নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চরিত্রায়ণ!!

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৩০

চিঠি লেখার মধ্যে কেমন যেন একটা মেয়েলীপনা আছে। মেয়েরা মেয়েরা চিঠি লেখে। প্রেমের সময়ে ছেলেরা মেয়েদের চিঠি লিখে। মেয়েরাও ছেলেদের চিঠি লিখে। কিন্তু ছেলেরা ছেলেদের চিঠি লিখে, এটা কেমন জানি বেমানান। এসব একেবারেই আমার নিজস্ব মতামত। তারপরও তোকে চিঠি লিখছি। তাই ব্যাখ্যা করে নিচ্ছি। যদিও তাঁর কখনো দরকার হয়নি। আমার কখনো তোকে কিছু ব্যাখ্যা করতে হয়নি। প্রয়োজনই হয়নি। জীবনের কিছু পথে আমি ভুল করলেও তুই আমার ভুলগুলোকে ঠিক না বললেও। চুপচাপ পাশে ছিলি। শালার চিঠির ব্যাপারটাই কেমন দেখ!!! না চাইলেও রোমান্টিক ভাব চলে আসে। এই জন্যই বোধহয় বেশী কথা মেয়েদেরকেই মানায়। ছেলেরা হবে রাফ অ্যান্ড টাফ। অনেক কথা না বলেই হয়ে যাবে। এর মধ্যে একটা ভাব আছে না!!! কি কস!!! কথা বলার কাজটা বরাবর আমিই করতাম। বরাবরই আত্মকেন্দ্রিক মানুষ আমি। আমার পছন্দ, আমার অপছন্দ, আমার রাগ। সব আমার। তুই মিটিমিটি হাসতি আর শুনতি। মাঝে মাঝে তোর দুই-একটা কথা মুখ দিয়ে বের হত। চুপ থাকতেই তোর বেশী ভালো লাগত। এইজন্য তোর সাথে আমার জমত। আমি বরাবরই কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকতে পছন্দ করি। তুই এটা ভালো করেই জানিস। কিন্তু তোর প্রাকৃতিক গুণ ছিল পার্শ্ব চরিত্রে থাকা। পার্শ্ব চরিত্রদেরও কিন্তু অনেক ভাব থাকে। এদের ভাব হল এরা মূল চরিত্রে কখনো আসতে চায় না। এও যে মারাত্মক আকর্ষণ তৈরি করে তা আমি বুঝলাম ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার কোচিং এর সময়ে। নেহা নামে একটা মেয়ে তোর জন্য পাগল ছিল। সেই প্রথম তোকে আমার অনেক হিংসা হল। কেন্দ্রীয় চরিত্রের হয়েও আমি কখনো মেয়েদের মন জয় করতে পারিনি। আর তুই চেষ্টা না করেই কিভাবে মেয়েদের মন পেতি। তুই ব্যাপারটা ধরতে পেরেছিলি। যদিও এ নিয়ে তোর আর আমার মাঝে কখনো কোন কথা হয়নি। কিন্তু নেহা মেয়েটা তোর কাছে আর পাত্তা পায়নি। আগেও পেত না। পরে একদমই পায়নি। ব্যাপারটা আমার হিংসা আরো বাড়িয়ে দিত। তুই কেন সবার থেকে আলাদা হবি!!! সবার থেকে আলাদা তো আমি হব। আমি!!! সেই থেকে তোর সাথে আমার এক দূরত্ব তৈরি হল। দূরত্ব আরো বাড়ল যখন তুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলি। আর আমি পেলাম না।

এক স্কুল, এক কলেজ। গলাগলি বন্ধুত্ব। কিন্তু তাও আমার কী অভিমান!!! তুই আমাকে ধোঁকা দিয়েছিস। তুই লুকায়ে লুকায়ে পড়সিস। অবশ্যই লুকায়ে লুকায়ে পড়সিস। নইলে আমি কেন চান্স পাব না।

তখন কি ছেলেমানুষই না ছিলাম। আসলে ছেলেমানুষ না। স্বার্থপর ছিলাম। স্বার্থপর এখনো আছি। কিন্তু এখন মোড়কে লুকিয়ে রাখতে পারি। আগে পারতাম না। যাইহোক!!! তারপর তুই-ই আমার বাসায় এলি। সব ঠিক করার চেষ্টা করলি। হলও। কিন্তু মনে মনে তোর উপর অভিমান গেল না। এটা গেল কবে জানিস!!!! ৫ বছর পর। সুজানার ছ্যাকা খেয়ে যেদিন সুইসাইড করব বলে ঠিক করেছিলাম। সুইসাইড করার আগে তোকে ফোন দিলাম। পাগলের মত প্রলাপ বকলাম। কেন যে তোকে ফোন দিসিলাম আজো জানি না। হয়তো মানুষের অবচেতন মনে নির্ভরতার একটা জায়গা থাকে। মানুষের অবচেতন মন কিরকম স্বার্থপর দেখ। যাকে হিংসা করে তাঁর উপর আবার দরকার মত নির্ভরও করে। তুই ঝড়ের মত এলি। কষে আমাকে পাঁচ পাঁচটা চড় দিলি। মুখে একটা কথাও বললি না। সেইদিন আমি বুঝতে পারলাম। তোর আর আমার গল্পে আমি কখনোই কেন্দ্রীয় চরিত্র পাব না। অন্য গল্পে পেতে পারি। মানুষের জীবনে তো একসাথে অনেকগুলো গল্প চলে। ছোট বড় মাঝারি। নানারকম। কিন্তু তোর আর আমার এই গল্পে তুই-ই কেন্দ্রীয় চরিত্র। এবং ঐ দিন চড় খাওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম। হঠাৎ করেই যেন উপলব্ধি হল। নতুন। কারণ সাধারণত আমি কেন্দ্রীয় চরিত্র না পেলে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরে যাই। তোর মনে পড়ে!!! আমি বাংলা গান শুনতাম না। কারণ সবগুলা মেয়ে অর্ণব তাহসানদের প্রেমে হাবুডুবু খেত। তুই খুব হাসতি। চড় খাওয়ার পর তোকে নিয়ে আমার গর্ব হল। আমি বুঝতে পারলাম তুই আমি এক দলের না। আমি চাইলেও কখনো তোকে ছুঁতে পারব না।

তোর সাথে আমার দুনিয়ার হাবিজাবি কথা হয়েছে। কিন্তু কখনো এসব কথা বলা হয়নি। ছেলেরা এরকম প্যান প্যানা কথা বলে না। They are much more macho। কিন্তু কথাগুলো মনে মনে হত। নিজের সাথে। এই চিঠিটা তোকে পাঠাব কিনা এখনো ঠিক করিনি। তুই পচাইতে পারিস। সেটা আমি হতে দিতে পারি না। যতই তুই কেন্দ্রীয় চরিত্র হস না কেন। রূপক-কে কেউ পচায় না। রূপক সবাইকে পচায়।

মেয়েদের কত মজা না দোস্ত!!! ঠোঁট গোল করে বলতে পারে miss you!!! কিন্তু দেখলে থাপড়াইতে মন চায় না!!! যাই হোক!!! চিঠি শেষ করি। তুই ভালো আছিস তো!!! ভালো থাক। আমি বিদেশ বিভূঁইয়ে মরে গেলেও তো কখনো টের পাবি না। আরেকবার সুইসাইড করার এটেম্পট নিয়ে তোকে কল দিতে হবে। তখন তো আর পারবি না চড় দিতে। কই ফ্রান্স আর কই বাংলাদেশ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৯

হোয়াইট ক্লাউড বলেছেন: খুব সুন্দর চিঠি! সুন্দর সাবলীল লেখা। অনেক দিন চিঠি লেখা হয় না... আপনার চিঠি পড়ে একটা চিঠি লিখতে ইচ্ছে করছে...
কিন্তু চিঠি লিখার মত কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না!

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯

সুহান সুহান বলেছেন: চিঠি লিখার মত কাউকে খুঁজে পেলেই বরং অবাক হতাম। যান্ত্রিক যুগে চিঠি লিখার মত কাউকে খুঁজে পাওয়া সৌভাগ্যের। আর আমরা নিজেরাই কখন যন্ত্র হয়ে যাই। তাই টের পাই না।

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:২৫

বনমহুয়া বলেছেন: নাইস লেটার ভ্রাতা। আপনার বন্ধু একেবারেই আমার পার্থের মত। মিচকা টাইপ। মানে ভাব দেখায় উনারা কেন্দ্রীয় চরিত্রে নাই কিন্তু আসলেই ঐটাই তাদের ভাব।

৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:২৪

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: বন্ধুত্বের সুন্দর চিঠি । কিন্তু সুইসাইড এসেছে কেনো আবার !!!!

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫১

সুহান সুহান বলেছেন: সুইসাইডের কথা চিন্তা করার মত সেলফ রোমান্টিসিজম আর হয় না!!! :p

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.