নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

জাহিদুল হক শোভন

এই শহরের বোকা ছেলেটি।

জাহিদুল হক শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: বৃষ্টিস্নাত

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৩

এই সময়টাতে মুনা আপার চারপাশে ঘুরঘুর করার কথা আমার। কিন্তু তা না করে আমি রিদির জন্য গরম গরম ডিম ভাজি করে ওর কাছে গিয়ে বললাম “এমন বোকামী কাজ কেন করেছো? এই ব্যাপারটা আমার একদম ভালো লাগেনি।” রিদি চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চেহারায় মলিন আবছায়ার আভা। এই রকম মলিন মুখ যখন আমার চোখের সামনে ভেসে পড়ে আমারও কেন যেন খুব খারাপ লাগে। এই বিষন্ন বিকেল বেলা আমি নির্বাক হয়ে মুনা আপার কবিতা আবৃত্তি শুনি। কি বিশুদ্ধ গলায় না কবিতা আবৃত্তি করে। আমি হাজার হাজার বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকতে পারবো মুনা আপার গলায় কবিতা আবৃত্তি শুনতে। কিন্তু বড়ই দুঃখজনক ব্যাপার আমার এই অপেক্ষার শব্দ মুনা আপাকে একটুর জন্যও অনুতপ্ত করে কিনা আমার জানা নেই। আমি রিদিকে বললাম “ডিম আর ডাল ছাড়া অন্য আর কিছু দিতে না পারায় আমি ভীষন দুঃখিত। চুপচাপ খেয়ে নাও মেয়ে।” রিদি মলিন চেহারা আর তার উজ্বল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “আমার খাওয়ার ইচ্ছে নেই।” তার এই না খাওয়ার ইচ্ছাটা আমাকে একটুর জন্য বিষন্ন করে। আমি তাকে বললাম “এই ডিম আর ডাল কে কখনো অবহেলা করতে নেই, ব্যাচেলর মানুষের জাতীয় খাবার এটা। কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নাও। তারপর বিদায় হও।” আমার এই বিদায় হও বাক্যটা তার কাছে মনে হয় বিষের মত লেগেছে। আর এই বিষাক্ত কথায় ওর উজ্বল চোখ দুটোর মাঝে যেন মেঘ এসে জমা হয়। আমি স্পষ্ট বলতে পারি এই জমানো মেঘ গুলো একটু পর ভালোবাসাহীন বৃষ্টি হয়ে গড়িয়ে পড়বে। আমি তার চুপ থাকা দেখে বললাম “এমন না করলেও কি হতো না? মানছি আমাকে তোমার ভালো লাগে। তাই বলে বাসার কাউকে না বলে আমার কাছে চলে এসেছো।” রিদি ছলোছলো চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে কান্নার ভঙ্গিতে আমাকে বললো “আপনি এমন কেন হ্যাঁ? আমাকে কখনো একটুর জন্য বুঝতে চেষ্টা করেননি আপনি। কতদিন দেখি না আপনাকে। কথা বলা হয়না আপনার সাথে। আমার চোখ দুটো সারাটাক্ষন আপনাকে খুজে বেড়াতো। আমার কাছে মনে হতো একটা শূন্য মরুভূমিতে দিন পার করছি। যে মরুভূমিতে কোন কাব্য নেই, কোন বাতাস নেই, আমি উড়তে পারি না আকাশের সাদা মেঘের মাঝে, শেষ বিকেলের নিশ্চুপ সময়টা আমাকে ভালো থাকতে দিত না। নিশ্বাস নিতে পারি না। আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আর এসব থেকে পরিত্রান পেতে আপনার কাছে চলে আসাটা আমার কি খুব অন্যায় হয়েছে?” এই কথার কি প্রত্যুত্তর দিব আমি বুঝতে পারি না। তার এইসব উদ্ভট কথাবার্তা আমার কাছে কেমন যেন মনে হয়। আমি চুপ করে থাকি। সেও চুপ করে থাকে। এই চুপ থাকার মাঝে একটা নিশ্চুপ নগরী তৈরি হয়। যে নগরীতে কেউ একজন আমাকে তার করে নিতে চায়। আর আমি তার চাওয়াটাকে কোন অনুভূতিতে না নিয়ে একটা অদেখা ছায়ায় জায়গা দেই।
.
হঠাৎ করেই আকাশটা কালো রুপ ধারন করে বৃষ্টি শুরু হয়। আমি ধীর পায়ে হেটে গিয়ে জানালাটা খুলে দেই। জানালা খোলার সাথে সাথেই একটা শীতল বাতাস আমাকে ছুয়ে দেয়। কিন্তু এই শিক্ত বাতাস আমাকে কোন অনুভূতিতে জড়াতে ব্যার্থ হয়। এই সময়টায় বৃষ্টি না এলে কি হতো না? মাঝে মাঝে এই বৃষ্টিকে আমি নারীদের সাথে তুলনা করি। নারীদের যেমন বুঝা যায় না, চেনা যায় না, আজকালকার বৃষ্টি গুলোকেও তেমন বুঝা যায় না, চেনা যায় না। আামার এই উদ্ভট চিন্তা শুধু একান্তই আমার। তবে এই বৃষ্টি শুরু হওয়াতে উপলব্দি করলাম আশপাশের মানুষ গুলোকে। আমাদের মনের ভিতর নাকি একটা অদ্ভুত শক্তি আছে। সময় আর পরিবেশের অবস্থা অনুযায়ী মানুষের এই অদ্ভুত শক্তি গুলো জোৎস্নার আলোর মত কাজ করে। এই যে এখন বৃষ্টি হচ্ছে এই বৃষ্টিকে নিয়ে মানুষের অদ্ভুত শক্তি গুলো কাজ করবে। কারো কারো কাছে এই বৃষ্টি আলো আর অন্ধকার দুটোরই জোৎস্না হয়ে ঘিরে ধরবে। রিদি চুপ করে বসে আছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম “প্রত্যেকটা মানুষের ভালো লাগা কি এক? তোমার মনের ভিতর আমাকে নিয়ে যে চমৎকার স্বপ্নগুলো আঁকছো, যে স্বপ্নগুলোর আশায় এতো গভীরে পৌছে গেছো বিশ্বাস করো আমার মনের ভিতরও এই রকম শতশত স্বপ্ন খেলা করে অন্য দহীতাকে নিয়ে।” রিদি কিছু বললো না। তার চোখ জুড়ে এই বৃষ্টির মত জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তবে রিদির চোখে গড়িয়ে পড়া এই বৃষ্টির কোন শব্দ নেই। আমাদের মানুষের কাছে কখনো প্রাপ্তিটা সহজে ধরা দেয় না। বয়সই বা কত হবে এই মেয়ের? সবে মাত্র ইন্টার প্রথম বর্ষ শেষ করেছে। মূলত রিদি আমার ছাত্রী ছিল। ও যখন ক্লাস নাইনে পড়তো তখন থেকেই আমি ওকে পড়াতাম। এই দীর্ঘ সময় চলে যাওয়ার মাঝে আমি কি করে ওর ভালো লাগার কাব্যের মাঝে বন্ধি হলাম কখনো অনুধাবন করে বুঝতে পারিনি। আর এই ভালো লাগার বিষয়টা যখন ও প্রথম ইঙ্গিত দিল আমাকে তখন সে ইন্টার প্রথম বর্ষে পা দিয়েছে মাত্র। আমাকে একদিন খুব ইতস্তত হয়ে বললো “যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলবো?” আমি বললাম “কি কথা?” সে কিছুক্ষন চুপ করে ছিল। তারপর বললো “মানুষের স্বল্প জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার মাঝে একটা সময় নানা রকম অনুভূতি কাজ করে জানেন। এই অনুভূতির মাঝে হঠাৎ করেই কাউকে ভালো লেগে যায়। আপনার এই রকম সময়টা কি কখনো এসেছে?” আমি একটু অবাক হয়েছিলাম ওর এমন কথা শুনে। তারপর বলেছিলাম “কেন বলোতো?” ও চুল কানে গুজে বললো “না এমনি। কাউকে ভালো লাগে?” আমি তাকে সেদিন বলেছিলাম না কাউকে ভালো লাগে না। তবে এই কথাটা মিথ্যে ছিল। আমি বলতে চাচ্ছিলাম না আমার ছাত্রীর কাছে নিজের সম্পর্কে। কিন্তু দিন যত পার হতো লাগলো, এই নগরীর আলো বাতাস রিদির কাছে পরিবর্তন হতে লাগলো যা আমি একটু একটু করে বুঝতে পারছিলাম। এরপর অনেকদিন কেটে যায়। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই রিদি সাহসের সহিত আমাকে বলে ফেলেছে আমাকে তার ভালো লাগার কথা। আমি অনেকটা ধাক্কা খেলাম। ওকে কি বলা উচিৎ আমি ভাবছিলাম। আমি অনেকক্ষন চুপ করে থেকে তাকে বললাম “তুমি জীবনটাকে যে রুপালি গল্প ভাবছো। জীবনটা আসলে রুপালি গল্পের মত না। এই রকম হাজার হাজার রুপালি গল্পকে শুধু অনুভব করা যায়, ছোয়া যায়, কিন্তু নিজের মত করে পাওয়া যায় না। এই জগৎটা অনেক নিষ্ঠুর। তুমি যদি এটা থেকে বাহির হতে না পারো তাহলে আমি আর আসবো না তোমাকে পড়াতে বুঝছো মেয়ে।” এরপর আরো অনেকটা দিন কেটে গেছে। কিছুটা দিন স্বাভাবিক ছিল। যেন রিদি আর আমার মাঝে কোন কিছু নিয়ে কথা হয়নি। কিন্তু ভালো লাগার মানুষ যখন চোখের সামনে হাজির হয় তখন কি নিজের ভিতর আটকে রাখা অনুভূতি গুলোকে ধরে রাখা যায়? রিদিও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সে পুনরায় তার অনুভূতি গুলো আমার নিকট প্রকাশ করতো। শেষ মেষ আমি ওকে আর পড়াতে যাইনি। পাঁচ মাস হয়েছে ওকে আমি পড়াই না। আর আজকে যেই আমি বাসা থেকে বের হবো হঠাৎ সে বাসায় এসে হাজির। আমি অনেকক্ষন ওর দিকে তাকিয়েছিলাম, চেহারার করুন হাল বানিয়ে রেখেছে। তাকে জিজ্ঞেস করাতে বলে সে একেবারে চলে এসেছে। কথাটা শুনে প্রথমে আমি খুব বিরক্তবোধ করেছিলাম যেন মামা বাড়ির আবদার। সেই সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়েছে। সকাল থেকেই নাকি বিল্ডিং এর চারচাশে ঘুরঘর করছিল। আমি আর আরিফ ভাই দুজনে একসাথে ব্যাচেলর থাকি। আরিফ ভাই চাকরির কারনে অনেকটা সময় অফিসেই থাকে। আর আমি এবার অনার্সের চতুর্থ রর্ষে পা দিলাম মাত্র। সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়ে কিছু খায়নি বলে তাকে আমার এই ডিম ভাজি করে দেওয়া। আর গতকাল রাতের রান্নার কিছু ডাল ছিল। কিন্তু সে কিছুই খাবে না। বৃষ্টিটা এবার কমতে শুরু করেছে। আমি তাকে আবার বললাম “কি হলো খাচ্ছো না কেন?” সে চুপ করে রইলো। তারপর চেয়ার থেকে উঠে বললো “আসলে আমিও না কেমন। এই রকম সম্পর্কে একদিন জড়িয়ে যাব তা কখনো বুঝতে পারিনি। একজন মানুষকে জীবনের যতটুকু ভালোবাসা দেওয়া যায় বা যাকে এতো এতো ভালোবাসলাম তার মনের ভিতর আমার জন্য একটুও জায়গা নেই। এতো এতো ভালোবেসে আমি অনেক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি জানেন। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আমাকে একটা সিএনজি ঠিক করে দিবেন? আমি চলে যাব। যদি কখনো আমার জন্য বিন্দুমাত্র অনুভূতি জাগ্রত হয় আপনার মনে, তাহলে অবশ্যই আমাকে বলবেন কেমন? কথা দিচ্ছি আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিব না।” আমি তার এই কথার কোন প্রত্যুত্তর দেইনি। কেন যেন নিজেকে ভয়ংকর স্বার্থপর মনে হচ্ছে। যেন আামর মনে কোন দয়া নেই, অনুভুতি নেই কিন্তু এই পৃথিবীর বেড়াজালে আমিও একটা মানুষ। আমারো অন্যকিছু নিয়ে ভাবতে হয়।
.
এই শহরের সন্ধ্যার আকাশটা আমার কাছে অন্য রকম মনে হয়। আমি চুপ করে এই আকাশটার দিকে প্রায় তাকিয়ে থাকি। ভাবি আমাদের মানুষের অনুভূতি গুলো এতো ভিন্ন কেন। আমি যখন এই অনুভূতিকে নিয়ে ভাবনায়রত তখন মুনা আপা ফোন দিয়ে বললো “একটু আসবি? আজকে আমার মনটা ভালো নেই।” আমি অনেকক্ষন চুপ করে বললাম আসছি। আমি খেয়াল করলাম বেশ খেয়াল করলাম মুনা আপা যেদিন যেদিন বলে তার মন ভালো নেই ঠিক সেই মুহুর্তে আমার মনটাও কেমন যেন বিষন্ন হয়ে যায়। এই বিষন্ন মন নিয়ে আমি মুনা আপার কাছে যাই। তাকে দেখে আমি বললাম “কি হয়েছে হঠা? মন ভালো নেই কেন?” মুনা আপা কিছু না বলে ছাদে যায়। ছাদের রেলিং এর কাছে গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে “আদনানকে যে আমার ভালো লাগে সেটা তো তোকে জানিয়েছি। জাহেদ বলতে পারিস কি করলে ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের মত করে পাওয়া যায়?” আমি মুনা আপার চোখে চোখ রেখে বললাম “আমার জানা নেই। এমন কোন নিয়ম আছে নাকি? যদি জানতাম তাহলে এই নিয়মটা প্রথমে আমিই প্রয়োগ করতাম।” মুনা আপা চুপ করে থাকে। আমিও চুপ করে নিরবতার মাঝে তার কাজলে আঁকা চোখকে অনুভব করি। কি ভয়ংকর সুন্দর মুনা আপার চোখ। আমার এমন তাকানো দেখে মুনা আপা একটু বিব্রতবোধ করলো। তারপর চুল গুলা ঠিক করে বললো “জানিস আমার না খুব ইচ্ছে জাগে। বোকা বোকা ইচ্ছে। এমন একটা রাতে আদনান আমার পাশে বসে থাকবে। আমি সারা রাত ধরে ওকে কবিতা শোনাবো। কবিতা শুনতে শুনতে ও যখন বলবে ক্ষিদে লিগেছে আমি তখন বলবো এতো ক্ষিদে লাগে কেন? বক বক করে যে তোমাকে কবিতা খাওয়াচ্ছি ক্ষিদে মিটে না? কিন্তু দেখ এই ছেলেটা আমার না, অন্যকারো।” আমি কি বলবো বুঝতে পারি না। আমি এই রাতের আকাশটার দিকে একবার তাকাই। ভাবি মানুষের মনে আরেক মানুষকে নিয়ে কত স্বপ্ন, আশা। যে স্বপ্নকে ইচ্ছা করলেই ছোয়া যায় না। আদনান নামের চোখে চশমা পড়া, কোকড়া চুলের এই চমৎকার ছেলেকে নিয়ে মুনা আপার কত অনুভূতি। কিন্তু এই চমৎকার নামক ছেলেটা মুনা আপার না। মুনা আপা আমার এক ব্যাচের সিনিয়র। কয়েক মাস পরেই তার ফাইনাল পরীক্ষা। ভার্সিটিতেই তার সাথে আমার পরিচয়। আমি যেদিন এই ক্যাম্পাসে তার কবিতা আবৃত্তি শুনলাম তারপর থেকেই একটা নতুন নীল রঙ্গা অনুভূতি আমার বিশাল আকাশটায় ছড়িয়ে গিয়েছিল। আমি মনোমুগ্ধকর হয়ে শুনছিলাম। সেদিনের পর থেকে এই বিশুদ্ধ মনোমুগ্ধকর গন্ধটা আমাকে হ্যামলিয়নের বাশিরওয়ালার মত তার পিছু টেনেছে। মুনা আপার ভালোবাসা আদনান ফিরিয়ে দিয়েছিল। এই ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ আছে। মুনা আপার বাবা মা নেই। ছোট বেলা থেকেই মামা মামির কাছে বড় হয়েছে। একটা বাচ্চা নিজের বাবা মায়ের কাছে যে ভালোবাসাটা পায়, আর যাই হোক সে ভালোবাসাটা অন্য কারো কাছ থেকে কখনো পায় না। মুনা আপাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ক্লাস নাইনে থাকতে নাকি মুনা আপা মামির সাথে রাগ দেখিয়ে বাসা থেকে বের হয়েগিয়েছিল। একটা মেয়ে হয়ে সে সময়ে বাসা থেকে বের হয়ে আজ এতো দুর পর্যন্ত এসেছে। আমি হলে কখনো পারতাম না। নিজের পড়ালেখা ঠিক রাখা, টিউশনি করা এসব করেই মুনা আপা এতো দুর। এই একটাই কারণ, যে মেয়ের বাবা মা নেই, সারাটা বছর মেসে থেকে বড় হয়েছে সে মেয়েকে আদনানের বাবা মা মেনে নিবে না। আামার ভাবতে অনেক কষ্ট লাগে মুনা আপার মনে আকা জীবন্ত আলপনা গুলো কি আদনান দেখতে পায় না? অবশ্য মাঝে মাঝে আমি নিজেকেও অনেক খারাপ মনে করি। রিদি তার সমস্ত কিছু দিয়ে যেমন আমাকে চেয়েছে আমিও তেমনি আমার সমস্ত কিছু দিয়ে মুনা আপাকে চেয়েছি। আমার এই চাওয়াটা জানি অন্যায়। কিন্তু এই চাওয়াটা আমি কখনো মুনা আপার নিকট প্রকাশ করিনি। প্রায় দশদিন পার হয়েছে রিদি সেদিন কত যন্ত্রনা নিয়ে আমার বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।
.
পরবর্তী একমাস পর এক দুপুর বেলা জানতে পারি মুনা আপা বিষ খেয়ে পৃথিবী ত্যাগ করার চেষ্টা করেছে। আমি কিচ্ছু না ভেবে কিসের মধ্যে দিয়ে হাসপাতালে পৌছে মুনা আপার পাশে দাঁড়িয়ে আছি তা জানি না। আমার ভিতরটা দাউ দাউ করে পুড়ছে। আমি যখন মুনা আপার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম তখন আমার মনের শহরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের উদাসীনতা। দেখলাম ফয়সাল ভাই মুনা আপার হাত ছুয়ে রেখেছে আর কান্না করছে। আমি ফয়সাল ভাইকে খুব ভালো করেই চিনি। খুব সহজ সরল একটা ছেলে। তেমন কারো সাথে কথা বলে না। পৃথিবীতে অনেক অনেক ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে। পৃথিবীতে তারা লাজুক, বোকা, হাদারাম নামে পরিচিত। ফয়সাল ভাই তাদের মধ্যে একজন। মুনা আপা আমাকে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার চোখেও পানি। আমি যেই বলতে যাব “এমন করেছো কেন?” তার আগেই মুনা আপা আমাকে বললো “ আমি অনেক হাপিয়ে গিয়েছিরে। এই সমাজের সাথে আর তাল মিলাতে পারছিলাম না। সেই ছোট বেলা বাবা মাকে হারিয়েছি। তারপর আশ্রয় মিললো মামা মামির কাছে। কিন্তু মামির প্রতিদিনের অত্যাচারের আচরন সহ্য করতে পারলাম না। তারপর নিজের পথ নিজেই চিনতে শুরু করলাম। এই পথ চিনতে গিয়ে কত মানুষের কথা শুনলাম। নিজেকে শান্তনা দিতাম একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর আদনান নামের এক চমৎকার ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয়। তাকে এতো এতো ভালোবাসলাম কিন্তু সে আমাকে ফিরিয়ে দিল। অবশ্য তার কোন দোষ নেই। সমাজ বলেও তো একটা কথা আছে।” এইটুকু বলে মুনা আপা চুপ করে রইলো। তার চোখ দিয়ে পানি বেয়ে বেয়ে পড়ছে। ফয়সাল ভাইও কান্না করছে। আমার কি বলা উচিৎ আমি বুঝতে পারলাম না।” মুনা আপা আবার বলতে লাগলো “এই হাদারামটা দেখ সেই কখন থেকে কান্না করছে আমার হাত ছুয়ে। আর বার বার বলছে আমাকে এই পৃথিবী থেকে যেতে দিবে না। আমাকে নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে অনেক ভালোবেসেছে। পাগলটাকে কান্না বন্ধ করতে একটু বলবি?” মুনা আপার কথা শুনে আমার বুকের ভিতরটা হঠাৎ করে ধক করে উঠলো। এই শহরের অদ্ভুত মায়া মায়া কষ্ট গুলো আামকে মুহুর্তের মধ্যে আচ্ছন্ন করে ফেললো। আমি কোন কথা বললাম না। আমার কেন যেন একটু একা থাকতে ইচ্ছে করছিল। আমি মুনা আপাকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম “আমি যাই?” মুনা আপা কিছু বললো না। আমি যখন চলে যাচ্ছিলাম মুনা আপা ডাক দিয়ে বললো “জাহেদ শোন।” আমি অনেক কষ্টে মুনা আপার দিকে ফিরে তাকাই। মুনা আপা বলতে লাগলো “পুনর্জন্ম হবে কিনা আমি জানি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে এক সেকেন্ড আগে হলেও আমার আগে জন্ম গ্রহণ করবি এবং অবশ্যই অবশ্যই আমার সাথে দেখা করবি কেমন?” আমি চুপ করে এই কথাটা অনুভব করি। আমার চোখ দিয়ে হঠাৎ করেই বৃষ্টি নামলো আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টি। মুনা আপা তাহলে আমার ভালো লাগা বুঝতো? আমি চুপ করে চোখের জল মুছে বের হয়ে যাই।
.
এরপর কয়েকটা দিন আমি ঘুমাতে পারিনি। এই শহরের ঘুমেরাও হয়তো আমার কাছ থেকে মুনা আপার মত হারিয়ে গিয়েছে। প্রিয় মুনা আপা তোমার প্রতি আমার যতটুকু সম্মান ছিল বিশ্বাস করো এই সম্মানটা তার থেকেও বেড়ে গিয়েছে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তোমাকে সব সময় যেন ভালো রাখে। আজকের আকাশটা অনেক মেঘাচ্ছন্ন। এই মেঘাচ্ছন্ন আকাশটা থেকে আজকে হয়তো বৃষ্টি নামবে। আর এই বৃষ্টির মাঝে কেন যেন নিজেকে তুলে ধরতে ইচ্ছা করছে। সন্ধ্যার আলোকচ্ছটা যখন চারপাশে ছড়িয়ে গেল তখন আকাশ গুড়ুম গুড়ুম ডাক দিয়ে বৃষ্টি নামিয়ে দিল। আমি নিজেকে বৃষ্টির মাঝে মেলে ধরলাম। এই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় ভিজতে ভিজতে এক আশ্চর্য রকমের অনুভূতি তৈরি হলো। রিদিকে দেখার। মেয়েটা কেমন আছে? আমার জন্য কি এই বৃষ্টির মত এখনো তার মন কাঁদে? এসব ভাবতে ভাবতেই এই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় তার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। যত সময় পার হচ্ছে বৃষ্টি একবার থেমে আবার বেড়েই চলছে। আমরা দু পায়ে দৈত্যরা এমোনি। যে মানুষটা মন উজার করে তাদের অনুভূতি নিজের মাঝে প্রকাশ করতে চায়, ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়ে নিজের পিছে লেগে থাকে আমরা তাদের অবহেলা, অবজ্ঞা করি। তাদের অনুভূতি গুলো মনোযোগ দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি না। অথচ যাকে কখনো পাওয়া সম্ভব না, যার কাছে অনুভূতি প্রকাশ করা অনেক কষ্টের তাকেই পাওয়ার জন্য উপচে পড়ে লেগে থাকি। আর যখন এসব লেগে থাকার চেষ্টা ব্যার্থ হয় তখন সেই আগের পুরানো মানুষটাকে অনুভব করি। স্বার্থপরের মত তার কাছে ছুটে যাই। ততদিনে হয়তো অনেক দেরি হয়ে যায়। আমি জানি রিদি আমাকে ফিরিয়ে দিবে না। সে আগের মতই তার অনুভূতি আমার নিকট পেশ করবে। কিন্তু আমি এমনটা কখনো করবো না। তার কাছে গিয়ে স্বার্থপরের পরিচয়টা দেওয়ার কোন ইচ্ছা নেই। নিজের প্রতি তীব্র ঘৃনা তৈরি হলো। এই বৃষ্টিমাখা আকাশটা আজ আমার মনের মত। আমার মনের ভিতরটা যেমন ভিজে চুপসে হয়ে গেছে। এই শহরের সব কিছুই বৃষ্টির ছোয়ায় ভিজে চুপসে হয়ে গেছে। আমি আবার হাটতে লাগলাম। এই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় হাটতে হাটতে মনে মনে বললাম আমি অপেক্ষা করবো রিদি তোমার ফিরে আসার আগমনের। উপরে যে একজন আছে সেঁ সব কিছু দেখছে, সব কিছু জানে। সেঁ যদি তোমার আর আমার হাত এক করা লিখে রাখে তাহলে তুমি আসবে । আর না হয় নিজেকে নিজে শান্তনা দেওয়া ছাড়া কিছুই থাকবে না…

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:১৮

স্রাঞ্জি সে বলেছেন: গল্প ভাল লাগল।

হ্যাপি ব্লগিং।

২০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০৯

জাহিদুল হক শোভন বলেছেন: ধন্যবাদ স্রাঞ্জি সে

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪০

ঋতো আহমেদ বলেছেন: গতানুগতিক। তবে, ভালো লিখেছেন। পরম্পরা, বাক্যবিন্যাস সুগঠিত। একটু ভিন্নভাবে উপস্হাপন হলে আরো ভালো হোতো। শুভ কামনা।

২০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৫৩

জাহিদুল হক শোভন বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ এবং আপনাকেও শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.