নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা নাকি চুক্তি

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১০

রিক্সাচালক হরমুজ মিয়া দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত রিক্সা চালায়। রাত বলতে গভীর রাত। ২টা-৩টা পর্যন্ত। এরপরে বাসায় যায় সে। বাসায় গিয়ে দেখে তাঁর ছোট বাচ্চা দুইটা ঘুমে কাতর। শুধু তাঁর স্ত্রী তাঁর আসাতে জেগে ওঠে। দুইটা ভালো মন্দ খেতে দেয়। সকালে উঠে বাচ্চা দুটোর সাথে খুনসুটি করে। বউয়ের সাথে দুইটা ভালো মন্দ কথা বলে। দুপুরে খেয়ে দেয়ে আবার খোদার নাম স্মরণ করে বেড়িয়ে পড়ে। এভাবেই চলে হরমুজ মিয়ার জীবন। সে খারাপ নেই। এলাকার এক বড় মানুষ তাঁকে যাকাত এর উসিলায় এই রিক্সাটা দিয়েছে। এর পর থেকে কোনভাবে নিজেদের চলে যায় হরমুজ মিয়ার।

রিক্সা চালাতে হরমুজ মিয়ার খারাপ লাগে না। কত রং-বেরঙ্গের মানুষ দুনিয়ায়। তাঁরা রিক্সায় ওঠে আর তাঁদের জীবনের একটা অংশ হরমুজ মিয়াকে যেন বলে দিয়ে যায়। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে থুরথুরা বুড়া-বুড়ি তাঁর রিক্সায় ওঠে। দুইজন রিক্সায় উঠলেই অনেক গল্প শোনা হয়ে যায় হরমুজ মিয়ার। অবশ্য একজন থাকলেও গল্প শোনা যায়। মোবাইল ফোন তো আছেই। এই তো এখন যে মেয়েটা গল্প করছে তাঁর রিক্সায় বসে।

- কি করছ জান?
- I miss u too!!!!!
- কি করব বল!!! বাসায় মাম্মি পাপা আছে তো!!! তাই তোমার ফোন ধরতে পারি না!!! নইলে কি আমি এরকম করি বল!!! 14th এ কি চাও বেইবি?? ছিঃ!!! Naughty!!!!
বলে মেয়েটা খিল খিল করে হাসে। একটু পরে মেয়েটা ফোন রেখে দেয় তাড়াহুড়া করে। আরেকটি ছেলে হরমুজ মিয়ার রিক্সায় ওঠে মেয়েটির সাথে।
- কার সাথে কথা বলতেসিলা?
- আমার এক বান্ধবীর সাথে।
- দেখি ফোনটা??
- কেন? তুমি কি আমাকে সন্দেহ কর?
মেয়ের গলা তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে প্রলয় লেগে যায় যেন রিক্সায়। আশেপাশের লোকজন রাস্তাঘাট এবং অন্য গাড়ি বা রিক্সা থেকে তাঁর রিক্সার দিকে তাকিয়ে থাকে পলকহীন চোখে। হরমুজ মিয়া মাড়ি বের করে সামনের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। এ ঘটনা তাঁর জীবনে নতুন নয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই এদের মধ্যে একজন রিক্সা থামাতে বলবে। ছেলেটা রাগের চোটে মোবাইল আছাড় মেরে ভেঙ্গেও ফেলতে পারে। এরা কথায় কথায় মোবাইল ভাঙতে পারে। হরমুজ মিয়ার নিজেরও মোবাইল আছে। তাঁর খুব ইচ্ছা যে সে তাঁর বউকে একটা মোবাইল কিনে দেয়। তাহলে দিনে মাঝে মাঝে তাঁর সাথে একটু আলাপ করা যেত।

‘লাভ’ আর ‘ভালোবাসা’ যে একই শব্দ তা কিন্তু হরমুজ মিয়া জানে। শহরের ছেলে মেয়েরা মনে করে হরমুজ মিয়া কিছু বুঝে না। ওরা ইংরেজিতে কথা বললেও যখন ‘লাভ ইউ’ বলে তখন সে ঠিকই বোঝে। ছোটবেলা থেকেই সে বাংলা সিনেমা দেখে। এখনো সুযোগ পেলে বউ বাচ্চা নিয়ে সিনেমা দেখে পাশের রুমের জয়নালদের সাথে।

তবে অনেকে বাংলাতেও ভালোবাসার কথা বলে। এই যেমন সেইদিন একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কথা বলছিল।

- (মেয়ে) তুমি কি আমাকে ভালোবাস নেহাল?
- (ছেলে) হঠাৎ এই প্রশ্ন!!
- (মেয়ে) দরকার আছে বলেই জিজ্ঞেস করছি। রোমান্টিকতা করার জন্য না।
- (ছেলে) কি দরকার?
- (মেয়ে অনেকক্ষণ পরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে) দেখ নেহাল!! আমি সারাজীবন এমন কারো সাথে থাকতে চেয়েছি যে আমাকে ভালোবাসবে। আমার বাবা মা একজন আরেকজনকে ভালোবাসে না। তাও একসাথে থাকে। এভাবে একসাথে থাকাটা যে কি বিষময় তা আমি জানি। তাই আমি সরাসরি জানতে চাই। ৪ বছরের সম্পর্কের মানে কিন্তু এই না যে আমাদের বিয়ে করতেই হবে।
- (ছেলে, বিরক্ত স্বরে) তুমি একটু বেশী কথা বল। অকারণ আর অহেতুক। তেনা প্যাঁচানো ছাড়া তুমি কথা বলতেই জানো না।
- (মেয়ে, তীক্ষ্ণ স্বরে) তুমি আবার কথা এড়িয়ে যাচ্ছ।
আবার সেই চিল্লাচিল্লি। রিক্সা থামাথামি।

হরমুজ মিয়া যে শুধু ঝগড়া দেখে তা কিন্তু না। অনেক মিল মহব্বতও দেখে। মাঝে মাঝে একটু বেশীই দেখে ফেলে। শরীর কান তাঁর গরম হয়ে যায়।

অনেক মানুষ তাঁর রিক্সায় উঠে কাঁদে। কখনো মেয়ে। কখনো ছেলে। এরা কখনো খুব রেগে যায় কাঁদতে কাঁদতে। চিল্লা চিল্লি করে। সব কাঁদতে থাকা মানুষের একটাই দাবি তাঁরা ভালোবাসে। কেউ কেউ বলে যে আগে সে বুঝতে পারে নাই যে সে তাঁকে এত ভালোবাসে!! ওঁকে না পেলে সে বাঁচবে না। মজার কথা হল এই হরমুজ মিয়াই এই সব লোকদের খুব ভালোভাবেই বাঁচতে দেখে।

এই ‘ভালোবাসা’ যে কি জিনিস!!! তা হরমুজ মিয়া বুঝতে পারে না। সে কি তাঁর বউকে ভালোবাসে!!! এটা কেমনে করে!!! সিনেমাতে তো গান গায়, নাচে। আর মারামারি করে। সে তো এরকম করে না। রিক্সায় মাঝে মাঝে অবশ্য এরা গান টান গায়। নাচার জায়গা হয় না রিক্সায়। নইলে হয়তো নাচত। এরা লাল নীল গোলাপী ফুল দেয়। চকচকে কাগজে মোড়ানো প্যাকেট দেয়। কতবার ‘লাভ ইউ’ ‘লাভ ইউ’ বলে। কিছুদিন পরেই এরা আবার কাঁদে। কিছু বুঝে উঠতে পারে না হরমুজ মিয়া।

রাতের বেলা ঘরে ফিরে আসে হরমুজ। ঘুমন্ত সন্তান আর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। আজকে নাকি ভালোবাসা দিবস ছিল। আবার সেই প্রশ্ন আসে তাঁর মাথায়। ‘ভালোবাসা’ ঠিক কি জিনিস!!! হরমুজ মিয়া খুব সাবধানে কাউকে না জাগিয়ে সন্তান আর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। ঘুমাক ওরা। হরমুজ মিয়া জানে না যে সম্পর্কের নিশ্চয়তার নামই ভালোবাসা। যা সে তাঁর পরিবারের কাছে পায়। বাকি সব চুক্তি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৯

জনাব মাহাবুব বলেছেন: ভালো লাগার মতো গল্প।

হরমুজ মিয়ার চোখ দিয়ে দেখলাম বিভিন্ন কাপলদের ভালোবাসার নমুনা। B-)

হরমুজ মিয়ার আত্মকাহিনী ভালো লাগলো।

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১৪

ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেছেন: সখি ভালোবাসা কারে কয়????????

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫২

সুহান সুহান বলেছেন: :ঢ়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.