নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I have a dream...

নিরন্তর সত্যের উপর পথ চলি, দুমড়ে মুচড়ে দেই সব বাধা!

আব্দুল হালিম মিয়া

আব্দুল হালিম মিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

সোনামুদ্দির দেশ ভাবনা--২

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০৫

কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না সোনামুদ্দিকে। এদিক, সেদিক চারিদিকেই দেখা হলো, নাহ কোথাও নেই। গেল কোথায়! ভাবতে ভাবতে কাচারী ঘরের চিলে কোঠার দিকে এগোতেই দেখি আকিজ বিড়ির ধোয়া বের হচ্ছে জানালা দিয়ে। সোনামুদ্দির মন খারাপ থাকলে বাড়ীর এই নিরিবিলি ঘরটাতেই আশ্রয় নেয়। দু চার প্যাক বিড়ি শেষ করে তারপর ও ঘর থেকে বের হয়।

সোনামুদ্দি ঘর থেকে বের হয়ে আসো, কথা আছে।

গলাটা একটু চড়া করতেই সোনামুদ্দি বের হয়ে এলো। হলুদ কটাসে দাত গুলো বের করে একটু মলিন হাসি দিতে চেষ্টা করলেও টেনশন ভাবটা কাটাতে পারলো না। লম্বা করে ঘন ঘন কয়েকটা টান দিয়ে বিড়ির মুথাটা বাইরে ছুড়ে মারলো।

কন ভাইজান, এত চিল্লাচ্ছেন ক্যান এই ভর দুপুরে। খাবার টাবারতো সব আপনার ডাইনিং টেবিলে দিয়াই আইছি।

না, একটা কাজ ছিল। তবে তার আগে তুমি বলো, তোমার মন খারাপ কেন? আর গতকাল সারাদিন তুমি কোথায় লুকিয়ে ছিলে?
ভাইজান, গতকাল ঢাকার গুলশান ক্লাবে একটা সেমিনার ছিল বৈকালে। আমারে হঠাৎ করেই রাত পুয়ানোর আগেই ওরা নিয়া গেল। কইলো, দ্যাশের ট্রাফিক ব্যবস্হা নিয়া কি জানি একটা মিটিং হইবো। আমার দ্যাশ ভাবনা নিয়া আপনে গত সপ্তায় কি সব ছাপাইছেন দেইখা ওরা আমারে নিতে আসলো। বললো, দ্যাশের যানজট দুর করতে আমি যে সব কতা আপনারে কইছিলাম, সেইগুলাই ঢাকায় যাইয়া একটা মিটিং এ কইতে হবে। মান্যিগন্যি লোকেরা নাকি হুনতে চাইছে।

বাহ সে তো খুব ভাল কথা। তা তুমি আমাদের বলে গেলে না কেন?
আরে ধুর ভাইজান যে কি কন! ওরা আমারে টাইম দিছে নাকি। কালো কাপড় পরা, মাথায় কালা কালা পট্টি বাদা কয়জন আমারে টানা হেচরা কইরা নিয়া গেল, কইলো, দৌলতদিয়া ফেরী পার হইতে অনেক সময় লাগবো, বিকাল পাচটার মইদ্দে কিলাবে পৌছাইতে হইবে।
আচ্ছা আচ্ছা তারপর কি হলো বলো। আমি কিছুটা উদ্বিগ্নতা দেখাই।

সোনামুদ্দি বুঝতে পারে। মুখ টিপে ফক করে একটা হাসি দেয়।
আমি যখন কিলাবে যাই, পথে অনেক ক্ষিদ্যা লাগছিল। ওরা আরিচা পার হয়া মানিকগন্জের কাছে মুন্নু ম্যাডিকালের ক্যান্টিনে পেট ভইরা খাওয়াইলো। তারপর ঢাকার মিরপুর থাইক্যা এই দ্যাহেন, এই পান্জাবি আর নুতন তপনডা কিইনা দিল। কি যেন একটা গন্দ ওয়ালা আতর মাইরা দিল গতরের মইদ্দে, খুব বাশনা কইতেছিল।

তারপর? আমার তর যেন আর সইছে না।
শ্যাষে আমারে নিয়া খুব সুন্দর একখান সাজানো ঘরের মন্চের উপর বসাইলো। সামনে ম্যালা মানুষ বসা ছিল, টেলিভিশনের ক্যামেরা নিয়া অনেক সাংবাদিকো ছিল। তয় আমি একখান শর্ত দিছিলাম।
কি শর্ত?

কইছিলাম, এইখানে আমার সাথে পুলিশের যে সাহেব রাস্তার যান জট ঠেহায় তারও কতা কইতে হইবে, আসতে হবে।
তখন অনুষ্ঠান শুরু হইতে আর ঘন্টা খানেক বাহি ছিল। ওরা অনেক বুঝাইলো, রাস্তায় যানজট, অনেক সময় লাগবে, আমার একই কথা, উনি না আসলে আমি কোন কতা কবো না।
ফোনে কি যেন কতা হইলো, ওগো মইদ্দে। কইলো, ঠিক আছে আধা ঘন্টার মইদ্দে আসতেছে।
ওমা ঠিক তাই, পুলিশ সাহেব আদ ঘন্টার মইদ্দেই আইসা গেল।

বাহ, তারপর, কি হলো?
আমার হাতে মাইক দিল। আমি কতা কওয়ার আগে, মাইক নিয়া পুলিশ সাহেবরে জিগাস করলাম, এইযে ভাইজান, সেলাম। আপনে কত দুর থাইকা আইলেন। উনারা কইলো আপনে অনেক দুরে আছেন, আসতে দু তিন ঘন্টা লাইগা যাবে। তা আপনে কেমনে আধা ঘন্টার মইদ্দে চইলা আইলেন?
পুলিশ ভাই কইলেন, এইটা নাকি জাতির একটা জনগুরুত্বপুর্ন মিটিং। উপরের হুকুম, তাই রাস্তার যানজট এড়াইতে রাস্তার ডান পাশ দিয়া মানে উল্টা দিক দিয়া হুইসেল বাজাইয়া চইলা আইছেন। বাম দিক দিয়া আইলে নাকি তার চার পাচ ঘন্টা লাইগা যাইতো। গাড়ির এমন ভীড় যে কোন ফাক দিয়া রিকসাও যাইতে পারতেছে না।
আমি কইলাম, তাইলে আপনে আইনের রক্ষক হইয়া নিজেই আইন ভাইংগা এই মিটিং এ আইছেন?
তিনি কইলেন, না, পুলিশের কাজ নাকি জনগুরুত্বপুর্ন, উনারা আইন মানতে বাধ্য করেন জনগনরে, তাই উনারা না মানলে কুনো সমস্যা নাই।

বলো কি? আমি যেন কিছুটা চমকে উঠলাম। তারপর তুমি কি করলা?
আমার রাগ মাথায় উইঠা গেছিল। খালি কইলাম, পুলিশ ভাই, আপনি নিজেই যদি আইন না মানেন, তাইলে অন্যরা, মানে যাগো মানতে কন, তারা কেন মানবে? আপনার মিটিং ফিটিং এ আমি নাই। আমি গেলাম। যে নিজেই আইন মানে না, তার কাছে আমি হোনামুদ্দি আইনের কোন কতা হুনতে রাজি না। আমি মানুষ গরীব হইতে পারি, কতার দাম আছে। এইসব কয়া আমি লুংগিডা কোমরের কাছে টাইনা দিলাম দৌড়। এক দৌড়ে গাবতলি। সেখান থাইকা বাসে সোজা আরিচা ঘাট!

একটানা কথাগুলো বলে সোনামুদ্দি কিছুটা হাপাতে লাগলো। বললো, ভাইজান, বাদ দেন এসব কতা, টেলিভিশন ডা ছারেন, নাটক দেহি, মন ভাল হইয়া যাইবো।

টিভির রিমোর্টে অন বাটন টিপতেই বাংলা চ্যানেল 'দিনরাত ৪৮ ঘন্টা'র পর্দায় ভেসে উঠলো, এক মায়ের আহাজারি। স্কুলের ছাত্রদের রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভের দৃশ্য। পুলিশের উল্টো দিক দিয়ে গাড়ী চালানোয় এক করুন দুর্ঘটনায় যুবক নিহত। ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিচার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি!

সোনামুদ্দি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে কি যেন খুজতে লাগলো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩১

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: সবাই যদি সোনামুদ্দির মতো দেশটা নিয়ে ভাবতো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.