নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাকিস্তান এবং আমার অনুভূতি

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫

ছোটবেলা থেকেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প উপন্যাস পড়ার অভ্যাসের কারণেই আমি 'পাকিস্তান' নামক দেশটাকে কখনোই মন থেকে মানতে পারিনি। সেটা সাধারণ বিষয়েই হোক আর খেলাই হোক। আমার যুক্তি খুবই সরল ছিল। যে পাকিস্তান আমাদের এতগুলা মানুষ মেরে ফেললো, এতভাবে অত্যাচার করলো তাদের কেন জানি আমি মন থেকে ক্ষমা করতে পারিনি। ব্যাপারটা অদ্ভুত। কারণ আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। আমার কাছের কাউকে হারাইনি। তারপরো আমার কাছে কেন যেন মনে হত যে আমারি দেশের কোন মায়ের ছেলে মারা গেছে, কোন ছেলের বাব মারা গেছে, মা-বোনদের উপর পাশবিক অত্যাচার হয়েছে। আল্লাহ না করুক!! যদি এরকম আমাদের কারো সাথে হত আমরা কি 'পাকিস্তান' নামক দেশটাকে খুব সহজে মেনে নিতে পারতাম? সম্ভব হতো কি?



কথাগুলো খুব আবেগী। এটাও খুব অদ্ভুত যে মানুষ হিসেবে আমি একটুও আবেগী না। তবুও কেন জানি এই জায়গায় আমার আবেগটা আজব রকম কাজ করে।



ছোটবেলা থেকেই একটা জিনিস খুব লক্ষ্য করতাম। তা হলো আমাদের দেশের মানুষদের অতিরিক্ত রকম পাকিস্তানপ্রীতি। এর প্রকাশ ঘটত খেলার বেলাতেই বেশি। এর পিছনেও যুক্তি আছে। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মভীরু। একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে ধর্মের কারণেই সমর্থন জানায়। তা যতই তারা আমাদেরকে অতীতে অত্যাচার অপমান করে আসুক না কেন! স্কুলে থাকতে বহুবার সহপাঠীদের সাথে তর্ক করেছি যে ‘পাকিস্তান’- এর মত দেশকে কেন তারা খেলাতেও সাপোর্ট করবে? তাদের উত্তরটা আসত পাল্টা একটা প্রশ্ন দিয়ে। ‘খেলার মধ্যে রাজনীতি আনো কেন?’ আমি ঠিক সদুত্তর করতে পারতাম না। এলোপাথাড়ি ঝগড়া করে যেতাম। তারা বলতো পাকিস্তানি প্লেয়াররা তো আর ৭১ এ যুদ্ধ করে নাই!!! এর উত্তরও ছিল আমার এলোপাথাড়ি ঝগড়া।



পুরো ব্যাপারটাই ছিল আমার কাছে অদ্ভুত রকমের আবেগী। আমার মন থেকে এই অদ্ভুত আবেগী যুক্তিই বের হতো যে যারা আমাদের অস্তিত্ব চায় নাই, ‘বাংলাদেশ’ নামক একটা দেশ হোক তা চায় নাই। আজ এত বছর ধরে আমরা কিভাবে তাদের দেশের নাম করে ‘পাকিস্তান পাকিস্তান’ করে ধ্বনি উঠাচ্ছি? হোক সেটা খেলার মাঠ। আমাদের কি এতই আত্মসম্মানবোধের অভাব? ৭১ এ তো এই মুসলমান পরিচয়ের জন্য কাউকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়নি যেখানে বাংলার বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান।



জানি যুক্তিগুলো কেমন জানি খোঁড়া। কিন্তু অবুঝ মানুষের আবেগী মন তো! সে তার মত বুঝ দিয়েই যায়। পাকিস্তানের প্রতি উদারতা রাখা অনেক লোক আমাকে বলেছে যে সেই ৭১ এর কথা ভেবে ওঁদের অপছন্দ করার মানে নেই। ওঁদের ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। ক্ষমা?? এই আমি যদি ৭১ এ থাকতাম। এই আমার বাবা কে মেরে ফেলা হত, আমার বোনকে আমার চোখের সামনে ধর্ষণ করা হত, তখন কি এত সহজে ক্ষমার কথা মুখেও আনতে পারতাম? কিন্তু আমার সাথে এসব ঘটেনি। ঘটলে কি অনুভূতি হয় তা হাজার চেষ্টা করেও আমি অনুভব করতে পারব না। কিন্তু তাই বলে কি আমাদের সাধারণ চক্ষুলজ্জাও থাকবে না? আমার দেশের মা বোনের কষ্ট লজ্জার কি কোন দাম আমরা দিব না? যারা এখন পর্যন্ত আমাদের উপর করা অত্যাচারের দায়ভার পর্যন্ত এখনো নেয় না, জাতি হিসেবে আমাদের কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চায় না, তাদের আমরা এত সহজে ক্ষমা করে দিতে পারি!!!! যাদের টেক্সটবুক-এ এখনো বলা হয় ৭১ এ ভারতের সাথে তাদের যুদ্ধ হয়েছিল তাদের প্রতি আমাদের মমতার শেষ নাই।



যে বছর বাংলাদেশে ওয়ার্ল্ড কাপ এর খেলা হলো সেই বছর কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা দেখতে গিয়েছিলাম মাঠে। খেলা ছিল নিউজিল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে। দিনটি ছিল ২৫শে মার্চ। খেলা শেষে রাতে এক লোক একটা বড় ব্যানার নিয়ে আসল। তাতে লেখা ‘ পাকিস্তান জিন্দাবাদ’। তার নিচে পাকিস্তান ভারতকে হারাবে সে সম্পর্কে লিখা। আমি লোকটাকে অনুরোধ করলাম যে ‘ভাই! আজকে ২৫শে মার্চ। আজকে এটা কইরেন না।‘ লোকটা আমাকে ‘ভারতের দালাল’ টালাল বলে একগাদা গালি গালাজ করলো। আমিও জবাবে বললাম “ভারতের দালালগিরি করার কোন শখ আমার নাই কিন্তু এটা আমাদের কালরাত্রি।“ সাথে থাকা বন্ধু আমাকে থামাল। কারণ আশেপাশে পাকিস্তানপন্থী লোকজন ভরা। এরা সরাসরি কিছু বলছেনা আমাদের, কিন্তু তাদের নীরবতাই আমাকে বুঝায় দিল।



তাই কেন জানি এখনও ফেসবুক-এ কোন বাঙালীর স্ট্যাটাস এ পাকিস্তান বন্দনা আমি ঠিক গ্রহণ করতে পারিনা। উদ্ভট মানুষের উদ্ভট গ্রহণযোগ্যতা আর কি!



আমি বলছিনা সবাইকে যে আপনারা পাকিস্তানকে ঘৃণা করুন। সবাই তো আর আমার মত উদ্ভট না। কিন্তু জাতি হিসেবে আমাদের আত্মসম্মানবোধ আর চক্ষুলজ্জাটুকু যেন থাকে। আমার মত উদ্ভট যারা তাদের পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি যে যেদিন পাকিস্তান জাতি হিসেবে (পাকিস্তানের কোন প্রতিষ্ঠান না) আমাদের কাছে ক্ষমা চাইবে সেদিন হয়তো তাদের নতুন প্রজন্মের উপর থেকে দায়ভার উঠে যাবে। নতুবা আমার উদ্ভট মনের বিশ্বাস যে পাকিস্তানের নৈতিক অবক্ষয় (যা আগেও ছিল এখনো আছে) এবং তাদের দেশের পরিস্থিতি খারাপ ই হবে। অনেকেই এই জায়গায় বলবে যে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাও কি ওদের চেয়ে ভালো? উত্তরে বলব যে এখন এর অবস্থার মূল উৎপত্তিস্থল সেই পাকিস্তানের বপন করে যাওয়া বীজ ই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত অবস্থা এরকম এ থাকবে। “পাকিস্তানের প্রেতাত্মা” এর জন্য প্রকৃত ওঝা না আসলে এই শাপ থেকে আমাদের মুক্তি নেই।



যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির সাথে সাথে আমি আরেকটা দাবি রাখতে চাই। জানি না সেটা আইনত সম্ভব কিনা! সেইসব পাকিস্তানিদের বিচার করা হোক যারা আমাদের নারী ও শিশুদের হত্যা ও তাদের উপর অত্যাচার করেছে। তাদের কি আন্তর্জাতিকভাবেও বিচার করা সম্ভব না? এই প্রশ্ন দিয়েই উদ্ভট লিখাটা শেষ করলাম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২

অন্ধ জনা বলেছেন: আমার নিজের মনের কথা গুলো দেখি অকপটে লিখে ফেলেছেন। ধন্যবাদ সাথে ভাললাগা।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:০২

আদনান০৫০৫ বলেছেন: আপনার মত এক্কেবারে একই রকম অনুভূতি আমার। তবে আমি অনেক উগ্র আচরণ করি এই ব্যাপারে। আপ্নার ফেসবুকে আপ্নি লোকদের পাকিস্তানপ্রীত স্ট্যাটাস দেখেন - আমি দেখিনা। কারণ আমার ইনফোতে লেখা -
"পাকিস্তান বা পাকিস্তানের মানুষ - হোক সেটা নিরীহ কোনো ক্রিকেটার - এসবের প্রেমে মশগুল কেউ প্লিজ আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবেননা। আমার বাসা যে এলাকায় সেখানে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি - ছোটবেলায় ক্রিকেট ফুটবল খেলতে যে মাঠে যেতাম সেখানে ছিলো ৭১-এর নৃশংসতার অনেক প্রমাণ... তাই পাইক্যা কিছু দেখলেই আমার গা জ্বলে। আমার চোখের সামনে ফেসবুক বারবার সাজেশান পাঠাবে ঐ পাইক্যা পেজগুলার, কারণ আমার ফ্রেন্ডলিস্টের কেউ ঐসব পছন্দ করেছে - এইটা আমি চাইনা। আর পাকিস্তানিদের প্রতি আমার আচরণ যতটা বিরুপ, তার চেয়ে অনেক বেশি বিরুপ পাকি ...চোষাদের প্রতি"

এটা দেখেও অনেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়, আমি যদি তাদের লাইক-এ গিয়ে পাকিস্তানের কাউকে না দেখি তাহলেই একসেপ্ট করি। তারপরেও কিছু আছে - তারা ঠিকই সময়মত প্রেম ছড়ায়- কঠোরভাবে শাসন করি তখন... আমাকে তখন এক্সট্রিম বলে- আসলে আমি কেয়ারই করিনা। একসময় বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলতোনা- এখন বেশ ভালোই খেলে। তাই পাকিস্তান সাপোর্ট করার কোনো যুক্তিই নাই। আমি ছোটবেলা থেকেই অস্ট্রেলিয়া সাপোর্ট করি - এখন তাও করিনা। এই ব্যাপারে কারো কোনো যুক্তিই গ্রহণযোগ্য না।

আর ব্যাপারটা অতটা সিম্পলও না... দেশের বাইরে আসার পর থেকে দেখি সেই পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলা লোকেরা কেম্ন আচরণ করে... যখন নেপাল, ভূটানের মত দেশের নামও ইউরোপের লোকেরা চেনে তখনো বাংলাদেশের নাম চেনেনা - কারণ বাইরে আসা বাংলাদেশিদের গোলামী মেন্টালিটি।

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:১৭

ডাঃ এন এইচ সার্জা বলেছেন: চমৎকার। ঠিক আমার চিন্তাভাবনার সাথে ১০০% ই মিলে গেলো। আমার ও খুব কাছের কেউ যুদ্ধে মারা যায়নি তাই বলে আমি/আমরা যাদের আত্মত্যাগ করতে হলো তাদের কথা ভুলে যাবো।

ইন্টারনেট এ টুইটারে আমার কিছু পাকিস্তানি ফলোয়ার আছে। ব্যক্তিগত পাকিস্তানি কারো সাথে আমার বিরোধ নেই কিন্তু যদি কখনো ন্যাশনাল ভাবে কাউকে সাপোর্ট করার কথা আসে তখন পাকিদের কোনো ভাবেই সাপোর্ট করা যায়না যদি আত্মসম্মানবোধ বলে কিছু থাকে।

আর খেলার ক্ষেত্রেও সেই একই ব্যপার পাকিদের সাপোর্ট করা যায়না। ক্রিকেটীয় ব্যপারে আমার অবস্থান আমি বাংলাদেশের সাপোর্টার এর পর আমি পাকি ছাড়া যেকোনো দেশের সাপোর্টার। আর ধর্মের কথা বললে প্রয়োজনে আফগান কে সাপোর্ট করবো কিন্তু পাকি নয়। কিন্তু ওয়াসিম আকরাম আমার খুব ফেবারেট সিমার, ব্যপার হচ্ছে ঐ যে পাকি কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে সমর্থনে আমি ঝামেলার কিছু দেখিনা আমার কথা জাতীয় ভাবে তাদের সমর্থন করা যায় না।

আর, যারা বলে যে, খেলার ভিতর রাজনীতি না টানতে তাদের কিন্তু অতিসত্ত্বর কোনো ভালো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করা উচিত, কেননা একটা যুদ্ধে যেখানে নিরস্ত্র জাতির উপর নির্বিচারে গণহত্যা করা হলো এটা যাদের কাছে নিছকই রাজনৈতিক মনে হয় তাদের সাইকিক চিকিৎসার আশু প্রয়োজন আছে।

৪| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪৯

আশিকুর রহমান ১ বলেছেন: নাপাকিস্তান যতদিন বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চাইবে না এবং আমাদের সকল ক্ষতিপূরন দিবে না তত দিন অন্তর থেকেই এই নাপাক ভূমিকে ঘৃনা করে যাবো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.