নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোলাহল ত্যাগী

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাতৃভাষার অপরিহার্যতা বনাম বিদেশী ভাষা চর্চা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯


সন্দেহ নেই ভাষা একটি জাতির প্রানের স্পন্দন। মন সাগরের হাঁসি-কান্না, মান-অভিমান,
আনন্দ বেদনা এবং সকল অনুভূতিগুলো ভাষার শব্দাবলী হয়ে ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে।
মানুষ জন্ম থেকে যে ভাষায় কথা বলে সেটাই তার মাতৃভাষা। পৃথিবীর কাছে সে ভাষার
মূল্যমান কতটুকু তা বিবেচ্য বিষয় নয়। তার কাছে সে ভাষা অমূল্য। কারণ সে এ ভাষায়
কাঁদে-হাসে অনুভব করে।

এ ভাষায় কথা বলে, বুঝে এমনকি বিদেশী ভাষা বলা ও বুঝার সময়ও সে তার মায়ের ভাষায়
অনুবাদ করেই বলে ও বুঝে। তার কাছে মাতৃভাষার বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। ঠিক
যেমন মায়ের অভাব কেউ পূরণ করতে পারে না। ভাষা হলো রক্তের মতো অথবা আত্মার মতো,
যাকে দেহ থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করা যায় না বরং তার চেয়ে বেশী কিছুর নাম মাতৃভাষা।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, রক্ত, হৃদয় এসব প্রতিস্থাপন করা বা সম্পূর্ণ আলাদা করা গেলেও ভাষার ক্ষেত্রে
সেটা সম্ভব নয়। ভাষা নিছক ভাষা নয়। ভাষার সাথে মিশে থাকে একটি জাতির সত্ত্বা। জাতির
বিশ্বাস, অভিরুচি, চিন্তা, জীবনবোধ, তাহজিব-তমুদ্দুনের প্রতিচ্ছবি হলো ভাষা। কাজেই একটি
ভিন্ন ভাষা, বিশেষ ভঙ্গিমা ও জীবন ধারা অনুকরণ করলেই কেউ ভেতর থেকে সে জাতি হতে
পারবে না। এবং এটা তার জন্যে গৌরবেরও নয়।

ভাষা, বর্ণ, বংশ, দেশ এসবে মানুষের কোন হাত নেই। সয়ং স্রষ্টাই এসবের মাধ্যমে মানুষকে
ভিন্ন স্বভাব, রুচি ও অভ্যাসের করে তৈরী করেছেন। এসব জোর করে চাপিয়ে দেয়ার কোন বিষয়
নয়। মানুষের চিন্তা, অভ্যাস-রুচি, সভ্যতা-সংস্কৃতির বিবর্তণ হয় খুবই স্বাভাবিক নিয়মে।

এসবের সাথে পাল্লা দিয়ে ভাষাও পরিবর্তিত হতে থাকে। অভিধানে যুক্ত হতে থাকে নিত্য-নতুন
শব্দ আর ব্যবহারিক অভিধান থেকে বিদায় নিতে থাকে পুরনো শব্দ। এভাবে একটি ভাষা এগিয়ে
যেতে থাকে। এগিয়ে যেতে থাকে একটি জাতিও।

প্রিয় পাঠক, কিছুক্ষণের জন্যে একটু চর্মচক্ষু বন্ধ করুন- মনের চোখ খুলে সবাই মিলে চলুন ঘুরে
আসি নিকটবর্তী কিছু অতীত। ১৯৪৮ সাল। কার্জন হল। খাজা নাজিমউদ্দিনের বক্তব্য। একটি ভিন্ন
ভাষাকে জোরপূর্বক চাঁপিয়ে দেয়ার প্রয়াস। তারপর রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে বায়ান্নোর আন্দোলন।
পুলিশের গুলি। সালাম,বরকত,রফিকের মতো কিছু তাজা প্রাণের ঝরে পড়া। তার কিছুকাল পর
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি। অনেক চড়াই-উতরাই শেষে ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা। তারপর আরো অনেক কিছু।

মাতৃভাষার জন্যে জীবন দিয়েছে পৃথিবীতে এমন নজীর একটিও নেই কাজেই এটাকে ছোট করে
দেখার কোন কারণ নেই। এই কথা সবার স্বীকৃত সত্য যে ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই স্বাধিনতা
আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় এবং বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধিন দেশের অভ্যুদয়।
এসবের অর্থ এই নয় যে বিদেশী ভাষা শেখা এবং ব্যবহার করা যাবে না। পৃথিবীতে এমন একটি
ভাষাও নেই যার ভেতর অন্যভাষার শব্দাবলী প্রবেশ করেনি। মানুষ সামাজিক জীব, একে অন্যের
উপর নির্ভরশীল। ঠিক তদ্রুপ ভাষার অবস্থাও তাই। মানুষকে পরষ্পরে সাথে যোগাযোগ রক্ষা
করতে হয়, ফলে একে অন্যের ভাষাকে বুঝার প্রয়োজন হয়।

আর এর মাধ্যমে একে অন্যের ভাষা গ্রহন করে, সেই সাথে কৃষ্টি-কালচারও। পৃথিবীতে অনেক ভাঙ্গা-
গড়া, জয়-পরাজয়, উথান-পতন ঘটেছে। বিজিত জাতি বিজয়ী জাতির ভাষা ও সংস্কৃতি গ্রহন করেছে।
আবার বিজয়ীরাও গ্রহন করেছে বিজিতের ভাষা-সংস্কৃতি। এই তো সেদিন আমাদের দেশ
পাকিস্তানিদের থেকে স্বাধীন হলো।

তার আগে ভারত থেকে, তারও আগে ইংরেজ শাসন থেকে তারও আগে আরব-তুর্কি সেতো অনেক
লম্বা ইতিহাস। শত চেষ্টা করেও এসবের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। সম্ভব নয় তাদের
রেখে যাওয়া শব্দভান্ডারগুলো মুছে ফেলা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতির শাসনের ফলে যে মিশ্র ভাষা-
সংকৃতিরঅনুপ্রবেশ ঘটেছে ইচ্ছে হলেই তা থেকে বের হওয়া যাবে না।

এই তো আজকের তথ্য প্রযুক্তির যুগে মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশন, টেলিফোন, ক্যামেরা,
ইন্টারনেট, মিডিয়া, ফেসবুক, সেলফি ইত্যাদী শব্দগুলো এখন আর বিদেশী নেই। এগুলো এখন
আমাদের একান্ত জীবন ঘনিষ্ট নিজস্ব শব্দ। উপমহাদেশে শিখ আর হিন্দুদের শাসনামলে আইন-কানুন,
বিচার-আদালত ইত্যাদী কিছুই ছিলো না। পরবর্তীতে মুসলিম শাসনামলে স্বভাবতই এসব ক্ষেত্রে
এ দেশের নিজস্ব পরিভাষা না থাকায় আরবী-ফার্সী-তুর্কি ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে।

এমনকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত অধিকাংশ শব্দ এসব
ভাষা থেকে এসেছে। আইন,আদালত,দলিল,দস্তাবেজ,ফরিয়াদী,বাদী,বিবাদী,দাখিলা,মামলা,
মোকদ্দমা,কসুর, বেকসুর, মালিক, গোলাম,হাট-বাজার,দোকান,কিতাব-বই,খাতা-কলম,
খানা-পিনা,পানি,দস্তর, বাসন- কোসন,দুয়ার এমন অসংখ্য শব্দ এসব বিদেশী ভাষার দান।

এগুলোকে এখন আর বিদেশী বলা যাবে না। এভাবে আমাদের বাংলা ভাষা আরো সমৃদ্ধ হয়েছে।
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত এ ধরনের শব্দ সংখ্যা পনেরো হাজারের কম হওয়ার কথা নয়। বাংলা
একাডেমি সম্প্রতি বাংলায় ব্যবহৃত শধুমাত্র আরবী-ফার্সি-উর্দূ প্রায় নয় হাজার শব্দের অভিধান রচনা
করেছে। এছাড়া ইংরেজী,তুর্কি,হিন্দী,জাপানি ইত্যাদী ভাষার শব্দ সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

ভাষার ক্রমবিবর্তন একটা স্বাভাবিক নিয়ম। এ নিয়ে বাড়াবাড়ির কিছু নেই। তবে ভাষার মতো
একটা স্বাভাবিক বিষয়কে অস্বাভাবিকভাবে চাঁপিয়ে দেয়া অবশ্যই বাড়াবাড়ি এবং অন্যায়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার বক্তব্যকে সংক্ষিপ্ত করলে ভালো হতো

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩৯

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, পরামর্শের জন্যে

৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:০৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: আপনার লেখাটির সাথে সম্পূর্ণ সহমত!

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৫৬

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম বলেছেন: অশেষ কৃতজ্ঞতা! পোষ্ট করার অনেকদিন পর এলেন। আমিও অনেক পরে উত্তর দিলাম বলে দুঃখিত। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.