নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকবাল সুমন

"ঘোড়ার ডিমের খোঁজে নয়, ডিমওয়ালা-ঘোড়ার খোঁজে...

ইকবাল হোসাইন সুমন

আমি ইকবাল সুমন। মাঝে মাঝে টুকটাক লিখা লিখি করি। এছাড়া কোন কিছু করি না।

ইকবাল হোসাইন সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিরকুট-০৩

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:১০

‬কার যেন চিৎকার চেঁচামেচিতে আমার ঘুমটাই ভেঙে গেল। অবশ্য আমি বাসে কখনই ঘুমাতে পারি না। মাঝে মধ্য একটু তন্দ্রা আসে এ আর কি। তাও খুবই সামান্য, ২/৪ মিনিটের বেশী হবে না। পকেট থেকে মোবাইল বাহির করে সময় দেখলাম। রাত আড়াইটা বাজতেছে। গাড়িটা মনে হল দাড়িয়েই আছে। জানালা দিয়ে একটু বাহিরে তাকিয়ে বুঝলাম, আমাদের বাসটি ফেরিতে উঠার জন্যই লাইনে দাড়িয়ে আছে।

এক মহিলা চিৎকার করছে।
"আপনারা পেয়েছেন কি, আমি একা এসেছি বলে আপনারা আমাকে বিরক্ত করেই যাবেন? সেই গাড়িতে উঠার পর থেকেই আপনারা আমার কানের মধ্যে খেঁচের খেঁচের শুরু করেছেন। বললাম তো, আপনাদের সাথে আমি কথা বলতে মোটেই ইচ্ছুক না"

আমি মহিলার কথাগুলো শুনছিলাম। বাসে উঠার সময়ই দেখেছি ৬/৭ টা পোলাপান ঐদিকটা বসেছে। নিশ্চিত হলাম ওরাই হয়তো মহিলাকে বিরক্ত করেছিল। মহিলার কথার মধ্যে যে তেজ শুনলাম। নিশ্চিত হলাম, পোলাপানগুলো খুব বেশী সুবিধে করতে পারবে না।

আধা ঘণ্টার মধ্যে আমাদের বাস ফেরিতে উঠল। বাস ফেরিতে উঠার পরে আমি বাস থেকে নেমে ফেরির এক কোনে দাড়িয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ। কিছুক্ষণ পরে খেয়াল করলাম, আমার পাশে এক মহিলা দাঁড়ানো। মহিলার কোলে একটা বাচ্চা। বাচ্চার বয়স দেড় বছরের বেশী হবে না। বাচ্চাটা মায়ের কোলে খেলছে। আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়েও হাসছে। আমার আবার হাসিখুশি বাচ্চাদের একটু আদর করার অভ্যাস আছে। আমিও বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে হাসলাম। বাহ!! দেখলাম বাচ্চাটিও খুব মজা পাচ্ছে। আমি আরেকটু কাছে গিয়ে বাচ্চাটিকে আদর করে দিলাম। বাচ্চাটি দেখি আমার সাথে আরও বেশী মজা করছে। এবার আমি বাচ্চাটির মায়ের দিকে তাকালাম। লক্ষ্য করলাম, আরে, এটা তো সে মহিলা যে বাসে চিৎকার করছিল।

মহিলাটিকে জিজ্ঞাসা করলাম বাসে কি হয়েছিল। মহিলাটির বিবরণে জানলাম, আমি যা ধারণা করেছিলাম তাই। মহিলাটি জানালো, বাসে উঠার পর থেকেই পোলাপান-গুলো তাকে এটা ওটা জিজ্ঞাসা করছিল। পরে সান্টিং দেয়াতে আর ঝামেলা করেনি। মহিলাটি
নামবে যশোর। বাবার বাড়ি যাবে। ওনার হাসবেন্ডের অফিসিয়াল সমস্যা থাকার কারণে সে তার সাথে আসতে পারেনি। শুধু কাজের মেয়েটাকে নিয়ে ও যশোর যাচ্ছিল।
আমি মহিলার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মহিলা বয়সে আমার থেকে বড় হবে না। জানালো, এটাই উনার প্রথম বাচ্চা।

ততক্ষণে বাচ্চাটি আমার কোলে এসে গেছে। কোন মতেই আর মায়ের কোলে যাবে না। আপুটি জানালো, "অর্ণা (বাচ্চাটির নাম)" খুব সহজে কাউকে পছন্দ করে না। আমি আপুটিকে বললাম, "বাহ! তাহলে তো আমি বেশ নাকি"
আপুটি এবং আমি দুজনেই হসে উঠলাম।

রাতের বেলা ফেরি পারাপারের মজাটা অন্য ধরণের। ইঞ্জিনের হাল্কা একটা আওয়াজ এবং পানির শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দ শুনা যায় না। এ ছোট্ট সময়টার মধ্যে নিজেক নিয়ে অনেক ভাবা যায়। দূরে তাকালে অন্য কোন ফেরি বা লঞ্চে থেকে আসা মৃদু কিছু আলো চোখে পড়ে। অসাধারণ একটা অনুভূতি হয়।

ফেরি পারাপারের পুরো সময়টা অর্ণা আমার সাথে ছিল। কোন মতেই তার মায়ের কোলে যায়নি। ফেরি থেকে নেমে বাস আবার যেতে শুরু করল। বাস চালুর এক ঘণ্টা পরেও অর্ণা আমার কোল থেকে নামেনি।
পরে অর্ণার ঘুম চলে আসলে, ওর মা ওকে নিয়ে যায়।

কেন জানি সেদিন আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। কতক্ষণ ঘুমালাম জানি না। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম বাস যশোর ছেড়ে এসেছে। অর্ণাদের ২ টা সিটের দিকে তাকালাম। দেখি সিট ২টি খালি। তারা নেমে পড়েছে। আমি এটা দেখে মৃদু একটু হাসলাম। ভাবলাম, এভাবে হয়তো সবাই চলে যায়। চলে যাওয়াটাও প্রকৃতির একটা ব্যালেন্সিং।
ভাবলাম, অর্ণা কি আমাকে কখনো মনে রাখবে? হোক না তাহা ২ থেকে আড়াই ঘণ্টার একটা সম্পর্ক। আবার মনে মনে হেসে উঠলাম, তা কি করে হয়!!!

ভাবলাম, অর্ণারা বড় হচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্তে। আর ইকবালরা বৃদ্ধ হচ্ছে পৃথিবীর আরেক প্রান্তে। প্রকৃতি এটাই নির্ধারণ করে দিয়েছে।
আমি এটাও জানি, অর্ণা বা অর্ণাদের সাথে ইকবালের আর কোন দিন দেখা হবে না।
আমি খালি ২টা সিটের দিকে তাকিয়েই থাকলাম। মৃদু হাসির মধ্যে হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল।
এটা ছিল ২০১২ এর ঘটনা...

(আজ পরীক্ষা দিয়ে আসার সময় বাসে একটা পিচ্চিকে প্রায় ১ ঘণ্টা আমার কোলে রেখেছি। আমার কোলে সে অনেক মজা করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আজও আবার আরেক জন অর্ণাকে বিদায় দিতে হল)।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: বাহ! খুব আবেগী লেখা। +++

ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।

১৩ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৪৮

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.