নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঠিক বেঠিক জীবন যাপন-১

২৭ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩

একটা আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এসেছে আজকের পত্রিকায়। সেটাই পড়ছেন আখতার সাহেব। পড়তে পড়তেই টেবিলে হাত বাড়ালেন লাল কলমের জন্য। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটায় গোল করে লাল দাগ দিলেন। একবার না। বেশ কয়েকবার দাগ দিয়ে মোটা করে দিলেন। ছেলের যেন চোখে পড়ে। মাস ছয়েক হল বড় ছেলে ফাহিম মাস্টার্স পাশ করে বসে আছে। চাকরি খুঁজছে। পাচ্ছে না। ছেলেকে সাহায্য করার জন্য তিনি পত্রিকা খুঁজে খুঁজে চাকরির বিজ্ঞাপনগুলোয় গোল দাগ দিয়ে রাখেন। কথা খুব একটা বলতে পছন্দ করেন না আখতার সাহেব। যত কম কথায় কাজ করা যায়। বিয়ের আগে যুবক বয়সে কিছু কথা বলতেন। এখন একদমই বলতে চান না। আখতার সাহেবের স্ত্রী জোবায়দা প্রচুর কথা বলেন। বিয়ের প্রথম প্রথম আখতার সাহেব কোন ঘটনা স্ত্রীর কাছে বলতে গেলে দেখা যেত জোবায়দা দুই লাইন শুনেই ওই ঘটনার মত আরেকটা ঘটনা শুরু করে দিতেন যা তাঁর সাথে ঘটেছে বা তাঁর কোন মামা, খালা বা পরিচিত কারো সাথে ঘটেছে। তাঁর নিজের কথা আর বলা হত না। এভাবে আস্তে আস্তে কথা বলাই প্রায় বন্ধ করে দিলেন আখতার সাহেব। প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ নিজের কথা বলতে পছন্দ করে। শুনতে না।

ফাহিমের সাথে তাঁর বাবার দেখা হয় খাওয়ার টেবিলে। দেখা বলতে মুখোমুখি হওয়া। নইলে এমনিতে পিতা পুত্র যে যার মত থাকে। স্বাভাবিক মধ্যবিত্ত পরিবারের রাশভারী বাবাদের সাথে পুত্র কন্যাদের যে রকম সম্পর্ক হয় আর কি!! আখতার সাহেবও খাওয়ার টেবিলেই গুরুত্বপূর্ণ কথা সেরে নেন সবসময়।

নাস্তার সময় তিনি বললেন, ‘ পত্রিকায় লাল দাগ দেয়া চাকরিতে অ্যাপ্লাই করিস। পরচিত আছে।’ খাবার টেবিলে আছেন ফাহিম আর আখতার সাহেব। জোবায়দা রান্না ঘরে। জোবায়দা সামনে থাকলে আর এই কথা তিনি বলতেন না। বললে কিছুক্ষন পর পিতা পুত্রর কারোরই আসল কথাটার তাৎপর্য মনে থাকত না।

ছয় মাস হল ফাহিম মাস্টার্স পাশ করেছে। চাকরির চেষ্টা করছে। হয়ে উঠছে না। সবার এক কথা। পরিচিত ছাড়া চাকরি হয় না। এই কথাটা ফাহিমের একদমই মানতে ইচ্ছা করে না। সে নিজের মত করে যখন যেভাবে পারে চেষ্টা করে। এর কারণ যে শুধুমাত্র তাঁর সততা তা কিন্তু নয়। কারো কাছে কিছু চাইতে তাঁর ভালো লাগে না। একবার চাইল আর সারাজীবন তাঁর কাছে নতজানু হয়ে থাকল। চিন্তাটাই তাঁর কাছে রীতিমত পীড়াদায়ক। বাবার কথায় ‘পরিচিত আছে’ কথাটা শুনে দমে গেল। এমনিতে আর দশ জনের মত অ্যাপ্লাই করতে বললে সে করে দিত। কিন্তু এত এত মানুষের মধ্যে থেকে বিশেষ কেউ হয়ে আবির্ভূত হওয়া তাঁর আত্মগরিমাকে ছোট করে। সে তো বিশেষ কেউ নয়। সে অতি সাধারণ একজন মানুষ। মাঝারি মেধার ছাত্র। কিন্তু বাবাকে সে কিছু বলল না। সেরকম সম্পর্ক নয় বাবার সাথে। সে নিঃশব্দে খাওয়া দাওয়া শেষ করল। খাওয়া শেষে তাঁর কোন কাজ নেই। বিছানায় বসল পত্রিকাটা নিয়ে। লাল কালি দিয়ে গোল করে দাগ দিয়ে রাখা অংশটা দেখল। আধা সরকারী প্রতিষ্ঠান। প্রচুর লবিং হবে। মনটা খারাপ হয়ে গেল ফাহিমের। পড়ালেখা না করে কিভাবে লবিং করতে হয়, এর উপর একটা ডিগ্রি নিলেই বরং ভালো হত। অন্তত তাঁর খুব কাজে লাগত। ধরা ধরি, দৌড়াদৌড়ি এসব তাঁর মন থেকে আসে না। জোর করে করলেও ঠিক মত হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও সে সহপাঠীদের লবিং এর প্রতিযোগিতা দেখেছে। তেলতেলে চেহারা করে, মেরুদণ্ড ঝুঁকিয়ে কিভাবে কথা বলতে হয় তা সে দেখেছে। সে এক শিল্প।

এসব চিন্তা মাথা থেকে বের করে সে বেকার জীবনের সবচেয়ে আরামদায়ক কাজটা করল। শুয়ে পড়ল। মাঝে মাঝে তাঁর মনে হয় সে ভালোই আছে। চাকরি বাকরি করলে তো আর এরকম করে শোয়া যেত না। তাঁর প্রায় সব বন্ধু বান্ধবই কোথাও না কোথাও চাকরি করছে। শোয়ার পর সে মাঝে মাঝে তাঁদেরকে ফোন দেয়।
-কিরে!! কী করিস!!
-আরে শালা!! কইস না। অফিসে আসতে লেট হয়ে গেসে। বস জানি কেমনে কেমনে তাকায়। তুই কি করস?
-শুয়ে রইসি।
-শালা হারামি!!
বেকার জীবনের এটুকুই আরাম। বসের সান্টিঙে থাকা বন্ধুদের দুরবস্থার কথা ভেবে পুলকিত ভাব হওয়া। নেহাকে একটা ফোন দেয়া যায়। যেই ফোন দিতে যাবে আখতার সাহেব ফাহিমের ঘরে ঢুকলেন। অফিসের জন্য রেডি হয়ে আছেন তিনি। ফাহিম তড়াক করে উঠে বসল। আখতার সাহেব ছেলের দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিলেন। বললেন, ‘উনার সাথে আজকে একবার দেখা করবি। আমার নাম বলবি’। ফাহিম কাগজটা নিল। সেই অফিসটার ঠিকানা। একজনের নাম আর ফোন নাম্বার। মুহূর্তের মধ্যেই একটা ফাঁকা আনন্দময় দিন ভরা অস্বস্তিকর দিনে পরিণত হল ফাহিমের। আখতার সাহেব বের হয়ে গেছেন।

ফাহিমের একটা অভ্যাস হল যে কোন বিষয় নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনায় ডুবে যাওয়া। এই যে ফাহিমের বাবা ফাহিমকে এই লোকের সাথে দেখা করতে বলল। তাঁর কি দেখা করা উচিৎ!! এটা কি নীতিবহির্ভূত না!! আচ্ছা!! আসলে কি তাঁর সততা নাকি তাঁর অলসতা এসব যুক্তি দিচ্ছে। তাঁর আসলে ওই লোকের সাথে দেখা করতে যেতে ইচ্ছা করছে না আলসেমির জন্য।সততা আর অলসতা যে মাঝে মাঝে একইরকম হতে পারে তা কি কেউ কখনো জানত!! যদিও চারপাশে সে সৎ মানুষ খুঁজে পায় না। যে লোক এইমাত্র নীতির কথা বলে যায়, তাঁর কাজে কর্মে দুর্নীতির মেলা। সবাই যেন কেমন একটা খেলায় মেতেছে। কে কতটা লুকিয়ে চুরিয়ে অসৎ হতে পারে। অথচ তা মোটেও লুকানো থাকছে না। তাও কেউ কিছু বলছে না। কারণ প্রত্যেকেই অসৎ। অন্যেরটা বললে যদি নিজেরটা ধরা পড়ে যায়। কী দরকার!! মানুষ ঘুষ খাচ্ছে। কাজে ফাঁকি দিচ্ছে। আবার হজ্ব করছে। আকারে ইঙ্গিতে অন্যের দোষ বের করছে। একই দোষে নিজে দুষ্ট হলেও নিজেই সেটাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখছে। ফাহিমের এক খালাত ভাই পুলিশে সার্জেন্ট। তাঁর মা, মানে ফাহিমের খালা হজ্ব করে এসে ছেলের ঘুষের টাকা দিয়ে তৈরি করা বাড়িতে ইবাদত বন্দেগী করেন। কার কাছে তিনি মোনাজাত করেন। কি-ই বা চান তাঁর কাছে। মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছা করে ফাহিমের।

ফাহিম কি বলবে ওই লোকটার কাছে গিয়ে!! কোন দিক দিয়ে তাঁর যোগ্যতা বেশী। পিতৃপরিচয়ে? তাহলে যাদের বাবাদের পরিচিত কেউ নেই, তারা কি করবে!! এরকম হাজারো চিন্তা ফাহিমের মাথায় ঘোরে।

চাকরিটা ফাহিমের হয়ে গেল। সে এখন একটা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমলা। বেকার জীবনের ধ্যান ধারণা আর চাকরিরত জীবনের ধ্যান ধারণা মানুষের এক থাকে না। বাস্তবতার আঘাতে তাতে নতুন আকার আকৃতি গঠিত হয়। এটাই জীবনের নীতি। ফাহিমের বেলাতেও তা হল। কিছুটা সময় লাগল। এই যা!! তবে মনের কোন এক গোপন অলিন্দে সে অপরাধী হয়ে রইল। সেই অলিন্দ চেতন মন থেকে আস্তে আস্তে অবেতন মনে স্থান নিল।

প্রথম দিকে ফাহিম অপরাধী হয়েই অফিস করত। কিন্তু আস্তে আস্তে তাঁর মনের অবস্থানের পরিবর্তন হল। আধা সরকারী হলেও এই অফিসের আমলাদেরও বেজায় সম্মান। এত সম্মান পেয়ে আস্তে আস্তে ফাহিমও অভ্যস্ত হয়ে গেল। অধস্তনদের কেউ সালাম না দিলে সে অসন্তুষ্ট হয়। তোয়াজ করে কথা না বললে ওই কাজটা করতে তাঁর দেরী হয়। এই সব পরিবর্তন কিন্তু নিজের অজান্তেই হচ্ছে ফাহিমের। মনে মনে সে নিজেকে এখনো একজন সৎ কর্মী ভাবে। মোটা দাগে সে অন্যায় কিছু করে না। কিন্তু সূক্ষ্মভাবে একটুঁ একটু করে তাঁর ভিতরটাও ফাঁপা হয়ে যাচ্ছে।

অফিস জায়গাটাও বেশ মজার। নানা ধরনের লোক দেখা যায়। ধামাধরা লোকের সংখ্যাই বেশী। যারা ধামাধরা না তাঁরা একটু বিপদে থাকে। ফাহিমের মনে হত একবার চাকরীতে ঢুকে গেলে আর সে এসবের মধ্যে দিয়ে যাবে না। নিজের মত নিজের নিয়মে চলবে। কিন্তু মানুষের চাহিদার তো শেষ থাকে না। চাকরির পর পদন্নোতি। সেই পদন্নোতির জন্য ঊর্ধ্বতনদের মন যুগিয়ে চলা। তাঁরা যেন অহেতুক দোষ খুঁজে না বেড়ান, সে জন্য তাঁদের সারাদিন তৈল মর্দন করা। স্বাভাবিকভাবেই ফাহিমের এসব আসে না। সে তৈল নিতে পারে। কিন্তু দিতে পারে না। কিন্তু এই অন্যায় নিয়ম তো নিজে নিজে বানিয়ে নিলেই হবে না। নিজের নিয়ম বাদ দিয়ে তোমাকে সমাজের নিয়মে চলতে হবে।

শুরু হল ফাহিমের পথ চলা। যার শুরুটাই ছিল বেঠিক দিয়ে। বেঠিক দিয়ে শুরু করা পথ কি ঠিকের দিকে যেতে পারে!!! সম্ভব!! সময়ই বলে দেবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৩

ঢাকাবাসী বলেছেন: আরো একটু গোছালো হলে ভাল হত। চাকরী নিয়ে কথা অথচ ছেলেটা সেটা কিভাবে পেল সেটাই বলা হয়নি! ধন্যবাদ।

২৭ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩

সুহান সুহান বলেছেন: সামনে বলা হবে। অপেক্ষা করুন।

২| ২৭ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৪০

আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ বলেছেন: বাস্তবধর্মী লেখা...ভালো লাগলো!

৩| ২৭ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: মানসিক এবং মানবিক ক্রাইসিস বেশ ভালোই লাগছিলো পড়তে। আরেকটু বিস্তৃত করলে আরো ভালো লাগতো।

২৭ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:০৫

সুহান সুহান বলেছেন: বিস্তৃত হবে। অপেক্ষা করুন।

৪| ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:৩৪

তানি তানিশা বলেছেন: পড়তে বেশ ভালোইই লাগছিল। দ্রুত শেষ হয়ে গেলো। পরবর্তী অংশের অপেক্ষায় রইলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.