নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

খটখটে!!!

০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৪৮

আমি আর আপু যখন খুব ছোট তখন আমাদের মা মারা গেল। মা মারা গেলে ঠিক কি রকম দুঃখ হয় তা বোঝার মত বয়স আমাদের ছিল না। আমাদের বাবা আমাদের মা মারা যাওয়ার ঠিক এক বছরের মধ্যে আরেকটা বিয়ে করল। আমাদের নতুন মা দেখতে ভালই। বাবা সামনে থাকলে আমাদের অনেক আদর করত। কিন্তু বাবা বেশীরভাগ সময়েই অফিস এর কাজে বাইরে বাইরে থাকত। তাই আমরা আসলে কেমন আছি তা বাবা কখনো জানতেন না। সেই ছোটবেলা থেকেই কেন জানি আমি বাবার উপর খুব অভিমান করে ছিলাম। অভিমানগুলো খুব ছোট ছোট কারণে। কিন্তু অনেক ছোট ছোট অভিমান জমে বড় একটা অভিমানের দলা হয়েছিল। বাবা কেন এই অভিমান বুঝত না তার জন্যও আমার খুব অভিমান হত। আমার কেন যেন মনে হত যে বাবা ইচ্ছা করে আমাদের থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সে হয়তো জানে আমার অভিমানের কথা।



আপুর তেমন কোন অভিমান ছিল না। সে সবকিছু খুব সহজে মেনে নিতে পারত। আমরা দুই বোন স্কুল এ নিজেদের নাস্তা নিজেরা বানিয়ে নিতাম। আমাদের নতুন মা আমাদের কখনো নাস্তা বানিয়ে দিত না। না না দিত। শুধু শনিবার বানিয়ে দিত। কারণ শনিবার বাবা বাসায় থাকতেন। ওইদিন আমাদের অনেক যত্ন হত। আমরা কখনো বাবাকে কিছু জানাইনি। বুঝতে দেইনি। আমাদের দুই বোনের মধ্যে এই নিয়ে বোঝাপড়া ছিল। আমরা কখনো বাবাকে কিছু বলবনা। তাও কেন জানি আমি মিছে আশা করতাম যে বাবা সব বুঝে যাবে। তাই-ই হয়তো আমার এত অভিমান।



আমি পড়াশোনায় সবসময় ভালো ছিলাম। এটা আমার একটা জিদ ছিল। আমার একটা আশা ছিল যে ভালোভাবে পড়াশোনা করলে বাবা আমাদের দিকে ফিরে তাকাবে। আমাদের কথা ভাববে। কিন্তু বাবা দূরে দূরেই থাকত। আপু পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিল না। আপু সবকিছুকে খুব সহজে গ্রহণ করতে পারত। বাস্তবতাকে গ্রহণ করার মধ্যে তার দক্ষতা ছিল। যা আমার ছিল না। আমি লড়তে চাইতাম। লড়তে লড়তেই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলাম। হলে উঠলাম। বাসা থেকে দূরে এসে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।



মানুষের জীবনে যত খারাপ ঘটনা ঘটে, যত দুঃখ। সব খারাপ ঘটনা আর দুঃখ মানুষকে কিছু না কিছু শিখিয়ে যায়। মানুষকে শক্ত করে তোলে। মানুষকে সামনে এগিয়ে যেতে প্রেরণা জোগায়। আবার কিছু কিছু কেড়েও নেয়। যেমন আমার মধ্যের আবেগ যেন আর ১০টা মানুষের চেয়ে যেন কম। কোনকিছুই আমাকে তেমন আবেগতাড়িত করে না। হলের রুমমেট মেয়েটা যখন তার ছেলে বন্ধুর সাথে ঝগড়া করে কাঁদে। তখন মেয়েটাকে আমার খুবই ন্যাকা মনে হয়। মনে হয় যে এদের জীবনে আসলে সত্যিকারের দুঃখ নেই। তাই এরা দুঃখের অভাব দূর করার জন্য দুঃখের সৃষ্টি করে।



আমি সামনে কি করব। আমার জীবনের লক্ষ্য কি আমি জানি না। আমি খালি জানি আমি বাসায় ফেরত যাব না। তার জন্য যা করতে হয় আমি করব। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে থাকতেই চাকরীর জন্য পড়াশোনা শুরু করে দিলাম। ওইদিকে আপুর জন্য ছেলে দেখা চলছিল।



একটা নির্দিষ্ট বয়সে প্রেম ভালোবাসা আমাদের সবার জীবনেই আসে। আমার জীবনে আমি এর কোন প্রয়োজন অনুভব করিনি। বহু ছেলে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। আমি সাড়া দেইনি। আমার মনে হয়নি আমার এ ধরনের বিলাসিতা করার কোন অধিকার আছে।



মাঝে মাঝে আমার খুব ইচ্ছা হত এমন কিছু করতে যাতে বাবা খুব কষ্ট পায়। তাকে দেওয়া কষ্ট যেন আমার অভিমানগুলোর প্রতিশোধ। বাবা কখনো আমাদের খেয়াল করেনি। এই জন্য প্রতিশোধ। ক্লাস টু-তে পড়ার সময় আমদের মা মারা গেল। তখন আমরা স্কুলে যাওয়ার জন্য ২০ টাকা পেতাম। এর পরের ১০ বছরও আমরা ২০ টাকা দিয়েই স্কুলে যেতাম। বাবা কোনদিন আমাদের একবার জিজ্ঞেস করেনি আমাদের এই ২০ টাকায় হয় কি না!!! আমাদের নতুন মা আমাদের কখনো খাওয়ার সময় ডাকত না। আমরা নিজেদের খাবার নিজেরা বেড়ে খেতাম। আমাদের কত জ্বর হত। কোনদিন কেউ আমাদের কপালে একবারের জন্যও হাত বুলায়নি। বাবা হয়তো জানতও না আমাদের জ্বর। আমাদের নতুন মা জানতে দিত না।



অভিমানের বোঝা নিয়েই আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকরী জীবন শুরু করি। দেখতে আমি কেমন ছিলাম তা সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা ছিল না। রূপচর্চা করার মত মন মানসিকতা কখনো আমার হয়নি। কিন্তু পুরুষদের উৎপাতে বুঝতে পারলাম যে দেখতে খুব খারাপ আমি নই। কিন্তু কেন জানি ভিতর থেকে সেই তাড়না কখনো অনুভব করতাম না। ভিতরটা যেন শুষ্ক। একদম খটখটে।



আপুর বিয়ে দেয়া হয়েছে এতদিনে। আপু কেমন আছে বুঝতে পারি না। কারণ আপু কখনো কিছু বুঝতে দেয় না। মেনে নেওয়ার এক আজব গুণ তার মধ্যে আছে। যা আমার মধ্যে কখনো ছিল না। বাবা ফোন করে। আমার খোঁজখবর নেয়। সবসময়ই নিত। কিন্তু আমি কেন জানি তাকে কখনো ক্ষমা করতে পরিনি। আমার কথায় হয়তো তা প্রকাশ পেত। নতুন মায়ের সাথে তার একটা ছেলে হয়েছে। তার মানে আমার একটা ভাই হয়েছে। কিছু অনুভব করি না। ভিতরটা খটখটে।



একধারে জীবন কেটে যেতে থাকে। বয়স বেড়ে যায়। কিসের যেন হাহাকার বাজে মনে। বুঝতেও পারি না। কিসের শুন্যতা। ধরতে পারিনা। শূন্যতা পূরণ করতে একটা ছোট মেয়ে বাচ্চা অ্যাডপ্ট করি আমি। বাচ্চার দিকে তাকিয়ে থেকেই যেন মনের শূন্যতা কিছুটা দূর হয়। আমি যা পাইনি একে আমি তা দিব।



ভিতরের খটখটে ভাবটা যেন আর নেই। আমার মেয়ে আমার কড়ে আঙ্গুলটা আঁকড়ে ধরেছে। হ্যাঁ, আমারই তো মেয়ে। আমার চোখে যেন পানি। শেষ কবে কেঁদেছি ঠিক মনে করতে পারি না।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫২

সমকালের গান বলেছেন: আপনার লেখা ভাল লাগল। আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা।

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০১

কলাবাগান১ বলেছেন: "আমাদের কত জ্বর হত। কোনদিন কেউ আমাদের কপালে একবারের জন্যও হাত বুলায়নি। "

৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৪০

আলাপচারী বলেছেন: আপনার বলা কিন্তু শেষ হয়নি।
আমরা অপেক্ষায় আছি।
আমাদের তাড়া নেই।
নিজেকে গুছিয়ে নিন তারপর বাকিটুকু .....


এই যান্ত্রিক জীবনে, কৃত্রিম নগরে, ভার্চুয়াল জগতে মানবিক হতে ক্ষতি কি??
শোনার অপেক্ষায় আছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.