নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুবায়ের সুহান

সুহান সুহান

দ্বিধান্বিত

সুহান সুহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন অফিস বাসা-৪

০৭ ই মে, ২০১৭ রাত ২:০৪


দাওয়াত। শব্দটা বাংলা বোধহয় না। যে ভাষারই হোক না কেন এটা একটা সুখকর শব্দই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শফিকের কাছে এই মুহূর্তে তা সুখকর লাগছে না। দাওয়াত এসেছে নাইমার চাচাত ভাই আফজালের কাছ থেকে। তিনি একজন ব্যাঙ্কার। এমনিতে হাসিখুশি মিশুক মানুষ। সবসময় ঠাট্টা-মশকরা নিয়ে থাকে। বিয়ের কথাবার্তা চলার সময় তিনি ছিলেন। বিয়ের আগেকার এই দেখা দেখি পর্বটা কেমন অস্বস্তিকর থাকে পাত্র-পাত্রীর জন্য। সেরকম অস্বস্তিকর সময়ে আফজালের মত হাসি খুশি মানুষ পরিস্থিতি সহজ রাখতে খুব সাহায্য করেছিল। তাহলে সমস্যা কি!!! সমস্যা হয় আসলে তার পরে।

বরযাত্রী নিয়ে যখন যায় শফিকরা, তখন কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে শফিক গাড়িতে বসা। একা। তাঁর বন্ধু-বান্ধব, ভাই-বোন, বাবা-মা, সব গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে। অপেক্ষা করছে কখন কনে পক্ষের লোকেরা এসে জামাইকে রিসিভ করবে। এরপর গেট ধরা ধরি আর নানারকম আনুষ্ঠানিকতা হবে। কিন্তু রিসিভ করতে কেউ আসছে না। এদিকে জামাইয়ের বাড়ির সবাই অপেক্ষা করে করে বিরক্ত হয়ে আছে। কনে পক্ষ থেকে শুধু আফজাল ভাই এসে হাজির। সে একাই জামাইকে বলছে- “এই শফিক নেমে আস। চল চল। উপরে সবাই গেট ধরে আছে।“ এসব বলে গাড়ির গেট খোলে। শফিকের বোন রূপা সাথে সাথে গেট আটকে দেয়। “জামাইকে রিসিভ করতে লোক কই!!! না না এভাবে আমাদের ভাইকে তো আমরা পাঠাব না।“ শফিকের ভাবীরাও এক স্বরে রূপাকে সমর্থন করে। রূপা মেঝ বোন শফিকদের। বিয়ে হয়েছে। এক ছেলের মা। যথেষ্ট মিশুক। আবার মুখরাও। আফজাল যতবার গেট খুলতে যায় রূপা ততবার গেট আটকে দেয়। বিয়ে শাদিতে এরকম ঘটনা খেলাচ্ছলে ঘটেই। কিন্তু আফজাল বিস্ফোরনের মত রেগে গেলেন। “কি!!! আপনি বারবার কেন গেট আটকে দিচ্ছেন!!! আমি বলছি সবাই উপরে গেট ধরে আছে। আপনি একই কথা বার বার বলে যাচ্ছেন। আমিই তো এসেছি ছেলেকে রিসিভ করতে। আর কত লোক নিয়ে আসতে হবে। হ্যাঁ!!!“ বিয়ের বাড়িতে এরকম কারো কারো মাথা গরম হওয়া হরহামেশার ব্যাপার। কিন্তু শফিকের বোনকে এরকমভাবে বলাতে শফিক লোকটাকে কখনো ক্ষমা করতে পারেনি। যদিও রূপাও ঐ বিয়েতে প্রতিশোধ নিয়েছিল ভাইকে নিয়ে পিছনের গেট দিয়ে ঢুকে। কোন গেট ধরাধরির টাকা দেয়া হয়নি। বিয়ে শাদির শুরুটাই হয়েছিল শফিকের এরকম বেসুরে।

সেই আফজাল ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত। শফিকের যেতে মন সায় দিচ্ছে না। কিন্তু যেতে তো হবেই। কারণ নাইমা এ ব্যাপারে কিছু জানে না। সে সময় নাইমা পার্লারে ছিল। তাও জানতেও পারে। কথা তো আর থেমে থাকে না। ছড়ায়। কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে কখনো আলাপ হয়নি। এক দিক দিয়ে ভালোই। এসব আলাপ হওয়ার মত কোন বিষয় না।

নাইমা সেজেছে সুন্দর করে। চোখে কাজল। ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক। শাড়ীর সাথে মিলিয়ে। হাল্কা মেকাপ। তাতেই নাইমাকে চোখে পড়ার মত সুন্দরী লাগছে। শফিক গভীর চোখে তাকিয়ে থাকে নাইমার দিকে। ভিতরের খটকা ভুলে তাঁরা রওনা দেয় দাওয়াত খাওয়ার উদ্দেশ্যে। মাঝপথে আবার কিছু মিষ্টি, আর বাচ্চাদের জন্য আইসক্রিম কিনে নিল। নতুন জামাই। যদিও বিয়ের কয়েক বছর হয়ে গেছে। তারপরো প্রথমবার শ্বশুরবাড়ির দিকে কারো বাসায় যাওয়া মানেই নতুন জামাই। এর আদর আপ্যায়ন যেমন থাকে, বিড়ম্বনাও থাকে। নাইমাদের বাড়ির ওদিকে নতুন জামাই আসলেই কিছু না কিছু উপহার দেবেই। শফিকের খুবই অস্বস্তি লাগে এরকম উপহার পেতে। যদিও মানুষ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে স্বাভাবিকভাবে পছন্দই করে। কিন্তু শুধু জামাই হিসেবে এই মনোযোগ খুব অস্বস্তিকরই বটে।

যাইহোক!! পৌছালো তাঁরা গন্তব্যে। দরজা খুলল আফজাল।
- আরে আস আস। কি খবর জামাই কেমন আছ?
নাইমার চাচাত ভাইয়ের বাসা। সে তাঁর ভাইস্তা ভাতিজিদের দেখে ‘আ’ করে চিৎকার করে ঢুকে গেল। শফিক হাতের প্যাকেটগুলো নিয়ে অস্বস্তি নিয়ে ঘরে ঢুকল। প্রতিবার কারো বাসায় প্যাকেট নিয়ে ঢোকাটা শফিকের বরাবরই বিরক্ত লাগে। এই প্যাকেট কই রাখবে বা কাকে দিবে এটা এক বিরাট ঝামেলা মনে হয় তাঁর কাছে। তাঁকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করল আফজাল।

বলল-
- কি জামাই!!! তোমাদের দেরী দেখে তো আমি ভাবলাম তোমাকে আবার নিচে থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসতে হবে কিনা!!! হা!! হা!!! হা!!!

স্পষ্ট ইঙ্গিত। কথাটা শুনে সাথে সাথে শফিকের মেজাজ বিগড়ে গেল।

- জামাই কি আবার রাগ হলা নাকি!!!

শফিক শুধু হাসল। উত্তর দিল না। পুরো ঘটনার দৃশ্যপটে নাইমা অনুপস্থিত। শফিকের গায়ের রঙ দেখতে কালো না। কিন্তু তাঁর পুরো মুখ থমথমে রকমের কালো হয়ে গেল। আফজাল যতবার তাঁকে ‘জামাই’ ‘জামাই’ করছিল। ততবার তাঁর মনে হচ্ছিল লোকটা তাঁকে টিটকারি করছে। তাঁকে এই একটি শব্দ দিয়ে খোঁচাচ্ছে। শফিক ঠিকমত খেলো না। আসলে খেতে পারল না। তাঁর ভিতরটা অস্থির হয়ে রইল। তাঁর অহং বোধে আঘাত লেগেছে। সে মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে সে আর কখনো এই বাসার সাথে কোন রকম সংস্রব রাখবে না।

নাইমা দৃশ্যপটে না থাকলেও নারী হিসেবে তাঁর চোখটা তো আছে!! এমনিতে ভেতরে সে বাকিদের সাথে খুব গল্প টল্প করছিল। কিন্তু খাবার জন্য স্বামীকে ডাকতে গিয়ে শফিকের চেহারা দেখে সে কিছুটা চমকে উঠল। অন্ধকার হয়ে আছে স্বামীর চেহারা। বিয়ের কয়েক বছরে কিছু ঝগড়া তো হয়েছেই। কিন্তু এরকম ভয়াবহ থমথমে মুখ তো সে শফিকের কখনো দেখেনি।

খাবার মাঝে সবার চোখের আড়ালে স্বামীকে জিজ্ঞেস করল-
- এই!!! কি হয়েছে!!! কোন সমস্যা!!!
শফিক স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল। স্ত্রীকে ভঙ্গিতে আশ্বস্ত করল যে কিছু হয়নি।

সম্পর্ক জিনিসটা খুব অদ্ভুত। সবকিছু বলে কয়ে ধরে বেঁধে শেখানো যায় না। একে অপরের অনেককিছু মাইক্রো সেকেন্ডের কোন একটা ভাবভঙ্গিতে অনেক সহজ করে দেয়। আবার অনেক কিছু জটিল করে ফেলে। শফিকের যে মন মেজাজ খারাপ আর এটা যে নাইমা কারণ না জেনেও বুঝতে পেরেছে এতেই শফিকের মনটা একটু ভালো হয়ে গেল। সম্পর্ক থেকে মানুষ বেশীকিছু চায় না। অল্পই চায়।




অদক্ষ এবং অযোগ্য মানুষ যখন ক্ষমতা পায়, তখন সে একটা ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে নিতে চায়। কারণ এই ত্রাস না থাকলে তাঁর অযোগ্যতা এবং অদক্ষতা মানুষের সামনে অকপট হয়ে যাবে। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ- ক্ষমতার সকল জায়গাতেই মানুষের এই নীতি। কাদের স্যারেরও তাই।

প্রথমে তিনি জিঘাংসা বশে নীলা ম্যাডামকে দৃশ্যপট থেকে দূর করলেন। চাটুকারদের নিয়ে থাকলেন। কিন্তু কাজ তো করতে হবে। অফিস তো ঠিকঠাক মত চালাতে হবে। প্রত্যেকটা প্রোজেক্টের ডেড লাইন আছে। সেগুলো মিট করতে হবে। যারা চাটুকার তাঁরা একটা কাজই ভালোমত করে এসেছেন, শিখে এসেছেন। তা হলো নেটওয়ার্কিং নামের চাটুকারিতা। ক্ষমতাবান লোকদের উঠতে বসতে অযথা অকারণ প্রশংসা করা। তাঁদের কারণে অকারণে চা-নাস্তা, ভাত-তরকারি, সিঙ্গারা, বিরানী-খিচুরি এসব গেলানো। ক্ষমতাবান মানুষেরা যাঁদের অপছন্দ করেন তাঁদের ধুমসে বদনাম করা। ইত্যাদি। প্রত্যেক অফিসেই এ ধরনের লোক থাকে। কিন্তু অফিসের কাজের বেলায় এই চাটুকার সম্প্রদায় ততটা পারদর্শী হন না। তবে এতে তাঁরা মোটেও দমে যান না। ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে তাঁরা অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেন। ফলে অফিসের অবস্থা হয়ে উঠে ভয়াবহ। আইরিনের মত মানুষেরা বিভিন্ন মানুষকে নির্দেশ দেয়া শুরু করল। অনেক সিনিয়র মানুষেরা ভিতরে ভিতরে বিরক্ত হয়ে উঠল। কিন্তু কাদের স্যারের সায় থাকাতে কিছু বলতে পারল না।

শুধু আইরিন-ই না। আরো অনেকেই এরকম করা শুরু করল। প্রজেক্টের দায়িত্ব পাওয়া নতুন মানুষেরা কেউই সরাসরি কাজ করে না। টিমের সেকেন্ড কাউকে দায়িত্ব দিয়ে তাঁরা কাদের স্যারকে তৈলমর্দনে ব্যস্ত থাকেন। আর যার যার প্রোজেক্টের বাকি সবাইকে কারণে অকারণে বকাঝকা করেন। কেউ হয়তো ৫ মিনিট লেট করে অফিসে ঢুকল। তাঁকে চাটুকার টিম লিডার অনেক কথা শোনালেন। কাদের স্যারের কাছে এদের নামে নালিশ করলেন। বদলে কাদের স্যার নতুন নিয়ম করলেন- পর পর ৩ দিন কেউ অফিসে লেট করলে এক দিনের বেতন কেটে রাখা হবে।

শেলী আপা অনেক সিনিয়র মানুষ। নির্ভেজাল আর নিরীহও। হাজার কাজ দিলেও বিনা বাক্য ব্যয়ে করে দেন। যারা বিনা বাক্য ব্যয়ে নিজের ঢাক-ঢোল নিজে না পিটিয়ে কাজ করে যেতে থাকে তাঁদের উপর কাজের চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। শেলী আপা নিরীহ দেখে কিছু বলেন না। দুপুরবেলা লাঞ্চ আওয়ারের ফাঁকে তিনি খালি নিজের মেয়েটাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে যান। অফিসের কাছেই মেয়ের স্কুল। অফিসের বাকি সময়টা মেয়ে অফিসেই থাকে। ক্লাস ওয়ানে পড়ে মেয়ে। সুইট কিউট বয়সের বাচ্চা সে। অফিসের সবাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে মেয়েটার সাথে গল্প করে।

হঠাৎ একদিন কাদের স্যারের রুমে শেলী আপার ডাক পড়ল। আধা ঘণ্টা পর থমথমে মুখ নিয়ে তিনি রুম থেকে বের হলেন। সবাই জিজ্ঞেস করলেন- ঘটনা কী? জবাব দিতে তো পারলেনই না। উলটো সবার জেরায় কেঁদে দিলেন শেলী আপা। পরে জানা গেল যে তাঁর বিরুদ্ধে কমপ্লেন যে তিনি অফিস আওয়ারে প্রায়ই অফিস থেকে বের হয়ে যান। তাঁর মেয়ে অফিসে আসাতে অফিসের অনেকেরই কাজে অসুবিধা হয়। এভাবে প্রত্যেকটা এমপ্লয়ির পেছনেই শাশুড়ির মত প্রত্যেক প্রজেক্টের টিম লিডাররা লেগে রইলেন। বিশেষ করে শেলী আপার মত নিরীহ মহিলাদের নাজেহাল করেই প্রজেক্ট টিম লিডাররা বাকিদের বুঝিয়ে দিতে লাগলেন যে তাঁদের মনমত চলতে হবে। এতে করে অফিসে চাটুকারের সংখ্যা উত্তোরত্তর বৃদ্ধিই পেয়ে যেতে লাগল। কারণ এটাই শুধু আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়।

কাজ + তৈলমর্দন= নিরাপত্তা।

এই ছিল ফর্মুলা। এই অসুস্থ ফর্মুলা ফলো করেই অফিস চলতে লাগল। আগের ম্যানেজার স্যার কাজকে প্রাধান্য দিতেন। নিজে কাজ জানতেন। তাই নিজেকে নিয়ে তাঁর হীনমন্যতা ছিল না। কিন্তু কাদের স্যার আসার পর তিনি পুরো উপনিবেশ চালু করে ফেললেন। যেখানে জুনিয়ররা সব প্রজা। আর প্রজেক্ট লিডাররা একেকজন অকর্মণ্য জমিদার।

শফিকেরও আজকাল অফিসে দমবন্ধ লাগে। যদিও তাঁর পিছনে কেউ ওভাবে লাগেনি। তাও তাঁর অস্থির লাগে। তাঁর টিম লিডার ডাকলেই তাঁর ভয় হয় আবার কি উল্টা পাল্টা বলে।

মাঝে কামালের হাসি থেমে গিয়েছিল। এখন আবার কিছুদিন ধরে মিটিমিটি হাসে। তাঁর হাসির অর্থ বোঝা যায় না।

মাঝে মাঝে বলে- কোন চরম অবস্থাই বেশীদিন টিকে থাকতে পারে না।

কি বুঝাতে চায় কামাল বুঝতে পারে না শফিক।

পর্ব ১ Click This Link পর্ব ২ Click This Link পর্ব ৩ Click This Link

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:৪২

রুমি৯৯ বলেছেন: সম্পর্ক জিনিসটা খুব অদ্ভুত। সবকিছু
বলে কয়ে ধরে বেঁধে শেখানো যায়
না। একে অপরের অনেককিছু
মাইক্রো সেকেন্ডের কোন একটা
ভাবভঙ্গিতে অনেক সহজ করে দেয়।
আবার অনেক কিছু জটিল করে ফেলে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.