নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালবাসি লিখতে। ছোট ছোট অনুভূতিগুলোকে শব্দে প্রকাশ করতে। ভালবাসি দেশ, মাটি ও মানুষকে।

খালেদা শাম্মী

ভালবাসি লিখতে। ছোট ছোট অনুভূতিগুলোকে শব্দে প্রকাশ করতে। ভালবাসি দেশ, মাটি ও মানুষকে।

খালেদা শাম্মী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিতিয়া ভাল আছে

১৭ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০০

১২ বছর!

হ্যাঁ, আজ ১২ বছর হতে চলল। সময়ের সাথে চলতে চলতে কখন যে এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল, টেরই পায়নি শায়লা। আজও তাকে সেদিনের সেই নিষ্পাপ মুখ তাড়া করে ফেরে।

সেই ১২ বছর আগে, কতবার চেয়েছে সে, সেই নিষ্পাপ মুখের নিতিয়াকে চিরতরে মেরে ফেলতে। কত চেষ্টা বৃথা গেল। কখনো তার শাশুড়ির কারনে তো কখনো স্বামীর কারনে। যতবার ব্যর্থ হয়েছে, ঠিক ততবারই জেদ চেপে বসেছে তার ভেতর। সেই জেদ যে কখন চরম সীমা পার করে ফেলেছে, বুঝতেও পারেনি। ১২ বছর আগে, নিতিয়ার মা নীরা মারা যাবার পাঁচ মাসের মাথায় রাহাতের সাথে তার বিয়ে হয়।

রাহাত চৌধুরী। শায়লার স্বামী। বাইরে থেকে দেখলে রাহাতের মত স্বামী আর একটাও খুঁজে পাওয়া না। যার কথা সমাজে পরিচিত মানুষরা উদাহরণস্বরূপ বলে। বলে, হাজার খুঁজলেও রাহাতের মত স্বামী মেলা ভার! বলে, শুধু রাহাত বলে সব এত সুন্দরভাবে ম্যানেজ করেছে। আরও বলে, রাহাত বাবা ও স্বামীর দায়িত্ব খুব ভালভাবেই পালন করেছে। অন্য কেউ হলে সংসারের শান্তি নষ্ট হয়ে যেত। রাহাতই শক্ত হাতে মেয়ে আর নতুন বউকে ম্যানেজ করে রেখেছে নয়তো সৎ মা ঘরে থাকলে সংসার কি আর আনন্দের হয়!

রাহাত! যার অবহেলায় বিয়ের এক বছর পরেও শায়লা জর্জরিত ছিল। হ্যাঁ, রাহাত শায়লাকে কখনোই তার ভালবাসার ভাগ দেয়নি। ঠিক দেয়নি তা নয়, দিতে পারেনি। রাহাত আর নীরার তিন বছরের সংসার জীবনে হয়তো ওর সমস্ত ভালবাসাই নীরাকে উজাড় করে দিয়েছিল। হয়তো কত স্বপ্নও বুনেছিল তারা। মেয়ে নিতিয়া আর রাহাতকে একা রেখে যখন নীরা মারা যায়, তখন নিতিয়ার বয়স মাত্র দেড় বছর। শায়লার আগমনও হয় নিতিয়ার দেখাশোনা করার জন্য। রাহাত অবশ্য প্রথম থেকেই বলছিল, সে একাই নিতিয়াকে মানুষ করে তুলতে পারবে। কিন্তু রাহাতের মা কথা শুনলেন নাহ। শায়লাকে ঘরে আনলেন ছেলের বউ করে।

শায়লা খুব ভালমতো বুঝতে পেরেছিল, তার বাবার দায়বদ্ধতা না থাকলে আজ বিবাহিত একজনের সাথে তাকে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিতো না। এই সংসার ছেড়ে তার বাবার ঘরে কখনো ফিরে যেতে পারবে না। সে ফিরে গেলে তার আরও তিন বোনের সাথে সাথে সেও বোঝা হয়ে দাঁড়াবে তার বাবার উপর আরও একবার। শায়লাও ভেবেছিল, নিতিয়াকে মেয়ের মতই আদর করে সংসার করে যাবে চুপচাপ। সে তা করতোও, যদি না রাহাতের অবহেলা তাকে পিষে মারতো প্রতিনিয়ত। রাহাতের উদার ভালবাসা মেয়ে নিতিয়ার প্রতি আর খাপছাড়া অবহেলা প্রতিক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্তে শায়লাকে পোড়াতো। একরাশ ক্ষোভ নিয়ে শায়লা ঘুমাতে যেত। ক্ষোভ রাহাতের উপর, তার মেয়ে নিতিয়ার উপর।

শায়লা অনেক চেষ্টা করেছে, এ ক্ষোভ দূর করার। পারেনি। রাহাতের অবহেলাপূর্ণ ব্যবহার পেতে রাহাতকে খুব কাছ থেকে জেনে গিয়েছিল শায়লা। শায়লা জেনে গিয়েছিল, রাহাত তার ক্ষোভ কোনদিনও বুঝতে পারবে না। কোনদিনও শায়লার চাপা রাগ রাহাত কখনোই দেখতে পারবে না। যেমন সেদিন দেখেনি, নিতিয়ার কব্জিতে ফুটে থাকা পাঁচ আঙ্গুলের কালো ছাপ!
অথচ সেদিন নিতিয়া সিঁড়ি থেকে পড়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলার পর, সারাদিন কত ছুটাছুটি করল রাহাত, নিতিয়াকে কোলে নিয়ে। নিতিয়ার প্রাণহীন দেহ নিয়ে বসে থাকার সময়ও রাহাত খেয়াল করেনি।

রাহাত, শায়লার স্বামী! তিনি এখন শায়লাকে অবহেলা করেন না। মা গত হয়েছেন বহু আগেই। পৃথিবীতে শায়লাই এখন তার অনেক বড় আপনজন। এই গভীর রাতে নিশ্চিন্তে তিনি শায়লার ডানহাত মুষ্টিবদ্ধ করে ঘুমোচ্ছেন। তিনি জানেন না, শায়লা জেগে আছে। জানেন না, শায়লার চোখে পানি। সেই চোখে নিতিয়ার মুখ ভেসে উঠছে বারবার।

এখন রাত ৩টা। একজন মা তার মেয়েকে নিয়ে ভাবছে। টলটলায়মান চোখে সে তার মেয়ে নিতিয়াকে দেখছে। আজ রাত সে নিতিয়ার স্মৃতি হাতড়েই কাটিয়ে দেবে।


শুসসস! আজও রাহাত চৌধুরী কিছুই জানবে না।







১৭ তম দিন
মার্চ- ২০১৮



সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।




মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:১৪

ফয়সাল ফাহাদ বলেছেন: ঘটনা এমন হবে বুঝতে পারছিলাম। ভাল লিখেছেন। চালিয়ে যান।

১৮ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫১

খালেদা শাম্মী বলেছেন: ধন্যবাদ ফয়সাল সাহেব। ভাল কাটুক আপনার দিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.