নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ১১)

০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:১৪

তরুন-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতি সবাই প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। প্রেমের সম্পর্কে দুই পক্ষের সমান রকমের যোগদানের কয়েক মাস অতিক্রান্তের পর যে কোন এক পক্ষ অবশ্যই ভাবে যে কোন আক্কেলে আমি এই ঝামেলায় জড়ালাম। আগেই তো ভালো ছিলাম। ছেলে বলে “ওই ছেলে কে? কার সাথে এতক্ষণ কথা বলতেসিলা?” মেয়ে বলে “ তখন থেকে দেখতেসি তুমি ওই মেয়েটার দিকে তাকায়ে আস। মেয়েদের দেখলে তোমার চোখ ঠিক থাকে না, না?” এরকম উভয় পক্ষের অধিকার চর্চায় প্রেম আর ভালোবাসা ত্রাহি ত্রাহি রব তোলে।



তবে এসবের মাঝেও খুব অল্প হলেও হাতে গোনা কয়েকটা সত্যিকারের বোঝাপড়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এইসব সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর হাওয়া বয়। মন উৎফুল্ল থাকে। প্রেমিক-প্রেমিকার চেয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই বড় থাকে। এতে করে অকারণ একে অপরের গলা চেপে ধরার দরকার পড়ে না। এইসব সম্পর্কের মানুষেরা নিজেদের দুর্বলতা খুব সহজে কাটিয়ে উঠতে পারে।



পুলকের মধ্যে ইদানিং কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অফিসের সবাইও ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে। কাজে কর্মে সে সব সময়ই ভালো। কিন্তু একটু অন্তর্মুখী। কিন্তু আজকাল যেন একটু বেশি হাশি-খুশি থাকে। ক্যান্টিনে মাঝে মাঝেই পুলককে হো হো করে হাসতে দেখা যায়। বন্ধু মহলে পুলকের সাথে সহজে ঠাট্টা করা যেত না। সহজ ঠাট্টাকেও সে জটিল বানিয়ে রেগে মেগে একাকার করে ফেলত। আজকাল ভুলে ভালে কেউ দুই একটা ঠাট্টা করে ফেললেও সে খুবই স্বাভাবিকভাবে নেয়। তারপরো কেউ খুব একটা রিস্কে যায় না।



পুলক নিজেও তার ভিতরের পরিবর্তন টের পাচ্ছে। আজকাল সে ভেতর থেকে খুশি থাকছে। জোর করে না। কোন নির্দিষ্ট কারণে না। যা করছে তাই তার ভালো লাগছে। রাস্তায় হাঁটছে। আহা!! তার মনে হচ্ছে রাস্তায় হাঁটার মত স্বর্গীয় অনুভূতি আর হয় না। রিকশায় উঠল। এমনিতেই পুলকের রিকশায় চড়তে ভালো লাগে। কিন্তু আজকাল রিকশায় উঠলে মনে হয়...মনে হয়...আসলে কি যে মনে হয় সেটাও সে ঠিক বুঝতে পারে না। খালি জানে সে এখন অনেক সুখী। রীতা নামে একটা মেয়ে তার জীবনে আছে আর কিছু তার দরকার নেই। এই একজনের মাঝে পুলক তার জীবনের সব চাওয়া পাওয়া খুঁজে পেয়েছে। আশেপাশে যত প্রেমিক-প্রেমিকা দেখে তাদের দিকে সে মনে মনে তাচ্ছিল্য ভরে বলে। আমার মত সুখী তোমরা কেউ নও।



রীতার সাথে এখন তার নিয়মিত দেখা হচ্ছে না। জুন মাস। ভার্সিটি বন্ধ এক মাস। তাই রীতা আর এখন সেভাবে বের হতে পারে না। মাঝে মাঝে বান্ধবীদের বাসায় যেতে হলে পুলকের জন্য একটু আগে আগে বের হয়। একসাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে চলে যায়। পুলকের এই নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। একজন মানুষ যখন আরেকজন মানুষকে হৃদয়ে ধারণ করে তখন তার সবসময় সামনে না থাকলেও চলে। তবে হ্যাঁ, প্রতিদিন তার রীতার সাথে ৫ মিনিট হলেও কথা বলা লাগে। এই ৫ মিনিটের কথা যার সাথে বলে সে একই সাথে তার প্রেমিকা, বন্ধু এবং আত্মার সঙ্গী। তার রীতা। এই পৃথিবীতে লাখো কোটি মানুষকে যা মুখে বলে দিলেও বুঝবে না, রীতাকে তা না বলে দিলেও সে বুঝবে। যখন পুলক আর রীতার দেখা হয়, তখন কেন জানি পুলকের মনে হয় যে সে যদি কোন কথা না বলে রীতার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকে তাহলেও রীতা তার মনের কথা বুঝে যাবে। মাঝে মাঝে তার নিজের খুশি চিৎকার করে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করে।



রীতার এই এক মাসের বন্ধ অসহ্য লাগছে। তার সবসময়ই এই এক মাসের বন্ধ অসহ্য লাগে। এই একমাস যেন তার কারাগার। কারণ রীতার মা নাজমা হক মেয়েকে তেমন বের হতে দিতে চান না। মেয়েদের অকারণ বের হওয়া হওই তার একদম পছন্দ না। মেয়ের বন্ধু বান্ধবের সাথেও কোন অনুষ্ঠান থাকলে তিনি মেয়েকে তেমন বের হতে দেওয়ার পক্ষপাতি নয়। তিনি একবার মেয়েকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানান। মেয়ে এ নিয়ে আর তার কাছে কোন অনুনয় বিনয় করেনা। মেনে নেয়। বড় মেয়েকে এই জন্যই তিনি অনেক পছন্দ করেন। এই মেয়ে কখনো তার অবাধ্য হবে না। তিনি জানেন। কিন্তু ছোট মেয়েটাকে কেন জানি তিনি সামলাতে পারেন না। ছোট মেয়ে মিতার অনেক জেদ। অনেক সময়ই তাকে এই জেদের কাছে হারতে হয়। আসলে কি জেদের কাছে হারেন? নাকি ছোট বলে একটু বাড়তি স্নেহ আদায় করে নেয় মিতা? এটা ঠিক ধরতে পারেন না নাজমা হক। আসলে ধরতে চান না। সব বাবা-মায়ের কাছে সন্তান দুই প্রকার। একটি হল আদর্শ সন্তান- যাকে সব ঠিক কাজ করতে শেখানো হবে। যাকে বড় করা হবে কড়া শাসনে। আরেকটি হল আদরের সন্তান- এই সন্তানের বেলায় বাবা মায়ের মন দ্রবীভূত থাকে সবসময়। এর সব আবদার মেনে নেওয়া হয়। আহা!! থাক না!! বাচ্চা মানুষ!! এখানে রীতা হচ্ছে নাজমা হকের আদর্শ সন্তান। আর মিতা আদরের।



কিন্তু রীতার এবারের অস্থিরতা বেশি। এবারের এক মাস আর অন্যবারের এক মাসে অনেক পার্থক্য। তখন পুলক ছিল না। এখন পুলক আছে। ওর সাথে ঠিকমত কথা না হলে রীতার সারাদিন মন খারাপ থাকে। দেখা হলে মনে হয় জীবনে আর কোন দুঃখ নেই। রীতার যখনই মন খারাপ হয়। মায়ের উপর রাগ হয়। অনেক দুঃখ হয়। সে তার সব দুঃখ জমা করে রাখে পুলককে বলার জন্য। পুলক সব মন দিয়ে শোনে। রীতাকে বোঝায়। পুলক ওঁকে ওর মায়ের মন বুঝতেও সাহায্য করে।



এই যেমন কিছুদিন আগে কথা হচ্ছিল।

- জানো পুলক!!! মা আজকে আমাকে অকারণ বকাবকি করলো। আমি নাকি কোন কাজ করি না বাসার। অথচ আমি সকাল থেকে মায়ের কথামতই সব করেতসি।

- আরে ধুর!!! ওইটা উনার রাগের কথা।

- না!! রাগের কথা না। তুমি বুঝতেস না। মা আমাকে সহ্যই করতে পারে না।

- শোনো!! তোমার মা তোমাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।

- তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগতেসে না। তুমি কথা বুঝতেসই না।

- আরে বোকা মেয়ে!! আমার যখন খুব রাগ হয় তখন আমি কার উপর ঝাড়ি?

- কার উপর আর ঝাড়বা!!! আমার উপরেই ঝাড়।

- কেন ঝাড়ি?

- জানি না।

- কারণ একমাত্র তুমিই আমার আশ্রয়। তোমার কাছে এসে আমি নিজের সব হতাশা, রাগ, দুঃখ, ভালোবাসা সব উজাড় করে দিতে পারি তোমাকে হারানোর চিন্তা ছাড়াই। তোমার মাও ঠিক তাই করে। তুমিই তার সবচেয়ে কাছের মানুষ। তাই তোমার উপরই তার সবচেয়ে বেশি দাবি। মানুষ তার কাছেই দুর্বলতা প্রকাশ করে যাকে সে ভালোবাসে। বুঝলে হে বোকা রীতা?

- হুম।

এসব কথাবার্তায় রীতার মন নিমিষে ভালো হয়ে যায়। পুলক নামের এই মানুষটার অদ্ভুত এই দুই দিক তাকে বিস্মিত করে, আকর্ষিত করে। একই মানুষ ছেলেমানুষের মত রাগারাগি করে, আবার এই একই মানুষ জটিল থেকে জটিল জিনিস সহজভাবে বুঝতে পারে। রাগী পুলকের রাগও খুব তীব্র। বিচক্ষণ পুলকের বিচক্ষণতাও খুবই তীব্র। দুই তীব্রতার মাঝে রীতার অবস্থান। তার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়।





পর্ব-১

Click This Link



পর্ব-২

Click This Link



পর্ব-৩

Click This Link



পর্ব-৪

Click This Link



পর্ব-৫

Click This Link



পর্ব-৬

Click This Link



পর্ব-৭

Click This Link



পর্ব-৮

Click This Link



পর্ব-৯

Click This Link



পর্ব-১০

Click This Link

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৩৫

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: golpota pore valoi laglo.... nijer nijer mone holo ageer porbo gulo pore dekhi nai. dekhe janabo..... apatoto songrohe rakhlam

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০৫

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :)

৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:২০

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: সবগুলা পড়ে দেখলাম। নাহ কোন ভাবেই নিজের সাথে যায় নাহ আবার অনেক কিছু নিজের সাথে যায়। ব্যপারটা মজার। মানুষ কোন নাটক, উপন্যাস কিংবা গল্প পড়ে নিজের সাথে মেলাতে চায়, মিল-অমিল খুঁজে। আর এই খোঁজাটা কাজ করে যখন সেই সৃষ্টিটা ভালো লাগে। খারাপ লাগলো এটা যেনে যে আপনি লেখাটা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। যা হোক না থামিয়ে শেষ করেন। ভালো খারাপ যাই হোক একটা পরিপূর্ণ লেখা আশা করছি আপনার কাছ থেকে আশা করি আশাহত করবেন নাহ। :-B :-B

৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:২৫

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: ওহ আর একটা কথা ভালো জিনিস কম হলেও ভালো আবার বেশি হলেও ভালো। বেশি হলে তা তার ভালোত্ব হারায় নাহ, তাই একটা অনুরোধ পরের পর্বগুলা একটু বড় করে দিলে ভালো হয়। পড়ার মাঝে হঠাৎ করে থেমে যেতে হয়, ব্যাপারটা ভালো লাগে নাহ। বিরক্তিকর মনে হয়। জানি এর চেয়েও বিরক্তিকর হচ্ছে সেই লেখাটা তৈরি করা। কিন্তু মনে হয় একবার লেখায় ঢুকে গেলে তা আপনা-আপনিই হয়ে ওঠে। ঠিক পড়ার পতন...... ... ;) ;)

১১ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫

সুহান সুহান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি এতটা গুরুত্ব দিয়ে আমার লেখা পড়েছেন। এটা লেখক হিসেবে অনেক প্রেরণাদায়ক। আমি চেষ্টা করব বড় লেখা দেয়ার জন্য।

৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:১২

স্বপনচারিণী বলেছেন: গল্প নয় এবারে আমি ডুবে গিয়েছিলাম প্রতিটি বাক্যের গভীরে। মানুষের সম্পর্কগুলির এত সুন্দর ব্যাখ্যা দেয়া যায় আপনার কাছেই জানলাম। ঐ লাইনটা খুব ভাল লেগেছে 'বাবা মায়ের কাছে সন্তান দুই প্রকারের -আদর্শ ও আদরের'। কখনো এভাবে ভেবে দেখা হয়নি।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:২১

সুহান সুহান বলেছেন: অনুপ্রানিত। খুবই। পড়ে যান যতক্ষণ ধৈর্য থাকে। আপনাদের যতক্ষণ পড়তে ভালো লাগবে আমারও ততক্ষণ লিখতে ভালো লাগবে। :)

৬| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:০৫

ডরোথী সুমী বলেছেন: সাথেই আছি কিন্তু। এগিয়ে চলুন।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:১৫

সুহান সুহান বলেছেন: :) ধন্যবাদ।

৭| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯

চটপট ক বলেছেন: লেখতে থাকেন, আমি পরতে থাকি

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৩১

সুহান সুহান বলেছেন: আস্তে আস্তে পড়বেন ভাই। আমার লিখার গতি সুবিধার না। :)

৮| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৩

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক বলেছেন: আপনার লিখার ধারা যতটা না প্রাঞ্জল তার থেকে সাবলীল জীবনের বাস্তবানুগ সত্যতাগুলোকে অসাধারনভাবে তুলে ধরার বিষয়টি। :):):)

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৫

সুহান সুহান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.