নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগন্তুক

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:১০

ঠিক পনের বছর পরে ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে ইফতার পার্টি। ভার্সিটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর কে যে কোথায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল, কে জানে!! ফেসবুকে নামে মাত্র অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব ছিল কিন্তু ওইভাবে কারো খবর-ই যেন রাখা হত না। আজ ঠিক পনের বছর পর আমাদের ব্যাচের সবার ইফতার পার্টি। ইফতেখার-ই সব যোগাযোগ করল। পনের বছর আগেও ওই করত। এবারো তাঁর ব্যতিক্রম হল না।



কেমন যেন শিহরণ লাগছে। কাদের সাথে দেখা হবে। সবাই আসবে তো!! সবাইকে চেনা যাবে তো!! পনের বছর বেশ লম্বা সময়। সত্যিকারের মোটা না হলেও বয়সের কিছু নিজস্ব মাংস থাকে। সিনেমার নায়ক-নায়িকা ছাড়া আর কাউকে সে মাংস লুকাতে দেখি না। তবে আমি একদম আগের মতই আছি। ফেসবুকে এখনো আমার পনের বছর আগের ছবি ।



যেতে যেতে একটু দেরীই হয়ে গেল। গিয়ে দেখি সে এক বিশাল কারবার। এক দঙ্গল অচেনা মানুষকে দেখলাম। নারী পুরুষ আর ছোট ছোট অনেক বাচ্চাদের কলকাকলিতে ভরা। কাউকেই আলাদা করে চিনতে পারলাম না। খালি খাবারের জায়গাটাতে ইফতেখার একটু ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাঁটাহাঁটি করছে। সে বরাবরই ব্যস্ত। আগেও। এখনো। অনেক কষ্টে রাফসান-কে চিনলাম। তাও ওঁর কথায় কথায় ‘শালা ফাউল’ বলার মুদ্রাদোষে। যতদূর মনে পড়ে, ও এখন বাঙ্কের ম্যানেজার। মাথার চুল পেকেছে ওঁর অনেক। বেচারা অনেক চাপে থাকে নিশ্চয়ই। নিতুকে দেখলাম একটা বছর দশেকের মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা যে ওঁর মেয়ে তা কেউ বলে না দিলেও বুঝলাম। মায়ের মতই মেয়ের মায়াকাড়া চেহারা। আমি কারো কাছেই গেলাম না। যদিও আমায় দেখতে এখনো সেই পনের বছর আগের মতই। তাও কেউ আমায় দেখলও না। কিন্তু আমি আস্তে আস্তে সবাইকে দেখলাম। কখনো ঘুরে, কখনো একটু বসে। কখনো দাঁড়িয়ে। কখনো এই সব মানুষের কথা শুনে মিটিমিটি হেসে।



দূরে কে যেন একা দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময়। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। পনের বছর ওঁর সাথেও কথা হয়নি। যে জায়গায় তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে। ওটা আমার আর ওঁর জায়গা। আমি আর ও ওখানে বসে অনেক গল্প করতাম।



আমি আর তন্ময় একটু ঘরকুনে ছিলাম বরাবর। নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকতেই পছন্দ করতাম। কোন জায়গায় আমরা থাকলে আমাদের অস্তিত্ব সহজে বোঝা যেত না। নিজেদের চিনে নিতে আমাদের সময় লেগেছিল। চিনে যাওয়ার পর আমি আর ও হরিহর আত্মা ছিলাম। আস্তে আস্তে দুজনেরই খোলস ভেঙ্গেছিল। তন্ময় আর আমার সাথে আস্তে আস্তে অন্যদেরও বন্ধুত্ব হয়েছিল। কিন্তু যে টানটা আমার আর ওঁর মধ্যে ছিল তা আর কারো সাথে হয়নি। তাই অভিমানের জায়গাটাও খুব তীব্র।

আমি আস্তে আস্তে ধীর পায়ে ওঁর কাছে গেলাম। ও যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল, সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। একবারো ফিরে তাকাল না।



ভার্সিটির শেষ বছরে এসে জুনিয়র একটা মেয়েকে আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। আমার পছন্দের কথা কেউ জানত না। তন্ময়-ও না। মেয়েটা যে দেখতে খুব আহামরি ছিল তা না। কিন্তু কিছু একটা ছিল যা বাকিদের মধ্যে ছিল না। আমি তন্ময়কে নিয়ে মেয়েটার যাওয়া আসার পথে বসে থাকতাম। মেয়েটা মাথা নিচু করে যেত। তন্ময় তাও দুষ্টুমি করে বলত, “দেখ!! তোকে দেখে কেমন শরম পাচ্ছে।“ তন্ময়ের কথায় মেয়েটার মাঝে আমি কোন শরম না দেখলেও আমার মাঝে শরম উথলে উথলে পড়ত। তন্ময় অবাক হয়ে বলত, “কিরে কী অবস্থা তোর!! লাল টাল হয়ে দেখি পুরা মাল হয়ে গেছিস। কাহিনী কি রে!!” আমি কপট বিরক্ত হয়ে বলতাম, “কাহিনী আবার কী!! ধুর!!!”



প্রতিদিন ঐ মেয়ের পথে ঘাটে আমাকে আর তন্ময়কে দেখে মেয়েটা যেন এখন আমাদের চিনতে পারে। চোখ তুলে তাকায় পরক্ষনেই আবার সরিয়ে নেয়। প্রতিদিন আমি যাই না। গেলে তন্ময়কে নিয়েই যেতাম।



তন্ময় এরকম স্থির হয়ে আছে কেন!! কোথা থেকে ইফতেখার চলে এসে একটা ঝাঁকা দিল।

-“কিরে!!! এখানে কি করছিস!! হ্যাঁ!!”

তন্ময় যেন একটু ধরা গলায় বলল, “কিছু না রে!!”

ইফতেখার কিছুক্ষণ চুপ করে বলল, “চল!! সবাই ওখানে।“

-আসতেসি দোস্ত। তুই যা।

ইফতেখার আবার কোলাহলে মিশে গেল। ইফতেখার আরেকবার এসে ওঁর হাতে ইফতারের প্যাকেট দিয়ে গেল। মাগরিবের আযান আর বেশি বাকি নেই। অন্ধকার হয়ে আসছে। আমার বন্ধু তন্ময় সবার থেকে দূরে গাছের আড়ালে গেল। সবার অগোচরে হাঊমাউ করে কাঁদতে লাগল। সেই কান্নায় আমার নামটা বেশ কয়েকবার শুনতে পেলাম।



পনের বছর আগে আমার বন্ধু তন্ময় সেই মেয়েটার কাছ থেকে প্রেমপত্র পায়। প্রথম সেই ধাক্কা আমি সামলাতে পারিনি। প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে আমি চলে যাই। ভুল করে আমার বন্ধুকে বিশাল শাস্তি দিয়ে চলে যাই আমি। যে শাস্তি ওঁর প্রাপ্য ছিল না। যে শাস্তির জন্য আজও ও কাউকে ভালবাসতে পারেনি। যে কারণে আজ ওঁর এত কাছে থেকেও একটা ছায়া ছাড়া আর কিছু হতে পারিনি আমি।



“রনি!! রনি!! আমি বুঝি নাই দোস্ত!! আমি বুঝি নাই!! আমি জানতাম না!!”

ওঁর কান্না এক সময় গোঙ্গানিতে চলে যায়।



অশরীরীর কি অশ্রু পড়ে!! পড়লে আমারো পড়ত।



আমি উল্টো দিকে হাঁটি। তন্ময় থেকে দূরে। কোলাহল থেকে দূরে। এক আগন্তুক হয়ে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৩

নাইমুল ইসলাম বলেছেন: সত্যি ঘটনা না গল্প?
প্রথমের দিকে হার্টবিট বেড়ে গেছিলো পড়ে!
চমৎকার লেখনি!

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:২৯

সুহান সুহান বলেছেন: কারো না কারো জন্য তো সত্যি!!

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। :)

২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:১৯

হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: গল্প, নাকি স্মৃতিচারণ?

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৩৬

সুহান সুহান বলেছেন: গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.