নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকবাল সুমন

"ঘোড়ার ডিমের খোঁজে নয়, ডিমওয়ালা-ঘোড়ার খোঁজে...

ইকবাল হোসাইন সুমন

আমি ইকবাল সুমন। মাঝে মাঝে টুকটাক লিখা লিখি করি। এছাড়া কোন কিছু করি না।

ইকবাল হোসাইন সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গিনিপিগদের সুখ দুঃখ ( ‪পর্ব-৩‬ )

২২ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৩:৪৬







রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। চোখ মেলতে মেলতে সকাল ১১ টা বেজে গেল। ফোনে দেখি ১৯ টা মিসড কল পড়ে আছে। ১৭ টা ফরহাদ ভাইয়ের, নীলার ১ টা, আননোন ১ টা। এখন ভাবলাম ফরহাদ ভাইকে ফোন দিতে হবে।



রাতে ফরহাদ ভাইকে বলেছিলাম, নিশি ফোন দিলে যেন না ধরে, তার সাথে কোন রকম যোগাযোগ না করতে। নিশি যোগাযোগ করতে চাইলেও যেন কোন যোগাযোগের সম্ভাবনা সৃষ্টি না হয়। টোটালি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে।



ফরহাদ ভাই অবাক হয়েছিল। বলল, 'তোমাকে বলেছি, আমি ফোন না করলে, নিশি এখন আমাকে ফোনই করে না। সুতরাং এই মহুরতে তার প্রতিটা কল, রেসপন্স আমার অনেক কাঙ্ক্ষিত। আমি ওকে ফোন না করলে, আমার মনে হচ্ছে, ও প্রতিটা সেকেন্ডে আরও দূরে সরে যাচ্ছে'। আমি ফরহাদ ভাইকে বলেছিলাম, 'ও দূরে সরে যাচ্ছে না, দূরে সরেই আছে। আমাকে অন্তত এ ক্ষেত্রে একটু বিশ্বাস করেন। আমি যেভাবে বলছি ওভাবে অন্তত ৩ টা দিন করেন'।



ফরহাদ ভাই কিছুক্ষণ চুপ ছিলেন।



তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করলেন, 'এর পরে কি হবে তুমি জান?'

আমি বললাম, 'জানি ভাই। আপনি ওর পথ থেকে সরে আসবেন অথবা সব কিছু আগের মত হয়ে যাবে'।

ফরহাদ ভাই বললেন, 'আমি কি পারব?'

আমি বললাম, 'বিয়ের পরে যদি ও আপনাকে এভাবে ছেড়ে চলে যেতে চাইত। আপনি কি তাকে ধরে রাখতে পারতেন?'



ফরহাদ ভাই কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন, 'তারপর বললেন, তুমি ঠিক বলেছে। এটা হলে তো আমার আর কোন দিকই থাকতো না'।

ফরহাদ ভাই আবার বলল, 'আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, নিশি আমাকে আর ফোন করবে বা ফিরে আসবে।

আমি বললাম, প্রকৃত মানুষদের ব্যাপারে “ফিরে আসা” শব্দটা কখনো হয় না। কারণ তারা সব সময় থেকে যায়। যারা বারবার ফিরে আসে তারা বারবার ফিরে যেতেও পারে।



ফোনের এ পাশ থেকে আমি ফরহাদ ভাইয়ের মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছিলাম। আমি ইচ্ছে করে উনাকে কোন আশা দেখাইনি। কারণ 'নিরাশার ফলাফল স্বরূপ অসফলটা মানুষকে যেটুকু কষ্ট দেয়, আশা করার পরে অসফলটা মানুষকে অনেক বেশী কষ্ট দেয়'।



-হ্যালো, তুমি কই ভাই, সকাল থেকে তোমাকে এতবার কল দিলাম।

-এইতো ভাই আছি তো। রাতে ভাল ঘুম হয়নি। এই কারণে সম্ভবত আজ একটু বেশীই ঘুমিয়ে পড়লাম। আপনার কি অবস্থা?

-নিশি সকাল থেকে ১০০ বারের উপরে ফোন দিয়েছে। এখনো ফোন দিয়ে যাচ্ছে।

-কোন টেক্সট করেছে?

-১ টা । লিখেছে “plz ফোন ধর”। আমি বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। ভাই আমাকে বল, তুমি কি করেছ। আমি খুব টেনশনে আছি।

-টেনশনে থাকা স্বাভাবিক ভাই। কিন্তু আপনাকে যেভাবে বলেছি সেভাবেই থাকতে হবে। যত কষ্ট হোক না কেন।

-যাই কর ঠিক আছে। কিন্তু খারাপ কিছু যেন না হয়।

-যে অবস্থায় আছেন। তার থেকে বেশী খারাপ হবে না।

-আপনি এখন কোথায়?

-অফিস এ

-ঠিক আছে ভাই। আমি দুপুরের দিকে আসতেছি। লাঞ্চ আপনার ওখানে করব। নীলা আমার সাথে থাকবে।



নীলাকে ফোন দিয়ে বললাম, রেডি থেক বের হবো।



নাস্তা করে বের হতে হতে দুপুর ১২ টা বেজে গেল। ফরহাদ ভাইয়ের অফিস ক্যানটিনে আসতেই দুপুর ১ টা। নীলা আর আমি বসে আছি। কিছুক্ষণ পরেই ফরহাদ ভাই আসল। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে না, উনি অফিসে আসছেন। অনেকটা বিধ্বস্ত।



প্রথমে ভেবেছি ফরহাদ ভাইকে ব্যাপারটা বলব না। কিন্তু ব্যাপারটা উনাকে বলতে হবে। আমি ফরহাদ ভাইকে সরাসরিই বলে দিলাম, নিশি সিম পরিবর্তন করে অন্য কারো সাথে কথা বলে।

ফরহাদ ভাই আমার দিকে অনেকটা হা করে তাকিয়ে থাকল। আমিও উনার দিকে কিছুটা তাকিয়ে থাকলাম দেখলাম উনি আমার কথা বিশ্বাস করে কিনা। দেখলাম বিশ্বাস করেছে।



বলল, তুমি কিভাবে বুঝতে পেরেছ ও অন্য কারো সাথে কথা বলে?

ডবল সিমের ফোন সেট গুলোতে একটা সিম দিয়ে কথা বললে, অন্য সিম যদি একটিভ থাকে, সে সিমে যদি আপনি ফোন দেন সিমটা বন্ধ বলবে না, বলবে, "এই মহুরতে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না" এবং সেখানে ‘সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না’। এটা বলতেও একটু সময় নেবে। নিশির ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।



-তুমি কি এই ব্যাপারটা পুরোপুরি নিশ্চিত?

-জি ভাই।



ফরহাদ ভাই আর কিছু বলল না। কিন্তু অনেকটা কান্না মিশ্রিত সুদীর্ঘ একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ পেলাম।



-সকাল থেকে ও আমাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। এটা সম্ভবত তোমার জন্য হয়েছে।

-জি ভাই, নীলাকে দিয়ে রাতেই ফোন দিয়েছিলাম নিশিকে।

-তার ফোন রাতে একটিভ ছিল?!!! ফরহাদ ভাই জিজ্ঞাসা করল।

-ও যে সিম দিয়ে কথা বলছিল, সে সিমটা দিয়ে কথা না বললে আপনি ওর রিগুলার সিমটা একটিভ পেতেন। ও সম্ভবত প্রায় কথা বলে, এই কারণে আপনি ওর ফোন বন্ধ দেখতে পান।

-যাই হোক, তুমি এখন কি করতে চাঁচ্ছ?

-নিশির সাথে দেখা করব ভাই।



আমার কথা শুনে ফরহাদ ভাই কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকল।



-কি প্রয়োজন এসবের আর? যাক, নিশির সাথে দেখা হলে তুমি এটাই বল, ও আমাকে সরাসরি সব কিছু বলতে পারত। আর ওকে বোলো, সব সময় যেন ভাল থাকে। কিন্তু আমার সমস্যাটা কোথায় বলতে পার ভাই?

-পারি ভাই। কিন্তু এখন আমি আপনাকে বলব না।



এই অবস্থার মধ্যেও কেন জানি আমার মনে মৃদু হাসি চলে আসল। এখনো আমি জানি না মূল ঘটনাটি কোথায়। জানি না কোন ভাল নিউজ ফরহাদ ভাইকে দিতে পারব কিনা।



লাঞ্চ করে নীলাকে নিয়ে বের হতে হতে ২ টা বেজে গেল। পথে নীলা নিশিকে যে সিম দিয়ে কল দিয়েছিল, সে সিমটা একটিভ করল। ভাবছিলাম নিশিকে কল দিতে বলব। কিন্তু তার প্রয়োজন হল না। নিশি ফোন করে বসল সিম একটিভ করার ২ মিনিটের মাথায়। নিশিই নীলাকে রাজি করাল দেখা করার জন্য। নীলাও রাজি হল। সন্ধ্যা ৫ টায় একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা।



আমি নীলাকে বললাম, 'তুমি থাকার প্রয়োজন নাই। তুমি চলে যাও। আর মনে রেখ আজ রাতে নিশির বাবার সাথে দেখা করতে হতে পারে। আমার সাথে তোমাকেও যেতে হবে। আমি তোমাকে কল করব'।



আমি আসার আগেই নিশি রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেছে। আমাকে দেখে অনেকটা হতবাক এবং নার্ভাস হয়েছে।



-কিরে তুই এখানে?, নিশি বলল।

ফরহাদ ভাইয়ের সাথে নিশির সম্পর্ক থাকলেও আমরা পরস্পর ইয়ার-মেট হওয়াতে একে অন্যকে তুই করে ডাকতাম। ব্যাপারটায় ফরহাদ ভাই খুব মজা পেত। কিন্তু বিগত ২/৩ বছর নিশির সাথে আমার তেমন যোগাযোগ ছিল না আমার।



-কেন আমি এখানে আসতে পারি না। তোকে দেখেই তো ঢুকলাম। এই বলে আমি মৃদু হাসলাম। তো, হটাত করে এখানে আসলি কেন?

-একজন আসার কথা।

-ও তাই? ফরহাদ ভাই এর কি খবর রে, অনেক দিন খবর নাই।, আমি বললাম।

-আছে ভাল।



নিশি বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছিল।



-আছে ভাল বললে তো হবে না। ঠিক আছে, তোকে কথা পেঁচাবো না। বল, ফরহাদ ভাইয়ের সাথে তোর কি হয়েছে?

-ও, তাহলে তোকেও বলে বাড়াচ্ছে।

-তো আমাকে বলবে না কাকে বলবে। আমি ফরহাদ ভাইকে যেমন ভাল চিনি, তোকেও ভাল চিনি। অন্য কাউকে বলে বেড়াচ্ছে নাকি?

-বিশ্বাস কি? বেড়াতেও পারে।

-কথা বাড়াবি না । বল কি হয়েছে?, আমি নিশিকে বললাম।

-অনেক কথা। কিন্তু তোকে বলতে ভাল লাগছে না।

-তাও আমাকে বলতে হবে।

-সত্যি কথা বলতে কি দোস্ত, ফরহাদের সাথে মনে হয় আমার হবে না।

-কেন ৭ বছর হয়েছে, এখন হবে না কেন?

-আমি কিছু জানি না।

-কেন উনার চারিত্রিক বা অন্য কোন সমস্যা? থাকলে আমাকে খুলে বল।

-না, সে ধরনের কোন সমস্যা নাই।

-তাহলে তাকে avoid করিতেছিস কেন? শুনলাম কথা পর্যন্ত বলিস না।

-আমি জানি না। আমার মনে হচ্ছে তার সাথে আমি Happy হব না।



-ঠিক আছে, আমি বলি তোর সমস্যাটা কোথায়, সেটা হল, ফরহাদ ভাইয়ের ‘সরলতা’ যা তোর কাছে মনে হচ্ছে যেন উনি কোন রোমান্টিক মানুষ না, নিরামিষ প্রকৃতির মানুষ। বিয়ের ব্যাপারটা যখন চলে আসতেছে, তখনই হটাত করে তোর মাথায় আসল, এই নিরামিষটার সাথে সারাজীবন থাকব কিভাবে! সমস্যাটা এই জায়গায়ই, তাই তো?



আমি নিশির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। নিশি মাথাটা অনেকটা নিচু করে রেখেছে।



-আমি কি করব বল। ভাল একটা ডেলি-মায় ভুগছি। মানুষ হিসেবে তার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নাই। কিন্তু সে ৭ বছর আগে যেমন দেখেছি তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। যেমন ছিল প্রায় তেমনই রয়ে গেছে।

-কোন রহস্য নাই, এই তো? ,আমি বললাম। তো এই ৭ বছর তুই কি করেছিস?

-মানে?

-মানে হল, গত ৭ বছরে একটা মানুষকে তুই পরিবর্তন করতে পারিসনি কেন? এটা তো তোর পরাজয়। নিজের পরাজয়টা অন্যের উপর চাপাবি কেন? কি ঘোড়ার ডিমের প্রেম করেছিস যে, ৭ বছর পরে এর ফলাফল শূন্য হয়?...



নিশি অনেকটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকয়ে থাকল। হয়ত ভাবছে কি বলবে।



-শুন, একটা কথা বলি। প্রচণ্ড ভালবাসার মানুষগুলো সাধারণত এই ধরণের হয়। ফরহাদ ভাইও ঠিক এই ধরণের মানুষ। তাকে বুঝতে হলে, মানুষকে অনেক স্পেশাল হতে হয়। আমি ভাবলাম যেহেতু তুই এতগুলো বছর তার সাথে চিলি, তুই তাকে বুঝতে পারবি। এখন দেখলাম তুই একটা মস্ত গাধী।



নিশি অনেকক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলল,

-তুই এখন আমাকে কি করতে বলিস?

-এখন আর কিছু করার নাই। ফরহাদ ভাই তোর ব্যাপারটায় খুব কষ্ট পেয়েছে। ফ্যামিলি থেকেও তার বিয়ের ব্যাপারে কথা বার্তা হচ্ছে। যা শুরু করলি আর যাই টিকুক, একটা রিলেশন টিকে না। আমি এ ক্ষেত্রে ফরহাদ ভাইকে দোষ দিতে পারব না। কারণ উনি তোকে ফেরানোর অনেক চেষ্টা করেছে। তুই কষ্ট পাবি বলে তোর সাথে কখনো একটু জোরে কথা বলেনি। আমি কি মিথ্যা বললাম?



খেয়াল করলাম নিশির চোখ ছলছল করছে।



-শুন, তুই এখন আর ছোট না। আমি কিংবা ফরহাদ ভাই তোকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসব, এই ক্ষমতা আমাদের নেই। রিলেশন ব্যাপারটা কখনো জোর করে হয় না। তুই যা ভাল মনে করবি তাই করিস। ফরহাদ ভাই সম্ভবত তোর সামনে আর আসবে না। উনি তোকে বলেছে, জীবন টাকে সুন্দরভাবে ঘুচিয়ে নিতে।



আবার অনেকটা চোখ দিয়ে পানি পড়ছে নিশির।



-তুইই বল আমি এখন কি করব? নিশি বলল।

-দেখ, এই মানুষটাকে তুই যেভাবে চাচ্ছিস তেমন হয়তো হতে পারবে না। এখন তুইই সিদ্ধান্ত নে তুই কি করবি।

-কাল রাতে আমাকে একটা মহিলা ফোন করেছিল, বলল, ফরহাদের ব্যাপারে আমার সাথে কি যেন কথা বলবে। তাহলে কি আমিও ধরে নেব, ও তার আগের অবস্থা থেকে নাই?

-কাল রাতে কোন মহিলা তোকে কি বলেছে আমি জানি না। কিন্তু তোর তো এ সম্পর্কে মাথা ঘামানোর কোন অধিকার নাই। কারণ তুই তো এর আগেই উনাকে প্রায় ছুড়েই ফেলে দিয়েছিস।



নিশি নির্বাক হয়ে মাথা নিচু করে থাকল।



-তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, সত্যি করে বলবি। ফরহাদ ভাই বলল, তোর ফোন নাকি রাতে বন্ধ থাকে, তাহলে ওই মহিলা তোকে রাতে ফোনে পায় কিভাবে?



নিশি আবার নির্বাক হয়ে থাকল।



-তুই কি অস্বীকার করতে পারবি তুই রাতে কারো সাথে কথা বলিস না।



আবার নিশি সরাসরি আমার দিকে তাকাল। অনেকটা বুঝতে পারার চেষ্টা করছে। আমি আন্দাজে কোন কিছু ছুড়ছি কিনা। আমিও ঠিক নিশির দিকে তাকিয়ে থাকলাম যেন অন্তত লজ্জায় হলেও আমাকে ব্যাপারটা স্বীকার করে। আমি মনে হয় এই মাইন্ড গেমে জিতে গেলাম।



-হ্যাঁ, আমি কথা বলি। কয়েকদিন হল কথা বলি।

-আমি তোকে জিজ্ঞাসা করব না কার সাথে কথা বলিস। কিন্তু আমার মন বলছে তুই মনে হয় ভুল করতে যাচ্ছিস। ঠিক আছে আর কথা বাড়াব না।

-একটা কথা বলি দোস্ত, মনোযোগ দিয়ে শুন।ফরহাদ ভাইয়ের মধ্যে অনেকটা সরলতা আছে এটা আমি অস্বীকার করছি না। তোর দৃষ্টিতে হয়তো তিনি নিরামিষ একটা মানুষ। কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস, একজন মানুষ হিসেবে ফরহাদ ভাইয়ের মধ্যে এমন কিছু ব্যাপার আছে। যে ব্যাপারে আমি নিজেও উনাকে হিংসা করি। অনেক বছর সাধনা করলেও হয়তো আমি উনার মত হতে পারব না। দেখবি এমন কোন একদিন সময় আসবে তুই এই ব্যাপারগুলো খুব মিস করে যাবি। আর তুই যে ব্যাপারটির জন্য উনাকে ছেঁড়ে যাচ্ছিস, হয়তো অন্য একটা ভাল মানুষের ছোঁয়ায় উনি নিরামিষ থেকে আমিষও হয়ে যেতে পারে। আর একটা কথা বলি তোকে, সুখের জন্যই তো সব কিছু করিতেছিস, তাই না?। হয়তো ফরহাদ ভাই তোকে যতটুকু সুখে রাখত তার থেকেও বেশী সুখে থাকবি ভবিষ্যতে। এটা ঠিক আছে। কিন্তু মনে রাখিস, যখনিই তোর ফরহাদ ভাইয়ের কথা মনে হবে, ক্রমান্বয়ে হারতে থাকবি প্রতিটা সেকেন্ড। এই অপরাধ অনুধাবন তোর জীবনের প্রতিটা পথকে সারা জীবনও ছাড়বে না।

"ঠিক আছে দোস্ত বাসায় চলে যা। তুই যে মহিলার জন্য অপেক্ষা করিতেছিস, সে মহিলা আসবে না। আমিই কাল রাতে নীলাকে দিয়ে তোকে ফোন দিয়েছি, ফরহাদ ভাইয়ের প্রতি তোর অনুধাবনটা জানার জন্য", আমি বললাম।



এই বলে আমি রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম, পিছনে নিশি কাঁদছে। আমি নিজেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। বারবার ফরহাদ ভাইয়ের চেহারাটা আমার মনে ভেসে আসছিল। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল, ওপাশ থেকে ফরহাদ ভাইও কাঁদছে।



সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, “মানুষের কষ্টের প্রকাশ হচ্ছে 'কান্না'। কিন্তু কান্নার উদ্দেশ্য কখনোই 'কষ্ট' নয়, কান্নার উদ্দেশ্য হল, সবসময় ‘সামান্যটুকু সুখ বা প্রশান্তি' "



নিশির এ কান্নাটি দরকার আছে।



কেন জানি মন থেকে চাচ্ছিলাম, আগামী কালের দিনটা, আমার এ প্রিয় মানুষ নিশি কিংবা ফরহাদ ভাই প্রত্যেকের সুন্দরতম একটা দিন হয়।...



( চলবে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.