নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ৩৬)

২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮

সবকিছু জেনেও একটা অসম্পূর্ণ আর অনিশ্চিত সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেল রিমকি আর পুলক। যদিও কোন সম্পর্কই নিশ্চিত নয়। তারপরো মানুষ স্বপ্ন দেখে নিশ্চিত ভবিষ্যতের। অনেক পরে গিয়ে মানুষ বুঝতে পারে যে ভবিষ্যৎ কখনোই নিশ্চিত হতে পারে না। ভবিষ্যৎ কখনোই নিশ্চিত না।



এতকিছুর পরেও মানুষ ভাবতে পছন্দ করে পাশের এই মানুষটি তাঁর। এই মানুষটির সাথে তাঁর বিয়ে হবে। একে নিয়ে তাঁর সংসার হবে। তাঁদের একটা সুন্দর বাবু হবে। তাঁদের জীবন অনেক রঙ্গীন হবে। সুখে দুঃখে একে অপরের সাথে কাটিয়ে দেবে। এটা পৃথিবীর তাবৎ প্রেমিক-প্রেমিকার মনে কথা। হতে পারে সেই প্রেমিক-প্রেমিকা ক্লাস টেনে পড়ে। আবার হতে পারে সেই প্রেমিক-প্রেমিকা পুলক আর রিমকির বয়সী। সবাই একভাবেই স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে।



সমস্যা হয় অনিশ্চিত আর অসম্পূর্ণ সম্পর্কগুলোর বেলায়। যেমন পুলক আর রিমকির সম্পর্ক। চাইলেই আর ১০টা ৫টা সম্পর্কের মত এরা স্বপ্ন দেখতে পারবে না। চাইলেই পুলক ভুলতে পারবে না যে সে এখানে একজন তৃতীয় পক্ষ। চাইলেই রিমকি ভুলতে পারবে না যে তাঁর উপর প্রথম অধিকার অনিকের, পুলকের না। এই চরম সত্যিগুলো মানুষকে লুকিয়ে লুকিয়ে অনেক বড় বড় কষ্ট দেয়। এমন কষ্ট যে কষ্ট পাশের মানুষটিকেও বলা যায় না। কারণ পাশের মানুষটিও তো তাঁর মতই অসহায়। অন্য কাউকেও বলা যায় না। সমাজের প্রতিনিধিরা এই সম্পর্কের বিচার করবে যুক্তি দিয়ে, আবেগ দিয়ে না। পৃথিবীর কোন বিচার-ই মনে হয় আবেগ দিয়ে হয় না।



পুলকের এই বিশাল শূন্য জগতটায় সে রিমকিকে প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরতে চাইছে। তাঁর হারানোর কিছু নেই। অনিক নামে একজনের বাগদত্তার পিছনে যে সে অনৈতিকভাবে ছুটে বেড়াচ্ছে। তা সে বুঝতে পারলেও একটুও পাত্তা দিতে চাইছে না। কেন শুধু সে অন্যের কথা ভেবে যাবে!! কেন!! একটা সময় ছিল যখন সে রীতার ভাল মন্দ, সুযোগ-সুবিধা ছাড়া কখনো কিছু চিন্তা করেনি। নিজের কোন দাবি উত্থাপন করেনি। সব মেনে নিয়েছিল। কই রীতার তো তাঁকে ছেড়ে যেতে বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়নি। রীতার মা তাঁকে বিচার করার আগে তাঁর মায়ের জীবনকে বিচার করেছে। তাঁকে তো কেউ এক বিন্দু ছাড় দেয়নি। সে কেন তাহলে এই দুনিয়ার তাবৎ লোকদের নিয়ে চিন্তা করতে যাবে। সে কাউকে পরোয়া করে না। ঠিক বেঠিকের সংজ্ঞাও সে বুঝতে চায় না। ভাবতে চায় না।



এসবই রাগের কথা। অভিমানের কথা। পুলকের যুক্তিবাদী মন ঠিকই ভাবে ভুল ঠিক নিয়ে। প্রতিরাতের ছোট্ট একটা মুহূর্তে সে ভাবে আজকে রিমকিকে গিয়ে বলবে যে এটা ঠিক হচ্ছে না। অনিকের সাথে অন্যায় হচ্ছে। আমাদের আর দেখা করা উচিৎ হবে না। কিন্তু রিমকিকে দেখলেই এসব কথা সে ভুলে যায়। তাঁর কাছে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ঠিক কাজ রিমকির সাথে সময় কাটানো। ওঁর লাল গোল টিপ আর কাজল ঘন চোখ দেখা। ওঁর গাল ছুঁয়ে ওকে শিউরে দেয়া।



পুলক এখন সকাল করে বের হয় রিমকির সাথে। রিমকিকে রিমকির অফিসে নামিয়ে দিয়ে সে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় রিমকির অফিস শেষ না হওয়া পর্যন্ত। তারপর তাঁরা একসাথে ফেরে। পুলকের মাঝে মাঝে এমন এমন অদ্ভুত অনুভূতি হয় যা তাঁর আগে কখনো হয়নি। অনুভুতিগুলো তাঁকে একই সাথে অবাক করে, আবার রোমাঞ্চিতও করে। রাতের বেলা রিমকির পাশে হাঁটতে হাঁটতে যখন রিমকি গোল চাঁদ দেখে বাচ্চাদের মত খুশী হয়ে যায়। তখন তাঁর খুব ইচ্ছা করে এখনই আকাশটা বেয়ে উপরে উঠে চাঁদটা পেড়ে নিয়ে আসে। এখন চাঁদ যে কোন নারিকেল বা আম না এটা মনে করে তাঁর ফোঁস করে রাগ উঠে। তাঁর ইচ্ছা করে সারা পৃথিবীটা যদি সে রিমকির সামনে এনে ফেলে দিতে পারত!! নিজের মনে এসব ভাবে আর হাসে পুলক। রিমকি না হয় পাগল!!! অনেক বই পড়েছে। ওঁর পক্ষে এসব চিন্তা ভাবনা করা স্বাভাবিক হতে পারে। কিন্তু তাঁর মত যুক্তিবান একজন মানুষের এরকম চিন্তা ভাবনা হাস্যকরই বটে। কিন্তু তাও কেন একটুও হাস্যকর লাগে না। কেন মনে হয় এরকমই হওয়ার কথা ছিল।



শুধু এটুকুই না। আরো কিছু ব্যাপার পুলকের অদ্ভুত লাগে। পুলক সিনেমায়, নাটকে, টেলিফিল্মে বহুবার দেখেছে যে নায়ক নায়িকা একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মানে ন্যাকামীর চূড়ান্ত। এভাবে কেউ কারো দিকে তাকায় থাকে নাকি!! তাও আবার পাবলিক প্লেসে!! সবকিছুর একটা সীমা থাকা উচিৎ। কিন্তু সব সীমা পরিসীমা লঙ্ঘন করে পুলক যখন রিমকির চোখে তাকায় তখন দুই জোড়া চোখ যেন আটকে যায়। যেন চোখ না, চুম্বক। এক মুহূর্তের জন্যেও মনে হয় সরানো যাবে না। হার মেনে নেয় রিমকি-ই। পুলকের দৃষ্টি তাঁকে অবশ করে দেয়। ঐ তীব্র চাহনি তাঁকে অস্থির করে তোলে, পাগল করে তোলে।



রিমকি নানাভাবে চিন্তা করে। যা হচ্ছে তা সাদা চোখে অন্যায়। তাহলে কেন তাঁর অন্যায় মনে হচ্ছে না। কেন তাঁর মনে হচ্ছে যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে। রিমকির নীতিবোধ প্রবল। হ্যাঁ, তাঁর অনেক ছেলেবন্ধু। বহু ছেলে তাঁকে অন্যভাবে চেয়েছে। সে কাউকে পাত্তা দেয়নি। বুঝিয়ে দিয়েছে তাঁদের যে ঠিক কতটুকু তাঁদের অধিকার। তাহলে পুলকের একটা ছোট ডাকে সে কেন পাগলের মত হয়ে গেছে। কেন ওঁর একটা ছোট স্পর্শে শরীর এভাবে শিউরে উঠছে। কেন ওঁর চাহনি তাঁকে সম্মোহন করে রাখছে। এত্তগুলা ‘কেন’ এর কোন উত্তর সে খুঁজে পাচ্ছে না। অনিকের উদাসীনতা আজকের নতুন নয়। বহুদিনের। তাই এখানে অনিক কে দোষারোপ করা যায় না। অনিক কে কোনভাবেই দোষারোপ করা যায় না। ও সব সময়ই এরকম। ওঁর যা ঠিক মনে হয় তা-ই ঠিক। ওঁর রাগ। ওঁর অভিমান। এসবই এতকাল মেনে নিয়েছে রিমকি। অনিকের বন্ধু বান্ধব, অনিকের জগত তাঁর জগত। অনিকের বন্ধুরা ওকে খুঁজে না পেলে রিমকিকে ফোন দেয়। মাঝে মাঝে তাঁরা শুধু রিমকির সাথেই কথা বলতে চায়। হঠাৎ কোথা থেকে পুলক এসে তাঁর পুরো অন্তরটা জুড়ে বসল তাঁর ‘সূর্য’ হয়ে। শুধু তাঁর। এই ‘সূর্য’ রীতারও না। শুধু রিমকির। ঐ তাকানো। তাঁকে দেখার জন্য আকুলি বিকুলি। এসবই শুধু রিমকির জন্য।



এই ব্যাপারটাও রিমকির দারুণ অসহ্য লাগে। মানতে পারে না। এক তো এই ছেলেটাকে সে দুই চোখে দেখতে পারত না। এরকম গোমড়ামুখো আনসোস্যাল ছেলে তাঁর খুব অপছন্দ। সেই ছেলের জন্য সে এরকম পাগল আর দিশেহারা হয়ে গেল। মাত্র এক মাসের মধ্যে!! কীভাবে সম্ভব। তাও এই সময়ে। সৃষ্টিকর্তার এ কী ধরনের খেলা।



আরেকটা ব্যাপার হল যে রিমকি কখনো হিংসুটে ছিল না। আর দশটা মেয়ের মত তাঁর অন্য মেয়েদের নাম শুনলে গা জ্বালা করে না। অনিকের বান্ধবীদের সাথেও তাঁর অনেক খাতির। কখনো কাউকে নিয়ে তাঁর হিংসা হয়নি। কিন্তু পুলকের মুখে রীতার নামটা কেন সে সহ্য করতে পারে না তা সে বুঝতে পারে না। রীতার নাম বলতে গেলে পুলকের চোখটা বাড়তি উজ্জ্বল হয়ে যায়। একদিন খুব মজা করে ফোনে কথা বলার সময় পুলক ভুলে ওকে ‘রীতা’ ডেকে ফেলেছিল। রিমকি বুঝেও ব্যাপারটা না বোঝার ভান করেছে। যা অপ্রস্তুত হওয়ার পুলক হয়েছে। রিমকি জানে যে এত সহজে ঐ জায়গাটা কাউকে দেয়া যায় না। সবার আলাদা জায়গা। যেমন রিমকি চাইলেও হয়তো অনিকের জায়গা পুলককে দিতে পারবে না। পুলকের জন্য নতুন জায়গা তৈরি হবে। ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। সেই জায়গার তীব্রতাতে দিশেহারা রিমকি। এত তীব্রতা, এত ভালোবাসা সে আগে কখনো পায়নি। তাঁর একটু মাথা ব্যাথা। একটু কষ্ট হলেই পুলক ওষুধ, খাবার দাবার নিয়ে হাজির। মন খারাপ থাকলে যেখানেই থাকুক চলে আসবে। হাত ধরবে। হাত ধরার যে আলাদা কোন রোমান্টিকতা আছে এটা এতকাল রিমকি বইয়ে পেয়েছে। বাস্তবে পায়নি। বাস্তবে অনিক এসব আদিখ্যেতা পছন্দ করে না।



মজার কথা হল পুলকও এসব আদিখ্যেতা পছন্দ করে না।কিন্তু রিমকির কাছে আসলে তাঁর সব গোলমাল হয়ে যায়। রিমকি তাঁকে টানে। যেভাবে পোকাকে আলো টানে। ঠিক সেভাবে। সকালে দুপুরে বিকালে রাতে নিয়মানুবর্তীভাবে অনিকের ফোন আসে রিমকির ফোনে। অনিকের ফোন আসলেই পুলকের চেহারা শক্ত হয়ে যায়। সে কিছুতেই এটা মানতে পারে না। কিন্তু তাঁর কিছু করার নেই। এখানে মানতে না পারার অধিকার অনিকের আছে। পুলকের নেই। পুলক এখানে উপযাচিত।



পুলকের এই অসহায়তা রিমকি টের পায়। তাঁর এত মায়া লাগে এই বড় সড় দেখতে শিশুটাকে। খুব আদর করতে ইচ্ছা হয়। মাঝে মাঝে করেও গাল ধরে। বাচ্চাদের মত করে। রাস্তায় কেউ রিমকিকে দেখলে, পুলক তীব্র চোখে সেই ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে চোখ বড় বড় করে। তাঁর চোখের ভাষা পড়তে পেরে রিমকির দিকে তাকিয়ে থাকা ব্যাক্তি অস্বস্তিতে চোখ সরিয়ে নেয়। ঐ লাল গোল টিপ, ঐ চোখ, ঐ মানুষটা শুধু তাঁর জন্য। আর কারো কোন অধিকার নেই। থাকলেও সে মানে না। না!!! না !!! না!!! মানে না সে। কখনো মানবে না। পৃথিবী ছারখার করে দেবে সে।



হাতির ঝিলে একটা ছোট ফুটওভার ব্রিজে একবার ঘুরতে গিয়েছিল ওরা। ঘুরতে বলতে এমনিতে যাওয়ার পথে দাঁড়িয়েছিল। কোন এক অদ্ভুত কারণে দুজনেরই সে জায়গাটা পছন্দ হয়ে যায়। মাঝে মাঝেই মন দ্রবীভূত থাকলে তাঁরা সেখানে চলে যায়। আজকেও তাঁরা সেখানে যাচ্ছে। ব্রিজের কর্নারের জায়গাটা রিমকির প্রিয়। কিন্তু তাঁদের জায়গাটার দিকে অন্য কেউ যাচ্ছে। সেই অন্য কেউ তাঁদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তাঁরা এখনো রাস্তায়। লোকটা ব্রিজের সিঁড়িতে পৌঁছে গেছে।

রিমকি বলল-

‘ইস! আজকে যদি ঐ জায়গাটা পাওয়া যেত’

পুলক এক মুহূর্ত দেখল জায়গাটা। আরেকবার দেখল রিমকির চেহারা। তারপর শুরু করল দৌড়। রাস্তার মধ্যে দিয়ে গাড়ি টাড়ির দিকে একটুও মনোযোগ না দিয়ে পাগলের মত দৌড়াচ্ছে সে। ঐ জায়গাটা তাঁকে নিতে হবেই তাঁর রিমকির জন্য। চাঁদ না আনতে পারুক এটা পারতেই হবে।



পুলক দৌড়াচ্ছে। তাঁর মাথা ভর্তি চুল উড়ছে। একবার পিছন ফিরে দেখল সে রিমকিকে। রিমকি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুলক স্মিত হেসে দৌড়াতে থাকল। ঐ জায়গাটা তাঁকে পেতেই হবে।



পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব-২৩ Click This Link পর্ব-২৪ Click This Link পর্ব-২৫ Click This Link পর্ব-২৬ Click This Link পর্ব-২৭ Click This Link পর্ব-২৮ Click This Link পর্ব-২৯ Click This Link পর্ব-৩০ Click This Link পর্ব-৩১ Click This Link পর্ব-৩২ Click This Link পর্ব-৩৩ Click This Link পর্ব-৩৪ Click This Link পর্ব-৩৫ Click This Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৭

খান মেহেদী ইমাম বলেছেন: VAI TARATARI DEYAR JONNO DHONNOBAD

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১১

সুহান সুহান বলেছেন: মামলা না করার জন্য ধন্যবাদ।

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৭

মৌমিতা আহমেদ মৌ বলেছেন: হুমমম। গেছে পুলক। আবারও একটা ছ্যাঁকা খাবে নাকি?? /:) :-0

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৬

সুহান সুহান বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.