নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকবাল সুমন

"ঘোড়ার ডিমের খোঁজে নয়, ডিমওয়ালা-ঘোড়ার খোঁজে...

ইকবাল হোসাইন সুমন

আমি ইকবাল সুমন। মাঝে মাঝে টুকটাক লিখা লিখি করি। এছাড়া কোন কিছু করি না।

ইকবাল হোসাইন সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিরকুট - ০৫‬

১৩ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৩৯

"পিছনের দিক থেকে কে যেন আমাকে নাম ধরে ডাকল। আমি অবাক হয়ে পিছনের দিকে তাকালাম।
দেখলাম, বাবু ভাই আমাকে ডাকছে।
আমাকে নাম ধরে ডাকাতে অবাক হওয়ার কোন কারণ নাই। কিন্তু বাবু ভাই আমাকে কখনো নাম ধরে "তুই" করে ডাকেননি। উনি আমাকে "তুমি" করেই ডাকতো। আমার অবাক হওয়ার কারণ এটাই।

-তুই চা খাবি না?
-জি ভাই, চা খাব। চা খাবার জন্যই আসছি।
-তাহলে আমার জন্য একটা চা আনতে বল। আমার কাছে টাকা নাই।

আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হঠাৎ করে বাবু ভাইয়ের কি হল!!! সে তো চা খুঁজে খাওয়ার মানুষ না!!! বাজারে তাদের কাঠের বড় দোকান। বেশ টাকা পয়সার মালিক।

তাও আমি ৩ কাপ চায়ের জন্য বললাম তাহের ভাইকে (তাহের ভাই চায়ের দোকানের মালিক)।
আমার এক ফ্রেন্ড আমার সাথে ছিল।

চা আনতে আনতে দেখলাম বাবু ভাই চলে গেছে। তাকিয়ে দেখলাম অনেকটা দূরে চলে গেছে। হেটে চলে যাওয়ার ধরণটা একদম অন্য রকম, একদম অগোছালো ছিল।

ফ্রেন্ড বলল, "২০/২৫ দিন আগে থেকে হঠাৎ করে বাবু ভাই এমনটা হয়ে গেছে। একদম পাগল অবস্থা। পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ায়, এর-ওর কাছ থেকে এটা ওটা চেয়ে খায়। প্রায় দিন ঘরে বেঁধে রাখা হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে ঘর থেকে বের হয়ে যায়"।

আমি ঘটনাটা শুনে অনেক কষ্ট পেলাম। বাবু ভাই আমার কলেজেরও সিনিয়র ভাই। আমাকে বেশ স্নেহ করতেন। আবার উনার সাথে যে আপুটার রিলেশন ছিল। সে আপুটার সাথেও আমার পরিচয় ছিল।
আমি মনে মনে ভেবে নিলাম হয়তো রিলেশন-গত কারণে এ সমস্যাটা হতে পারে।

কয়েকদিন পরে কলেজেই সেই আপুটার সাথে দেখা। আপুকে অনুরোধ করলাম কলেজ শেষ হওয়ার পরে আমার সাথে একটু কথা বলতে। কলেজ শেষে আপুর সাথে এ ব্যাপারে অনেকক্ষণ কথা হল। আপু, জানালো, রিলেশন-গত কারণে বাবুর এ ধরণের কোন সমস্যা হয়নি। তিনি জানেনও না এটা কেন হয়েছে। আপু আরও জানালেন, যতদিন বাবু সুস্ত না হবে ততদিন উনি অপেক্ষা করবেন।
(এটা আমার HSC এর সময়ের ঘটনা)

এরও প্রায় ২ বছর পরে আমি কি কারণে যেন গ্রামে আসি। বাস থেকে নেমেই দেখলাম, কফিনে করে কার যেন লাশ নিয়ে যাচ্ছে। জানাজার জন্য লাশের পিছনে আমার এক পরিচিত জনের সাথে দেখা হল। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কার লাশ?.
উনি বলল, বাবুর লাশ। রোড এক্সিডেন্ট করেছে।
সময় সাপেক্ষতার জন্য সেদিন বাবু ভাইয়ের জানাজায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি।

গত বছর গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। হঠাৎ সেই আপুটার সাথে দেখা হয়ে গেল। আপুটার ৩ বছরের বাচ্চাটা তার সাথেই ছিল। দেখতে খুবেই কিউট। নাম অভ্র।
আপু, আমাকে জানালা, উনি বাবু ভাইয়ের জন্য ২ বছরই অপেক্ষা করেছেন। বাবু ভাইয়ের মৃত্যুর ৩ বছর পর্যন্ত তাকে বিয়ে করতে কেউ রাজি করাতে পারেননি। এর পরে বাবা মায়ের কথা ভেবেই তিনি বিয়েটা করেন।
আপুকে জিজ্ঞাসা করলাম, হ্যাপি কি না?
আপু বলল, বলতে পার।
-বাবু ভাইকে মনে পড়ে?
-সব সময়। আর আমি যদি কখনো ভুলেও যাই, অভ্রর বাবা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বিয়ে আগেই আমি তাকে সব বলেছি। আমার বাসায় বাবুর একটা ছবিও টাঙ্গানো আছে।

আমি অভ্রর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। তারপর আপু বললাম, বাবু ভাই থাকলেও তোমার বাচ্চাটা এমনি হত।

আপুটা একটু মৃদু হাসল। কিন্তু আমি বুঝে নিলাম, এটা কান্না-মিশ্রিত একটা হাসি। এ হাসিটা দেখেই আরও বুঝে নিলাম, বাবুদের আপেক্ষিক মৃত্যু হলেও, স্থায়ী মৃত্যু হয় না। তারা তাদের প্রিয় মানুষগুলোর মধ্যেই বেঁচে থাকে"।

(সুনির্দিষ্ট কারণে আপুটার নাম উল্লেখ করা হয়নি)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:১৮

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: বাবুদের আপেক্ষিক মৃত্যু হলেও, স্থায়ী মৃত্যু হয় না। তারা তাদের প্রিয় মানুষগুলোর মধ্যেই বেঁচে থাকে"।[/sb

আপুর স্বামীর প্রতি স্যালুট। ভালো থাকুক তারা। আপনিও ভালো থাকবেন, শুভকামনা।

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:১০

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.