নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত \'মানুষ\' হওয়ার প্রচেষ্টা। \'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য\', \'বায়স্কোপ\', \'পুতুলনাচ\' এবং অনুবাদ গল্পের \'নেকলেস\' বইয়ের কারিগর।

কাওসার চৌধুরী

প্রবন্ধ ও ফিচার লেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। পাশাপাশি গল্প, অনুবাদ, কবিতা ও রম্য লেখি। আমি আশাবাদী মানুষ।

কাওসার চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওয়াজ/তাফসির মাহফিল - একটি পর্যালোচনা (বিশ্লেষণ)

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪


যখন খুব ছোট ছিলাম বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে অপেক্ষা করতাম কখন আমাদের মাদ্রাসায় ওয়াজ মাহফিল হবে। সারা বছর এক-দুই টাকা করে মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখতাম ওয়াজের বাজারে কেনাকাটা করার জন্য। মনে আছে সকালের দিকে একবার ওয়াজের বাজারে যেতাম, বিকাল হলে সারা রাত সেখানে কাঁটানোর জন্য চুপি চুপি প্রস্তুতি নিতাম। যদিও ঠাণ্ডার মধ্যে সারা রাত না থাকার জন্য বাবা-মায়ের বারণ ছিল। কিন্তু কে শুনে এসব বারণ? রাতে বাড়িতে চলে আসব মাকে এই নিশ্চয়তা দিয়ে বাড়ি থেকে বের হতাম, কিন্তু ঘরে ফিরতাম ঠিকই পরদিন ভোরবেলা! সারা রাত বন্ধুদের নিয়ে শুধু ঘোরাঘোরি আর খাওয়া-দাওয়া। পাশে নানা বাড়ি হওয়ায় সেখানেও যেতাম। তখন ওয়াজ মানেই বুঝতাম ওয়াজের বাজার ও কেনাকাটা করা, মাহফিল নয়। তবে মাঝে মাঝে মাহফিলে বিভিন্ন বক্তার ওয়াজও শুনতাম। বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় ফুলতলি, হাড়িকান্দি ও লামারগ্রামের মাহফিল গুলোতে বেশি যাওয়া হত।

আমার বাবা ছিলেন স্বল্পশিক্ষিত ধর্মপ্রাণ মানুষ। একাডেমিক শিক্ষা কম থাকায় নিজে থেকে তাঁর কোরআন ও হাদিসের চর্চার তেমন সুযোগ ছিল না। এলাকার বেশিরভাগ মাহফিলে বাবা শত ব্যস্থতার মাঝেও আগ্রহ নিয়ে শরিক হতেন ইসলামি রীতি-নীতি ও কোরআন-হাদিসের নিরিখে জীবন-যাপনের বিধান জানতে ও এর উপর আমল করতে। এসব মাহফিলের বক্তব্যগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং খুব বিশ্বাস করতেন। বাড়িতে এসে নিজে আমল করার চেষ্টা করতেন এবং আমাদেরকেও আমল করতে তাগিদ দিতেন। এসব ইসলামী জলসা ছিল বাবার ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা এবং তার উপর আমল করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। কোন বক্তব্য শুদ্ধ, ভূল না ত্রুটিপূর্ণ তা যাচাই করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওয়াজ মাহফিলের গুরুত্ব বুঝতে পারি। এজন্য মাঝে মাঝে বিভিন্ন নামকরা ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য শুনতে আগ্রহ নিয়ে মাহফিলে যেতাম। তবে এখন আর তেমন যাওয়া হয় না, বলতে পারেন যাই না বা যেতে ইচ্ছা করে না। আগে বড় বড় মাদ্রাসা ও মসজিদে ওয়াজ বা তাফসির মাহফিল হত, কিন্তু এখন তো পাড়ায় পাড়ায় শুধু মাহফিল আর মাহফিল। ফলে মানুষের কাছে ইসলামী মাহফিলগুলোর গুরুত্ব কমে গেছে। এসব মাহফিলের নামেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। অনেকেই এখন এসব মাহফিলকে ইসালে সওয়াব মাহফিল, তাফসিরুল কোরআন মাহফিল, সুন্নি সম্মেলন ইত্যাদি বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এছাড়া আছে বিশ্ব ইজতেমা। আগে শুধু টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমার আয়োজন হলেও, ইদানিং তা জেলায় জেলায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইসলামের কতটুকু উপকার হয়, কতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা যায় তা ইস্তেমায় অংশগ্রহণ করা মুসল্লিরা ভাল বলতে পারবেন।

এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। আমি গত কয়েক বছর থেকে গভীর মনযোগে এসব মাহফিল পর্যবেক্ষণ করে অনেক হতাশ হয়েছি। এখন আর কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন যাপনের তাগিদ দেওয়া বক্তাদের প্রধান আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচ্য বিষয় হল অন্য আলীমদের গীবত করা, যাদের সাথে বক্তার আক্বীদার মিল নেই তাদের তীব্র ভাষায় আক্রমন করা। যিনি পীর বিশ্বাস করেন তার পীর সাহেবের গুণ কীর্তন করা। কে ওহাবী, কে সুন্নি এসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা। মীলাদুন্নবী ও সীরাতুন্নবী নিয়ে ডিবেট করা। নবীজী মৃত না জীবীত তা নিয়ে ঝগড়া করা। মাযহাবী ও লা'মাযহাবী নিয়ে একে অন্যকে তিরষ্কার করা। আহলে হাদিসদের গালিগালাজ করা। জাকির নায়েক কোন মাদ্রাসায় না পড়ে এবং টাই পরে কেন ইসলাম নিয়ে বক্তব্য দেন এবং বিভিন্ন ইসলামী সেমিনার করেন এজন্য তাকে ওহাবী বলা, তিরস্কার করা। অন্য ধর্মের মানুষকে গালি দেওয়া, ছোট করা। সবচেয়ে বেশি বক্তার বাজার দর বাড়াতে নিজের ঢোল নিজে পেটানো ইত্যাদি।


এখন অনেক হুজুর ঘন্টায় পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা কন্টাক্ট করে মাহফিলে যান। এদের টাকার রিসিটও আছে। কেউ কেউ আবার হেলিকপ্টার হুজুর! উনারা এত ব্যস্ত যে, হেলিকপ্টার/বিমানে মাহফিলে গিয়েও কুলাতে পারেন না। মাহফিলে পশ্চিমাদের ইহুদি, নাসারা বলে গালি দিলেও এদের অনেকের বাড়িতে ইউরোপ-আমেরিকান এনজিও আছে। এদের বেশিরভাগের নামের আগে/পরে এত টাইটেল লাগানো থাকে যে, কোনটা তার নিজের নাম বুঝার উপায় থাকে না। অনেকটা বড় বড় ডাক্তারদের নামের সাথে লাগানো বিভিন্ন ডিগ্রীর মত। যে ডাক্তারের নামের সাথে যত বেশি ডিগ্রী সে ডাক্তারকে আমরা তত অভিজ্ঞ মনে করি। বেশিরভাগ ইসলামী বক্তা নিজেদের বাজার দর বাড়াতে এসব অনর্থক টাইটেল ব্যবহার করেন। পৃথিবীর কোন বিজ্ঞানীর নামের সাথে টাইটেল থাকে না। এমনকি অনেকের নামের সাথে বিজ্ঞানী জুড়ে দিলে তাঁদের অস্বস্তি লাগে। তারা প্রচারে নয়, কাজে বিশ্বাসী। আর উনারা নামের সাথে এতো টাইটেল লাগান তারপরও বিখ্যাত হতে পারেন না, মানব কল্যাণের জন্য কিছু আবিষ্কার করতে পারেন না। খালি কলসি যতক্ষণ বাজাবে ততক্ষণ কলসির আওয়ায়জ পাওয়া যায়, বাজানো বন্ধ হলে কলসি ও তার আওয়াজকারীকে সবাই ভুলে যায়। নাম মানুষকে বড় করে না, মানুষ নামকে বড় করে।

ইউটিউবে দেখলাম একজন মুফতি গানের সুরে জিকির করছেন আর নাচতেছেন, অন্যরাও তার নাচানাচিতে উদ্ভুদ্ধ হয়ে তাল মেলাচ্ছেন। কণ্ঠটা দারুণ সুন্দর, তরুণীদের নয়ণের মণি হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এটা নাকি আধুনিক জিকির! আরেক পক্ষ আছেন জিকিরের জোশে ভরা মাহফিলে অনুসারীরা পীরকে জড়িয়ে ধরেন, মাহফিলে ডিগবাজি দেন, খুঁটি বেঁয়ে উপরে উঠে নাচানাচি করেন। এক কথায় সার্কাস পার্টি। এরা নাকি হক্কানী পীর। একটি ভিডিওতে দেখলাম এক পীর বক্ত তার পীর সাহেবকে বড় করে বুঝাতে বলেছেন, পীর সাহেব মারা যাওয়ার পর মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তার জানাজা পড়তে সুদূর মদীনা থেকে এসেছেন! এগুলো কী সত্যি? ইসলামিক গবেষকরা নিশ্চয় এর উত্তর দিতে পারবেন। এগুলো প্রচারে সমস্যা হলো, যে কেউ দাবি করতে পারেন উনার নিকটাত্মীয় কারো জানাযায় রাসুল (সাঃ) হাজির হয়েছিলেন। তখন পরিস্থিতি কী হতে পারে ভাবেন? এতে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে চরম বিতর্ক হবে। নিশ্চয় এমনটা হোক তা আমরা চাই না।

ঠিক তেমনি কোন পীর সাহেব হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর সাথে মুসাফা করেছেন বলে প্রচার করাও ঠিক না। কাউকে চাঁদে দেখা গেছে তাও প্রচার করা অন্যায়। এতে মানুষের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত করে। অনেকের মতে, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কবরেও জীবিত। উম্মতরা মিলাদ পড়লে রাসুল (সাঃ) সামনে এসে দাঁড়ান, সালামের জবাব দেন। উনাদের যুক্তি হল রাসুল (সাঃ) হাজির নাজির। তবে এ মতবাদের বিপক্ষে জোরালো যুক্তি আছে।

প্রশ্ন হল, শাহজালাল (রহঃ) তো নবী বা রাসুল এমন কেউ ছিলেন না; তাহলে মৃত্যুর এত বছর পরও তিনি কিভাবে পীর সাহেবের সাথে মোলাকাত করলেন? তাহলে কি তিনিও কবরে জীবিত? ইচ্ছা করলেই বের হয়ে আসতে পারেন? জিয়ারত করতে গেলে ভক্তদের দেখতে পান!

নাকি পীর সাহেবও কবরে জীবিত আছেন তা পরোক্ষভাবে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া? পীর সাহেবের কবরের পাশে গেলে তিনি ভক্তদের দেখতে পান, তাদের কথাগুলো শুনেন এটা প্রচার করা। কারণ হাদিসে স্পষ্ট আছে, মৃত ব্যক্তি কাউকে কোন সহযোগিতা করতে পারে না, তাই কবরের পাশে গিয়ে তাকে উসিলা করে কিছু চাওয়া যাবে না। আর কারো উসিলা করে আল্লার কাছে কিছু চাইলে এই দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়না। তাই সুকৌশলে কী পীর সাহেবকে মৃত্যুর পরও বাঁচিয়ে রাখা হয় কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে? এদের অনেকেই এটাও বলেন বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় কোরআন শরীফের আঠারো পারা মুখস্ত করেছিলেন! যদিও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কেও মহান আল্লাহ্ তায়ালা এমন ক্ষমতা দেননি। নব্যুয়ত পেতে তাঁকে চল্লিশ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

এখন আসি তাফসির/ওয়াজ মাহফিল আয়োজন প্রসঙ্গে। অনেক সময় দেখা যায় এলাকায় যারা গান-বাজনা, উরুস ও মেলার আয়োজন করে তারাই আবার মহা ধুমধামে ওয়াজ মাহফিলেরও আয়োজন করে (তবে ব্যতিক্রমও আছে)। এলাকায় চলে বেশী টাকা দিয়ে নামকরা বক্তা হায়ার করার প্রতিযোগিতা। যাদের বিভিন্ন দেশের সাথে কানেকশন আছে তারা ইসালে সওয়াবের নামে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর টাকা চাঁদা তুলেন, অনেক সময় এসব টাকার একটা অংশ মাহফিলে খরছ করে বাকি টাকা নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্য রেখে দেন। আরেক পক্ষ আছেন যারা শীতের মওসুমে ওয়াজের নামে লিফলেটও রশিদ বই তৈরী করে বাসা বাড়ি থেকে চাঁদা কালেকশন করেন, এদের অনেকেই ভূয়া/ধান্দাবাজ বলে অভিযোগ আছে।


এবার আসি মিলাদুন্নবী ও সীরাতুন্নবী প্রসঙ্গে। মিলাদ অর্থ হল জন্মদিন, আর মীলাদুন্নবী হল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মদিন। আবার সীরাতুন্নবী অর্থ হল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জীবন ব্যবস্থা। এখন প্রশ্ন হলো কোনটি পালন করা যুক্তিযুক্ত? আল্লাহর নবীর জন্মদিন পালন করা না তাঁর জীবনীর উপর আলোচনা করা। একটু গভীর মনযোগে বিষয়টি নিয়ে ভাবলে উত্তর পেয়ে যাবেন। আমি মনে করি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী অর্থাৎ তাঁর হাদিসের উপর আলোকপাত করা অধিক যুক্তিসঙ্গত, জন্মদিন নয়। এছাড়া ইসলামে জন্মদিন পালন করতে বিধি-নিষেধ আছে।

মাযহাব অর্থ মত, পথ বা পাঠশালা। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তেকালের প্রায় ১৫০ বছর পর মাযহাব গঠন করা হয়েছিল। কারণ তখন পর্যন্ত হাদিস সংকলন হয়নি। মূলত ইসলামের অপব্যাখ্যা ও সমাজের বিচ্যুতি ঠেকাতে তখন মাযহাব গঠন করা হয়েছিল। খুলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবী, তাবেঈ ও তবে তাবেঈদের আমলে মাযহাব ছিল না। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলে গেছেন, "আমি তোমাদের জীবন ধারণের জন্য দু"টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, একটি হল পবিত্র কোরআন আর অপরটি হল আমার জীবনী অর্থাৎ হাদীস"। এজন্য হাদিসের সংকলনের পর মাযহাবের কার্যকারিতা মূলত শেষ হয়ে যায়। ফলে মাযহাব মানা, না মানার সাথে কোরআন ও হাদিসের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলামের মূল নীতি নির্ভর করে কোরআন ও হাদীসের দিক নির্দেশনার উপর। আর মাযহাব যদি আবশ্যক হয় তাহলে বাংলাদেশী হানাফিদের মধ্যে এত মতবিরোধ কেন? সবার তো একমত হওয়ার কথা, তাই না?

বিদ'আত নিয়েও কম জলগুলা হয় না। সাধারণত সমাজে এমন কিছু প্রথা আছে যা কোরআন ও হাদীসে নেই কিন্ত আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। যেমন-তাবিজ করা, মিলাদ পড়া, জিকির করা, কুলখানি করা, পীর ধরা, মাজারে টাকা দেওয়া, উরস করা ইত্যাদি। একটি পক্ষের যুক্তি হলো এসব বিধান কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, তাই এগুলো পালন করা বিদ'আত। অপর পক্ষের বক্তব্য হলো, বর্তমান সময়ে আধুনিক অনেক ব্যবহার্য জিনিস আছে যা কোরআন ও হাদিস কোথাও নেই। যেমন- মসজিদে মাইক ব্যবহার করা, এসি ও ফ্যান লাগানো, গাড়ি ও বিমানে চড়া, কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ইত্যাদি। তাহলে সবকিছু কোরআন-হাদিসে থাকতে হবে কেন?

আসুন বিষয়টি বুঝতে একটু গভীরে যাই। এসব আধুনিক সুবিধাদি ব্যবহার করলে ইসলামের কি কোন লাভ বা ক্ষতি হয়? উত্তর হলো, না। এগুলো আধুনিক ও আরামদায়ক জীবন যাপনের উপসর্গ মাত্র। যতদিন পৃথিবী টিকে থাকবে ততদিন পর্যন্ত এসব আধুনিক ব্যবহার্য জিনিস আবিষ্কার হতে থাকবে। আর এগুলো ব্যবহার করা, না করায় ইসলামের মূল নীতি বাঁধাগ্রস্থ হয়না। কিন্তু ইসলামের বিধানের বাইরে বাড়তি কোন ইবাদত যোগ করলে ধর্মের মূলনীতি নিয়ে বিতর্ক হয়। একটা সময় ছিল যখন মানুষের ব্যস্ততা তেমন ছিল না, তখন পর্যাপ্ত সময় ছিল। এখন মানুষের ব্যস্ততা এত বেড়ে গেছে যে প্রয়োজনীয় এবাদতগুলো সময়মত সম্পাদন করা মানুষের জন্য অনেক কঠিন হয়ে গেছে। এছাড়া সৎ ভাবে জীবিকা নির্বাহ করা, নিজের কাজ নিজে করাও তো এক প্রকার এবাদত। তাই বাড়তি এবাদত যোগ করার কোন যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।

আমরা জানি ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ধর্মীয় এসব মাহফিলে বেশিরভাগ সময় দুনিয়ার ইবাদত ও আখেরাতের বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করা হয় না। একজন মানুষ পরিপূর্ণ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে হলে প্রয়োজন আর্থিক সচ্চলতা, সুস্থ শরীর ও প্রফুল্ল মন। অপরদিকে পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। তাই এসব জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মাহফিলগুলোতে আলোচনা করাও প্রয়োজন। এছাড়া জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজন টাকা-পয়সা উপার্জন করা; ডাক্তারী, প্রকৌশলী, রাজনীতি, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা; ছেলে-মেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা। কিন্তু এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কখনো আলোচনায় উঠে আসে না। যদিও ধর্মীয় বিষয়ের মত এসব বিষয়ে জানা ও দিক নির্দেশনা পাওয়া কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যার ফলে এসব মাহফিল ফলপ্রসু হয় না।



ইসলামের বিভিন্ন আলীমদের মধ্যে অনেক মতবাদের ফলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইসলাম। শুধু মতভেদ থাকলে এতো আপত্তি ছিল না, রীতিমত চলে অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ আর তিরস্কার! এরা সাধারন মানুষদের মধ্যে ইসলামকে বিতর্কিত করছেন। আপনি কী জানেন? এসব অযথা বিতর্ক মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রতৃত্বের পরিবর্তে ঘৃণা ও অবিশ্বাস ছড়িয়ে দিচ্ছন? পবিত্র হাদিসকে মানুষের মাঝে বিতর্কিত করছেন নিজের অজান্তেই। আর পবিত্র হাদিস নিয়ে বিতর্ক হওয়া মানে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জীবনকে নিয়ে বিতর্ক করা। প্লীজ, এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার আগে অন্তত একবার ভাবুন। ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে যত মতবিরোধ দেখা যায় পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মে তা দেখা যায় না। এটা বন্ধ হওয়া উচিৎ।

একটা বিষয় লক্ষ করলে দেখবেন, যারা ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করেন এদের বেশীরভাগের ইসলামী জ্ঞান নেই বা অতি সীমিত। এজন্য এরা প্রকৃত জ্ঞানী ও ভদ্র আলীমদের পরিবর্তে গলাবাজ, অল্প শিক্ষিত ও সুন্দর বেশভূষ ওয়ালা বক্তাদের দাওয়াত করেন। এতে এলাকায় উনার সুনাম বাড়ে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকলে তা হাসিল হয়। ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ এসব বক্তার ওয়াজ শুনতে আসে। এই সুযোগে তিনিও বানিয়ে বানিয়ে রঙ-চঙা ওয়াজ শুরু করেন মানুষকে মাতিয়ে রাখার জন্য। এসব মাহফিলগুলোতে পবিত্র কোরআন ও হাদীস নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। যারা এসব মাফিলে বাহবা দেয় এরা মেলায় গিয়েও হাততালি দেয়ে, গানের মাহফিলে গিয়েও হাততালি দেয়, নাচানাচি করে। প্রকৃত আলীমরা নয়, এখন ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করছে এসব ইসলামী বক্তা নামধারী ক্যানভেচার।

একজন ক্যানভেচারের ইসলামী বক্তা হওয়া আর ইসলামিক স্কলারের মাহফিলের বক্তা হওয়ার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কারণ ক্যানবেচার অতি নিম্নমানের মলমটি রঙিন মোড়কে ফুটপাতে বিক্রি করে চড়া দামে। এজন্য মলমটি ব্যবহার করার পর শরীরের পঁচা-ঘা কমার পরিবর্তে বাড়ে, পাশাপাশি নতুন নতুন রোগ-জীবাণু দেহের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এটা অনেকটা ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকে বিশেষজ্ঞ সার্জনের পরিবর্তে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো।

আমাদের মতো ডালাও ভাবে ওয়াজ মাহফিল পৃথিবীর কোথাও হয় না। অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে সবচেয়ে জ্ঞানী-গুণী, ভদ্র ও সম্মানিত ইসলামী স্কলাররা ধর্মীয় মাহফিলগুলোতে আমন্ত্রিত হন। উনারা ধীরে সুস্থে, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। মানুষকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেন। টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে উনাদের মধ্যে কোন লোভ-লালসা নেই। অতি সাধারন জীবন-যাপন করতে তারা অভ্যস্ত। এরা নিজেরাও বিতর্কিত হতে চান না, আর নিজের আচরণ দিয়ে ইসলামকেও বিতর্কিত করেন না। আর আমাদের দেশে প্রকৃত আলীমদের কেউ ডাকে না, মূল্যায়ন করে না। গলাবাজ নয় বলে মাহফিল গুলোতে তেমন ডাক পড়ে না তাদের। কারণ তারা ধর্মের নামে উগ্রতা প্রচার করেন না, অন্য আলীমদের নিয়ে গীবত করেন না, সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ান না, সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেন না।


শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞান অর্জন করা। তাহলে জ্ঞান অর্জন মানে কী? পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করা! বড় বড় বই না বুঝে মুখস্ত করা!! আসুন বিষয়টি নিয়ে একটু আলোকপাত করি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো জ্ঞান অর্জনের একটা ধাপ অথবা দিকনির্দেশক দরজা। বাকি পথটুকু নিজে নিজে অতিক্রম করতে হয়। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিশ্ব সাহিত্য, দর্শন, সমাজ-সংস্কৃতি, ইতিহাস, বিজ্ঞান, মানব জাতির বিবর্তন, বিশ্বের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার কৌশল, ভীন্ন মত ও বিশ্বাসের মানুষের সাথে চলন ও শান্তিপূর্ণ সামাজিক সহাবস্তানের গুরুত্ব ইত্যাদি জানতে হয়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষদের দর্শন, আবিষ্কার ও সাহিত্য পড়তে হয়, গবেষণা করতে হয়। শুধু একমুখী জ্ঞান অর্জন করলে প্রকৃত জ্ঞানী হওয়া যায় না। আর প্রকৃত জ্ঞানী না হলে ধীরস্থির, সহনশীল, ভদ্র, সুবক্তা আর সু-মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত মানুষ আছেন যারা বেশিরভাগ জ্ঞানী মানুষের ভদ্র ও জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য/আলোচনা শুনে না। ভাল মানের সাহিত্যিকদের বই পড়ে না। কারণ তাদের দৃষ্টিতে এদের কেউ নাস্তিক, কেউ মুশরিক, কেউ সুদখোর আর কেউ কমিনিস্ট। ভাল কথা না শুনলে, ভাল লেখা না পড়লে ভাল স্পিকার হওয়া যায় না। প্রকৃত জ্ঞানী না হলে সারা জীবন নীতিকথা মুখস্ত করে কোন কাজে আসবে না। কারণ নীতিগুলো বুঝে নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে হয়। আর তা না হলে বিবেক সৃষ্টি হয় না; পরিপক্ব বিবেকের জন্য দরকার প্রকৃত জ্ঞান।

এখন ইসলাম যতটুকু না আদর্শ ধারণ ও প্রচারের বিষয় তার চেয়ে বেশি টাকা-পয়সা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ানোর জায়গা। কেউ কেউ তা বংশ পরম্পরায় করে আসছেন। ইসলামকে যত দ্রুত সম্ভব এসব লোভী ও ধান্দাবাজদের খপ্পর থেকে বের করে আনতে হবে। আর এখনই এ পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনগুলোতে ইসলাম ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখিন হবে। কারণ, এখন পৃথিবীকে চালাচ্ছে হাজার হাজার ইন্টেলেকচুয়াল মানুষ। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এসব মেধাবী মানুষজনের কাছে ইসলামের সত্য বাণী পৌছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন শত শত ভদ্র কোরআন ও হাদিস বিশারদ। যারা শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামের দাওয়াত প্রচার করবেন। যোগ্য মানুষের হাতে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের নেতৃত্ব না থাকলে এসব প্রতিষ্ঠান ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সমাজ হিংসা-বিদ্বেষ, বিভক্তি ও অন্যায়-অবিচারে ভরে যায়। ঠিক তেমনি কোন ধর্মের নেতৃত্ব মূর্খ, সাম্প্রদায়িক আর অভদ্র মানুষের হাতে থাকলে ধর্মটিও ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সমাজ বিষাক্ত হয়।


হাজার হাজার মাদ্রাসা শিক্ষিত ছাত্র পড়াশুনা শেষ করে যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করেন, তখন চাকরির ক্ষেত্রে অনেক বৈষম্যের স্বীকার হয়। অনেক নিয়োগদাতা যোগ্যতা থাকার পরও মাদ্রাসা শিক্ষিতদের চাকরি দেন না। এছাড়া ধর্মীয় কিছু বিধিনিষেধের ফলে এরা সব কাজে যোগদান করতে পারে না। বেশিরভাগের কায়িক পরিশ্রম ও ব্যবসা করতে অনীহা থাকে। ফলে কর্মজীবনে বেশ হিমশিম খেতে হয়। যার ফলশ্রতিতে অনেকে ধর্মকে ভিত্তি করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। এজন্য সমাজে অনেক কম জানা লোককেও ইসলামী বক্তা হতে দেখা যায়। এসব ওয়াজ মাহফিলের বেশিরভাগই যতটুকু না ধর্ম প্রচার তার চেয়ে বেশী বক্তার রুটিরুজির ফিকির। ধর্মীয় স্পীচগুলো লাভজনক হওয়ায় অনেক অযোগ্য লোকও ইসলামের লেবাসদারী হয়ে এসব মাহফিলে দাপিয়ে বেড়ায়। এজন্য ইসলমাকে ভিত্তি করে কোন পেশাদার শ্রেণী গড়ে উঠলে ধর্মের অনেক ক্ষতি হয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন হাজার হাজার নীতিহীন মুখোশধারী দুর্ণীতিবাজ মানুষ আছে; এরা সুন্দর পোষাক পরে গোছানো বক্তব্য দেয়, সুশীল সাজে, রাষ্ট্রীয় চেতনার কথা বলে, উন্নয়নের কথা বলে মানুষকে ঠকায়। রাষ্ট্রের ক্ষতি করে নিজেদের সম্পদের পাহাড় বানায়, বিদেশে টাকা পাচার করে। ঠিক তেমনি ধর্মীয় লেবাস সর্বস্ব মুখোশধারীরা ধর্মকে বিক্রি করে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে, পারষ্পরিক দ্বন্দ্ব সংঘাত লাগিয়ে রাখে। নিজের বাজার দর বাড়াতে অন্যকে অপমান-অপদস্ত করে আখের গোছায়। বাংলাদেশে রাজনীতির মতো ধর্ম ব্যবসাটা বেশ লাভ জনক। এখানে কোন পুঁজি খাটাতে হয় না। শুধু লাগে কুট কৌশল, গলার জোর আর মুখোশের আড়ালে মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা। এখানে ধর্মের বড় ক্ষতি হলেও বক্তার তাতে কিছু যায় আসে না। টাকা কামানোই আসল।

ইউটিউবে একজন তরুণ ইমামকে বলতে শুনলাম, একজন মুশরিককে মুশরিক বলতে হবে; একজন কাফেরকে অবশ্যই কাফের বলতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন কাফের; তাকেও কাফের বলতে হবে। বক্তব্যটি শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। একজন ইমাম মসজিদে বসে এমন ওয়াজ করতে পারেন! অযথা কেন এ প্রসঙ্গ টেনে আনলেন আমার বোধগম্য হলো না। বলার সময় উনার চোখে মুখে প্রচন্ড ঘৃণা ছিল। এভাবেই আমরা প্রয়োজনে অপ্রয়জনে সাম্প্রদায়িক বিষ সমাজে ঢেলে দিচ্ছি। একজন জ্ঞানী মানুষের একমাত্র পরিচয় তার জ্ঞানে, ধর্মে নয়। একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মূল্যায়ন করতে যে যোগ্যতা লাগে তা উনার আগে অর্জন করা উচিৎ ছিল। এই ইমামকে শুধু শুধু দোষ দিয়ে কী লাভ? যুগের পর যুগ থেকে আমরা বঙ্গবাসীরা জ্ঞানী-গুণীদের তিরস্কার করি, অমর্যাদা করি। আর মূর্খদের কথায় বাহবা দেই, মূল্যায়ন করি।

আবার আসি আমার বাবার প্রসঙ্গে। শহরের শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বেশিরভাগ মুসলিম ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশুণা করলেও গ্রামে এখনো অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান আছেন যারা শুনে শুনে ধর্মের উপর আমল করেন। এসব মানুষ যখন বিভিন্ন মাহফিলে একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য শুনেন, তখন তারা বিভ্রান্ত হন। কোনটি সঠিক বুঝতে পারেন না। এছাড়া বেশিরভাগ মাহফিলে একে অন্যের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হয়, অন্য মতের আলীমদের গালিগালাজ করা হয়। এতে হিতে বিপরীত হয়। এদের একটা পক্ষ নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ঠিক রাখতে, তাদের মতাদর্শের মানুষজন বাড়াতে কৌশলে অন্য পক্ষের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। কঠিন গালি দেন আর ধর্মের নামে গীবত করেন, সমাজকে বিভক্ত করে রাখেন। উদ্দেশ্য প্রণোধিত হয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘৃণা আর অবিশ্বাসের বীজ বপন করেন। সাধারন ধর্মপ্রাণ মানুষ এদের চতুরতা বুঝতে পারে না।

সত্যি বলতে কি? বেশিরভাগ মাহফিলে গীবত গাওয়া, অন্য মুসলিমদের গালি দেওয়া, উগ্রতার প্রদর্শনী, লাফালাফি, চিৎকার-চেঁচামেচি, সাম্প্রদায়িক উস্কানি, পীর সাহেবের মিথ্যা কেরামতির প্রচার, বক্তা ও আয়োজকদের টাকার খেলা আর কোরআন হাদিস বাদ দিয়ে বানিয়ে বানিয়ে ওয়াজ করা দেখে কষ্টে বুকটা ভেঙ্গে যায়। এসব ওয়াজ শুনে কেউ হেদায়েত হয় না। বরং পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, সমাজে চরম ঘৃণা ছড়ায় আর সাধারন ধর্ম প্রাণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। একুশ শতকে এসে বেশিরভাগ বক্তা ইসলামকে একটা উগ্র, হিংসুক, সাম্প্রদায়িক ও লোভী ধর্ম হিসাবে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করছেন। এতে আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর জীবন ও আদর্শ পৃথিবীর কাছে অত্যন্ত খারাপ ভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। এটা চরম দুর্ভাগ্যজনক।

ইদানিং তো দেখি অনেক বক্তা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকে হুবহু নকল করছেন। কেউবা উকিলদের মত বড় বড় ইউনিফর্ম পরেন, লম্বা টুপি ও মাথায় আরবদের মত রুমাল ব্যবহার করেন। আরবীর পাশাপাশি বাংলা শব্দকেও রাবারের মত টেনে টেনে বিকৃতভাবে উচ্চারণ করেন। বেশিরভাগ বক্তা শুদ্ধ বাংলা পর্যন্ত বলতে পারেন না। এছাড়া মানুষকে তুই তুকারী করা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করা, বেয়াদবের মত কথা বলা তো আছেই। বক্তব্যের সময় এমন উগ্র ও আক্রমনাত্মক ভাষা ব্যবহার করেন শুনলে মনে হবে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়েছে। যদিও ইসলাম শান্তির ধর্ম, কিন্তু বেশিরভাগ বক্তাদের কথা শুনলে মনে হবে তাদের অন্তরে শুধু ঘৃণা ও অশান্তির আগুণ জ্বলছে। মনে রাখবেন ইসলামের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছে এসব আদর্শহীন মূর্খ, গলাবাজ, অসহনশীল, উস্কানিদাতা, সাম্প্রদায়িক আর প্রচন্ড বদমেজাজি ক্যানভেসার। হ্যা, ইসলামের নৌকা এরাই ডুবাবে আর কাউকে লাগবে না।।



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

মন্তব্য ৩৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫১

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: আপনার লেখা সুন্দর, বিশ্লষণধর্মী। কিন্তু ঐ যে, আমি বড় লেখা ধৈর্য্য নিয়ে পড়তে পারি না।:(

@"এখন অনেক হুজুর ঘন্টায় পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা কন্টাক্ট করে মাহফিলে যান।""
- - ঐ ফাউলদের আমার পছন্দ নয়।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


পুরো লেখা পড়তে হবে না। শুধু শিরোনাম পড়ে মন্তব্য করলেই হবে।

২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:০৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সহজ সরল মানুষদের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে ব্যবসা করতে অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। সামনে দিন আসবে। মানুষ সচেতন হবে। সবাই কোরান আর হাদিস পড়ে তার মর্ম বোঝার চেষ্টা করবে।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:২২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


এখন আধুনিক শিক্ষিত মানুষ ঘরে বসেই ইন্টারনেটে কোরআন ও হাদিসের চর্চা করেন, তাফসির পড়েন। কিন্তু অল্পশিক্ষিত মানুষদের মাথা এরা ধোলাই করছে।

৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৫৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
যারা ওয়াজের নামে অন্য মাযহাবীদের সমালোচনা করেন ও কন্ট্রাক করে ওয়াজ করেন এসব ওয়াজে প্রকৃত পক্ষে বক্তা ও শ্রোতা কারই কোন উপকার হয়না।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:২৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


এখন ওয়াজ মানে অন্য মাযহাবকে গালি দেওয়া, অন্য মতকে তিরস্কার করা। নিজের ঢোল নিজে পেটানো, হাজার-লক্ষ টাকার কন্টাক্ট, সাম্প্রদায়িক উস্কানি, গলাবাজি, বদরাগী চেহারার প্রদর্শন এবং বানিয়ে বানিয়ে কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করা।

৪| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:০১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: বুঝতে পারছি গুরুত্বপূর্ণ লেখা। পড়ে শেষ করতে পারলাম না। ছোট করে লিখুন ভাই।
শুভেচ্ছা।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


সরি, লেখাটি একটু লম্বা হয়ে গেছে। আসলে বিষয়টি একটু বড় তাই ডিটেল লেখতে হয়েছে। ব্লগে ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ, আপনাকে।

৫| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৫:৪৬

চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফত বলেছেন: আসলে এই সব ওয়াজিরা তাদের ব্যবসা চালাতে পারছে একমাত্র সাধারণ মুসলমানদের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনেই।তবে অবস্থা পালটআবে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে কুরআন, হাদিস এখন প্রায় মুসলমানের মোবাইলে। মজার বিষয় হচ্ছে ওরাই আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছে ওদের এন্টীডট।সুন্দর লিখার জন্য ধন্যবাদ।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৫:৫০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


ধন্যবাদ, জাফর ভাই। এখন নতুন প্রজন্ম আর এসব ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে ইসলাম শেখে না। কোরআন হাদীস এখন নেটে শেখা যায়। ইসলামের সঠিক দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।

৬| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:১০

অক্পটে বলেছেন: আমাদের দেশের মুসলিমরা তো আসলে কোরান হাদিস প্রাকটিস করেনা তাই ওয়াজ নামক এই ব্যবসায়টা খুব রমরমা আমাদের দেশে। জন্মগত মুসলিম হওয়ার কারণে আমরা ইসলামকে অধ্যয়ণ করিনা। তাই যে বক্তা যা বলে যায় তাই বিশ্বাস করে বসি। তাদের বক্তব্যের ভুলত্রুটি বুঝে সঠিক পথে আসতে আসতে দেখা গেল আমি নিজেই বুড়ো হয়ে গেছি। এর মানে আমাদের একজীবন লেগে যায় তাদের ভ্রান্ত ওয়াজের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে।
আমাদের ওয়াজকারীরা হুঙ্কার দেয় রাগারাগি করে লাফা লাফিও করে। এটা কেমন ওয়াজ? ওয়াজ করতে গিয়ে এমন জোরে চিৎকারই বা করতে হবে কেন। এই চিৎকারটা আসলে তার অপারগতা ঢাকতে সে করে থাকে। তার জ্ঞানে পরিসীমা কি সে তা জানে। ভাষাকে রপ্ত করার জন্য শ্রদ্ধেয় বাঙ্গালীদের সাহিত্য সে অধ্যয়ন করেনি। এই জন্য তার ভাষার সালিনতাও থাকেনা। কোন জ্ঞানী ইসলাম প্রচারক চিৎকার করে স্পীচ দেন না। রাগারাগি করে বক্তব্য প্রচার

আপনার লেখা পড়লাম। চমৎকার লিখেছেন। লেখা বড় হয়েছে। আসলে একটা বিষয়কে ভাল উপস্থাপন করতে হলে এর বিশদে যেতেই হয়, এই কারণেই আপনার লেখা বড় হয়ে যায়। যেসব বিষয়গুলো সামনে এনেছেন তার জবাবও আপনার লেখাতেই আছে সুন্দর ভাবে।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:৪৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: আপনাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারছি না। অনেক বড় একটা লেখা মনযোগ দিয়ে পড়ে এতো লম্বা সুন্দর একটা কমেন্ট করেছেন এজন্য সত্যি কৃতজ্ঞ। আপনাকে নতুন করে কিছুই বলার নেই। তারপরও আমার লেখার একটা অংশ যুক্ত করে দিলাম।

"সত্যি বলতে কি? বেশিরভাগ মাহফিলে গীবত গাওয়া, অন্য মুসলিমদের গালি দেওয়া, উগ্রতার প্রদর্শনী, সাম্প্রদায়িক উস্কানি, পীর সাহেবের মিথ্যা কেরামতির প্রচার, বক্তা ও আয়োজকদের টাকার খেলা আর কোরআন হাদিস বাদ দিয়ে বানিয়ে বানিয়ে ওয়াজ করা দেখে কষ্টে বুকটা ভেঙ্গে যায়। এসব ওয়াজ শুনে কেউ হেদায়েত হয় না। বরং পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, সমাজে চরম ঘৃণা ছড়ায় আর সাধারন ধর্ম প্রাণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। একুশ শতকে এসে বেশিরভাগ বক্তা ইসলামকে একটা উগ্র, হিংসুক, সম্প্রদায়িক ও লোভী ধর্ম হিসাবে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করছেন। এতে আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর জীবন ও আদর্শ পৃথিবীর কাছে অত্যন্ত খারাপ ভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। এটা চরম দুর্ভাগ্যজনক।"
.......................................................................অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।

৭| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:১৩

কামরুননাহার কলি বলেছেন: ইসলামী ভালো পোস্ট পড়তে আমার ভালো লাগে । ধন্যবাদ আপনাকে ।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৪৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


আসলে বিষয়টি বিশ্লেষণধর্মী হওয়ায় একটু বড় হয়ে গেছে। লেখাটি কষ্ট করে পড়েছেন জেনে খুশি হলাম। শুভ কামনা আপনার জন্য।

৮| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৫০

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: বেশ বড় পোষ্ট, পড়বো,সেফ হওয়ার আগে এত পোষ্ট না করে, সবচেয়ে বেষ্ট লেখাটি উপরে রাখুন মডুদের দেখার জন্য,অন্য লেখাগুলি হাতে রাখুন, সেফ হওয়ার পর পোষ্ট দিন।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:১৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


ধন্যবাদ, তারেক ভাই। ঠিক বলেছেন। আমার বেস্ট লেখাগুলো এখনো দেইনি। সেফ হওয়ার পর দেব। বিষয়টি নিয়ে আমিও ভেবেছি। তিন এক মাসের মতো হয়ে গেল এখনো সেফ হইনি।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


তারেক ভাই, এই মাত্র সেফ হলাম।

৯| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:১৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: কাওসার ভাই সবটা পড়িনি, কিন্তু বেশিরভাগটা পড়েছি।সত্যিইতো হুজুররা যেটা বলেন, আমরা মেনে নিই।অনেকটা অসহায়।আর আপনি যেভাবে ইউ টিউবের হুজুরদের প্রসঙ্গ আনলেন,শুনে তো অবাক।তবে মাঝে মাঝে ইসলামিক জলসায় হুজুররা এমন ভাষণ দেন, যে কানে আঙ্গুল দিতে হয়। যাক প্রথামত আপনার বিশ্লেষণ ধর্মী লেখা।

শুভ কামনা রইল।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


লেখাগুলো ফ্যাক্ট ও বিশ্লেষণধর্মী হওয়ায় একটু লম্বা হয়। আমি চাই পাঠকরা কষ্ট করে পড়ে একটা সমাধান যাতে পান। এখন ভাল কথা বলার মানুষের বড় অভাব। ধন্যবাদ, প্রিয় ভাই।

১০| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৩৫

শাহিন বিন রফিক বলেছেন: আপনার প্রতিটি লেখা মনযোগ দিয়ে পড়তে হবে, আপাতত এটি প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম। পরে পড়ে নিব বাকিগুলোর সাথে।
আপনি কি প্রথম পাতায় এসেছেন?

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৫৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ, স্যার।
হ্যা, আজ সন্ধায় প্রথম পাতায় আসলাম। একটা লেখা প্রথম পাতায় গেছে। বাকীগুলো যারা পড়েছেন ব্লগে খুঁজে পেয়ে। আমার লেখাগুলো অনেক যত্নের। লেখতে অনেক সময় ও ভাবনা ছিল। চেষ্টা করেছি ভাল লেখতে। জানি না কতটুকু পেরেছি। প্রতিটি লেখা আমার খুবই আপন। সময় পেলে একটু পড়বেন। কৃতজ্ঞ থাকবো।

আপনার প্রতি শুভ কামনা রইলো।

১১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:২৬

ইমরান আল হাদী বলেছেন: আমার মনের কথা বলছেন, উনারা মনে এত হিংসা পোষণ করেন তাতে আর যা হোক
ধর্মপ্রচার হয় না, হয় বিভেদ আর বিরোধ প্রচার।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: ইমরান ভাই, ধন্যবাদ। ঠিক বলেছেন। কোন মানুষের অন্তরে বিষ থাকলে মুখ দিয়ে ভাল কথা বের হয় না। প্রতিহিংসা আর উগ্রতা মনুষত্বকে শেষ করে দেয়ে। ব্লগে আসার জন্য কৃতজ্ঞ। শুভ কামনা আপনার জন্য।

১২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৪:০০

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: ১ পোষ্টে দ্বিতিয় ছবিটি যা একটি মসজিদের মিনার এটি কোন মসজিদ দয়াকরে জানাবেন আমার বিশেষ প্রয়োজন বা ছবির লিংক দেবেন ।

২। ধর্মের নামে যা হচ্ছে তা খুবই লজ্জাজনক তা নিয়ে কিছু লিখি না কারণ অযথা মুল কথা না বোঝে মানুষ নোংরা কমেন্ট দিবে - তাই ধর্মের কল না কি বাতাসে নড়ে - দেখি নড়ে কি না !!!

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:২৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: ছবিটি ইরানের একটা বিখ্যাত মসজিদের।


ISFAHAN MOSQUE
এ বিষয়ে কেউ লেখতে চায় না ভয়ে। আমার ডর ভয় একটু কম। লেখকদের একটু সাহসী হতে হয়। না হলে সত্য প্রকাশ সম্ভব নয়। কারণ সত্য প্রকাশ করলে অনেকের গা জালাপোড়া করবে। এটা সয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

১৩| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৪:৩৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:

ইসফাহান মসজিদ, ইরান।

১৪| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:২১

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: সাহস নিয়ে একটি কমেন্ট করেই দেই: - ঢাকা মসজিদের শহর আর বাংলাদেশ মসজিদের দেশ !!! চিপায় চিপায় অলিতে গলিতে মসজিদ চারো দিক থেকে যখন আজান শুরু হয় মধুর আজান কে মনে হয় সম্ভবত কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে তাই আলেমগণ ভয়ে আজান দিচ্ছেন চারোদিকে । চিপায় চিপায় মসজিদ না করে একটি বড় মসজিদ করলে হয়তোবা এমন মসজিদ বাংলাদেশে ও থাকতো যেখানে নামাজ পড়ে মনে শান্তি আরাম আনন্দ সবই হতো ।

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:৩২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: কি জবাব দেব, বুঝতেছি না। শুধু হাসছি। অনুভূতি প্রকাশ চমৎকার। আর কিছু বলতে হবে!! মোর মনের প্রশ্নটি আপনার মনেও আছে!!!

১৫| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৪

ইনাম আহমদ বলেছেন: ওয়াজ নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই। তবে মাইকের ব্যবহারটা নিয়ন্ত্রণ করে কোনও আইন করা হলে শীতের রাতে ঘুমটা আরামে হতো। ঠাকুরমাহমুদ সাহেবের করা সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘাটতে গিয়ে ব্লগটা পেলাম। উনার আযান নিয়ে দেয়া মন্তব্যের সাথে আমি সহমত। সবজায়গায় কোরাস না শুরু করে সৌন্দর্য্যের সাথে আযানটা দেয়া যেত।
মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশে নিয়মটা এমন, একটা মাত্র মসজিদ থেকে লাইন নিয়ে স্থানভেদে মাইক লাগানো আছে, নামাযের সময় হলে মাইকে আযান বাজে একটা, সবাই নিকটস্থ মসজিদে যায় নামাজ পড়তে। শব্দদূষণ হয়না। আর আমাদের এখানে? কে কত জোরে দিতে পারে তার প্রতিযোগীতা চলে যেন।

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: প্রথমে আপনাকে শুভেচ্ছা। ব্লগে এসে লেখাটি পড়ে কমেন্ট করার জন্য। আপনার যুক্তির সাথে আমি একমত। শীতের রাতে অনেক ছোট মাহফিলেও অনেক উচ্চস্বরে ওয়াজ চলে। কখনো কখনো অনেক দূর পর্যন্ত মাইকের লাইন টানা থাকে। কোথায় মাহফিল কেউ জানে না, শুধু বাজতেই থাকে। এতে রোগী ও পরীক্ষার্থী সহ অনেকের কষ্ট হয়।

আর আযানের বিষয়েও চিন্তাভাবনা করা যায়। আপনার কথায় যুক্তি আছে। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।

১৬| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৩৩

আল আমিন সেতু বলেছেন: এদ্দেরকে ওয়য়ায়েজ বা ইসলামী চিন্তাবিদ বলতে আমার ঘেন্না আসে, আমি এদের কে গলা ব্যবসায়ী বলে থাকি। যেমন বুদ্বিজীবি নামের কিছু বুদ্বি ব্যবসায়ী আছে কথিত সুশীল সমাজে। আমি এই লাইনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে চলাফেরা করি। আমি এদের কে ভালভাবে চিনি। এরা ইসলামের দুশমন। আমি সবাইকে একটা নসিহত করতে পারি যে, যাদের কোনো বিশেষ সুর নাই এবং চিল্লাফাল্লা কোঁরে নয় কুরানের আয়াত ও হাদিছ পড়ে পড়ে ওয়য়াজ করেন , শুধু তাদের ওয়য়াজ শুনবেন। দরদামকারী বক্তাদের থেকে দূরে থাকবেন। আর ও অনেক কটু বিষইয়াদি আছে এই লাইনে, যা বাহিরে বললে আমার নিজের ইজ্জত থাকবে না। ধন্যবাদ।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:৩৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: 'গলা ব্যবসায়ী' কথাটি আমার বেশ ভাল লেগেছে। আমি এদেরকে বলি 'ক্যানবেচার'। আসলে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কেউ কিছু লেখলে অনেকে না বুঝে গালি দেয়। এজন্য বিষয়টি নিয়ে কেউ লেখতে চায় না। এই সুযোগে এরা ইসলাম নিয়ে 'গলার ব্যবসা' করে। লম্বা এ ফিচারটি আমি বিবেকের তাড়নায় লেখলাম। কারণ, লেখকদের এ দায়িত্ব নিতে হবে। না হলে সমাজে অনাচার আরো বাড়বে। লেখাটি ফেইসবুকে দিয়েছি, গালির পাশাপাশি প্রচুর প্রশংসাও পেয়েছি।

সেতু ভাই, ধন্যবাদ।

১৭| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:২০

আল আমিন সেতু বলেছেন: বস্তুত নিন্দুক না না থাকাটা কোনো গুণ না। কারণ সমালোচনা করে নিন্দুক আপনাকে আরো ভাবতে শিখায়, উজ্জীবিত করে। সূর্যের নিন্দা চামচিকারা করলে তার কী ই বা যায় আসে।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: কারণ সমালোচনা করে নিন্দুক আপনাকে আরো ভাবতে শিখায়, উজ্জীবিত করে। সূর্যের নিন্দা চামচিকারা করলে তার কী ই বা যায় আসে"।
সেতু ভাই, চমৎকার একটি মন্তব্য করেছেন। খুব ভাল লাগলো। অনুপ্রাণিত হলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.