নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ২৭)

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১৫

বিপরীত লিঙ্গের কারো প্রতি কেউ আকর্ষিত হলে সেই আকর্ষণের মাত্রা খুবই তীব্র হয়। সেখানে ‘ভালো লাগা’ আর ‘ভালোবাসা’-র তর্ক মুখ্য থাকে না। সেই তীব্রতা থেকে দূরে সরা মানে হচ্ছে স্রোতের বিপরীতে যাওয়া। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে যাওয়া সব সময়ই কঠিন।



এরকমই কাঠিন্যের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পুলক। বৃষ্টিতে ভেজার পর থেকেই ইতি-কে সে না চাইতেও অন্যভাবে দেখা শুরু করেছে। যেটা তাঁর কাছে খুবই বিরক্তিকর মনে হচ্ছে। সে এত দুর্বল!! ইতি-র অফিসটা তাঁকে চুম্বকের মত টানে। না চাইতেও সে দেখে সে ইতি-র অফিস এর কাছে চলে গেছে। কোন এসএমএস আসলে সব সময় অবচেতনভাবে আশা করে যে এটা যেন ইতির মেসেজ হয়। কী হাস্যকর!!! ফোন আসলে এমনভাবে লাফ দেয় যে বিশ্বে কোন মহা ক্রাইসিস লেগে গিয়েছে। এখন ফোনটা না ধরলেই না। কিন্তু যেই দেখে ইতি-র ফোন না। সুবিশাল হতাশা।



এই পৃথিবীতে সব মানুষ-ই এক। মানুষের মন, চিন্তা-ভাবনা। সব প্রায় একই রকমভাবে কাজ করে। কিন্তু তারপরও কোন মানুষই নিজেকে ‘এক’ ভাবতে পছন্দ করে না। স্বাভাবিকভাবেই পুলকও তা করত না। কিন্তু এখন সে দেখছে যে সে আর সব পুরুষের মতই। সাধারণভাবে কোন মেয়ে তাঁর সাথে মিশলেই সে প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। ছিঃ!!! এত সস্তা তাঁর অনুভূতি!!

নিজের উপর খুবই বিরক্ত হল সে। সে জানে এটা কোন প্রেম বা ভালোবাসা নয়। এটা সাময়িক আকর্ষণ। কিন্তু এই আকর্ষণ কেন হচ্ছে!! প্রিয়াঙ্কার বেলায় তো তা হয়নি। ইতি-র বেলায় কেন? ইতি নিজেও অবশ্য তা জানতে চায়। এর উত্তরও বের করেছে পুলক। তেমন কোন জটিল বিষয় না এটা। স্বাভাবিকভাবেই মজার মানুষদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ হবেই। যেসব মেয়ে সাজগোজ আর শপিং ছাড়া কিছু বোঝে না তাঁদের চেয়ে যেসব মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসে, তাঁদের আকর্ষণী শক্তি অনেক। বয়োসন্ধি কালের মেয়েরা বোহেমিয়ান ছেলেদের প্রতি আকর্ষিত হয়। যে ছেলে যত অগোছাল, যত বাউন্ডুলে তাঁর তত আকর্ষণ। আর ছেলেদের বেলায়, যেসব মেয়ে যত মজা করতে পারে তাঁর আকর্ষণ তত বেশি। যে মেয়ে চিন্তা-ভাবনা না করে ধুরুম ধারুম কথা বলতে পারে। ছেলেদের সাথে ছেলেদের মত করে মিশতে পারে। সেই মেয়ের খুব বেশী রূপসী হওয়ার দরকার নেই। তাঁর প্রেমে বহু ছেলে লুটোপুটি খাবে।



কিন্তু নিজেকে তো পুলক আর সব ছেলের মত ভাবত না। এই নিয়ে তাঁর কত গর্ব ছিল!!



অফিস এর প্রায় শেষ সময়। ইতি ফোন দিচ্ছে। পুলক তাকিয়ে আছে স্ক্রীন এর দিকে। তাঁর খুব ইচ্ছা করছে ফোনটা ধরতে। কিন্তু সে ধরল না। ইতি এসএমএস করল, “কি! খুব ব্যস্ত? ভাবসিলাম আজকে রিক্সায় ঘুরব অনেকক্ষণ। ফ্রী হলে জানাইও”।



পুলকের খুব ইচ্ছা করছে ইতির সাথে রাতে ঘুরতে। হঠাৎ কোথাও দাঁড়িয়ে পড়ে চা খেতে। ওলটপালট গল্প করতে। কিন্তু এতে সে নিজেরই ক্ষতি করবে। কী দরকার!! কষ্টকে ডেকে আনার। সে ইতিকে ‘না’ করে দিল।



অফিস থেকে বের হয়ে খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগল। এখনো ইচ্ছা করছে ইতি-কে একটা ফোন দিতে। এখনো ফোন দিলে এই রাতটা আর ফাঁকা ফাঁকা লাগবে না। আর তো কেউ নেই। কেউ অপেক্ষা করে নেই তাঁর জন্য।



এমন কাউকে খুঁজে বের করতে হবে যার সাথে নিরুপদ্রবভাবে এই ফাঁকা সময়টা কাটানো যায়। কোনরকম জটিলতা ছাড়াই।



পুলক ফোন দিল কাউকে।

-হ্যালো!! এখন দেখা করতে পারবা? আমি তোমার বাসার সামনে।



একটু পর পুলকের সামনে এসে দাঁড়ালো প্রিয়াঙ্কা। এই মেয়েই পারে ফাঁকা অংশটা ফাঁকি দিয়ে ভরতে। আর তো কারো কাছে যেতে পারে না পুলক। নতুন করে কারো প্রতি দুর্বল সে হতে চায় না।



এভাবে এক সপ্তাহ সে ইতির থেকে দূরে দূরে থাকল। না, প্রিয়াঙ্কাকে আর ডাকেনি। আরেকটা মেয়ের আবেগ নিয়ে খেলা হবে এরকম করলে। ওই রাতের পর প্রিয়াঙ্কাকে আর সে ফোন করেনি। প্রিয়াঙ্কা আজকাল ফোন করে না। তবে সে ফোন করলে খুব খুশি হয়। মেয়েটা একটু চুপচাপ হয়ে গেছে। পুলকের মনটা খারাপ হয়েছে ওইদিন ওকে দেখে। তাই আর ওকে কল করেনি। আর করবেও না। পুলক নামের কেউ ছিল ওঁর জীবনে ভুলে যাক ও। ওঁর মত করে ও যেন ভালো থাকে।



এই এক সপ্তাহ দূরে থাকার ফল পেয়েছে পুলক। ইতির প্রতি তাঁর অনুভূতিটা যে শুধু ‘ভালো লাগা’-ই ছিল তা প্রমাণ হয়ে গেছে। এখন আর অতটা টান সে অনুভব করে না। কিন্তু তারপরেও ইতির সাথে সময় কাটানোর কথা সে ভুলতে পারে না। আর যাই হোক!! সময় সে খুব ভালো কাটিয়েছে। ইতি অনেক মজার মানুষ।



কাকতালীয়ভাবে যখন ইতির কথা ভাবছিল পুলক তখনই ইতি ফোন দিল।

-কি পুলক? তোমার দেখি কোন খোঁজখবর নাই।

-তা তোমার কী খবর?

-থাক!! এখন আর আমার খবর নেয়া লাগবে না। আমি তোমাকে ফোন দিলাম ইনভাইট করার জন্যে।

-কীসের ইনভাইটেশন?

-আমাদের অফিসে একটা পার্টি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তোমাদের কোম্পানীকেও ইনভাইট করা হচ্ছে আমাদের প্রস্পেক্টিভ ক্লায়েন্ট হিসেবে।

-তাই নাকি? তাহলে তো অবশ্যই আসব। কিন্তু এভাবে তো হবে না। অফিসিয়াল ইনভাইটেশন যেহেতু!! লেটার কই?

-আরে!! লেটার আসবে। তুমি তোমার বসদের ইনফরম করে রাখো।

-ওকে।

-হুম্ম। সি ইউ!!



অবশেষে পুলককে একাই যেতে হলো ইতিদের কোম্পানীর পার্টিতে। বসরা সবাই বিজি। পুলককেই অ্যাটেন্ড করতে বলল।



বিশাল আয়োজন। অনেক লোকের সমাগম। কাউকেই চেনে না পুলক। সেও আসতে চায়নি। তাঁর বস তাঁকে বলল

-পুলক!! এসব অনুষ্ঠানে আমাদের কোম্পানীর একজন রিপ্রেসেন্টেটিভ থাকা প্রয়োজন।



এ জন্যই পুলকের আসা। বুফে সিস্টেমে খাওয়া দাওয়া চলছে। অনেক সাদা চামড়ার লোকজন দেখা যাচ্ছে। তবে এমনিতে পুরো অনুষ্ঠানে ছোট ছোট ছেলে মেয়ের ছড়াছড়ি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী তো!!! অনেক দূরে ইতিকে দেখা যাচ্ছে। পুলককে দেখতে পেয়েছে ইতি। দূর থেকে হাত দিয়ে ইশারা করছে যে সে আসছে। নীল রঙ্গের স্লিভলেস ব্লাউজ এর সাথে ম্যাচ করা নীল শাড়ি। ইতির দিক থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। পুলক মুগ্ধ দৃষ্টিতে ইতিকে দেখছে। চুল টান টান করে পিছনে খোঁপা করে বাঁধা।

-কখন এসেছ?

-১০ মিনিট!!

-হুমম!! তোমাকে তো আজকাল পাওয়াই যায় না। এত ব্যস্ত থাক।

পুলক হাসে। কিছু বলে না।



ইতি পুলককে খাওয়ার জায়গায় নিয়ে যায়। লাইন এ দাঁড়িয়ে সবাই খাবার নিচ্ছে। পুলককে লাইনে দাঁড় করিয়ে ইতি অন্য গেস্টদের কাছে যায়। পুলক আস্তে আস্তে করে এগোচ্ছে। পাশের লাইনের দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে গেল পুলকের। রীতা। একটা লম্বা করে ছেলের সাথে গল্প করে করে খাবার নিচ্ছে। হঠাৎ রীতা টাল সামালতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিল। ছেলেটা তাঁকে ধরল। রীতা হাসছে।



পুলক যেন স্ট্যাচু হয়ে গেছে। পিছন থেকে মানুষজন তাঁকে সামনে যেতে বলছে। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে পুলক লাইন থেকে বের হয়ে গেল। তড়িঘড়ি করে সে প্লেটটা রেখে অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে গেল।



সুট টাই পড়েছিল পুলক। সব যেন গলায় ফাঁস হয়ে দাঁড়ালো। টাই ঢিলা করে উপরের বোতামটা খুলে ফেলল সে। নিচে নিচে আরো কয়েকটা বোতাম খুলল। হাঁসফাঁস লাগছে। বুকে হাত বুলাচ্ছে পুলক। বুকের ভিতরের কোন অংশটায় যে কিছু একটা খামচে ধরেছে বুঝতে পারছে না সে।



পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব-২৩ Click This Link পর্ব-২৪ Click This Link পর্ব-২৫ Click This Link পর্ব-২৬ Click This Link

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩৫

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক বলেছেন: ভালো লিখেছেন আজকেরটা। :) :) :)

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮

সুহান সুহান বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৬

অর্ধমানব ও অর্ধযন্র বলেছেন: শেষ তাও এত জলদি কেন??? :(( :(( :((

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯

সুহান সুহান বলেছেন: আর কত টানব বলেন!!! সবাই কত বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১০

সুহান সুহান বলেছেন: তবে এটা শেষ পর্ব না। :P

৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:২৭

অর্ধমানব ও অর্ধযন্র বলেছেন: ভাই আরো টানেন প্লিজ। তয় একটু তাড়াতাড়ি। অপেক্ষায় আছি পরের পর্বের।

৪| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৬

স্বপনচারিণী বলেছেন: খবরদার! হিন্দি সিরিয়ালের মতো ইতির দিকে টানার জন্য রীতাকে খারাপ করে দেবেন না যেনো। পুলক শুধুই রীতার, যদি তা না হয় তবে মরুক একলা।

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪০

সুহান সুহান বলেছেন: হায় হায়!!! শেষ মেশ হিন্দি সিরিয়ালের অপবাদ দিচ্ছেন? :(

৫| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৮

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: আবার রীতাকে দেখে ভালোই লাগলো... তবে সে পুলককে দেখতে পেলো না? যাক তার পরে কী হয় জানতে ইচ্ছা হচ্ছে... লেখাটা আশা করি শেষ করবেন তাড়াতাড়ি ... দেখেছেন তো ইতোমধ্যেই হিন্দি সিরিয়াল হয়ে যাচ্ছে বলে দিল...... ... মানুষের জীবনে অনেক অপূর্ণতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক... আর অনেক পূর্ণতাকে সে হাতে পেয়েও ছুড়ে ফেলে দেবে এটাও স্বাভাবিক......... আজীব চিজ......

১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৪৩

সুহান সুহান বলেছেন: দেখি শেষ করি কি না!!! :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.