নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাপলা দোয়েলের দেশে-১

২৯ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৫

১.
একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হল। জাগ্রত জনতা ফাঁসি চাইলেন, কেউ কেউ ক্রসফায়ারও চাইলেন।

পুরো ব্যাপারটায় "বিচার" শব্দটা কোথাও দেখা গেল না। শুনেছি, বিচার বিষয়ে কিছু লিখলে আদালত অবমাননার সম্ভাবনা থাকে। সে কারনেই কী কেউ মুখ ফুটে বলছে না- দেশে বিচার নাই, অথবা যে বিচার আছে সেটার প্রয়োজন নাই?

দুয়েকজন আরেককাঠি সরেস। তারা শেখ হাসিনার সাহায্য চান। যেকোনো বিষয়ে হাসিনার হস্তক্ষেপ দরকার। আমার জানামতে শেখ হাসিনার হাত দুইটা, এবং দেশের সমস্যা অগণিত। তিনি চাইলেও সব জায়গায় হাত দেয়ার গাণিতিক ব্যবস্থা নাই। যারা এই দাবি করেন, তারা রসিকতা করেন কিনা- সেটা স্পষ্ট না। উচ্চমানের রসিকতা হলেও হতে পারে, আমি হয়তো বুঝিনি।

২.
মাশরাফি কিছুদিন আগে নড়াইলের এক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের "একহাত" দেখে নিয়েছিলেন। ওটা যে বাংলার প্রায় সব সরকারী হাসপাতালে গেলেই করা যায়- সেটা সবাই জানে। সীমাহীন অব্যবস্থাপনার আখড়া আমাদের হাসপাতাল। সমস্যা হচ্ছে- এগুলো অধিকাংশই সিস্টেমের সমস্যা, ডাক্তার ভয়ানক বদমায়েশ হলেও এগুলো তার একার পক্ষে করা কঠিন। সেই জায়গায় মাশরাফি ডাক্তারদের মিষ্টি গলায় শাসিয়ে গেলেন। সেই শাসানোর এক দশমাংশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব, ও ডিজি সাহেবকে করলে সান্ত্বনা পেতাম- কিছুটা কাজ হয়েছে। মাশরাফি আজকাল রাজনীতি করেন, অবসরে খেলে দেন। আমি যেটা বুঝিনি, তাঁর এই হাসপাতালের কাণ্ডটি রাজনীতি নাকি খেলা।

সে যাই হোক, তাঁর কর্মের প্রতিবাদে নির্বোধ চিকিৎসক সম্প্রদায় অনলাইনে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। মনে রাখা দরকার, তারাও বাঙালি- এইটে বিশেষভাবে বলার কারন তাদের অনলাইনে সীমাবদ্ধ হম্বিতম্বি। বাস্তবে তারা ভারতের চিকিৎসকদের মতো রোগীর ও পেশাগত অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করার ক্ষমতা রাখেন না। বরং ক্ষমতাবানের পা চেটে বেঁচে থাকায় তাদের দক্ষতা প্রমাণিত। এই নখদন্তহীন চিকিৎসক সমাজের অনলাইনে প্রকাশিত "নির্বীর্য" স্ট্যাটাস-কমেন্ট দেখে আমলারা শৌর্যবীর্যসমেত ঝাঁপিয়ে পড়লেন। চিকিৎসকদের কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়া হল, বদলি-ওএসডি শুরু হল। আজ দেখি সেই "অপরাধে" শিশু ক্যান্সারের এক অধ্যাপককে রাঙ্গামাটি মেডিকেলে বদলি করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে- তাঁর বিষয়ে মাত্র তিনজন জীবিত অধ্যাপক আছেন। এমন একজনকে কান ধরে রাঙ্গামাটি পাঠানো রাঙ্গামাটির শিশুদের জন্য বিরাট সুখবর। সমস্যা হচ্ছে- রাঙ্গামাটিতে শিশু ক্যান্সারের বিভাগই নাই। হুট করে দেশের একটি বিশেষায়িত চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক তৃতীয়াংশকে পেশাগতভাবে গুম করে দেয়া- এইটা খুবই বিরল অর্জন।

৩.
আমার বন্ধুস্থানীয় একজন চলচ্চিত্রকার অদ্ভুত একটি সমীক্ষা চালাচ্ছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ডেটা থেকে প্রতিদিন কতজন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মরছে- সেই খবর যোগাড় করছেন। তাঁর হিসেবমতে, গত ২৪ থেকে ২৭ জুন- এই চারদিনে দেশে মোট ৩০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। গড়ে দিনে ৭.৫ জন, বছরে ২৭৩৭.৫ জন। এই ডেটার তিনটি মূল সমস্যা-
১. কেবল একটি সোর্স থেকে নেয়া হয়েছে, ফলে অন্যান্য সোর্স যোগ করলে সংখ্যাটা বাড়বে।
২. যারা পথেই মারা গেছেন এবং মিডিয়া সে জায়গায় রিপোর্ট করেনি- তারা এই সমীক্ষার বাইরে।
৩. এটা কেবল মৃত্যুর খতিয়ান, কতজন আহত হয়েছেন, অঙ্গ হারিয়েছেন, কিংবা এইসব দুর্ঘটনায় সর্বস্ব হারিয়েছেন- সেই হিসেব নেই।

তবে এই ডেটা একটা ভয়ানক সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে। রাজপথে মৃত্যু আমাদের দেশের অজস্র উপায়ে মরা অথবা মৃতের মতো বেঁচে থাকার মধ্যে একটি। একটি রাষ্ট্রে যখন অন্যায়-অনাচার প্রতিদিনের ব্যাপার হয়ে ওঠে- তখন মানুষ সেগুলো সয়ে নিতে শুরু করে। কালেভদ্রে সর্বশক্তিমানের দয়া ভিক্ষা করে, নিজেও হয়ে ওঠে নির্যাতক, সুযোগ পেলে দুর্বলকে সাইজ করে নিজে আনন্দ পায়। রাষ্ট্রের সর্বত্র লাম্পট্যের বিস্তার ঘটে। ধীরে ধীরে কাঠামোটা এমন করে গড়ে ওঠে- যাতে ন্যায়বিচার, ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ, এবং ন্যায্যভাবে পূর্ণ জীবন কাটানো হয়ে ওঠে প্রচণ্ড রকমের অসম্ভব।

সেই কাঠামোয় মানুষ বিপন্ন হয়ে জন্মায়, বেড়ে ওঠে, এবং মরে যায়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ২:০৯

রসায়ন বলেছেন: এতো গুলো বিষয়ে এতো অল্প অল্প করে বলেছেন যে আপনার সামগ্রিক বার্তাটাই অর্থাৎ পোস্টে কি বুঝাতে চেয়েছেন সেটাই বুঝলাম না। প্রতিটা বিষয় নিয়ে আলাদা করে লিখুন ।

২| ২৯ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ২:২৬

করুণাধারা বলেছেন: আমরা সর্বংসহা! সবকিছু পিঠ পেতে নিচ্ছি! নিতে নিতে মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে আমাদের।

চমৎকার পোস্টে লাইক।

৩| ২৯ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ২:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: এই দেশের বেশির ভাগ লোকই খারাপ। তাই এই দেশের এত অধপতন।

৪| ২৯ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


দেশে বিচার না করে, ক্রস-ফায়ারে দেয়া হয়েছে, মানুষ এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে; তাই ক্রস ফায়ার চাচ্ছে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.