নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

জাহিদুল হক শোভন

এই শহরের বোকা ছেলেটি।

জাহিদুল হক শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: কোলবালিশ

২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:১৯

জেনিয়ার সাথে আামর কিছুক্ষন আগে যখন ব্রেকআপ হলো আমার কেন যেন একটুও খারাপ লাগেনি। সব বিষণ্ণতার কল্পনা গুলো আমার অনুভূতির জানালায় জমা হয়। এই ব্যস্ত শহরে এরকম অনুভূতি নিয়ে ভাবতেও মনের ভিতর বিষাদের আবছায়াটা জাগ্রত হয়ে ওঠে। এই বিষাদের আবছায়ার চারপাশে আমার অনুভূতি গুলো যখন ঘুরপাক খায় তখন জেনিয়া বললো “তুমি আমাকে একটু হলেও কি মিস করবে? সত্যটা বলবে।” আমি চুপ করে থাকি। আমার এলামেলো ইচ্ছে গুলো কেন যেন এই নীল আলোয় প্রকাশ করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ইচ্ছে করে এই ফ্যাকাশে অনুভূতি গুলো অবিরাম আকাশে ছড়িয়ে দিতে। কিন্তু আমাকে দিয়ে কেন যেন হয় না। আমি তাকে মাথা নেড়ে না সূচক ইশারা দিয়ে বুঝাই “একটু মিস করবো না” সে আমার দিকে উদ্ভেগপূর্ণের সহিত তাকিয়ে থাকে। তার চেহারায় একটা মন খারাপের আভা ছড়িয়ে যায়। সেই আভার মাঝে দুরুত্ব হওয়ার শব্দ গুলো আমার বিষাদ ছায়ায় আশ্রয় হয়। আমার এমন ইশারা বুঝে আস্তে আস্তে আমার কাছে এসে ছলছল চোখ নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলে “তাহলে মিস করবে না?” আমি তাকে পুনরায় জানাই “একটু মিস করবো না। তবে অনেক করবো।” তার ছলছল চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো “এই নিয়ে তোমার সাথে আমার কতবার ব্রেকআপ হয়েছে জানো? একুশ বার।” আমি চুপ করে থাকি। মাঝে মাঝে চুপ করে থাকতে হয়। জীবনকে মায়ার মাঝে আবদ্ধ করে মানুষ গুলো কষ্টকে আমন্ত্রন জানায়। কিন্তু আমি এমনটা করি না। জীবনের তীর যেদিকে যায় আমি সেদিকেই অগ্রসর হতে থাকি। মিথ্যে কল্পনা দিয়ে জীবনের মায়ায় কষ্টকে আমন্ত্রন করে কি পায় মানুষ গুলা এই ব্যাপারটা অনুধাবন করে বুঝতে পারি না। আমার বাহুডোর থেকে সে নিজেকে ছাড়িয়ে কান্না করতে থাকে। কান্না করলে ওর নাকটা লাল হয়ে যায়। আমি ওকে অনেক জিজ্ঞেস করেছিলাম “কান্নার সাথে তোমার নাকের সম্পর্ক কি? মানুষ কান্না করলে চোখ লাল হয় আর তোমার নাক লাল হয় কেন? এর উত্তর সে আমাকে আজও দিতে পারেনি। আমি তাকে বলি “নিজের যত্ন নিবে। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবে। যদি মনে বিষণ্নতা ছুয়ে যায় আকাশ দেখবে, ছবি আঁকবে।” সে বলে “আমি ছবি আঁকতে পারি না” এই শহরের আলোর মাঝে আমাদের কত স্মৃতি তৈরি হয়ে আছে। আমি তার চোখের জল মুছে দিয়ে বলি “তাহলে আমরা সত্যি সত্যি ব্রেকআপ করছি?” সে মাথা দিয়ে হ্যাঁ সূচক ইশারা দেয়। কেন যেন আমার আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। এই ধূসর রঙ্গিন পৃথিবীতে শূণ্যতা ভর করে আমার দেয়ালে। সেই দেয়ালের কোনায় কোনায় আধাঁর জমা হয়। সেই আধাঁরে আমার ছায়াটা খুঁজে পাওয়া যায় না।
.
পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে থাকে আমি তখন জেগে থাকি। আকাশের তারা গুনি। আমি জানি এটা পাগলের কাজ ছাড়া কিছু হতে পারে না। তারা গুনা যায় না। কিন্তু মাঝে মাঝে পাগল হতে ইচ্ছে করে এই শহরের নিক্রপলিসে। প্রিয় পাঠক জেনিয়ার সাথে আমার ব্রেকআপ হয়েছে আজ দুদিন পার হয়ে গিয়েছে। আজ বিকেলে যখন ও আমাকে ফোন দিয়ে বললো “খুব একা লাগছে” আমার সময়টা যেন থমেকে গিয়েছিল। আমি তাকে বলেছিলাম “আমার শহরে এই দুটো দিন ভোর বেলায় কাকেরা কা কা করে ঘুরে বেড়ায়নি। শহরটা রাতের মতই ঘুমিয়ে ছিল। তবুও দেখো আমি জেগে উঠি শহরের সাথে তাল মিলিয়ে চলি। আমার কিন্তু একদম একা লাগে না।” সে চুপ করে থাকে। তার বড় বড় নিশ্বাসের শব্দ আমাকে বুঝিয়ে দেয় এই ব্যস্ত শহরের মানুষ গুলা এক একটা স্বার্থপর। একটুপর সে ইতস্তত হয়ে বললো “সে কেমন আছে?” কেন যেন আমার হাসি পেল। তারপর বললাম “ভালো আছে আমি তাকে নিয়ে দিব্যি ভালো আছি। তুমি কতবার আমাকে ছেড়ে চলে গেলে অথচ দেখো সে আমাকে আজও ছেড়ে যায়নি। একটা ব্যাপার কি জানো তোমার অপূর্ণতা সে পূরণ করতে না পারলেও আমার বেলা শেষে সে আমাকে হতাশ হতে দেয় না।” তারপর সে ফোনটা রেখে দেয়। আমি আবার আকাশের তাকিয়ে থাকি। তারা গুনি। পাগল সাজি। মাঝে মাঝে পাগল সাজতে ভালো লাগে। জেনিয়ার সাথে আমার এই ঘনো ঘনো ব্রেকআপ হওয়ার মাঝে একটা ব্যাপার আছে। জেনিয়া হচ্ছে আমার বিয়ে করা বউ। প্রিয় পাঠক নিশ্চয় অবাক হচ্ছেন বউ এর সাথে এতো ঘনো ঘনো ব্রেকআপ কি জন্য? আসলে বিয়ের আগে আমার জীবনের একাকীত্ব এই শহরে নীল খামে আমার জমানো অনুভূতি গুলো বন্ধি করতাম। স্বপ্ন দেখতাম উদ্দেশ্যহীন অনুভূতি নিয়ে। এই অনুভূতিটা ছিল আমার কোলবালিশ নিয়ে। কিন্তু বিয়ের পর এই কোলবালিশকে ত্যাগ করা আমার প্রয়োজন ছিল। কেন যেন আমি তা ত্যাগ করতে পারিনি। বাসর রাতে আমি যখন কোলবালিশ নিয়ে শুয়ে পড়েছিলাম তখন তার চেহারা দেখে বুঝেছিলাম সে আমায় নিশ্চয় বলেছিল আমি একটা অদ্ভুত চিড়িয়া। বাসর রাতে যুগল বন্ধিরা কত অনুভূতিতে ডুব দেয়। একে অপরের কাছে আসে। নিজের ইচ্ছে গুলো একে অপরের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমি তা না করে ওকে বলেছিলাম “ঘুমিয়ে পড়ো মেয়ে” বিয়ের কয়েকদিন অতিক্রম হওয়ার পর একদিন আমায় বললো “তুমি কি কোলবালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারো না।” আমি তাকে মাথা দিয়ে না সূচক ইশারা দেই। সে আমাকে বলে “কেন? এখন তো আমি আছি।” আমি কেন যেন একটু হাসলাম। তারপর একটু ইতস্তত হয়ে বললাম “আসলে আমি ব্যাপারটা নিয়ে অনেক নার্ভাস। কিভাবে কি বলে শুরু করবো বুঝতে পারি না। না মানে কি বলে তোমাকে স্পর্শ করবো বা তোমার নয়নে চোখ রেখে কথা বলবো বুঝতে পারি না। এই অনুভূতিতে কখনো জড়ায়নি তো তাই। বাসর রাত থেকে শুরু করে যত গুলো দিন পার হয়েছে আমার কতবার ইচ্ছে করেছে তোমাকে স্পর্শ করতে জড়িয়ে ধরতে। আমার সকল উষ্ণতা, মনের অব্যক্ত কথা গুলা, তোমার শূণ্য চোখে প্রকাশ করতে চেয়েছি। কিন্তু আমি পারি না। ভয় করে” জেনিয়া হাসতে থাকে। তার হাসির মাঝে পাগল করা গন্ধ পেয়েছিলাম। সে হাসতে হাসতেই রুমের ভিতর যেতে বলেছিল “আজকে আমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার সকল উষ্ণতা আমার চোখে প্রকাশ করবে ঠিকাছে?” আমার মনের ভিতর তখন একটা অদ্ভুত ভালো লাগা ছুয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বাস করবেন কিনা পাঠক আমি জানি না। ওকে স্পর্শ করলে কিংবা জড়িয়ে ধরতে গেলেই আমার পুরো শরীরটা শীতল হয়ে যেত। আমার পুরো শরীরটায় কম্পন সৃষ্টি হতো। তার নরম হাতের ছোয়ায় আমি হারিয়ে যেতাম অন্য জগতে। যতবার ওকে জড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করেছি ঠিক ততবার আমি ব্যার্থ হয়েছি। এই নিয়ে ওর মন মালিন্য অভিমান আমার কাব্যের মাঝে প্রকাশ করে আর আমি নির্বাক হয়ে থাকি। আমার কিছু করার থাকে না। আর এই নিয়ে ওর সাথে আমার একুশ বার ব্রেকআপ হয়েছে। শ্বশুর বাড়ি কাছে হওয়া একটা ঝামেলা আছে এই ব্যাপারটা বেশ উপলব্দি করতে পেরেছি। কিছু হলেই বউ শ্বশুর বাড়ি পারি দেই আমার এক ফালি সুখ ছিন্ন করে। অবশ্য আমি এই চলে যাওয়ার ব্যাপারটায় তাকে বাধা দেই না। কেন যেন পৃথিবীর কোলাহলে তাকে বাধা দিতে আমার ইচ্ছে করে না।
.
অফিস শেষে এই বিকেলের আবাছায়া নিজের অনুভূতির ক্যানবাসে বন্ধি করে বাসার দিকে পারি দেই ক্লান্ত শরীরটাকে অবসর সময় দিতে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে আমার অনুভূতি গুলো অবশ করে এই জরাজীর্ণ শহরের দেয়ালে আবদ্ধ করতে। অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ফয়সাল ভাই যখন বললো “ভালোবাসা ব্যাপারটা কেমন জানি তাই না জাহেদ ভাই?” আমি কিছু বুঝতে পারি না। আমি বললাম “যেমন? আপনি কি বলেছেন আমি কিছু বুঝিনি।” সে একটা মৃদু হাসি দেয়। তারপর বলতে থাকে “তেমন কিছু না। আমার স্ত্রী সব সময় বলে আমার সাথে তার ঝগড়া করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সে আমার সাথে কি নিয়ে ঝগড়া করবে তা ভেবে পায়না। আমি তাকে বললাম তোমার এতো ঝগড়ার ইচ্ছা কেন? সে বলে আমি যখন ঝগড়া করে অভিমান করে থাকবো তুমি আমার অভিমান ভাঙ্গাবে বিষয়টা মজা না? আমি হাসতে থাকি। ভাবছি আজকে বাসায় গিয়ে ঝগড়া করবো।” আমি ফয়সাল ভাই এর কথা শুনে একটু অবাক হলাম বটে। এই শহরের মানুষ গুলার ইচ্ছার কোন শেষ নেই। এই ইচ্ছের আকাশে কত স্বপ্ন ঘুরে বেড়ায় তার প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে। আমি ফয়সাল ভাইকে বলি “তা কি নিয়ে ঝগড়া করবেন?” ফয়সাল ভাই হাসতে হাসতে বলে “রাতের বেলা যখন খেতে বসবো তখন বলবো তুমি এইগুলা কি রান্না করছো মুখেই দেওয়া যায় না। এই ব্যাপারটা নিয়ে তার ঝগড়ার অনুভূতিতে বৃষ্টি ঝড়াবো। তার চোখে জলের আভাস নিয়ে আসবো। তারপর তাকে বুঝাবো প্রিয় মানুষটার সাথে পথ অতিক্রম করতে এই রকম পাগলামোর ইচ্ছার কোন প্রয়োজন পড়ে না।” আমি ফয়সাল ভাইকে কিছু বলি না। ইদানিং প্রায় বৃষ্টি নামে আকাশ ভেঙ্গে। আমি তখন চুপ করে এই বৃষ্টিকে অনুভব করি। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় এসে যখন দরজাটা খুলতে যাব তখন দেখি দরজাটা খোলা। সাথে সাথে আমার মনের ভিতর একটা বৃষ্টি ঝড়ে যায়। আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টি। বুঝতে পারলাম জেনিয়া বাসায় আসছে। আমাকে দেখে সে বলে “বাসার তো বারোটা বাজায় ফেলছো। আমি কিছু বলি না। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অফিস ব্যাগটা কাধঁ থেকে রেখে সোফার মাঝে শরীরটা তলিয়ে দেই। তারপর তাকে বলি “কখন আসছো? ফোন করোনি যে?” সে আমার কাছে এসে আমার পায়ের জুতোটা খুলে দিতে দিতেই বললো “তোমাকে প্রতিবার বলি বাসায় এসেই জুতোটা খুলে ফেলতে আমার কথা কি তোমার কানে যায় না। পরিষ্কার তো আমাকেই করতে হয় নাকি?” আমি তার এই কথার কি উত্তর দিব ভেবে পাই না। তাকে বললাম “শ্বাশুড়ি আম্মা কিছু বলে নাই এই যে তুমি ঘনো ঘনো আমাকে একা করে চলে যাও” জেনিয়া চুপ করে থাকে। অবশ্য বলার প্রয়োজন পড়ে না। জেনিয়া এই নিয়ে কাউকে কিছু বলে না। আমার জুতো গুলো জায়গায় রেখে বলে “আম্মা তোমার জন্য পাঞ্জাবী কিনে দিতে চেয়েছিল আমি বারণ করেছি।” আমি বললাম “ভালো করেছো। না হয় দুদিন পর পর আমাকে খোটা দিবে।” জেনিয়া আবার আমার কাছে এসে তার শাড়ির আচল কোমড়ে গেথে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে বলে “পাঞ্জাবী না কিনে তোমার জন্য কোলবালিশ কিনে এনেছি। এই ঈদে এটাই তোমার পাওনা।” আমি কোলবালিশের কথা শুনে সোফা থেকে দাঁড়িয়ে যাই। কি অদ্ভুত ঈদে কেউ বুঝি কোলবালিশ দেয়? আমি কোলবালিশ দেখতে রুমের ভিতর যাই। নতুন কোলবালিশ দেখে আমার ভিতরটা ধক করে উঠে। আমি তাকে বললাম “কিনছো ঠিকাছে। সাইজটা একটু ছোট হয়ে গিয়েছে। কিনার সময় আমাকে ফোন দিলেই পারতা।” আমার এই কথা শুনে জেনিয়া কি এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে আমাকে দৌড়ানি দেয়। আমি তাড়া খেয়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ওয়াশরুমে গিয়ে আশ্রয় নেই। জেনিয়া ওপাশ থেকেই বলতে লাগলো “আজকে তোমার একদিন কি আমার একদিন। আমার থেকেও কোলবালিশ তোমার কাছে বড় হয়ে গিয়েছে? আমাকে বিয়ে না করে কোলবালিশকে বিয়ে করলেই পারতে। বিয়ের পর বউ হচ্ছে কোলবালিশ এটা তোমার মাথায় ঢুকে না? আমি চুপ করে আমার অজস্র শব্দকে শান্তনা দিতে থাকি। কেন যেন শান্তনার শব্দকে বড্ড বেমানান লাগে।
.
রাতের আকাশের দৃশ্যপট আমার নয়নে ছড়িয়ে গেলে আমার চোখে এক বিশাল ঘুম এসে হাজির হয়। আমার এই ঘুম ঘুম চোখে এক অদ্ভুত ইচ্ছে জাগে। তাকে একটা শাড়ি কিনে দেওয়ার ইচ্ছে। ঈদের দিন আমি নিজ হাতে সাজিয়ে সকাল সন্ধ্যা সারাদিন তাকে দেখবো। তার চোখে আমার অনুভূতি গুলো ছড়িয়ে দিব। এসব ভাবতে ভাবতেই রুমে যখন ঘুমাতে গেলাম দেখি জেনিয়া বিছানার মাঝখানে বসে আছে। সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি চুপ করে রইলাম। আমার চুপ থাকা দেখে সে বলে “আজকেই ফাইনাল বুঝছো। হয় আমার সাথে সংসার করবে না হয় তুমি তোমার কোলবালিশের সাথে সংসার করবে।” আমি দিদ্ধায় পড়ে যাই। একবার জেনিয়ার দিকে তাকাই আর একবার কোলবালিশের দিকে তাকাই। নতুন কোলবালিশের জন্য আমার মায়া হয়। আমি ওর কাছে গিয়ে বলি “কিন্তু আমি তোমাকে স্পর্শ করলে আমি আর নিজের মাঝে থাকতে পারি না। আমার ভিতরে একটা কম্পন সৃষ্টি হয়। তখন চারপাশে কি হচ্ছে আমার কিছুই খেয়াল থাকে না।” জেনিয়া হাসতে থাকে তারপর আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে “আমার আঙ্গুলের ভাজে আঙ্গুল রাখো তো।” আমার মনের ভিতরের আলপনা গুলা জেগে ওঠে। যেই আমি ওর হাত স্পর্শ করলাম আমার মনের ভিতরে কি যেন একটা বয়ে গেল। আমি হাতটা সরিয়ে ফেলি। তারপর হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যায়। আমার অনুভূতির দেয়ালে অজস্র শব্দ ঘুরপাক খায়। এক একটা শব্দ আমাকে ভেসে নিয়ে যায় অন্যরকম ভালো লাগাতে। আমার চোখের ঘুমেরা হারিয়ে যায় নিমিশেই। জানালা দিয়ে বাতাসের শো শো শব্দ ধেয়ে আসে। আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়। সে মোমবাতি জ্বালিয়ে আমার দিকে মায়া মায়া চোখ নিয়ে তাকায়। আমি তার চোখের মাঝে মাতাল হওয়ার ছাপটা দেখতে পাই। মোমবাতির হলুদ আলোয় তার চেহারার আলোকচ্ছটা আমার নয়নে নয়নে খেলা করে। তার আলোকচ্ছটা আমার ঘরের দেয়ালে ছড়িয়ে যায়। আমি আস্তে আস্তে ওর কাছে গিয়ে চুপ করে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। সেও আমার দিকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজের ভিতরের অনুভূতি গুলো জাগ্রত করে সাহসের বাহবা দিয়ে তার হাত থেকে মোমবাতিটা নিয়ে ফেলি। কি মনে করে যেন আমি তার চুলের খোপা খুলে দেই। সে আমার দিকে এক অদ্ভুত চোখ নিয়ে থাকে। সে চোখ আমাকে বলে দেয় ছন্নছড়া হয়েছো? আমি গুন গুন করে তাকে বলতে লাগলাম….
এই ভালো এই খারাপ, প্রেম মানে মিষ্টি পাপ
চলো মানে মানে দিয়ে ফেলি ডুব, তুমি আমি মিলে।
দুজনেই মনটাকে বেঁধে ফেলি সাত পাকে
চলো ছোটখাটো করি ভুল চুক, তুমি আমি মিলে
সাজিয়েছি ছোট্ট একফালি সুখ, রাজি আছি আজকে বৃষ্টি নামুক
তুমি আমি ভিজবো দুজনে খুব ভরসা দিলে।
.
জেনিয়া হাসতে থাকে। আমি ওর আরো কাছে গিয়ে তাকিয়ে থাকি মগ্ন হয়ে। আমার এমন তাকানো দেখে সে লজ্জায় পড়ে যায়। লজ্জায় নিচেরে দিকে তাকিয়ে কানে চুল গুজে বলে “কি দেখো হ্যাঁ? তুমি তোমার কোলবালিশের কাছে যাও” আমি তার লজ্জা মাখা মুখের আলোকচ্ছটা দু চোখ ভরে দেখতে থাকি। আমি কিছু না বলে আস্তে করে মোমবাতিটা নিভিয়ে দেই। আমি ওর আরো কাছে যেতেই ওর নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই। আকাশে যখন বিদ্যুৎ চমকালো জেনিয়া আমাকে আলিঙ্গন করে নেয়। তার স্পর্শ পেয়ে আমার অনুভূতির শহরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সেই আলোড়নেরে মাঝে আমি হারিয়ে যাই নীল দিগন্তে যেন কত হতাশার মাঝ থেকে অর্জন করে নেওয়া এই ভালো লাগা। পুরো পৃথিবী থমকে যায় তার উষ্ণতার ছোয়ায়। আমি এই উষ্ণতার মাঝে নির্গাত সারাটাদিন কাটিয়ে দিতে পারবো, কোন ক্লান্তি আমার আকাশকে অবশ করতে পারবে না। এই অন্ধকার বৃষ্টি ঝড়া রাতে আমার জানালা দিয়ে বাতাস ধেয়ে আসে কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আমার জানালা দিয়ে আজ ভালোবাসা ধেয়ে আসছে। যে ভালোবাসায় মনের ইন্দ্রজাল পর্যন্ত আমাদের পৌছে দিবে...
.
গল্পটা ঈদে লিখেছিলাম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: এখন আর শ্রাবণ মাসের আকাশে বিদ্যুৎ চমকায় না । সারাদিন টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ে না ।

২৭ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৩৯

জাহিদুল হক শোভন বলেছেন: মন্তব্য পেয়ে ভাল লাগলো

২| ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:০৩

মাহজাবীন আলম মারিয়া বলেছেন: গল্পটা ভাল লেগেছে। :)

২৭ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪০

জাহিদুল হক শোভন বলেছেন: জেনে খুশি হলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.