিক জমে না। আড়চোখে রান্না ঘরে ডাক্তার বউকে রাঁধতে দেখা, আহা, কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!

দুদিন বাদে, কী ব্যাপার, বাচ্চা কাচ্চা হইব না বউয়ের?’
বউয়ের বাচ্চাও হতে হল, বাচ্চার বড়ও হতে হবে, তাহলে? ডাক্তার? ডাক্তার বউ?

আর সেই 'ডাক্তার' মেয়ের মা বাবার ফোঁটা ফোঁটা ঘামের নিঃশেষ, বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের ফসল?

ডাক্তার মেয়ে! কই সে? মা বাবার স্বপ্ন, রোজ রাত দিনের একটু একটু স্বপ্ন, সেই স্বপ্নদের জন্য কতদিন বাবা রিকশার ১০ টাকা বাঁচাতে বাসের ভিড়ে গাদাগাদি করে অফিসে গেছেন, ঈদের সময় আগের ঈদের পাঞ্জাবী পরেছেন, পুরনো চশমার ফ্রেমটা ভেঙ্গে গেলেও বদলান নি, সুতো দিয়ে বেঁধে নিয়েছেন।

মা তার ছেড়া ব্লাউজ শাড়ির আচলে ঢেকে রেখেছেন, ছেড়া স্যান্ডেল সপ্তাহান্তে মুচির দোকানে গিয়েছে! মেয়েটা এইতো ডাক্তার হল বলে, আরতো কটা বছর! তারপর! তারপর সব কষ্ট ঘুচবে! সেই মেয়ে! সেই মেয়ে! এখন হেঁশেল ঠেলে, বাচ্চা সামলায়, গভীর রাতে স্বামীর পাশে শুয়ে একা একা কাঁদে। তবে কান্না রেখে ঘুমতে হবে এখুনি, সকালে স্বামী অফিসে যাবে, তার নাস্তা করতে হবে, বাবুর কাঁথা পাল্টাতে হবে, শাশুড়ির জন্য আলাদা নাস্তা করতে হবে, তিনি আবার অন্যদের মত রুটি ভাজি খান না, তার চাই ভাত, ভাত... সাথে চিংড়ির বড়া হলে ভালো হয়।

ডাক্তার বউয়ের হাতের চিংড়ির বড়া! আহা, সে কি স্বোয়াদ!

ডাক্তারদের আমার ভীষণ অপছন্দ! এরপর চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে ওদের কেউ কেউ ডাক্তার হয়, মাস শেষে কিছু কাগজের নোটের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো তখন শ্রেফ কাগজের নোটই থাকে।

তখন বন্ধুদের নিয়ে গলা ফাটিয়ে কফিশপে উল্লাস করতে ইচ্ছে হয় না, সিনেমা হলে সবচেয়ে দামী সিটে বসে তীব্র উত্তেজনা নিয়ে সিনেমা দেখতে ইচ্ছে হয় না, রিকশায় প্রিয় মানুষটার হাত ধরে খোলা আকাশের নিচে প্রজাপতির মত ঘুরতে ইচ্ছে হয় না, এমনকি রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিলবোর্ডের দুর্দান্ত সব মডেলদের শরীরে ঝা চকচকে পোশাক দেখে একদিন যে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এসেছিল শুন্য পকেট, কঠিন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে, বাবা মা’র ক্লান্ত চোখের কথা ভেবে, আজ পকেট ভর্তি টাকা নিয়েও হঠাৎ আবিস্কার হয়, সেই শরীর নেই, সেই ইচ্ছে নেই! শুধুই কি ইচ্ছে আর শরীর? সময়টাইতো আর নেই! কোথায় কেমন করে ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে এগ্লো সেই সময়, সেই বয়স! দিনগুলো মোর সোনার খাঁচায় রইলো না... সময়! সময়! সময়!

বয়স? হা, সেই উচ্ছ্বাসের সময় আর নেই, বয়স আর নেই! কী হবে পকেটভর্তি এই কাগুজে নোট দিয়ে! হা, শ্রেফ কাগুজে নোট, সেই সময় , সেই উচ্ছ্বাস, সেই তেষ্টা, সেই চাপা আনন্দ, অপেক্ষা ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা এই কাগুজে নোটের নেই। নেই! একটা জীবন, একটাইতো জীবন! এই জীবনের সময় ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই, কারো নেই!

এই একজন ডাক্তার!

একজন ডাক্তার শিক্ষার্থী? কে সে? অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা? পরিবার, সমাজের, শিক্ষায়তনের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থিটি ডাক্তার হবে? বাবা মা, আত্মীয় স্বজন শিক্ষক তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে? কিন্তু বাস্তবতা কী জানেন?
এই দেশের সিস্টেম, একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীকে যে ব্যবস্থা, সুযোগ সুবিধার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যতদিনে স্বাবলম্বী হতে হয়, এই পুরো প্রক্রিয়াটি তাকে ধীরে ধীরে খুন করে ফেলে! আমি নিজে এর স্বাক্ষী, অসংখ্য মেডিকেল শিক্ষার্থীর সাথে আমার কথা হয়েছে, তাদের মতো হতাশ, ফ্রাস্ট্রেটেড আমি আর কাউকে দেখি নি। একজন-দুজন না, তারা প্রায় সকলেই তাদের ক্যারিয়ার, তাদের লাইফ, তাদের ব্যক্তিগত-পারিবারিক, সামাজিক জীবন নিয়ে ভয়াবহরকম হতাশ! এবং এই হতাশা থেকে মুক্তির উপায় তাদের জানা নেই!

আমাদের রাষ্ট্র ডাক্তার তৈরি করছে? সবচেয়ে সংবেদনশীল পেশা? আমাদের সিস্টেম চায় তারা মানুষ বাঁচাক? কিন্তু তার আগে তাঁদেরতো বাচিয়ে রাখতে হবে? তাঁদের সংবেদনশীলতা লালন করতে হবে, তাঁদের আগলে রাখতে হবে? তাঁদের সুনিশ্চিত, নিশ্চিন্ত জীবন নিশ্চিত করতে হবে, সুযোগ সুবিধা, ক্যারিয়ার নিশ্চিত করতে হবে, কিন্তু সেখানে কেউ নাই কেউ নাই। অথচ আমরা তৈরি করছি একটি হতাশ প্রজন্ম, হতাশ, স্বপ্নহীন রোবট প্রজন্ম, আর আশা করছি সর্বশ্রেষ্ঠ সেবা! আহা, এ যেন ক্যাকটাস গাছ লাগিয়ে গোলাপের প্রত্যাশা!

যে সিস্টেম তাঁদের জীবন, ক্যারিয়ার, পেশা, স্বপ্ন নিয়ে তাঁদের স্বপ্ন দেখাতে পারে না, আশাবাদী করতে পারে না, ক্রমাগত ডুবিয়ে দেয় হতাশায়, সেই সিস্টেমে আমরা চাই, তারা হয়ে উঠবে মহামানব! কী হাস্যকর!

আমার তারপরও ডাক্তারদের অপছন্দ, কারণ এরা আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের চিনতে পারে না, এরা দলীয় ক্যাডারদের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে দিতে চায় না, এরা সাংবাদিকদের সামনে মাথা নিচু করে কথা বলে না! এরা ডাক্তার, এরা মানুষ না, এরা শ্রেফ ডাক্তার, ডাক্তার, এরা সেটা কখনও কখনও ভুলে যায়। ভুলে গিয়ে এরাও কখনও কখনও মানুষের মতই রেগে ওঠে, ক্ষুদ্ধ হয়, চেঁচায়। কিন্তু এরা জানে না, এরা ডাক্তার, এরা মানুষ না। মানুষদের অনুভূতি এদের থাকতে নেই! এদের রাগতে নেই, কাঁদতে নেই, ভুল করতে নেই, কষ্ট পেতে নেই...

এদের পান থেকে চুন খসলে কল্লা চাই স্লোগান ওঠে, অথচ, কদিন আগে মায়ের পেটে গুলি খাওয়া শিশুটিকে কি অসম্ভব অবিশ্বাস্য দক্ষতায় যেই ডাক্তাররা প্রসব করালেন, বাঁচিয়ে রাখলেন মা আর মেয়ে দুজনকেই। কই, সেই ডাক্তারদের নিয়েতো কোথাও কেউ টুঁ শব্দটিও করলেন না? বিবেকের পরাকাষ্ঠা সাংবাদিকরা? কই?'

ধুরো ভাই,, এতো উত্তেজনার কি আছে? এইটাতো ডাক্তারগোই কাজ, তুমি ডাক্তার, তুমি রোগী বাচাইবা তোমার কাজ তুমি করবা, তাতে আবার এতো ফুটানি কিসের?

আসলেইতো, আমরা আর সকল পেশার মানুষেরা আমাদের সকল কাজ শতভাগ সততায়, দক্ষতায়, দায়বদ্ধতায় করি। দেশের আর কোথাও এতটুকু অনিয়ম, অদক্ষতা, অবহেলা কস্মিনকালেও হয় নি।

সাংবাদিকরা কখনও নিজের টেবিলে বসে দুদিন পরের কোন ঘটনার নিউজ করে না, ঘুষ খায় না, নিউজের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে না, ইয়ালো জারনালিজম করে না, এরা দুধে ধোয়া তুলসি পাতা, এরা জাতির বিবেক, আর ভুলচুক ধরা পড়লে, ওহ, এমনতো একটু আধটু হতেই পারে! আমরাতো মানুষই!

চলেন একটা সংশোধনী দিয়ে সরি বলি, সরি গাইজ, আমি সাংবাদিক, আমি মানুষ! একটু ভুলতো হইতেই পারে, কি বলেন!

উকিল, মোক্তার, জজ, ব্যারিস্টার, পুলিশ, ড্রাইভার, শিক্ষক, পিয়ন থেকে শুরু করে বাসের হেল্পার, ইটভাটা শ্রমিক পর্যন্ত ভুল করতে পারবে, কারণ তারা মানুষ! ভুল করতে পারবে না এক ডাক্তার, করলেই মিছিল মিটিং কল্লা চাই, বরখাস্ত চাই, কারণ কি? কারণ সে মানুষ না, সে ডাক্তার?

ডাক্তারদের সম্পর্কে অভিজ্ঞতা খারাপ, তারা কসাই, তারা মৃত লাশ জীবিত বানিয়ে, নিজের ইচ্ছে মতো ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অকারণে রোগী পাঠায়, টেস্ট না লাগলেও পাঠায়, লাগ্লে দুইটা এক্সট্রা দিয়ে পাঠায়, কত কত অভিযোগ! এই সকল কারণে ডাক্তারদের আমার অপছন্দ, শুধু ডাক্তারদেরই অপছন্দ!

কারণ জগতের আর সকল পেশাজীবীরা দুগ্ধসম শুভ্র, পুস্পসম সুরভিত।

উকিল, জাজ, ব্যংকার, অফিসের বড় স্যার, কাস্টমসের অফিসার, সাংবাদিক, পুলিশ, খেলোয়াড়, নায়ক, গায়ক, লেখক, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ আর সকলের ব্যাপারেই পুস্পঘ্রাণসুলভ সুরভিত সুবাসিত অভিজ্ঞতা আছে, এনারা কোনদিন এতটুকু খারাপ ব্যবহার করে নাই, কোনদিন অন্যায় করে না, অসৎ হয় না। ডাক্তার ছাড়া বাদবাকী সকল প্রফেশনেই এঞ্জেলরা থাকে, মহামানবেরা থাকেন, কেবল ডাক্তারি প্রফেশনেই কসাই থাকে!

এই কারণে আমি ডাক্তারদের অপছন্দ করি, ডাক্তার হচ্ছে ভাতের মতন, হাড়ির সব ভাত টেপা লাগে না, একটা টিপলেই সব ভাতের অবস্থা বোঝা যায়, সুতরাং খারাপ ব্যবহার করা একটা ডাক্তার টিপলেই, দেখলেই আমি বুঝে যাই, জগতের সব ডাক্তার খারাপ। সুতরাং আসেন গালি দেই, ডাক্তার মানেই কসাই!

ডাক্তারি প্রফেশনে সকলেই খারাপ, সকলেই, যদিও আমি জানি না, ন্যুনতম এমবিবিএস উত্তীর্ণ মোট ডাক্তারদের সংখ্যা এই দেশে কত? তাদের কজনের আচরণ আমি দেখেছি? সেটা বিষয় না, বিষয় হল, ওই যে ভাত একটা টিপেছি, সব বুঝে গেছি, সব ডাক্তার খারাপ... সব, এই জন্য আমি ডাক্তার অপছন্দ করি, এরা খারাপ, সবাই এক... সবাই এক হাড়ির ভাত...

আমার ডাক্তারদের অপছন্দ, কারণ এরপরও একজন মুমূর্ষু রোগী বাঁচাতে সে তার সবটুকু দিয়ে লড়ে, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটায়, বাসরঘরে মাঝরাতে বড় খালার, বড় চাচার জরুরীর ফোন পেয়ে ছুটে যায়, এই কারণে আমি ডাক্তারদের অপছন্দ করি, আমরা সকলেই করি।

আমি ডাক্তারদের অপছন্দ করি, বাংলাদেশের মতন একটা দেশে তারা এখনও ডাক্তারি পড়ে, ডাক্তারি করে, মানুষের সেবা দেয়। চাইলেই যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে একাট্টা হতে পারে, রুখে দাঁড়াতে পারে, সোচ্চার হতে পারে, কেবল তারা একযোগে রুখে দাড়াতে পারে না। গালি খেয়ে মার খেয়েও তাদেরমুখ বুঝে 'সেবা' দিয়ে যেতে হবে। কারণ তারা ডাক্তার। তারা বুঝিয়ে দিতে পারে না, একদিন, মাত্র একটি দিন তারা চুপ হয়ে গেলে, এই এদের কি হবে? এই দেশের ষোল কোটি মানুষের কি হবে? তারা সেটা বুঝিয়ে দিতে পারে না।

কারণ তারা মানুষ না, কারণ তারা ডাক্তার। আর তারা ডাক্তার বলেই চারপাশে তাদের নিয়ে চলা অবিরাম বিষাদগার, প্রচার চলে, যে অসহযোগিতা করা হয় সর্বত্র, বিন্দুমাত্র সুযোগসুবিধা না দিয়েও যেভাবে একযোগে হেয় করা হয় ক্রমাগত, যে ভয়াবহ নোংরা, সস্তা, আপত্তিকর আচরণ করা হয়, তার প্রতিবাদে যদি তারাও জ্বালাও পোড়ায়ে মেতে উঠত, একযোগে কাজ বন্ধ করে দিত, হাজার হাজার মানুষ মরত বিনা চিকিৎসায়, আর তারা তখন রাজনীতিবিদদের মতন গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে চোখ বাঁকা করে হাসত, ‘এইবার বুঝছ ঠ্যালা? আমি কেডা বুঝছনি?’

এই দেশের সকল সাংবাদিক একদিন না, একমাস কাজ বন্ধ রাখলে এই দেশের, এই দেশের মানুষের কি ক্ষতি হবে জানি না, একদিন এমপি মন্ত্রীরা কাজ বন্ধ রাখলে কি এমন ক্ষতি হবে তাও জানি না, কিন্তু এই ডাক্তাররা সারা দেশে যদি একটা ঘণ্টাও কাজ বন্ধ রাখে, তাহলে কি হবে, সেইটা কিন্তু আমরা মানুষেরা জানি, তারপরও আমরা জানি, ডাক্তাররা মানুষ না, তারা ডাক্তার, আর ডাক্তার বলেই এই ভয়ংকর কাজটি তারা করবেন না, কিন্তু যদি করেন? কোন একদিন, যদি করে ফেলেন? কি হবে তখন? আমরা মানুষ বলেই তা ভাবি না, কিন্তু ওই ডাক্তাররা কিন্তু ভাবেন, হ্যা তারা ভাবেন, আর ভাবেন বলেই এইসব এম্পি, মন্ত্রীরা ধীরে ধীরে গায়ে চরে বসেন, কারণ তারা জানেন, তারা যতটা নৃশংস হতে পারেন, এই ডাক্তাররা তা পারেন না...

আমি ডাক্তারদের অপছন্দ করি, কারণ তারা এটা করে নি, করতে পারে নি। কারণ তারা আমার মত 'মানুষ' হয়ে উঠতে পারে নি। কারণ তারা এই দেশের অকৃতজ্ঞ মানুষের চেয়ে সহস্রগুণ উৎকৃষ্ট হয়েও এই ঘৃণ্য মানুষদের জন্য নিজেদের অমূল্য জীবন অবলীলায় নিঃশেষ করে দিচ্ছে।

আমি হিংসায়, ক্রোধে, ঈর্ষা আর প্রবল হীনমন্যতায় ডাক্তারদের অপছন্দ করি। কারণ আমি তাদের মত হয়ে উঠতে পারি নি... কারণ আমি এখনও ""এই দেশের মানুষ"" রয়ে গেছি!!

-অনুপ্রেরনা :: সাদাত হোসাইন

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৩৬

শৈবাল আহম্মেদ বলেছেন: বাংলাদেশে যারা ছোটলোক ও অল্প অর্থের মালিকের সন্তান লাভের আশায় ডাক্তার হতে বা তৈরী করতে চায়,জায়গা জমি বেচে তারা কোন গতিকে ডাক্তার হয়ে ওমনি পোচ মেরে গলায় পা দিয়ে পূর্বের আসল সহ চড়া সুদে অর্থ পেতে চায় সাধারনের কাছ থেকে। আর যারা ডাকাতের বা দুর্নিতির বড়লোকের সন্তান,ডাক্তার হতে চায় তারা তো ডাক্তার হয়ে ওমনি সহজেই ডাকাতি করে সাধারনের কাছ থেকে অগাধ অর্থ কৌশলে আদায় করে বড় বাড়ি দামী গাড়ি ক্লিনিক ডায়াগনিষ্টিক ল্যাব আরো কতো কি গড়ে তোলে। উভয় ডাক্তারই মানুষকে অমানুষ ও অপদার্থ মনে করে থাকে শুধু তাদের অর্থের গরমেই এটা হয়ে থাকে সেটা তারা যানেনা।

আর যেসব দুক্ষের কথা বল্লেন সেগুলো বা তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট-বাপু বাংলার সমাজের অনেকেরই পোহাতে হয়,জীবনে টিকে থাকা বা প্রতিষ্টিত হওয়ার জন্য।

২| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ২:৩৫

নূর আলম হিরণ বলেছেন: প্রতি ১০ জন ডাক্তারের মধ্যে আপনি একজন পাবেন রোগীর প্রতি আন্তরিক আর বাকি ৯ জনের চিন্তাভাবনা commercial। এরা রোগীদের কাস্টমার ব্যতীত আর কিছুই মনে করে না।

৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৩:২৫

ভুয়া মফিজ বলেছেন: পাশ করার পর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের আগে সারা পৃথিবীর নবীন ডাক্তারদের একটা শপথ নিতে হয় জানেন বোধহয়। হিপোক্রেটিক ওথ। আমাদের দেশের বেশীরভাগ ডাক্তারের কাছে এটা একটা ফর্মালিটি, যার কোন মুল্যই নাই। শপথ নেয়ার পরপরই এটা ভুলে যাওয়াই যেন নিয়ম!

সুতরাং এদের কসাই হওয়াটাই স্বাভাবিক।

৪| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ ভোর ৬:১৬

চেংকু প্যাঁক বলেছেন: +++++++++++++++
লেখা অসাধারণ হইছে
বাংগাল জাতি অকৃতজ্ঞ, এদের কাছে মেধাবি ডাক্তাররা মুল্য পাবে না - এটাই স্বাভাবিক। এইখানে মীরজাফররা লর্ড ক্লাইভদের পা চাটতে বেশি পছন্দ করে। তিতুমিরদের জন্য এই দেশ জেলখানা।

৫| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: চিকিৎসায় রোগী হিসেবে নিজে অধিকতর সিদ্ধান্ত নিন। এটা চর্চা করলে চিকিৎসকের উপরে আপনার রাগ ক্ষোভ অনেকটা কমবে বলেই আমার ধারণা।

১/ আপনি দেখুন আপনার চিকিৎসকের চেম্বারে ১৩-১৬ মিনিট সময় পেলেন কিনা? এটাই সারা পৃথিবীর সাধারণ গড়।

২/ আপনাকে চিকিৎসক যে চিকিৎসা দিচ্ছেন সেটার বিকল্প কী আছে সেটা জেনে নিন। চিকিৎসককে বিকল্প চিকিৎসা প্রেসক্রিপশনে লিখে দিতে অনুরোধ করুন।

৩/ আপনার রোগ নির্নিত হয়েছে কিনা জেনে নিন। চিকিৎসক কীভাবে আপনার রোগটি ঠিক নির্নয় করেছেন এবং এটা নিশ্চিত হয়েছেন সেটা জেনে নিন।

৪/ যেহেতু বেশিরভাগ বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলি কিছু চিকিৎসককে রোগী রেফার করার জন্য কমিশন দেয় তাই এমন জায়গা থেকে ইনভেস্টিগেশন করুন যেখানে কমিশন দেয়া হয়না। যেমন আইসিডিডি আর বি, আর্মি প্যাথলজি, বারডেম প্যাথলজি, বিএস এম এম ইউ, সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইবনে সিনা, হার্ট ফাউন্ডেশন, কিডনি ফাউন্ডেশন।

৫/ আপনাকে প্রেসক্রিপশনে দেয়া ওষুধের ব্রান্ড বদলে নিন। যেই ওষুধ দেয়া হয়েছে তার জেনেরিক নাম দেখে নিয়ে আপনার পছন্দমত কোম্পানির সেই একই জেনেরিকের ওষুধ কিনুন।

৬/ ডাক্তারের আচরণ পছন্দ না হলে ডাক্তার বদল করুন। নতুন ডাক্তারকে বলুন, আপনি কেন ডাক্তার বদলেছেন। যেই প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারকে দেখাচ্ছিলেন সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে অভিযোগ করুন।

৭/ নিজের অতৃপ্তি চেপে রাখবেন না। আপনার অপছন্দের কথা প্রথমেই চিকিৎসককে জানান।

৮/ আপনাকে দেয়া চিকিৎসার ঝুকি গুলো কী কী জেনে নিন।

চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার অধিকার আপনার আছে। আপনাকে আপনার চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য দিতে চিকিৎসক বাধ্য।

৬| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:১৬

খাঁজা বাবা বলেছেন: এই হতাশা থেকেই কি ডাক্তার রা ডাক্তার হওয়ার পর রোগী জবাই করা শুরু করে?

৭| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:০৫

টারজান০০০০৭ বলেছেন: নিজের ইয়েতে ইয়ে না রাখিয়া সবাই ডাক্তারদের ইয়েতে আঙ্গুল দেওয়া শুরু করিল কেনু ? সব মাছ ইয়ে খাইলেও , ঘাইরা মাছের নাম হইতেছে কেনু ?

ভাত পঁচিলে কাছে থাকা যায় , পোলাও পঁচিলে কাছেই যাওয়া যায় না !

৮| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:০৭

আরাফআহনাফ বলেছেন: দাদা ভাই, একদম সহমত হতে পারলাম না । অবশ্য সহমত হতেই হবে এমন কোন কথা নেই।
আমার নিচের বক্তব্য ঢালাওভাবে সব ডাক্তারদের জন্য নয় - মুস্টিমেয় কিন্ত প্রবল প্রতাপ ও প্রভাবশালী কিছু ডাক্তারের জন্যই এমনভাবে বলা।
২,৩,৬ নং মন্তব্য নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন।
আপনার লেখনীর শুরুতে সহমত হতে পারলাম শুধুমাত্র একটি লাইনে "এদের ব্যবহার খারাপ, এরা পাংকচুয়াল না, এরা বিনয়ী না, এরা দক্ষ না।! ! ! " ! ! !!!! যে ভাবেই বলেন না কেন - বাস্তবিকতা কিন্তু তাই-ই।

মানলাম অনেক অনেক কষ্ট করে ডাক্তার হলেন, টাকা কামাই করতে পারলেন না (মেয়েদের অবস্থা আরো শোচনীয়!!!) - খুবই হতাশার একটা চিত্র - তাই বলে কী স্বার্থে আঘাত আসলেই কিংবা কথায় কথায় রোগীদের জিম্মি করে ফেলবেন??! হাজারো জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন?? ডাক্তারদের সংগঠন কোন আইনের তোয়াক্কা করে বলে তো মনে হয়নি কখনো। ডা: সুরমান আলী গংরাই নস্ট করে দিচ্ছে ডাক্তারদের ভাবমূর্তি আর তাদের রক্ষা করে চলেছে এ সংগঠন। একটা সংগঠন হয় শুধু নিজেদের দেখভাল আর স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়, দেশ-জাতি-নাগরিক, সমাজ সবারই স্বার্থ সমান্তরালে দেখতে হয় - রক্ষা করতে হয়। ডাক্তার, আইনজীবি এমনসব পেশা হলো জনগনের আস্থার জায়গা, ভরসার জায়গা - এত তুচ্ছ স্বার্থে সে সব আস্থা আর ভরসার জায়গা নস্ট করে দিবেন না প্লিজ। জানেনতো, পাশের দেশেই আইন আছে - ডাক্তাররা যেন কোন ধরনের ধর্মঘটে না যায় আর এর রিট আবেদেনকারী কিন্তু ছিলেন একজন ডাক্তারই (এই এক আপনার সাথেই তার কত তফাৎ একবার ভেবে দেখুন ! ! )

সুন্দর, নির্মল আর বিশুদ্ধ থাকুক আমাদের সমাজ - প্রতিটি মানুষের বিবেকবান চিন্তাধারায়। ফুল হয়ে ফুটুক প্রতিটি জীবন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.