নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানা ও জানানোর জন্যই বেচে থাকা। জীবন তো শুধুই কিছু মুহূর্তের সমষ্টি।

জিএমফাহিম

জানা ও জানানোর জন্যই বেচে থাকা। জীবন তো শুধুই কিছু মুহূর্তের সমষ্টি।

জিএমফাহিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অব্যবস্থাপনা ও হয়রানি

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:২১


গতকাল ১৬ আশ্বিন বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের শেষ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা, সিরিজের শেষ খেলা দেখার জন্য মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গিয়েছিলাম আমি আর সাথে আমার দুই বন্ধু। খেলা অনেক উপভোগ করলাম। সৌভাগ্যবশত স্টেডিয়ামের দক্ষিণ অংশে বসার কারনে অনেকগুলো ছক্কা সরাসরি আমাদের সামনে পড়েছিল। মাশরাফির পড়ে যাওয়া ও সেটা নিয়ে সবার দুশ্চিন্তায় গ্যালারি নিরব হয়ে যাওয়া, সেই দৌড়িয়ে আশা দর্শককে আপন করে নেয়া; বাংলাদেশের ১০০তম জয় সব কিছুর সাক্ষী হলাম আমি সরাসরি একেবারে চাক্ষুসভাবে। ভেবেই ভাল লাগছে। বিজয়ী দলের দর্শক হওয়ায় স্টেডিয়ামের যে সমস্যাগুলো ছিল সেটার ঊর্ধ্বে চলে যায় আনন্দের মুহূর্তগুলো। তার মানে এই নয় যে সমস্যাগুলো দৃষ্টিগোচর করা একজন সচেতন নাগরিকের উচিত। আমি ব্লগে সে বিষয়গুলোই তুলে ধরবো। আর কারো কাছে যদি ধারনা থাকে কার কাছে অভিযোগ করলে সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব সেটা একটু কষ্ট করে কমেন্টে জানাবেন। সমস্যাটা ব্যাক্তিগত হলে আমার ব্লগ লেখার প্রয়োজনীয়তা ছিল না, কিন্তু আমি চাচ্ছি না বিদেশি দর্শকরা বাংলাদেশের মাটিতে খেলা দেখতে আসলে এমন অব্যবস্থাপনা দেখুক, আর আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হউক।


যে যে সমস্যাগুলো আমার চোখে পড়েছে সেগুলো আমি চেষ্টা করবো আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে সমন্বয় করে নিচে তুলে ধরার।

১। নিয়ম শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে স্টেডিয়াম কতৃপক্ষের দায়িত্বশীলতার অভাবঃ

টিকেট নিয়ে মাঠে প্রবেশ করার জন্য লাইন ধরতে হয়। সেজন্য প্রতিটি গেইটে দেয়া আছে ইস্পাতের ব্যারিকেট যাতে কেউ অনৈতিকভাবে প্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু দেখলাম অনেকের পুলিশের সামনে দিয়েই ব্যারিকেট টপকে ঢুকে পড়ছে। কেউ কিছু বলছে না, যেন খুবই স্বাভাবিক। আমরা অনেকখানি হেটে ব্যারিকেটের শেষ মাথা থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলা শুরু করার পর দেখলাম আমাদের সামনে দিয়েই প্রায় ২০-৩০ জন ঢুকে পড়েছিল এইভাবে। "বাঙালি মানেই নিয়মের তোয়াক্কা করে না" এটা বলে পাড় পেয়ে গেলেও চিন্তা করেন আমার জায়গায় একজন বিদেশি দর্শকের সামনে এই ঘটনা ঘটলে কেমন দেখাতো

২। নির্দেশনাদানে স্টেডিয়াম কতৃপক্ষের সহযোগিতার অভাবঃ

টিকেট কেটে স্টেডিয়ামে ঢুকার পরই বুঝতে পারলাম না আসলে আমাদের প্রবেশ করার গেইট কোনদিকে। সামনে কোথাও কোন দিক নির্দেশনাসূচক বোর্ডও চোখে পড়ছে না। পুলিশকে জিগ্যেস করায় বলে "এটা আমার কাজ না। গেটে জিগ্যেস করেন" অথচ গেটে যখন টিকেট কাটা হল তখনই দায়িত্বশীল কতৃপক্ষের উচিত ছিল আমাদের জানিয়ে যেটা কোথায় যেতে হবে। তবে আমি এখানে শতভাগ নেতিবাচক কথা বলবো না, কারন স্টেডিয়াম প্রবেশ করার পর গ্যালারির উপরিভাগে আমরা পুলিশের টিকেট চেক করে ঢুকতে দেয়া ও বলে দেয়া যে এই পাশে আপনার বসার জায়গা এটা দেখতে পেয়েছিলাম। তবে যখন হাজার হাজার মানুষ প্রবেশ করে তখন এইসব বড়ছোট অসহযোগিতা অনেক বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। আমাদের অতিরিক্ত অনেকখালি হাটা পড়েছিল, এটাও বিশৃঙ্খলা ও অসহযোগিতারই এক ফলাফলমাত্র।

৩। অপরিষ্কার, নুংরা পরিবেশঃ

এর আগে আমি স্টেডিয়ামে এসেছিলাম ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী খেলার সময়। যদিও ৪ বছর চলে গিয়েছে তবে স্টেডিয়ামের ব্যবস্থাপনা দেখলে মনে হচ্ছিল এখানে পরিস্কার করার লোকের বড়ই অভাব। ফ্লোরে শ্যাওড়া আছে, তাও কাচা। কোথাও বোতল, কোথাও পুরানো প্যাকেট, চারিরিকে স্যাঁতস্যাঁতে দুর্গন্ধ। খাওয়ার পর ময়লা ফালানোর জন্য ডাস্টবিনও দেখছি না চোখের সামনে।
বসায় জায়গার পাশে কোথাও আগাছাও জন্মে গিয়েছে। টয়লেটের অবস্থা তো যাচ্ছে তাই। অনেকগুলো বেসিনে কল নেই, শৌচাগারে আলোর ব্যবস্থা নেই, প্রসাবখানাগুলোও নুংরা যাচ্ছেতাই অবস্থা।

৪। খাবার ব্যবস্থাঃ

স্টেডিয়ামের ভিতর কিছু আইডিকার্ডধারি লোকই চিপস, কফি বিক্রি করছে। আর তাদের কাছ থেকে পাওয়া জিনিসের দাম চড়া। চড়া বলতে বাজারমূল্য থেকে প্রায় ৩ গুন। শুধু যে দাম বেশি তাও না, এরা দাম হাকছে মনমত। খেলার প্রথমঅর্ধে এক কাপ কফির দাম ছিল ৩০ টাকা। দ্বিতীয় অর্ধের আগে সেই একই কফি বিক্রি করছিল ২০ টাকা করে। ৩০ টাকার পানির দাম ২০০ টাকা। দামের কথা জিগ্যেস করায় বলে "সারাদিন জিগাইতে থাকেন লাভ নাই, খেলা শেষ হউন পর্যন্ত এমনই চলবো। কিনবেন কিনা কন"। মানুষ বাধ্য হয়ে কিনছেও। কারন বাইরের খাবার আনার অনুমুতি নেই। আমি জানি না MRP এর ঊর্ধ্বে বিক্রি করা কতটা আইনসম্মত। আর সেটাও হচ্ছে একেবারে এমন জায়গায় যেখানে নিয়ম মেনে চলার কথা সবচেয়ে বেশি।

খাবারের দিকেও আমার ব্যাক্তিগত কিছু সমস্যা ছিল। বেশকিছু কারনে মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি অনেকদিন। কিন্তু প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে খাবারের সামনে গিয়ে দেখি সব কিছুই নন-ভেজ খাবার। কোন ভেজ খাবারের নাম গন্ধও নেই। ব্যাপারটা হয়তো অধিকাংশের কাছে কোন ব্যাপার নাও না লাগতে না। কিন্তু এই কারনে আমার প্রায় পুরো খেলা জুড়ে শুধু ঝালমুড়ি খেয়ে থাকতে হয়েছে। পানিও কিনার উপায় ছিল না। ছোটবেলায় পড়েছিলাম চাহিদা বাড়বে যোগান বাড়ে, দাম কমে। এখানে যোগাড় বেশি করে লাভ করার চিন্তা কম, মানুষকে ঠকিয়ে লাভ করার চিন্তা বেশি দেখা যাচ্ছিল।


৫। নিরাপত্তার ওজুহাতে চরম হয়রানিঃ

খেলা শেষ। আমার ও আমার দুই বন্ধুর অনেক ইচ্ছা ছিল পুরস্কারবিতরণী অনুষ্ঠান দেখবো। এর আগেরবার যখন আমি এসেছিলাম তখন বাংলাদেশের হারা নিশ্চিত বুঝে আগে চলে এসেছিলাম তাই জানতাম না যে সবকিছু হয় "গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড" অংশের দিকে মুখ করে। এটা দেখে খুবই খারাপ লাগছিল। মনকে সায় দিলাম, যারা টাকা বেশি দিয়ে দেখছে তাদের তো সুবিধা বেশি দিবে এটাই তো স্বাভাবিক। যাক এরপরও কমপক্ষে দূর থেকে তো দেখা যাচ্ছে, আর বড় জায়েন্ট স্কিন তো আছেই। ঠিক তখনই পুলিশ আসলো লাঠি নিয়ে, আমাদের দেখতে না দিয়েই বের হয়ে যেতে বললো। কয়েক প্রতিবাদ করায় ঝামেলাও হচ্ছিল পুলিশের সাথে। আমরা আর সেইদিকে আগাইনি। তবে পুরো ব্যাপারটার কারন কি হতে পারে বুঝার চেষ্টা করছিলাম। কোন যথাযথ কারন না পেয়ে স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে আসলাম।


৬। নিরাপত্তা নিয়ে আরও কিছু কথাঃ

খেলায় দুই একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থাকেই। গতকাল গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড থেকে দৌরে মাশরাফিকে জরিতে ধরতে আসা তেমনই একটা পরিস্থিতি ছিল। এমন পরিস্থিতি পৃথিবীর নানা দেশে নানা খেলায় হয়েছে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা যে ধরনের কারনে হয়েছে বাংলাদেশ তার থেকে কিছুটা হলেও ভিন্ন। যেখানে সাড়া গ্যালারি থাকে চিরিয়াখানার খাঁচার মত ঢাকা, গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড থাকে মুক্ত। কেউ আফ দিলেই মাঠে চলে আসবে। যেখানে অন্য অধিকাংশ দেশের গ্যালারি কোন অংশই চিড়িয়াখানার মত থাকে না, তাদের নিরাপত্তা ঠিক করার জন্য নিরাপত্তাকর্মীই যথেষ্ট। সেসব জায়গায় নিরাপত্তাকর্মীরা সর্বক্ষণ নজরদারি করে দর্শকদের দিকে, গ্যালারির সীমানায় থাকা দায়িত্বরতরা মাঠের টিকে তাকিয়েও দেখে না। আর যেটা দেখলাম, পুলিশরা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে খেলা দেখছিল, কেউ গ্যালারির খালি সিটে বসে আড্ডা দিচ্ছিল; যেন তারা নিরাপত্তাকর্মী না বরং দর্শক।

যদিই বাংলাদেশের অসাধারন জয় দিয়ে হাসিমুখেই স্টেডিয়াম থেকে বের হয়েছিলাম, তবে সমস্যাগুলোর কথা না বলে শান্তি পাচ্ছিলাম না। কোন উদ্যোগ নিয়ে যদি সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব হয় তাহলে জানাবেন। আর ধন্যবাদ কষ্ট করে পুরো ব্লগটি পড়ার জন্য।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
স্টেডিয়াম অভিজ্ঞতায় নিরাপত্তা নিয়ে যেই কথা গুলো বললেন - তা খুব একটা সন্তুষ্টজনক। নিয়ম ভঙ্গ করছে - কিন্তু সেটা আঁটকানোড় কেউ নেই; গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড উন্মুক্ত - সেখানে বেশি টাকা দিয়ে যায় বলে নিরাপত্তাও ঝিম ধরানো? এটা কেমন কথা? ওখানে কোন সন্ত্রাসী বেশি টাকা দিয়ে টিকেট কিনে কি বসতে পারে না। ঐ দর্শক কালকে গ্র্যাণ্ড স্ট্যান্ড থেকে দৌড় লাগালো - নিরাপত্তাকর্মী তখন ঘুমে মগ্ন ছিল? বাহ! এরকম ভাবে চললে কীভাবে হবে?

এত এত নিরাপত্তার কথা বলে - কিন্তু খেলার আসল মাঠটাই তো দেখি অতটা নিরাপদ না। হয়তো অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। কিন্তু ঘটতে কতক্ষণ?

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:১০

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: খুব জরুরি কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন।

ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:৩০

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: আশা করি কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারগুলোর দিকে নজর দিবেন। নিরাপত্তার ব্যাপারে ৬ নম্বর পয়েন্টের কথাগুলো সরকারের অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করার উচিৎ।

ধন্যবাদ।

৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৩৫

সমুদ্রর মুদ্রাদোষ বলেছেন: কখনো মাঠে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই ।
ইচ্ছা ছিলো মাঠে যাবো ।

কথা শুনে তো ইচ্ছেটাই চলে গেল :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.