নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয় পাঠক

সহজ আলোয় দেখা...

জয় পাঠক

যন্ত্রের জন্যে পদ্য, মানুষের জন্যে গদ্য - এই নিয়ে ভাবাভাবির সারাবেলা

জয় পাঠক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রয়েছ নয়নে নয়নে

১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:৪৩

। ১ ।



কিছুদিন আগে নামকরা একটা চাকুরীর ওয়েব-সাইটে অদ্ভুত একটা বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হলো। “ডিরেক্টর অব অপারেশন্স” শিরোনামের চাকরিটির বিবরণে বলা হলো, চাকরীটিতে সপ্তাহে ১৩৫ ঘন্টার বেশী কাজ করতে হবে, কোন ভ্যাকেশন নেই, বরং ক্রিসমাস সহ বাৎসরিক ভ্যাকেশন টাইমে কাজের চাপ থাকবে সবচেয়ে বেশী। বিশ্রাম বা ঘুমানোর জন্যে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে না। যতটুকু সময় পাওয়া যাবে বিশ্রামের জন্যে, প্রয়োজনে দিন-রাতের যেকোনো মুহূর্তে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে।



উন্নত দেশগুলোতে চাকুরীজীবিদের অধিকারের বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। সুতরাং অনেক ওয়েব সাইটে এটা নিয়ে হৈচৈও হলো।



কাজের বিবরণ শুনে যে কারো ঘাবড়ে যাবার কথা। তবু শেষ পর্যন্ত জনা চব্বিশেক মানুষ চাকুরীটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি ইণ্টারভিঊ নিয়েছে ওয়েবক্যামে, সাথে সাথে প্রতিটা ইন্টারভিউর ভিডিও রেকর্ড করেছে, যেগুলো পরে সবার জন্যে প্রকাশ করে দিয়েছে। দেখা গেলো ভ্যাকেশন ছাড়া সপ্তাহে ১৩৫ ঘন্টার কাজের বিবরণ শুনে মোটামুটি সবারই গলা শুকিয়ে গিয়েছে (আমি নিশ্চিত এদের অনেকে চাকুরীর বিবরণ ভালো করে না পড়েই এপ্লাই করে ফেলেছে), তবে বেতন বিষয়ক আলোচনায় যখন নিয়োগকর্তা ঘোষণা দিল, বেতনের পরিমান শূন্য, তখন প্রায় সবারই ক্ষোভে ফেটে পড়ার অবস্থা। সত্যি বলতে কি আমারো ব্যাটা এমপ্লয়ারকে একটা থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছিল। ফাইজলামী? কিন্তু শেষের হাসিটা হাসলো সেই এমপ্লয়ারই। হেসে বললো, আমি জানি চাকুরীটির বিবরণ শুনে তোমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এ ধরণের জব আসলেই আছে কিনা, আমি তোমাদের নিশ্চিত করে বলতে চাই, হ্যাঁ, এ ধরণের জব আসলেই আছে। আর জবটির আসল টাইটেল হলো, “মা”। কোন বেতন ছাড়াই দিন-রাত যিনি তার সাধ্যের সর্বোচ্চ সার্ভিস দিয়ে থাকেন। বছরের পর বছর, হাসি মুখে।



লোকটির মুখে কথাগুলো শুনে মুহূর্তেই রাগ-ক্ষোভ মিলিয়ে গেল সবার মুখ থেকে। কেউ হেসে ফেলল, কারো কারো চোখ ভিজে গেল।



। ২ ।



আমি এবং আমার স্ত্রী দু’জনেই বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। প্রথম সন্তান হিসেবে যতোটুকু সুযোগ-সুবিধা, অতিরিক্ত আদর-যত্ন পাওয়া যায়, আমরা দু’জনেই পেয়েছি। ফলাফল যা হবার তাই হলো, পড়াশুনায় ভালো হলেও জাগতিক-সাংসারিক কাজ কর্মে দু’জনেই লবডংকা হয়ে বড় হতে লাগলাম।



বিয়ের পর সংসার জীবনের বাস্তবতার আঁচ লাগতে শুরু করলো। আমরা দু’জনেই হিমশিম খেতে লাগলাম। যদিও সৌভাগ্যক্রমে দু’জনেই যার যার মায়ের আঁচলের আশে-পাশেই ছিলাম।



আমাদের বড় পুত্র হবার পরে তাকে সামলাতে খাবি-খেতে থাকলে আমার বৌ ব্যাগ গুছিয়ে মায়ের কাছে রওনা হয়ে যেত। কাছাকাছি বাপের বাড়ি থাকায় সংসার জীবনের দায়িত্বের সাথে ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে নেবার সুযোগটা পেয়েছে সে। বৌ বাপের বাড়ি গেলেও আমার তেমন চিন্তা ছিল না। বাসায় মা ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই টেবিলে গরম নাস্তা রেডী পেতাম।



বাবা-মা ছেড়ে বিদেশের মাটিতে এসে আমি এবং আমার স্ত্রী দু’জনেই অথৈ-সাগরে পড়লাম। বাজার-সদাই থেকে শুরু করে, বাসা ভাড়া, ইউটিলিটি বিল দেয়া, রান্না-বান্না, অফিসের কাজ-কর্ম – একবারে পুরো দস্তুর সংসার। এর মধ্যে ঘর আলো করে এলো আমাদের ছোট পুত্র। তাকে নিয়ে রয়েছে আলাদা ব্যস্ততা। আমার অফিসের ব্যস্ততা বাড়লে আমার স্ত্রী একাই সব সামলায়, সাথে চোখে সর্ষে ফুল দেখতে থাকে। নিজের বাস্তবতার কারণে চাইলেও অনেক সময় কিছু করার থাকে না। কিন্তু মা জাতটির প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে ওঠে।



প্রতি বছর মা দিবস আসলেই সবাই হৈ চৈ শুরু করে ফেসবুকে। মায়ের জন্যে বছরে একদিন কেন, প্রতিদিনই হওয়া উচিৎ এই বলেও তর্ক জুড়ে দেয় অনেকে। কিন্তু একটা জিনিস দিব্যি বুঝতে পারি, মায়ের জন্মদিনেও যে ছেলেটি বা মেয়েটি উইশ করতে ভুলে যায়, মাকে নিয়ে আর সবার হৈ-হল্লা দেখে ঠিকই মাদার-ডেতে উইশ করার উৎসাহ পায়, কারণ মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ থেকে ভালো কিছু যদি শিখতে পারে ক্ষতি কি!



এ বছরের মা দিবসে আমি বেশ সৌভাগ্যবান ছিলাম। বিদেশের মাটিতেও আমার মা আমার সাথে ছিল। আমার মা এবং আমার বাচ্চাদের মা – দু’জনকে নিয়েই বের হয়েছি বাচ্চাদের সহ। শপিং, খাওয়া-দাওয়া সব মিলিয়ে দারুণ একটা দিন কাটিয়েছি ওদের সাথে। দিনশেষে যখন তৃপ্তি নিয়ে সবাই ঘরে ফিরছি, তখন আনমনেই মনটা ভারী হয়ে আসে। আর কয়েকদিন পরেই মা যখন দেশে ফিরে যাবে, তখন এই আনন্দের মুহূর্তগুলোই স্মৃতি হয়ে যাবে। মনের ভেতর হয়ত বাজতে থাকবে, নয়ন তোমায় পায়না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে!



যেখানেই থাকুক আমার মা, ভালো থাকুক, আনন্দে থাকুক, পরম করুণাময়ের কাছে এই প্রার্থনা অহর্নিশ।



পরিশিষ্টঃ



উল্লেখিত ইন্টারভিউ-এর ভিডিওটি উপভোগ করতে পারেন এখানেঃ





মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:০৬

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বাহ! দারুণ পোস্ট।

১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:০৯

জয় পাঠক বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ শরৎ ভাই। ভালো থাকবেন।

২| ১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:২৮

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: অসাধারণ লাগল ভাই ।
আপনার মার প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইল । ভাল থাকবেন ।

১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৩২

জয় পাঠক বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন আপনিও।

৩| ১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩১

ডি মুন বলেছেন: ভাল লাগলো

সারাক্ষণ আলো-বাতাসের মধ্যে থেকেও যেমন এর অস্তিত্ব আলাদাভাবে টের পাই না। তেমনি সারাক্ষণ মা আর মায়ের মমতা আমাদের ঘিরে রাখলেও তাদের ডেডিকেশান আলাদাভাবে চোখে পড়ে না।

সুন্দর পোস্টের জন্য শুভকামনা

১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪৬

জয় পাঠক বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

৪| ১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:২৫

বোকামানুষ বলেছেন: দারুণ লাগলো আপনার নিজের অভিজ্ঞতা শুনতে আর আপনাদের মায়ের প্রতি আপনাদের ভালবাসার কথা জেনে

১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪৬

জয় পাঠক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:১৭

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: :) :)

১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪৬

জয় পাঠক বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.