নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠঃ আমাদের স্বাস্থ্যসেবা

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:২৯

আমার এক ছোটভাই সম্প্রতি একটি ভয়াবহ লেখা লিখেছে। লেখার শিরোনাম-
‘যে কারনে আমি ডাক্তারের কাছে যেতে চাইনা’

সেই ছোটভাইটি আমার কাছের মানুষ, এদিকে আমি পেশায় চিকিৎসক। সে যদি ঢালাওভাবে চিকিৎসকদের থেকে দূরে থাকে তাহলে আমার জন্য ব্যাপারটা অত্যন্ত বেদনার হবে। আমি লেখার ভেতরে ঢুকলাম, সেখানে ‘যেসব কারনে’ তার মতো সম্ভাবনাময় তরুণ পদার্থবিজ্ঞানী ডাক্তারবিমুখ হয়ে পড়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণের চেষ্টা করলাম। আমার ধারণা, ওর বক্তব্য ও আমার বিশ্লেষণ কারো কোন কাজে আসবে না। তবুও আমাদের দৃষ্টিতে যা আমরা দেখেছি তা নিয়ে কথা বলতেই হবে, অন্যথায় সত্য জানা যাবে না। আর সত্য না জানলে আমরা চারপাশের জগতের কিছুই বদলাতে পারব না। তো দেখা যাক সে কী লিখেছে-
‘শরীরে রোগ পুষে রাখার পরও আমি সাধারণত ডাক্তারের কাছে যেতে চাইনা। প্রথমতঃ যেসব ডাক্তারের কাছে যাই তারা পৃথিবীর অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। এবং ব্যস্ততার চেয়ে রোগী রোগ বর্ননা শেষ করবার আগেই ডাক্তার ওষুধ লিখতে শুরু করেন। ফলে সেই ওষুধ কতটা কার্যকরী তা প্রশ্ন থেকে যায়’।

ওর প্রথম লাইনেই পরের লাইনগুলোর উত্তর দেয়া আছে। ও যদি এমন চিকিৎসকের কাছে যায় যিনি দিনে ৫০-১০০ রোগী দেখেন, অত্যন্ত সঙ্গতভাবেই তিনি রোগীপ্রতি বেশি সময় দিতে পারবেন না। কারন সবার জন্যই দিন ২৪ ঘণ্টার, তিনি ট্রাম্প, ডাক্তার কিংবা মুচি- যাই হন না কেন। এমন ব্যস্ত চিকিৎসকদের মাঝে ‘প্রধান উপসর্গ’ শুনেই রোগ ধরার প্রবণতা দেখা যায়, এবং তারা তদানুযায়ী চিকিৎসা দেন। ফলে চিকিৎসার মান স্বাভাবিক থাকে না। আমার সেই বিজ্ঞানী ভাইটি তো বটেই, যেকোন সচেতন রোগীর পক্ষে এই ‘গুরুত্বহীনতা’ মেনে নেয়া সম্ভব নয়।

তাহলে সমাধান কী?

আপাত দৃষ্টিতে চিকিৎসক নির্বাচনে জোর দেয়া যেতে পারে। সম-যোগ্যতার সব চিকিৎসকের কাছে রোগীর ভিড় এক রকম থাকে না। যিনি অল্প রোগী দেখেন, তার কাছে গেলে সময় বেশি পাওয়া যাবে। যেকোনো রোগের চিকিৎসায় শুরুতে জেনারেল প্রাকটিশনারের কাছে যাওয়া চিকিৎসাবিদ্যায় একটি স্বাভাবিক নিয়ম, তিনি রোগ ধরতে না পারলে সিনিয়রের কাছে রেফার করবেন। বাংলাদেশে এই নিয়মের চূড়ান্ত ব্যত্যয় দেখা যায়, অধিকাংশ রোগী সরাসরি অধ্যাপকের কাছে যেতে চান, এবং অধিকাংশ অধ্যাপক সাহেবরাও হাসিমুখে চিকিৎসা দেন, যেটা কম ব্যস্ত জুনিয়র চিকিৎসক বেশি সময় ও যত্ন সহকারে দিতে পারতেন। এই সমস্যার সমাধানে রোগী ও চিকিৎসক উভয়েরই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন, সঙ্গে রোগী দেখার বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তিসঙ্গত নীতিমালাও প্রয়োজন।

এরপর সে আরও লিখেছে-
‘দ্বিতীয়তঃ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে কোন যোগসাজশ আছে কিনা জানিনা, নানাবিধ টেস্টের একটা ফর্দ ধরিয়ে দেন এবং সুপারিশ করেন অমুক ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে যেন টেস্ট গুলো করানো হয়। স্বভাবতই একই মানের একই টেস্ট এর মূল্য অত্যন্ত বেশি হয় ওই ডাক্তারের সুপারিশকৃত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’।

এই অভিযোগটি আমার কাছেও সত্য বলে মনে হত, বিশেষত নটর ডেম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে। পরবর্তীতে ডাক্তারি পড়তে এসে দেখেছি, অধিকাংশ চিকিৎসকই এই যোগসাজশ পছন্দ করেন না। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ডেটা নেই যে শতকরা কতজন চিকিৎসক এই বাণিজ্যের ঊর্ধ্বে, যদি দুর্বৃত্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ১০-১৫ শতাংশও হয় তাহলে তাদের জন্য বৃহত্তর চিকিৎসক সমাজ ও চিকিৎসা পেশাকে দোষারোপ করা সমীচীন হবে না। প্রসঙ্গত একটি উদাহরণ দেয়া যায়। আমাদের সমাজে ধর্ম ব্যবসায়ী আছেন বটে, কিন্তু অধিকাংশ মৌলানা ধর্মভীরু ও দরিদ্র মানুষ। আমরা ধর্ম ব্যবসার বিরদ্ধে কথা বলার সময় ঢালাওভাবে সব মৌলানাদের দোষ দিতে পারি না।

এবার লেখার পরবর্তী প্রসঙ্গে আসা যাক-
‘তৃতীয়তঃ বেশীরভাগ ডাক্তারের সম্মানী ফি অত্যন্ত বেশি। দুই থেকে পাচ মিনিট সময়ের কারনে তারা যে সম্মানী নিয়ে থাকেন তা আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার তুলনায় অযৌক্তিক। অন্যদিকে তারা যে টেস্ট গুলো করাতে দেন তার রিপোর্ট দেখার জন্য মূল সম্মানীর অর্ধেক ফী নিয়ে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে টেস্ট গুলো যেহেতু তিনি দিয়েছেন এর রিপোর্ট দেখে চিকিৎসাপত্র প্রদানের জন্য বাড়তি টাকা নেওয়া কতটা যৌক্তিক? রিপোর্ট তিনি না দেখলে দেখবে কে?
চতুর্থতঃ রোগ ভাল না হলে এক সপ্তাহ পর পুনর্মূল্যায়নের জন্য মূল সম্মানীর অর্ধেক এবং দুই সপ্তাহ পর গেলে আবার নতুন রোগী হিসেবে গন্য হবে। ডাক্তারভেদে অবশ্য কিছুটা এদিক ওদিক হয়’।


ওর লেখার এই অংশটি পড়ে আমি কিছুক্ষণ হাসলাম। এটা সম্ভবত রোগীর জায়গা থেকে চিকিৎসকের দিকে তোলা সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর আমি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভাবতে অনুরোধ করব। পৃথিবীতে একটি পেশাও নেই যাতে ‘মার্জিন’ বা ‘লাভ’ নেই, আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো ও সামাজিক প্রেক্ষাপট ঠিক করে কোন পেশার মার্জিন কেমন হবে। যেমন আমরা রাস্তার পাশে চা খাই ৩-৫ টাকায়, অথচ সামান্য উন্নতমানের চা রেস্তোরাঁয় খাই ২০-৫০ টাকায়। একইভাবে আমাদের দেশের ডাক্তারদের ভিজিট যদি মধ্যম উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করা হয় (বেশি উন্নত দেশের দিকে গেলাম না), তাহলে সেটা অবশ্যই হাতের নাগালে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গরিব লোকের কী হবে? যার কোটি টাকা আছে তিনি থাইল্যান্ড যাবেন, যার লাখ টাকা আছে তিনি ভারত কিংবা দেশের পাঁচ তারকা হাসপাতালে যাবেন, যার হাজার টাকা আছে তিনি বিশেষজ্ঞের চেম্বারে যাবেন। কিন্তু আমার দেশের গরিব মানুষের সে সামর্থ্য তার কোথায়?

এই প্রসঙ্গে মার্কিন স্বাস্থ্যব্যবস্থার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, সেখানে সরকারি হাসপাতাল বলে কিছু নেই, সবই বেসরকারি। কাজেই গরিব লোকের যাবার জায়গা নেই। অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। ওবামা সাহেব এদের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন, যেটাকে সবাই ‘ওবামা-কেয়ার’ বলে ডাকে। সেই উদ্যোগ খুব বেশি সাফল্যের দেখা পায়নি। আমাদের জন্য অতি আনন্দের কথা, বাংলাদেশ তার জন্মলগ্ন থেকেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা আমেরিকাসহ অনেক দেশের জন্যই অকল্পনীয়। আমি একজন হতদরিদ্র চিকিৎসক হিসেবে আমার পরিবারের সদস্যদের সরকারী হাসপাতালেই চিকিৎসা করাই এবং নিজেও আমৃত্যু সেই সেবা গ্রহণ করার আগ্রহ রাখি। যতক্ষণ আমি সুলভ সেবাকে আপন মনে না করব, কেবল প্রাইভেট প্র্যাকটিসের বিরুদ্ধে কথা বলব, ততক্ষণ আমরা ৫-৭% চিকিৎসাসেবা নিয়েই পড়ে থাকব। অথচ একটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ৯৩-৯৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠাননির্ভর, আগামীতে সেটা আরও বাড়বে। সেই বৃহত্তর সেবাদানের প্রক্রিয়া কীভাবে আরও সুলভ ও ফলপ্রসূ করা যায় আমাদের সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

একেবারে শেষে সে লিখেছে-
‘পুনশ্চঃ বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরোটাই টাকার খেলা। টাকা খরচ করেও উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়া সোনার হরিনের মত। আন্তরিকতা ও প্রফেশনালিজমের অভাবের কারনে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা জনপ্রিয় হচ্ছেনা। মানুষ অর্থের বিনিময়ে সেবা চায়, আর সেই সেবা যখন অরাজকতার নামান্তর তখন সেইখানে কোন রুচি থাকেনা’।

এই অংশে সে সম্ভবত না বুঝে অনেক বড় একটা সত্য কথা বলে ফেলেছে। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি পদে যেভাবে টাকার খেলা ছড়িয়ে আছে তা অত্যন্ত অমানবিক। দুই টাকা উৎপাদন ব্যয়ের ওষুধের বাজারমূল্য বিশ টাকা, কেবল ওষুধই নয় স্বাস্থ্যসেবার প্রতিটি উপকরণে যে বিশাল বাণিজ্য চলছে তা অচিন্তনীয়। এই মুনাফাখোর চক্রে চিকিৎসকের অংশগ্রহণ খুবই কম, আমাদের সমগ্র রাজার্থনৈতিক ব্যবস্থা এতে সম্পৃক্ত। দেশে রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের কল্যাণ নিশ্চিত করে কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার পথে এরা প্রধান অন্তরায়। এদের কারনে স্বাস্থ্যব্যয় বাড়ছে, প্রাপ্য সুবিধাদি যথাস্থানে যথাসময়ে যথাযথভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও আমাদের স্বাস্থ্যখাত এগিয়ে যাচ্ছে। কীভাবে- তার একটা দৃষ্টান্ত দেই।

গত জানুয়ারিতে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্লাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত দেড়শ জন জনস্বাস্থ্য শিক্ষার্থী ক্লাস করছিলেন। প্রফেসর রবার্ট এই ক্লাসটি দুই যুগ ধরে পরিচালনা করছেন। তিনি স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন দেশের সাফল্য তুলে ধরছিলেন। হঠাৎ তিনি প্রশ্ন করে বসলেন, বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কত?

ক্লাসের একেবারে পেছন থেকে একজন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী উত্তর দিল। প্রফেসর রবার্ট বললেন, এই হার ভারতের চেয়ে অনেক কম, যা প্রমাণ করে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে কম খরচে দ্রুত উন্নতি করার সামর্থ্য রাখে।

আমার সেই ভাইটিকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের এখনও অনেক কিছু করার আছে। কেবল গুটিকয়েক অসাধু কিংবা ব্যস্ত চিকিৎসক আমাদের স্বাস্থ্যখাতের পুরো চিত্র নয়, তারা সামান্য অংশমাত্র। আমাদের উচিৎ হবে বৃহত্তর অংশটিকে আরও গতিশীল ও সাফল্যমণ্ডিত করা। সেই পদযাত্রায় চিকিৎসকের যেমন কর্তব্য আছে, তেমনি সচেতন নাগরিক হিসেবে ভুক্তভোগী হাজারো মানুষের কর্তব্যও একেবারে কম নয়। সেই কর্তব্য পালনের প্রথম ধাপ সমস্যাটিকে অনুধাবন ও আত্মস্থ করা।

আমরা যদি জেগে উঠি, তবেই ভোর আসবে, আলো ফুটবে।
সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আপাতত এখানেই শেষ করছি।


মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:৪১

মো তাজুল ইসলাম বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ অসাধারন লেখাটির জন্য।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:২২

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন: আপনাকেও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:৫৫

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আসলে ভালো মন্দ মিলিয়েই মানুষ। তবে এ ক্ষেত্রে একটু এথিক্স থাকতে হবে যে কোন অপ্রয়োজনী টেস্ট করানো হচ্ছে কিনা কিংবা রিপোর্টটা ফ্রি দেখা যায় কিনা। আমরা আমরাই তো...

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:১৭

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন: অবশ্যই এথিক্সের ব্যাপারটা অনুসরণ করা উচিৎ। এ বিষয়ে জনমুখী ও সেবাধর্মী নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৩:১৮

মানবী বলেছেন: আমেরিকায় সুলভে চিকিৎসার কম্যুনিটি হসপিটাল আছে, দীর্ঘ লাইনে অ্পেক্ষা করতে হয় বলে ব্যস্ত জীবনে অভ্যস্ত জনগোষ্ঠির এক বড় অংশ সেখানে যেতে আগ্রহবোধ করেনা।

বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতালএ প্রায় বিনা খরচে এমনকি কিছু প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কম খরচে চিকিৎসা সম্ভব তবে আমরা হাসপাতালে ৫ স্টার হোটেলের আপ্যায়ন খোঁজার চেষ্টায় সেসব এড়িয়ে চলি।
প্রতিটি রোগী স্পেশাল, তাঁদের কষ্ট গুরুত্বপূর্ণ - এসব হাসপাতালে যখন হাজার হাজার রুগী আসে তখন সেই হাজার জনের প্রতি জনও স্পেশাল এই বিষয়টি আর সকলের মনে রাখা জরুরী।

বিশ্বের আর সব দেশের মতো আমাদের দেশেও চিকিৎসক নামের কিছু অর্থলোভী কুলাঙ্গার আছে তাদের দিয়ে পুরো চিকিৎসক সমাজকে ঢালাও ভাবে বিচার করাটা অন্যায়।

বেশীরভাগ ডাক্তারের সম্মানী ফি অত্যন্ত বেশি। দুই থেকে পাচ মিনিট সময়ের কারনে তারা যে সম্মানী নিয়ে থাকেন তা আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার তুলনায় অযৌক্তিক। অন্যদিকে তারা যে টেস্ট গুলো করাতে দেন তার রিপোর্ট দেখার জন্য মূল সম্মানীর অর্ধেক ফী নিয়ে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে টেস্ট গুলো যেহেতু তিনি দিয়েছেন এর রিপোর্ট দেখে চিকিৎসাপত্র প্রদানের জন্য বাড়তি টাকা নেওয়া কতটা যৌক্তিক? রিপোর্ট তিনি না দেখলে দেখবে কে?

ওর লেখার এই অংশটি পড়ে আমি কিছুক্ষণ হাসলাম। এটা সম্ভবত রোগীর জায়গা থেকে চিকিৎসকের দিকে তোলা সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর আমি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভাবতে অনুরোধ করব। পৃথিবীতে একটি পেশাও নেই যাতে ‘মার্জিন’ বা ‘লাভ’ নেই, আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো ও সামাজিক প্রেক্ষাপট ঠিক করে কোন পেশার মার্জিন কেমন হবে।

- ভুল। পোস্টের বিভিন্ন স্থানে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যবস্থার তুলনা এসেছে তাই তাদের উদাহরনটাই টেনে বলি। যুক্তরাষ্ট্রে রিপোর্ট দেখার জন্য রুগীকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়না। যেহেতু সব কিছুই কম্পিউটারাইজড, নির্ধারিত টেস্টের রিপোর্ট চিকিৎসকের কাছে পৌঁছে যায়। রুটিন টেস্ট এবং স্বাভাবিক রেজাল্ট হলে রিপোর্ট রুগীর কাছে মেইলে পৌঁছে যায়। বিশেষ টেস্ট হলে চিকিৎসক বা নার্স ফোন করে স্বাভাবিক রিপোর্টের সংবাদ জানিয়ে দেয়। আর রেজাল্ট খারাপ হলে ফোন করে চিকিৎসা(কারন রুগীকে আগেই দেখা হয়েছে) অথবা সংশ্লিষ্ট রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করার খবর জানিয়ে দেয়া হয়।

আমাদের দেশের পাবলিক হাসপাতালগুলোর যথাযোগ্য ব্যবহার আর সেসব হাপাতালের প্রকৃত মেইনটেনেন্স বিশ্বের দরবারে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার আথা উঁচু করে ধরতে যথেষ্ট। সমস্যা সিস্টেমে আর আমাদের মানসিকতায়। সেই সাথে অবশ্যই গুটি কয়েক অর্থলোভী অসৎ চিকিৎসক দায়ী, তবে প্রশাসন কড়া হলে এসব অসৎ চিকিৎসকদেরও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন ।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:২০

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন: আমেরিকার বিষয়টি জেনেশুনেই লিখেছি। বিশ্বের সেরা জনস্বাস্থ্য বিদ্যাপীঠের অধ্যাপক গত পরশু এই ব্যাপারটি ক্লাসে পড়ালেন।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৩:৪২

কানিজ রিনা বলেছেন: বেশ জন কল্যান মুলক লেখা।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:২১

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ

৫| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:২২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনার সেই ছোট ভাইয়ের কথায় অতিরঞ্জন থাকতে পারে, কিন্তু অভিযোগ গুলো মোটেই ভিত্তিহীন নয়। আমি মতামত দিচ্ছি না। ব্যক্তিগত বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।

ধন্যবাদ মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:২২

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন: অবশ্যই বিষয়গুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ত্রুটিগুলো জনস্বার্থেই খুঁজে বের করা দরকার।

আপনাকে ধন্যবাদ।

৬| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:৫০

পদ্মপুকুর বলেছেন: তাহলে সমাধান কী?

আপাত দৃষ্টিতে চিকিৎসক নির্বাচনে জোর দেয়া যেতে পারে। সম-যোগ্যতার সব চিকিৎসকের কাছে রোগীর ভিড় এক রকম থাকে না। যিনি অল্প রোগী দেখেন, তার কাছে গেলে সময় বেশি পাওয়া যাবে।


উত্তম প্রস্তাব! এখন ভাই আপনি ঢাকা শহরের মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ১০ জন চিকিৎসকের নাম বলেন যারা পরিমিত পরিমাণে রোগী দেখেন
১.
২.


বিশেষত নটর ডেম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে। পরবর্তীতে ডাক্তারি পড়তে এসে দেখেছি,
নটরডেম কলেজ<ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়< ডাক্তারি... ব্যাপারটা বুঝলাম না,

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:১৬

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন: প্রথমত, আমি ১০ জন নয়, নিদেনপক্ষে ১০০ জনের নাম দিতে পারি যারা ১০-১৫ জনের বেশি রোগী দেখেন না। তখন আপনি যদি দাবি করে বসেন সেই ডাক্তারকে ঢাকা মেডিকেলের প্রফেসর হতে হবে তাহলে আমি বিপদে পড়ে যাবো। সাধারণত একটি স্পেশালিটির দশজন বিশেষজ্ঞের মধ্যে ২ জনের চেম্বারে প্রচুর ভিড় থাকে, ২ জনের একেবারেই ভিড় থাকে না, বাকি ৬ জনের চেম্বারে মাঝারি ভিড় থাকে। এখন আমরা যদি পিজির বিভাগীয় প্রধানের কাছে সবাই গিয়ে ভিড় করি, তিনি রাত ২-৩ টা অব্দি রোগী দেখে বাড়ি ফেরেন, তাহলে সেই ডাক্তারকে দোষ দেয়ার যৌক্তিকতা কতটুকু? আচরণের পরিবর্তন সবাইকে করতে হবে, সেবাদাতা ও গ্রহীতা- উভয়কেই।

দ্বিতীয়ত, আমি নটর ডেম থেকে এইচএসসি পাশ করে এক বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। পরের বছর সরকারী মেডিকেলে চান্স পেয়ে সেখানে চলে যাই। আশা করি বিষয়টি স্পষ্ট করতে পেরেছি।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৭| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৫৩

বর্ষন হোমস বলেছেন:
আপনার উত্ত্র গুলো যাথাযত।তবে আপনার ভাই যে কিনা পদার্থ বিজ্ঞানী হতে চলেছেন তার কাছ থেকে এমন লেখা আশা করা যায় না।যদিও এটা ঠিক এমন ধারনা অনেকের মাঝেই রয়েছে কিন্তু তিনি একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে এমন কথা মানায় না।

৮| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:২৩

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার একটি লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৯| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৩২

মানবী বলেছেন: "আমেরিকার বিষয়টি জেনেশুনেই লিখেছি। বিশ্বের সেরা জনস্বাস্থ্য বিদ্যাপীঠের অধ্যাপক গত পরশু এই ব্যাপারটি ক্লাসে পড়ালেন।"

- আমেরিকার প্রফেসর বলেছেন আমেরিকার চিকিৎসকদের কাছে রিপোর্ট নিয়ে যেতে হয় আর তারা তখন ভিজিট নিয়ে রিপোর্ট দেখেন? বুঝতে পারছিনা!

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা আমেরিকার চেয়ে হাজারগুনে ভালো তা আমি অগুনিতবার এই ব্লগে এবং আমেরিকার চিকিৎসকদেরও জানিয়েছি। এ নিয়ে কোন সংশয় বা বিতর্ক নেই।

ভালো থাকুন।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:১৪

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন: 'আমেরিকার প্রফেসর বলেছেন আমেরিকার চিকিৎসকদের কাছে রিপোর্ট নিয়ে যেতে হয় আর তারা তখন ভিজিট নিয়ে রিপোর্ট দেখেন? বুঝতে পারছিনা!'

এই কথা আমি লিখিনি। অধ্যাপক সাহেব আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবার দুর্বল কাভারেজ এবং তার কারন সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন, অতিরঞ্জন হবে বলে বিস্তারিত লেখার আগ্রহ পাইনি। রিপোর্ট অনলাইনে পাঠানো হোক আর সাক্ষাতে দেয়া হোক, ভিজিট ও অন্যান্য খরচ মূলত ইনস্যুরেন্সের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়, সরাসরি পকেট থেকে দিতে হলে প্রতি সেশনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চার্জ নুন্যতম ২৫০ ডলার।

আপনার আর কোন জিজ্ঞাসা থাকলে নির্দ্বিধায় জানাবেন। সেই অধ্যাপক সাহেব আমার সামনেই আছেন, প্রয়োজনে শুনে নেয়া যাবে।

ধন্যবাদ ও ভালবাসা।

১০| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:৫৭

তার ছিড়া আমি বলেছেন: সবকিছু ঠিক আছে, তবে আমার প্রশ্নঃ একজন চিকিৎসকের কত টাকা দরকার? তিনি কি একজন ব্যবসায়ী নাকি সেবক?
.
.
.
.
.
সরকারের নিয়ন্ত্রণ আশু প্রয়োজন।

১১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৩১

মানবী বলেছেন: "এই কথা আমি লিখিনি। অধ্যাপক সাহেব আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবার দুর্বল কাভারেজ এবং তার কারন সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন"
-আমি যা জানতে চেয়েছি তা স্পষ্ট করেই বলেছি, আপনি জবাব দিয়েছেন।

জ্বীনা আর কিছু জিজ্ঞাসা থাকার প্রশ্ন নেই, অধ্যাপকের কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করার থাকলে আমি নিজেও সামনে বসেই করতে পারি। :-)
অনলাইনে পাঠ গ্রহনের প্রয়োজন নেই। তারপরও আপনার ঔদার্য্যের জন্য ধন্যবাদ।

১২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:২১

সৌমিক আহমেদ খান বলেছেন: অনেক সুলিখিত। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.