নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

জাহিদুল হক শোভন

এই শহরের বোকা ছেলেটি।

জাহিদুল হক শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: ইন্দ্রজাল

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৬

দুতলায় আসতেই আামি সিড়ি দিয়ে নামার স্পিড টা একটু কমিয়ে দিলাম। সিড়ির রেলিং ধরে নামতে নামতে চোখ গেল তায়িফার দিকে। চুল গুলা এলোমেলো হয়ে আছে। গায়ে একটা কাঁথা দিয়ে জড়ানো। দরজার সামনে জড়ো সড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি একটু অস্বস্থি বোধ করলাম। কেমন একটা নার্ভাস কিংবা চিন্তিত টাইপের আভা যেন আমাকে স্পর্শ করলো। আমি আস্তে আস্তে নেমে ওর কাছে এসে দাঁড়ালাম। আমি কিছু বলতে যাবো এইভাবে কাঁথা গায়ে দিয়ে রেখেছো কেন? কিন্তু আমাকে তা বলতে না দিয়েই ও বললো...
.
”কেউ যেন আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে। আমি কারো উত্তর দিতে বাধ্য নই এবং কারো সাথে কথা বলার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে থাকি নি।
.
আমি কি বলবো আর বলবো না তা অনুধাবন না করেই ওর কথা শুনে পকেটে হাত ঢুকিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলাম। সিড়ির কয়েকটা ধাপ পার হতেই ও আবার বললো.... ভদ্র হলে একবার কেউ জিজ্ঞেস করতো আমি কেমন আছি, আমি হলে ঠিকি বলতাম। কারণ আমি যথেষ্ট ভদ্র... আমি ফিরে ওর দিকে তাকালাম। একটু চুপ করে থেকে আবার ওর কাছে গেলাম। কাছে যেতেই আবার বললো... কেউ যেন আমার কপালে হাত দিয়ে ছুয়ে না দেখে জ্বর আছে কিনা। ওর কথা শুনে আমার কেন যেন একটু হাসি পেল। আমি ঠিক ঠিক যেটা আন্দাজ করেছিলাম সেটাই হলো। ঠিকি ওর জ্বর ওঠলো। আমি কিছু না বলে ওর কপালে হাত দিলাম। গায়ে অনেকটা জ্বর। আমার হাতের স্পর্শ পেয়ে ও কিছুই বলে নি। আমি বললাম..এমনটা কেন হয়? ও চুপ করে রইলো। আমি ঠিকি বুঝতে পেরেছি আমার প্রতি ওর একটা রাগ রাগ ভাব কাজ করছে। যেটা আমার করা উচিত হয়নি। না বকলেও চলতো। মেয়েটা মাঝে মাঝে উদ্ভট আচরণ করে যার জন্য আমি মোটেই প্রশ্তুত থাকি না। আমি ওকে একবার না দুবার না, প্রায় অনেক বার বকা দিয়েছি। কিন্তু ঘুরে ফিরেই সেই আগের মতই আমার সহিত উদ্ভট আচরণ করে। ওর চুপ থাকা দেখে বললাম.... জ্বরের ঔষধ খেয়েছো? ও মাথা দিয়ে না সূচক ইশারার করলো। আমি আবার বললাম... খাও নি কেন? ও খানিকটা ইতস্তত হয়ে বললো... কেউ যদি খাইয়ে দেয় তাহলে খাবো। ওর উত্তর শুনে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলাম। যেখানে আমার অবাক হওয়ার কথা। কিন্তু ওর এইসব কথাবার্তা শুনতে শুনতে আমি অভ্যস্ত। তাই এখন আর অবাক হইনা। যদিও এই খাইয়ে দেওয়ার ইঙ্গিতটা আমাকে করেছে তবুও না বুঝার ভান করে বললাম.. তো তোমার আম্মাকে গিয়ে বলো খাইয়ে দিতে। ও আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো। তারপর বললো.. তার আর দরকার নেই। আমি আর কিছু না বলে সিড়ি দিয়ে নামতে থাকলাম। ও বলে.... কারো যদি ইচ্ছা হয় আমাকে যেন ঔষধ খাইয়ে দিয়ে যায়। না হয় আমি খাবো না বলে দিলাম। যে জ্বর বাধিয়েছে সেই খাইয়ে দিতে হবে। আমি আর পিছনে ফিরে তাকাই নি।
.
ফুটাপাথের উপরে হাটছি আর ভাবছি এমনটা কেন হয়? ওর একটা কথা বার বার শ্রবনে ধেয়ে আসছে ‘‘যে জ্বর বাধিয়েছে সেই খাইয়ে দিতে হবে’’ আমি এখনো বুঝে উঠতে পারি না আসলেই কি আমার জন্য জ্বর হয়? আর এটা কেন হবে। আসলে আমি যেদিন তায়িফাকে বকা দিব এর পরদিন বা ঐদিন রাতেই ওর জ্বর আাসবে। আমার বকা দেওয়ার সাথেই এর কানেকশন কি প্রথমে আমি এগুলা কিছুই বুঝতাম না। মনে করতাম অন্য কারণে জ্বর হয়েছে।পরে আবার এটাও ভাবলাম ওর কোন প্রবলেম নেই তো? কিন্তু না আমি পরে ঠিকি একদিন বুঝতে সক্ষম হই এই রহস্যটা কি? একটা মানুষের এতো ঘনো ঘনো জ্বর হয় কেন? আমি ওদের ভাড়াটিয়া হিসেবে পাঁচ বছর হবে এখানে আছি। নানা সময় ও আমার বকা খাওয়া থেকে পিছপা হয় নি। একদিন পরীক্ষা করে দেখেছিলাম আসলেই কি আমার বকা খাওয়ার পর ওর জ্বর হয়? ওর একটা বিড়াল ছিল। অবশ্য এখন আর নেই। ঐ বিড়াল টাকে নিয়ে ও প্রায় আমাদের রুমে আসতো। আমার বোনের সাথে আড্ডা দিত। এমনি মাঝে মধ্যে মজা করে বলতাম... কি ব্যাপার তোমার বাবুর কি খবর? সব সময় তুমি আর তোমার বাবুকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসো। কিন্তু বাবুর বাবাকে তো একদিনো নিয়ে আসলা না। ও চোখ মুখ রাগ করে বলেছিল... আপনার চুল একটাও রাখবো না আমি। ফের যদি ফাযলামো করেন সোজা আন্টির কাছে বিচার দিবো। যেহেতু ও আমাদের বাসায় বিড়াল নিয়ে আসতো সেই সুবাধে একদিন মিথ্যে রাগ দেখিয়ে আমার শার্টে পানি ঢেলে ওরে বলেছিলাম... এই তুমি মানুষ নাকি পশু? তোমার বিড়াল কি করেছে দেখেছো? আমার শার্ট টার কি অবস্থা করেছে? আরেকবার যদি বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে বাসায় আসো তোমার খবর আছে। মালিক যেমন মালিকের বিড়াল ও তেমন। ও আমাকে অনেক কথা বলেছিল ওর বিড়াল এমনটা করতে পারে না। এটা কখনোই সম্ভব না। আমি মিথ্যা বলছি। আরো অনেক কিছু। কিন্তু আমি কোন কথায় কানে দেই নি। আমি শুধু ঐটা দেখার জন্য এইগুলা করেছিলাম। ঠিকি এর পর দিনে ওর গায়ে জ্বর ওঠে। সেদিন থেকেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি বকা দিলেই ওর জ্বর ওঠে। এর পরে আমি ওকে কখনোই খুব সহজেই বকা দিতাম না।
.
কোরবানী হয়েছে চার দিন হয়ে গেছে। কোরবানীর পর দিনই আমার কাছে এসে বলেছিল... গোস্ত কেমন খেলেন? আমি বললাম বেশ ভালোই। কোরবানী বলে কথা বুঝোই তো। বছরে এই ঈদেই তো মানুষ একটু ভালো করে গোস্ত খেতে পারে। ও চুল গুলা একটু ঠিক করে একটু হাসি দিয়ে বলে.... আমি চাই আপনি বেশি বেশি গোস্ত খান। আচ্ছা আপনাদের বাসায় খিলাল আছে? আমি একটু অবাক হয়ে বলেছিলাম.. কেন বলো তো? না মানে বছরে এই ঈদেই তো মানুষ বেশি বেশি গোস্ত খায় তো দেখা যায় গোস্তের কিছু অংশ দাঁতের ফাকে আটকে থাকে। তখন খিলালের প্রয়োজন হয়। আপনার দাঁতে যদি গোস্ত আটকে থাকে তাহলে আমাকে বলবেন। আমি আর বাড়াবাড়ি না করে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে। ঐদিন কথা বলার পর থেকেই আমাকে যত বার দেখেছে ততবার একই কথা জিজ্ঞেস করেছে। বাহিরে বের হচ্ছি, ছাদে যাচ্ছি ওখানে দেখার পর, বাসায় ঘন্টা খানিক পর পর এসেই জিজ্ঞেস করছে... আপনার দাঁতের ফাকে কি গোস্ত আটকিয়েছে? আর ঠিক গতকাল রাতে ঈদের নাটক দেখছিলাম বাসায় এসে বলে.. কি দেখেন? আমি বলি নাটক। তারপর ও আমার সাথে দেখতে লাগলো.. একপর্যায়ে বলে....আপনার দাঁতের ফাকে কি গোস্ত আটকিয়েছে? আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গিয়ছিল। বললাম.. হ্যা আটকিয়েছে। ও সাথে সাথেই একটা খিলাল বের করে বলে কই দেখি আমি খিলাল করে দিচ্ছি। জানেন আমি খুব ভালো খিলাল করতে পারি। তবে যাকে তাকে নয়। আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে খুব জোরে বললাম.... ফাযলামো করো আমার সাথে? চড়াইয়া তোমার দাঁত ফেলে দিব আমি। তুমি না অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ো। তোমার আক্কেল বলতে কিছু নেই? ফাযিল মেয়ে একটা। আরো কয়েকটা কথা বলেছিলাম। ও মুখ গোমড়া করে চুপ করে ছিল। আম্মা এসে বলতে লাগলো এই কি হইছেরে এভাবে চিল্লাইতেছিস ক্যান? আমি কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যাই। রাতের বেলায় ঘুমানোর সময় একটু খারাপ লাগলো বটে। আমার চিন্তাও হচ্ছিল ওর জ্বর আসবে নাতো আবার? কেন করে মেয়েটা আমার সাথে এমন আচরণ। আর কেনই বা আমি বকা দিলে ওর জ্বর উঠাবে। আগের বা এখনের অনেক মানুষ আছে যারা কিছু কিছু নিয়ম মানে। যেমন কারো বাচ্চাকে কপালে কাজল দিয়ে দেয়। যেন অন্যের নজর না লাগে। আবার দেখা যায় কেউ ভালো খাবার খাচ্ছে, অন্য কোন একজন এসে তা দেখলো। এর কয়েক ঘন্টা পর যে খাচ্ছিলো তার পেট খারাপ অবস্থা শুরু হয়ে গেছে। আবার দেখা যায় কোন বৃদ্ধ/ মুরব্বী যদি কাউকে বদদোয়া দেয় সেটা হয়ে যায়। এই রকম পৃথিবীতে অনেক কথাই আছে। কিন্তু তায়িফার সাথে আমার এই ব্যাপারটা আমি এখনো বুঝি না, কেন এমন হয়? ফুটপাথে হাটতে হাটতে থমকে দাঁড়ালাম। আচ্ছা আমার কি এখন তায়িফাদের বাসায় যাওয়া উচিৎ ? ওকে কি ঔষধ খাইয়ে দেওয়া দরকার ? কি চায় এই মেয়ে? আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। চুল গুলা একটু চুলকালাম। না তায়িফার কাছে আমার যাওয়া দরকার। খুব দরকার। মেয়েটা বলেছে আমি খাইয়ে না দিলে খাবে না। আর কিছু না ভেবে ওর বাসার দিকে পা বাড়ালাম...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



গল্পটি সুন্দর হয়েছে৷শুভ কামনা রইলো৷

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৭

এ.এস বাশার বলেছেন: চমৎকার হয়েছে। শুভকামনা রইল।

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৫

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের মেয়ে এরকম হ্যাংলামি করবে না...

৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: সংবাদ পাওয়া গেল, "মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ অাদালত।"
এরকম দেখলে ভালো লাগে। মনে হয়, ন্যায্যতা পুরোপুরি মারা যায় নি!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.