নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গণজাগরণ মঞ্চ এবং আমার ভাবনা

০৭ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৫৬

ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিবিদ মানে দেখে এসেছি চেঁচিয়ে কথা বলা। অভদ্রভাবে কথা বলা। একে অপরকে অসম্মান করে কথা বলা। সারাক্ষণ অন্যের দোষ বলা। অথচ আমরা সবাই বাসায় বাবা মা এর কাছ থেকে শিখেছি যে চেঁচিয়ে কথা বলা ঠিক না, ছোট বড় সবার প্রতি নমনীয় ভঙ্গিতে কথা বলা উচিৎ এবং সবসময় একে অপরকে দোষারোপ করা উচিৎ না। বিশেষ করে শেষ উপদেশটা পিঠাপিঠি ভাই-বোনদের জন্য বলা হত। মাঝে মাঝে অবাক লাগত এই ভেবে যে এদের কি এদের বাবা মা এসব শিখায় নাই!!! অথচ এরাই দেশ চালায় এবং চালাবে। দুঃখজনক।



যাইহোক!!! ছোটবেলা থেকে মাঝারিবেলা আসলো। একই দৃশ্যপট। মাঝারিবেলা থেকে এখন বড়বেলায় ঢুকব। সেই একই ব্যাপার শেপার। আমার মত বাকিরাও সব ঢুলুঢুলু চোখে এদের কাণ্ডকারখানা দেখে আর হাই তোলে। আবার অনেকে বোকার মত এদের কথাবার্তা ধরে নিজেদের মধ্যেই ঝগড়াঝাঁটি করে। কিন্তু কিছুটা পরিবর্তন হঠাৎ করেই এলো যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের দাবিতে। ‘পরিবর্তন’ কেন মনে হলো? কারণ আমার মত ঢুলুঢুলু করে তাকিয়ে থাকা বহু লোক চোখ কচলে ভালো করে তাকাল। তাকানোর আরও একটা কারণ হল দাবিটা ঠিক রাজনৈতিক নয়। বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার দাবি। তাই আমরা অনেকেই এই দাবিতে গলা মিলালাম। গড়ে উঠলো ‘গণজাগরণ মঞ্চ’।



‘গণজাগরণ মঞ্চ’ নিয়ে বহু মানুষের বহু রকমের মতামত। ইতিবাচক নেতিবাচক দুই-ই। আমি নিজে একজন প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী। তাই ইতিবাচক কথা বলে বিরক্ত করবো না। নেতিবাচক কথা কী কী বলে অন্যেরা তা তুলে ধরছি।

- গণজাগরণ মঞ্চ আসলে সরকারের মঞ্চ

- গণজাগরণ মঞ্চে নেশা করা হয়

- গণজাগরণ মঞ্চে রাতে বেলেল্লাপনা হয়

- গণজাগরণ মঞ্চ আসলে গভীর ষড়যন্ত্রমূলক মঞ্চ

- গণজাগরণ মঞ্চ নাস্তিকদের মঞ্চ

- গণজাগরণ মঞ্চের মূল উদ্দেশ্য হল ইসলামের অবমাননা

এরকম আরো অনেক অনেক অভিযোগ। কিছু অভিযোগ আমি খণ্ডন করতে চাই। আমি বহুদিন শাহবাগে আন্দোলনে গিয়েছি। রাতে থেকেছি। আমি কোনরূপ নেশা ভাঙ করতে দেখি নাই। বেলেল্লাপনাও দেখি নাই। তবে এটা সরকারের মঞ্চ কিনা বা আরও অনেক অনেক অভিযোগ সত্যি কিনা তা সম্পর্কে আমার মতামত থাকলেও কোন প্রমাণ নাই। তাই এ নিয়ে কিছু বলবো না। আমি বলবো অন্য কথা।



তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম যে যাবতীয় নেতিবাচক কথাগুলো ঠিক। কিন্তু তারপরও আমি অনেক ইতিবাচক কিছু আমি দেখেছি এই মঞ্চে।

- সুন্দর সাবলীল ভদ্র ভাষায় নিজেদের দাবি-দাওয়া কিভাবে তুলে ধরতে হয় তা রাজনীতিবিদদের শেখা উচিৎ গণজাগরণ মঞ্চ থেকে।

- যে কোন রাজনৈতিক সমাবেশে বিশৃঙ্খলা হয় এবং সমাবেশ করা দল কখনো সেই বিশৃঙ্খলার দায়ভার নেয় না। এই মঞ্চে এরকম বিশৃঙ্খলা, মারামারি, ককটেল বিস্ফোরন হয় নাই। কাউকে লাঞ্ছিত হতে হয় নাই। গাড়ি ভাঙচুর হয় নাই।

- বারবার নাস্তিক অধার্মিক বলা সত্ত্বেও একবারও নিজেদের ধৈর্যহারা হয়নি এ মঞ্চ। আলোচনা করতে চেয়েছে।

- তথাকথিত রাজনীতিবিদদের মত অযৌক্তিক হাস্যকর খেলো কথা বলে নাই।

- ভদ্রতা বিনয় দিয়েও যে অনেক জোরাল আন্দোলন যে এই ২০১৩ তেও সম্ভব তার প্রমাণ গণজাগরণ মঞ্চ।

তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম যে এই মঞ্চ একটা বানোয়াট মঞ্চ। তারপরো এই মঞ্চ কারো কোন ক্ষতি করে নাই। এমনকি বাকি সব দল নিজেদের কুলাঙ্গারদের সামলাতে পারে না। সেই কুলাঙ্গাররা গাড়ি ভাঙ্গে। ককটেল ফাটায়। মানুষ মারে। অতঃপর সেই দলের লোকেরা বলে “ওঁরা আমাদের দলের নয়”। গণজাগরণ মঞ্চে এরকম কিছু ঘটেনি।

গণজাগরণ মঞ্চ যদি ভুয়াও হয় তবে তা ভুয়ার বাজারে সবচেয়ে কম ভুয়া। এটাকে অস্বীকার করার কোন উপায় আমাদের নাই। যারা এই মঞ্চকে পছন্দ করেন না তারাও মানতে বাধ্য হবেন যে অন্তত এরা ভালোভাবে কথা বলতে জানে যেটা আর কোন রাজনৈতিক দল জানে না।



তারপরো গণজাগরণ মঞ্চের সেরকম কোন দোষ খুঁজে না পেয়ে বহু মানুষ রাগান্বিত। এতে আমি বিস্মিত নই। এটা মানব জাতির চিরাচরিত অভ্যাস। আমার এক তথাকথিত ফেসবুক বন্ধু স্ট্যাটাস এ বলেছে, " হেফাজত এ ইসলামের ২৫০০ মানুষ মারা গেলো, গণজাগরণ মঞ্চের কেউ কিছু বলল না। যদি গণজাগরণ মঞ্চের একজনো মারা যেত তাহলে নাকি দেশ টিকতে পারতো না। " স্ট্যাটাস টা পড়ে আমার একটু হাসিই পেয়েছে। কারণ এক অর্থে এখানে গণজাগরণ মঞ্চের প্রশংশাই করা হয়েছে। তারা কতটা প্রতিবাদি এবং একতাবদ্ধ। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামির সমর্থকরা কতটা ফেসবুক প্রতিবাদি যে ফেসবুক এই দায়িত্ব শেষ করে ফেলতে চায়।



হেফাজতিদের মৃত্যুতে আমি আনন্দিত নই। মৃত্যুতে আনন্দিত হওয়ার মত কিছু নেই। কিন্তু মানুষ কখনোই পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। তার পছন্দ অপছন্দ কোন একদিকে ঝুঁকে পরেই। হেফাজতিদের নাম করে যে বলা হচ্ছে যে এরাই তাণ্ডব করেছে এ দিয়ে আমি তাদের বিচার করবো না। রাজনীতির খেলায় কাদের কোথায় কখন ব্যবহার করা হয় তা আমি জানি না। তাই না জেনে আমি কাউকে দোষারোপ করবো না। তবে তাদের ভাষণ, সমাবেশ যা দেখেছি, তাতে কোন নমনীয়তা দেখিনি। হিংসাই চোখে পড়েছে। মানুষের শারীরিক ভাষাও অনেক কিছু ইঙ্গিত করে। তাই তাদের দলের কর্মীদের মৃত্যুর জন্য বড়জোর দুঃখ প্রকাশ করতে পারি। কারণ একজন গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থনকারী হিসেবে তাদের জন্য রাস্তায় আমি নামবো না। যেখানে তারা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের সাথে আলোচনা পর্যন্ত করতে রাজি হয়নি। যেটা করলে আজকের এই অবস্থায় দেশ আসতো না বলে আমি মনে করি।



শুরুতে যা বলছিলাম তাই দিয়েই শেষ করবো। গণজাগরণ মঞ্চ একটা ভুয়া। ফালতু। সব মানলাম। কিন্তু এর কোন প্রমাণ নেই। যেদিন প্রমাণ হবে সেদিন থেকে এই মঞ্চের হয়ে কথা বলব না। অনেকে বলেন উপরে উপরে সবাই ভালো। কথাটা ভুল। আমাদের কোন দল সেটা আওয়ামীলীগ বলেন বিএনপি বলেন উপরে উপরেও ভালো না। এরা সবাই রাজনীতির এই নিষ্ঠুর খেলায় নিষ্ঠুর হয়ে গেছেন। তাই যেহেতু আর কেউ 'মুখে মুখে' বা 'উপরে উপরে' ভালো নাই, তাই গণজাগরণ মঞ্চই ভালো আমার কাছে। অতুলনীয়ও। কারণ বাকি সবাই(হেফাজতসহ) নামে বেনামে ধ্বংসের খেলা খেলেছে। গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিবাদ করেছে, সেবা করেছে (সাভার), ধ্বংস করেনি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.