নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকবাল সুমন

"ঘোড়ার ডিমের খোঁজে নয়, ডিমওয়ালা-ঘোড়ার খোঁজে...

ইকবাল হোসাইন সুমন

আমি ইকবাল সুমন। মাঝে মাঝে টুকটাক লিখা লিখি করি। এছাড়া কোন কিছু করি না।

ইকবাল হোসাইন সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এপ্রিল ফুলের গল্প

০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৫৯

দরজার ওপাশের আকাশ



(লিখা এবং প্রকাশকালঃ ০১-০৪-২০১৫)



সারারাত ইবাদতের পরে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাওয়াতে সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেল সালাউদ্দিন মিয়াজির। সালাউদ্দিন মিয়াজির বয়স এ বছর ৭২ এ পা দিয়েছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ঘুমের পরিমাণটাও অনেক বেড়ে যায়। ইদানীং উনারও তাই হচ্ছে।



অনেক শোরগোলের মধ্যে সালাউদ্দিন মিয়াজি ঘুম থেকে উঠলেন। উঠেই খেয়াল করলেন, তার রুমের ছোট ছোট আসবাব এবং জিনিসপত্র সব স্থান পরিবর্তন করেছে। তবে একদম এলোমেলো না। নিপুণ কারো হাত দিয়ে আসবাব এবং জিনিসপত্র-গুলো যে তার স্থান পরিবর্তন করে ঘুচিয়ে রেখা হয়েছে এমনটিও নয়। তবে রুমের পরিবর্তনটা খুব খারাপ লাগছে না।



উনি ব্যাপারটা খেয়াল করে মৃদু হাসলেন।

সালাউদ্দিন মিয়াজি প্রতিদিন ঘুমানোর আগে তার চশমাটা বিছানার ডান দিকে রাখেন। এতে ঘুম থেকে উঠে চশমাটা পেতে তার কোন সমস্যা হয় না। আজ ঘুম থেকে উঠেই চোখ খুলেই উনি বিছানার ডান দিকে হাত দিলেন। কিন্তু আজ চশমাটা পাওয়া গেল না। উনি বাম দিকে হাত দিলেন। চশমাটা পাওয়া গেল। উনি মনে মনে আবার মৃদু হাসলেন।

বিছানা থেকে উঠে যখন রুম থেকে বের হচ্ছিলেন খেয়াল করলেন, উনি যে স্যান্ডেলগুলো পরেছেন, সেগুলো উনার না। সাইজে অনেকটা বড়। তাকিয়ে দেখলেন এগুলো উনার বড় ছেলের স্যান্ডেল।



হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলেন সালাউদ্দিন মিয়াজি।

উনার রুম থেকে বের হলে বড় একটা বারান্দা পড়ে। বারান্দাটা এখন উনিই ব্যবহার করেন। তার স্ত্রী বেঁচে থাকা অবস্থায় দুজনেরই খুব প্রিয় একটা জায়গা ছিল। এখনো ঠিক আগের মতই আছে। মাঝে দিয়ে শুধু একটা মানুষ না-ফেরার দেশে চলে গেছেন।



বারান্দায় এসে পুরাতন সে ইজি চেয়ারে বসলেন সালাউদ্দিন মিয়াজি। খেয়াল করলেন, আজকের দিনটার তেমন কোন বিশেষত্ব নাই। অন্য সাধারণ একটা দিনের মত। সূর্যটা দেখা যাচ্ছে না। কয়েকদিন ধরে আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না।



এর মধ্যে সালাউদ্দিন মিয়াজির মেজ ছেলের বউ নিপু এসে নাস্তা দিয়ে গেল। সালাউদ্দিন মিয়াজি নিপুকে বললেন, “রহমানকে বল এখানে ৭/৮ টা চেয়ার দিয়ে যেতে, আর বাসায় যারা যারা আছে সবাইকে ডেকে নিয়ে আস”।



১০ মিনিটের মধ্যে সালাউদ্দিন মিয়াজির ৩ ছেলের ৭ নাতি নাতনি ভয়ে ভয়ে বারান্দায় আসল। সালাউদ্দিন মিয়াজি সবাইকে বসতে বলল। সবাই বসলেন। তার ২ ছেলের বউ বারান্দার দরজায় দাড়িয়ে থাকলেন।

সালাউদ্দিন মিয়াজি এমনিতেই খুব হাসিখুশি মানুষ। আজ অনেকটা গুরুগম্ভীর। সবার ভয়ের কারণ এটাই।



সালাউদ্দিন মিয়াজি তাহার নাতি নাতনিদের দিকে তাকালেন এবং একটু মৃদু হেসে বললেন, “আজ তোমাদের একটা নতুন গল্প শুনাবো”

কথাটি শুনে সবার ভয়টা অনেকটা কেটে গেল।



“সে অনেক দিন আগের কথা, কোন এক দেশে জায়গায় সুন্দর একটা বাগান ছিল। সে বাগানে হাজার হাজার ফুলের গাছ ছিল। গাছগুলোর মধ্যে সারাদিন নানা রঙ বেরঙের ফুল ফুটে থাকত। সে সুন্দর সুন্দর ফুলগুলোর সাথে ছিল প্রজাপতি, পাখি এবং মৌমাছিদের বন্ধুত্ব। বাগানটার মধ্যে একটা ঝর্না ছিল। ঝর্নার পাশে সুন্দর একটা পুকুর ছিল। পুকুরের মধ্যেও নানা রঙের মাছ বাস করত। এই মাছ গুলুর সাথেও ফুল, পাখি, প্রজাপতিরা কথা বলত। তারা সবাই একসাথে মিলে গান করত, নাচত। একজন অন্যের সাথে ছিল অনেক বন্ধুত্ব।



হটাত একদিন তাদের বাগানে বড় বড় কিছু দৈত্য আসল। দৈত্যরা তাদের অনেক ভয় দেখাতে থাকল। তারা বাগানের সব গাছ এবং ফুলগুলোকে ছিঁড়ে ফেলল। সব পাখি, প্রজাপতি, ফুলেরা এখানে ওখানে ছুটাছুটি করতে থাকল। তারা কি করবে বুঝতে পারছিল না। তারা একে অন্যকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকল। কিন্তু কেউ তাদের সাহায্য করতে আসল না।

দৈত্যরা বলতে থাকল, “আমরা সবাইকে মেরে ফেলব। যারা যারা ওই গুহার মধ্যে আশ্রয় নেবে তাদেরকে আমরা মারব না”।



এই বলে সালাউদ্দিন মিয়াজি টেবিলে থাকা পানি থেকে এক গ্লাস পানি খেল। তার নাতি নাতনিরা গল্পটা শুনে ভয়ে অনেকটা জড়সড় হয়ে আছে। গল্পটার পরের অংশ শুনার জন্য তারা তাদের দাদাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।



সালাউদ্দিন মিয়াজি আবার শুরু করলেন, “এর পরে সে বনের কিছু ফুল পাখি ছাড়া সবাই ওই দৈত্যদের কথা বিশ্বাস করল। সব ফুল, পাখি, মাছ, প্রজাপতিরা ওই গুহায় আশ্রয় নিল। কিন্তু সে দৈত্যরা ছিল খুব মিথ্যাবাদী। সব ফুল, পাখি, মাছ, প্রজাপতিরা যখন সে গুহার মধ্যে প্রবেশ করল। তখনিই তারা সে গুহাটার মধ্যে গরম পানি ঢেলে দিল”।



সালাউদ্দিন মিয়াজির নাতি , নাতনিরা সবাই আতকে উঠল। উনার নাতি রাহিন বলে উঠল, “আল্লাহ! তাহলে সবাই মরে যাবে তো!!!”



সালাউদ্দিন মিয়াজির চোখটা অনেকটা অশ্রুতে ভরে গেল এবং রাহিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, সেদিন সবগুলো ফুল, পাখি, মাছ, প্রজাপতিরা মরে গেছিলো। একজন বাচেনি”



সালাউদ্দিন মিয়াজি আবার বলা শুরু করলেন, “তোমরা কি জান সে বাগানটার নাম কি?”

সবাই বলল, “না”

“সেই বাগান-টার নাম হন, ‘স্পেন’।



তোমরা কি বলতে পার, আজকে কত তারিখ?

সবাই এক সাথে বলে উঠল, “এপ্রিলের ১ তারিখ”।

সালাউদ্দিন মিয়াজি আবার বললেন, “যেদিন দৈত্যরা সবগুলো ফুল, পাখি, মাছ, প্রজাপতিদের মরে ফেলেছিল সেদিন ও “এপ্রিলের ১ তারিখ” ছিল।



সালাউদ্দিন মিয়াজির নাতনি রিয়া বলে উঠল, “দাদুভাই, আজ তো ‘এপ্রিল ফুল’’

হ্যাঁ দাদুভাই। ‘এপ্রিল ফুল’ মানে কি তোমরা কেউ জান? সালাউদ্দিন মিয়াজি তার নাতি নাতনিদের জিজ্ঞাসা করলেন।

সায়েম এদের মধ্যে সবার বড়। ও বলল, “এপ্রিল ফুল’ মানে হল “এপ্রিলের বোকা”।

সালাউদ্দিন মিয়াজি একটু মৃদু হেসে সায়েমকে বলল, হ্যাঁ দাদাভাই ,তুমি ঠিক বলেছ।



সেদিন ঐ দৈত্যগুলোও সব ফুল, পাখি, মাছ, প্রজাপতিদের মেরে ফেলে, তারপর বলতে থাকল, “এপ্রিল ফুল’... ‘এপ্রিল ফুল।

তোমরাও আজ “এপ্রিল ফুল’... ‘এপ্রিল ফুল’ বলছ। সকালে আমাকেও তোমরা বোকা বানিয়েছ। ঐ দৈত্যগুলোও সব ফুল, পাখি, মাছ, প্রজাপতিদের মেরে বোকা বানিয়েছিল।

তোমরা কি তাহলে ঐ দৈত্যদের মত?

সবাই এক সাথে বলে উঠল, না দাদুভাই, আমরা কখনোই ঐ দৈত্য হব না। আমরা কখনোই ফুল, পাখি, মাছ, প্রজাপতিদের মারব না।



সেদিন ১লা এপ্রিল সকালে নাতি নাতনিদের সাথে সময় কাটিয়ে প্রতিদিনের মত সালাউদ্দিন মিয়াজি হাটতে বের হয়েছেন। ইদানীং শরীরটাতে খুব বেশী জোর পাচ্ছেন না। একটা লাঠি সাহায্য নিয়ে হাটতে হয়। হাটতে হাটতে পথে ক্রিশ্চিয়ান মিশনারিদের নিয়ন্ত্রিত একটা গির্জা পড়ল।



মিশনারি বিল্ডিংটার বাহিরের পাশ ঘেঁষে একটা দান-বক্স সব সময় ঝুলানো থাকে। সালাউদ্দিন মিয়াজি পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করে ভাল ভাবে দেখলেন যে ৫০০ টাকার গায়ে কোন মুসলিম বা ক্রিশ্চিয়ান লিখা আছে কিনা। দেখলেন নাই। তারপর দান-বক্সটার ছিদ্র দিয়ে সেই ৫০০ টাকা বক্সের ভিতর রেখে দিলেন। মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল, ‘পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষ যেন ভাল থাকে’।



১ ঘণ্টা হেটে সালাউদ্দিন মিয়াজি যখন বাসায় এসে তার রুমে ঢুকলেন। দেখলেন রুমের সব কিছু আগের মত ঠিক করে দেয়া হয়েছে।

কিছুক্ষণ পরে উনার ৭ নাতি নাতনি রুমে ঢুকলেন। ছেলেরা মাথায় টুপি আর মেয়েরা স্কাপ পড়া। সালাউদ্দিন মিয়াজি তাদের সবাইকে কাছে ডাকলেন।

তারা বলল, “জান, দাদাভাই, আমরা মুসলিমসহ পৃথিবীর সকল মানুষদের জন্য দোয়া করেছি”। “আমরা আর কখনোই এপ্রিল ফুল পালন করব না। আমরা আর কখনোই মানুষকে বোকা বানাব না”।



সালাউদ্দিন মিয়াজি নাতি নাতনিদের আকাশের দিকে দেখিয়ে বললেন। “তোমরা যদি কখনো মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্য বোকা বানাও, তাহলে ওখানে যে আমাদের আল্লাহ বসে আছেন, উনি একদিন তোমাদেরও বোকা বানাবেন। তোমাদের কখনোই বেহেস্ত দেবেন না। তোমাদের বড় বড় সাপের সামনে রেখে আসবেন”

এই বলে সালাউদ্দিন মিয়াজি আবার আকাশের দিকে তাকালেন...



(সমাপ্ত)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.