নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

জাহিদুল হক শোভন

এই শহরের বোকা ছেলেটি।

জাহিদুল হক শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: রঙ মাতাল ফুল

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫০



"কি দেখেন হুম? এমন করে দেখার কি আছে?
.
রুমে ঢুকেই ফ্যানটা ছেড়ে বিছানার এক পাশে বসলাম। শরীর দিয়ে কেমন একটা গরম ভাব বের হচ্ছে। সাধারণত কোথাও গেলে ওখান থেকে ফিরতে বা অফিস থেকে আসলে এমন হয়। ফ্যানের নিচে বসে পায়ের সু টা খুললাম। তারপর বিছানায় গা লাগিয়ে দিলাম। যখন শরীর থেকে গরম ভাব টা কেটে গেল তখন সোজা হয়ে যেই বসলাম অমনি ওয়াশ রুম থেকে নাযাহা বের হলো। আমি ওকে দেখেই খুব অবাক হলাম। আমার তাকানো দেখে হযত ও অনেকটা লজ্জা পেয়েছে। ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই মাত্র গোসল করেছে। তোয়ালে টা দিয়ে চুল গুলা প্যাচিয়ে রেখেছে। চোখের পাপড়ি গুলা এখনো ভেজা ভেজা। আমি এসব দেখে মোটেও অবাক হয় নি। অবাক হয়েছি এই দেখে যে ও আমার শার্ট আর লুঙ্গি পড়েছে। আমি ওকে দেখেই বসা থেকে দাড়িঁয়ে গেলাম। আর এই কারনেই ও আমাকে বললো... আমি এমন করে তাকিয়ে আছি কেন?.. আমি শুধু ওর দিকে চুপ করে তাকিয়ে আছি। কি বলবো বুঝতে পারছি না। ও হেটে হেটে আয়নার সামনে এসে চুল থেকে তোয়ালেটা কেমন করে যেন খুললো। আমার মনে হচ্ছে আমি এই প্রথম ওকে অন্য রুপে দেখছি। আয়নার সামনে থেকে ও আমার দিকে ফিরে আবার বললো...
.
"আশ্চর্য কি ব্যাপার? আপনি আমাকে আর কখনো দেখেন নি? এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন মনে হচ্ছে আমাকে আজি দেখেছেন?
.
এইটা বলেই ও চুল গুলা একটু ঘুড়িয়ে সামনে এনে তোয়ালেটা দিয়ে মুছতে লাগলো। আমার কেমন যেন একটা ভালো লাগা অনুভূতি তৈরি হলো। আমি বললাম...
.
"কই কিছু নাতো।
"তাহলে এমন ভাব নিয়েছেন কেন?
"না আমার শার্ট আর লুঙ্গি পড়েছো তাই একটু অবাক হয়েছি।
"আমি আপনার কি হই?
"বউ
"বউ মানে কি বুঝেন? বউ মানে হলো আমি আপনার জীবনের একটা অংশ। যেদিন কবুল বলেছি সেদিন থেকেই আপনার জীবনের সব কিছুতেই আমার নাম লিখা হয়ে গিয়েছে। সেদিন থেকেই সব কিছুতেই ভাগ বসিয়েছি। সুতরাং এই শার্ট লুঙ্গির মাঝেও আমার ভাগ আছে। বুঝছেন?
.
নাযাহা এই টুকু বলেই একটা হাসি দিয়ে অন্য একটা লুঙ্গি দিয়ে বললো ফ্রেশ হয়ে নিতে। আমি কিছু বললাম না। সোজা ওয়াশ রুমে গেলাম। নাযাহার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে ১৬ দিন হয়েছে। এই রকম একটা মেয়ে আমি পাবো ভাবি নি। প্রথম দিনই আমি অনেকটা বুঝতে পেরেছিলাম ওকে। বাসর রাতেই টের পেয়েছিলাম ওর এই আচরণ। আমি জানি বাসর রাতে বিয়ে করা বউ বড় একটা ঘুমটা দিয়ে চুপ করে বিছানার মাঝখানে বসে থাকে। বাসর রাতে নাযাহার সাথে কিভাবে কথা বলা শুরু করবো সেটা নিয়ে অনেক ভেবে রেখেছিলাম। ভেবে রেখেছিলাম প্রথমে দরজার ভিতরে ঢুকবো একটা কাশি দিয়ে তারপর ওর পাশে গিয়ে বসবো। যদিও ওর নাম জানি তারপরো ওর সাথে কথার বলা শুরু করার জন্য ওর নাম জিজ্ঞেস করবো। ওর কি কি ভালো লাগে তা আস্ক করবো। এই কথা সেই কথার ফাকে ওর ঘোমটা টা আস্তে করে তুলে ওকে দেখতাম। সব কিছুই ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আমার এসব কিছুই হয় নি। আমি যথারিথি কাশি দিয়ে ঘরে ঢুকেছিলাম। ঢুকেই দেখি বিছানায় নাযাহা নেই। আমি খানিকটা থ হয়ে গেলাম। আরে এই মেয়ে গেল কই? আমি আস্তে আস্তে বিছানার সামনে গিয়ে খাটের নিচে দেখলাম ওখানে আছে কিনা। ওকে খাটের নিচে না পেয়ে আমি সোজা হয়ে যেই ফিরে দরজার দিকে যাবো অমনি ভেউ করে আমাকে ভয় দেখালো। আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। ও আমাকে বললো..
.
"এই যে মিঃ খাটের নিচে কি খুজছিলেন?
"তোমাকে খুজঁছিলাম।
"কেন আমি কি বিড়াল নাকি খাটের নিচে খুঁজবেন? ভয় পেয়েছিলেন নাকি?
.
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। একটু মাথা চুলকালাম। নাযাহা আবার বললো..
.
"আমি জানালার পর্দার পিছনে লুকিয়ে ছিলাম। দেখতে ছিলাম আপনি কি করেন। কি ভেবেছেন আপনি? আপনি নিশ্চয় ভেবেছেন আমি পালিয়েছি? সকালে পেপারে খবর আসতো বাসর ঘর থেকে বউ উধাও বা বাসর ঘর থেকে নতুন বধু তার পুরানো প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে। হি হি হি অদ্ভুত না?
.
আমি চুপ করে শুনতে লাগলাম। আমি যতটুকু জানি বাসর রাতে মেয়েরা কত চুপচাপ হয়ে ঘোমটা দিয়ে বসে থাকে আর এই মেয়ে তো দেখি তার উল্টো। আমি কিছু বলতে যাবো নাযাহা আবার বললো..
.
"ভয় নেই আমার কোন প্রেমিক নেই। আম্মুর কাছ থেকে শিখেছি, তার সাথেই প্রেম করবো যার সাথে বিয়ে হবে। কি প্রেম করবেন আমার সাথে?
.
আমি একটু হাসলাম। তারপর বললাম..
.
"এই রুমে আসার আগে আমি বার বার ভেবেছি তোমার সাথে কিভাবে কথা বলা স্টার্ট করবো। বাসর রাত বলে কথা। নার্ভাস লাগছিল। বিশ্বাস করো আমার কাছে এখন একদমই মনে হচ্ছে না।
.
তারপর দুজনেই কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম। নাযাহা সব গয়না খুলে একটা জায়গায় রেখে আমাকে বললো...
.
"এবার চলেন।
"কোথায়?
"বাহিরে যাবো। আমি আগে থেকেই চা বানিয়ে রেখেছি প্লাসে। দুজনে হাটবো, রিকশায় ঘুরবো তারপর কোন ওভার ব্রীজের উপর হলুদ ল্যাম্পোষ্টের আলোর নিচে বসে আকাশ দেখবো আর চা খাবো।
"এটা কি করে সম্ভব? আজকে আমাদের বাসর রাত না? এত রাতে বাহিরে যাওয়ার কোন মানে হয়? আব্বা আম্মা কিছু বুঝতে পারলে কি বলবে ভেবে দেখছো?
"বেশি কথা বলবেন না তো। কিছুই বুঝবে না। আর বাসর রাত হয়েছে তো কি হয়েছে? আপনার সাথে নইলে কিন্তু প্রেম করবো না।
.
আমি হাসলাম। কেন যেন নাযাহার কথা ফেলতে পারলাম না। সামান্য অল্প কিছু মুহুর্তের মধ্যেই মনে হচ্ছিল ও আমার কত আপন। আমি আর কিছু বললাম না। তারপর ও একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিল। এর একটু পরেই চুপচাপ দুজনেই বেরিয়ে পড়লাম। ঐদিন সারা রাত দুজনে বাহিরে হেটেছি রিকশা ঘুরেছি, ও যেটা চেয়েছে ঠিক ঠিক তাই করেছি, একটা ওভার ব্রীজের ফুটপাথের উপর বসে আকাঁশের দিকে তাকিয়েছিলাম। এই কথা সেই কথা বলতে বলতে ও আমার কাধে মাথা রেখেছিল। আমার মনের ভিতর অন্য রকম ভালো লাগা ছুয়ে গেল। আমি মনে মনে ভাবছিলাম রাতটা যেন শেষ না হয়।
.
আরে কি হলো আপনার এতক্ষন টাইম লাগে ওয়াশ রুম থেকে বের হতে? ঐখানে হিসাব নিকাশ করেন নাকি?
.
আজকে ষোলো দিন হলো মেয়েটা আমাকে একটা বারের জন্য ও তুমি করে ডাকে নি। আমি ওকে বলেছি আমাকে তুমি করে বলিও। কিন্তু কে শুনে কার কথা। কেন বলে না তাও জানি না। শুধু এইটুকুই বলেছে.. একটা মেয়ের কাছে তার স্বামী অনেক কিছু। বিয়ের পরে তার স্বামীর স্হানই অনেক উপরে চলে আসে। আগের কার মহিলারা তাদের স্বামীকে আপনি করে বলতো, যদিও এখন যুগ পাল্টে গেছে। আমার মা আমার বাবাকে আপনি করেই বলে। আম্মা বলে আপনি করে বললে একটা সম্মানজনক ভাব প্রকাশ পায়। আর আমি আমার স্বামীকেও সব সময় সম্মানের মধ্যে রাখতে চাই। সেটা যে কোন বিষয়ে হোক।.... আমি আর এ ব্যাপারে ওকে কিছু বলি নি। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখি ও আয়নার সামনে বসে আছে। তারপর আমায় বললো...
.
"এই দিকে আসেন তো। চুল গুলা আচড়িয়ে দিন।
"আমি?
"এইখানে কি আর কেউ আছে? আসেন তো।
.
আমি চুপচাপ ও পিছনে গিয়ে বসলাম। ও আমায় চিরুনিটা দিল। আমি আচড়াতে লাগলাম।
.
"আচ্ছা আপনি বেনি করতে পারেন?
"না পারি না। অভ্যাস নেই তো।
"এত সোজা একটা কাজ পারেন না? জানেন আমার বাবা আমার মার চুল বেনি করে দেয়। আচ্ছা সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে দিব।
.
আমি হাসলাম। এখনো অনেকটা ভেজা চুল। আস্তে করে চুল গুলা ঘাড়ের একপাশে করে এনে চুল গুলা শুকলাম। আমার নিশ্বাস ওর ঘাড়ে স্পর্শ করছে। আমি মাথাটা সোজা করলাম। আয়নায় দেখলাম ও চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলেছে। আমার কেমন জানি অদ্ভুত ভালা লাগা ছুয়ে গেল। আমি সোজা ওকে দাড়ঁ করে ওর সামনে আসলাম। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ওর ঠোট দুটো কেমন কাপছে। ওর চোখ দুটো যেন আমাকে বলছে সর্বনাশা চোখে তাকিও না। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে নাযাহাকে জড়িয়ে ধরা দরকার। আমি আর কিছু না ভেবে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। আর ভাবছি বিয়ের পরের প্রেম গুলা কি আসলেই এই রকম হয়? ওর কানে ফিস ফিস করে বললাম...তোমার শহরে ডুব দিয়ে সাতার কাটতে চাই...। ও একটু হাসলো তারপর আমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে একটা দৌড় দিল। আমি নিশ্চিত আম্মা ওকে শার্ট আর লুঙ্গি পড়া অবস্হায় দেখলে ভীষন হাসবে। আর লজ্জা পেয়ে আবার আমার কাছেই আসবে। একটু না হয় অপেক্ষাই করি....

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর গল্প।

২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২৭

খাঁজা বাবা বলেছেন: ভাল লেগেছে
কুষুম কুষুম প্রেম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.